সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

টাই—সেকালে এবং আজকে

টাই—সেকালে এবং আজকে

টাই—সেকালে এবং আজকে

প্রাচীনকাল থেকেই পুরুষেরা তাদের গলা বা কণ্ঠদেশকে সাজিয়ে আসছে। যেমন, সা.কা.পূ. ১৭৩৭ সালে মিশররাজ ফরৌণ যোষেফকে একটা সোনার হার দিয়েছিলেন।—আদিপুস্তক ৪১:৪২.

আজকেও পৃথিবীর অনেক দেশেই পুরুষেরা তাদের গলাকে সাজায় আর এইজন্য তারা টাই পরে থাকে। বিভিন্ন বইপত্র থেকে জানা যায় যে আজকের টাই যে অবস্থা থেকে এসেছে, তা ষোড়শ শতাব্দীর শেষের দিকে ইংল্যান্ড ও ফ্রান্সে প্রথম দেখা গিয়েছিল। সেই সময়ে পুরুষেরা ডাবলেট নামে এক রকমের আঁটসাট জ্যাকেট পরত। আর এর সঙ্গে তারা গলায় গোলাকার কলার পরত। এগুলোর বেশির ভাগই কয়েক সেন্টিমিটার পুরু আর বড় চ্যাপ্টা চাকতির মতো ছিল, যা গলাকে ঘিরে থাকত। এগুলো সাদা কাপড় দিয়ে এবং শক্ত করে বানানো হতো যাতে এগুলোর আকার ঠিক থাকে।

পরে এগুলোর জায়গায় আরেক রকমের কলার আসে, যেগুলোকে ফলিং কলার বলা হতো। এই কলারগুলো সাদা রঙের ছিল, যা পুরো কাঁধকে ঘিরে থাকত এবং হাতের ওপরের অংশ পর্যন্ত ঝুলত। এই কলারগুলোকে ভ্যানডাইকও বলা হতো। সেই সময়ের প্রটেস্টান্ট এবং অন্য লোকেরাও এগুলো পরত।

সপ্তদশ শতাব্দীতে, পুরুষেরা সচরাচর যে লম্বা কোট পরত তার নিচে ওয়েস্টকোট নামে আরেকটা লম্বা কোট পরার চল আসে। যারা এই ওয়েস্টকোট পরত তারা গলায় স্কার্ফের মতো কাপড় বা ক্রেভাট প্যাঁচাত। এই ক্রেভাট গলায় কয়েকবার প্যাঁচানো হতো। আর খোলা অংশ শার্টের সামনে ঝুলে থাকত। সপ্তদশ শতাব্দীর শেষের দিকে আঁকা ছবিগুলো থেকে দেখা যায় যে ক্রেভাট তখন খুবই জনপ্রিয় ছিল।

মসলিন, লন কাপড় আর এমনকি লেস দিয়েও ক্রেভাট বানানো হতো। লেস দিয়ে বানানো ক্রেভাটগুলোর দাম অনেক বেশি ছিল। বলা হয় যে ইংল্যান্ডের রাজা জেমস দ্বিতীয় তার রাজ্যাভিষেকের দিন পরার জন্য এইরকম একটা ক্রেভাট বানাতে ৩৬ পাউন্ড ১০ শিলিং খরচ করেছিলেন, যা সেই সময় অনেক টাকা ছিল। লেসের বানানো কিছু ক্রেভাট অনেক বড় ছিল। ওয়েস্টমিন্‌স্টার আ্যবিতে চার্লস দ্বিতীয়ের যে মূর্তি আছে, সেখান থেকে দেখা যায় যে তার ক্রেভাটটা ছিল ১৫ সেন্টিমিটার চওড়া ও ৮৬ সেন্টিমিটার লম্বা।

ক্রেভাট অনেক রকমের নট দিয়ে বাঁধা যেত। অনেক সময় ক্রেভাটকে সিল্কের ফিতা দিয়ে আটকানো হতো যাতে তা ক্রেভাটকে ঠিক জায়গায় রাখে আর সেই ফিতা দিয়ে চিবুকের নিচে বড় বো নট বাঁধা হতো। এইরকমভাবে ক্রেভাট বাঁধাকে সলিটেয়ার বলা হতো। এই বো আজকের দিনের বো টাইয়ের মতো ছিল। বলা হয় যে কম করে হলেও একশ রকমভাবে ক্রেভাট বাঁধা যেত। বু ব্রামেল নামে একজন ইংরেজ লোক যিনি পুরুষদের পোশাকে নতুনত্ব এনেছিলেন, বলা হয় যে তিনি একটা ক্রেভাটকে ঠিক মতো বাঁধার জন্য একটা পুরো সকাল লাগাতেন।

১৮৬০ এর দশকে ক্রেভাট আজকের দিনের টাইয়ের রূপ নিতে থাকে। তখন এটাকে ফোর-ইন-হ্যান্ডও বলা হতো। এইরকম নাম দেওয়া হয়েছিল কারণ চার ঘোড়ায় টেনে নেওয়া গাড়ির চালকেরা এইরকম নট দিয়ে ক্রেভাট পরত। সেই সময় লোকেরা কলার দেওয়া শার্ট পরতে শুরু করে। তখন টাই চিবুকের নিচে বাঁধা হতো এবং এর লম্বা অংশ শার্টের সামনের দিকে ঝুলে থাকত। আর সেই সময়ই আজকের টাইয়ের উৎপত্তি হয়েছিল। ১৮৯০ এর দশকে বো টাই নামে আরেক রকমের টাই জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিল।

আজকে অনেকেই টাই পরাকে তাদের বেশভূষার একটা জরুরি অংশ বলে মনে করে। এমনকি কিছু লোকেরা একজন অপরিচিত লোক কীধরনের টাই পরেছে তা দেখে সেই লোক সম্বন্ধে মন্তব্য করে থাকে। তাই শার্ট, প্যান্ট ও কোটের রঙের সঙ্গে মিলিয়ে পরিষ্কার টাই পরা বুদ্ধিমানের কাজ।

টাইয়ের নটও ভালভাবে বাঁধা দরকার। বেশির ভাগ লোকই ফোর-ইন-হ্যান্ড নটে টাই বাঁধেন। (১৮ পৃষ্ঠায় দেওয়া ছবি দেখুন।) কারণ এটা পরিপাটি, মার্জিত এবং অফিস-আদালত বা যে কোন সামাজিক অনুষ্ঠানের উপযোগী। আরেকটা জনপ্রিয় নট হল, উইনজার নট যা কিছুটা বড়। এই নটের ঠিক নিচে একটা টোল পড়ে।

অনেক পুরুষেরাই টাই পরে আরাম পায় না। কারণ গলার ওপর কোন কিছু চেপে থাকা তাদের পছন্দ নয়। কিন্তু অনেকেই যাদের টাই পরতে অসুবিধা হতো তারা একসময় বুঝতে পেরেছে যে শার্টের মাপ ঠিক ছিল না বলেই তাদের টাই পরতে অস্বস্তি লাগত। যদি আপনারও তাই হয়, তাহলে শার্টের কলার ভাল করে দেখুন যেন তা আপনার চেয়ে ছোট মাপের না হয়। ঠিক মাপের শার্ট হলে আপনি বুঝতেই পারবেন না যে আপনি টাই পরে আছেন।

অনেক দেশেই ব্যাবসা-বাণিজ্য বা অফিস-আদালতের কাজে টাই পরা দরকার বলে মনে করা হয়। এই কারণে অনেক খ্রীষ্টান পুরুষেরা ঘরে-ঘরে প্রচারে যাওয়ার সময় টাই পরে যান। হ্যাঁ, পুরুষের গলাকে ঘিরে থাকা এক টুকরো কাপড় তার মর্যাদাকে বাড়াতে পারে এবং তাকে সবার চোখে সম্মানীয় করে তুলতে পারে।

[১৮ পৃষ্ঠার ডায়াগ্রাম]

(পুরোপুরি ফরম্যাট করা টেক্সটের জন্য এই প্রকাশনা দেখুন)

যেভাবে ফোর-ইন-হ্যান্ড নট বাঁধতে হয় *

টাইয়ের চওড়া অংশকে সরু অংশ থেকে প্রায় ৩০ সেন্টিমিটার নিচে রাখুন। এরপর চওড়া অংশকে সরু অংশের ওপর দিয়ে আড়াআড়িভাবে নিচে নিয়ে আসুন।

চওড়া অংশকে আবারও সরু অংশের ওপর দিয়ে আড়াআড়িভাবে নিয়ে এসে ফাঁসের মধ্যে ঢোকান।

নটের সামনের অংশ তর্জনী দিয়ে ঢিলে করে ধরে রাখুন এবং ফাঁসের মধ্যে ঢোকানো চওড়া অংশ সামনের দিকে টেনে নিচে নামান।

সরু অংশকে ধরে নটকে ধীরে ধীরে টাইট করুন এবং কলারের মধ্যে নিয়ে আসুন।

[পাদটীকা]

^ শার্ট আ্যন্ড টাই বই থেকে নেওয়া হয়েছে।

[১৯ পৃষ্ঠার চিত্রগুলো]

সপ্তদশ শতাব্দী থেকে আজকের টাই