সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ঈশ্বর কি তাঁর ব্যক্তিত্বকে বদলান?

সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ঈশ্বর কি তাঁর ব্যক্তিত্বকে বদলান?

বাইবেলের দৃষ্টিভঙ্গি

সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ঈশ্বর কি তাঁর ব্যক্তিত্বকে বদলান?

নৃবিজ্ঞানী জর্জ ডরসি “পুরাতন নিয়মের” ঈশ্বরকে “একজন নিষ্ঠুর ঈশ্বর” বলেছিলেন। তিনি আরও বলেছিলেন: “ইয়াওয়ের মধ্যে . . . ভালবাসার লেশমাত্র নেই। তিনি দস্যুদের, অত্যাচারীদের, যোদ্ধাদের ও বিজয়ীদের ঈশ্বর।” আরও অনেকেই “পুরাতন নিয়মের” ঈশ্বর, ইয়াওয়ে বা যিহোবা সম্বন্ধে একই কথা বলেছেন। তাই, আজকে কেউ কেউ ভাবেন যে যিহোবা সত্যি সত্যি একজন নিষ্ঠুর ঈশ্বর ছিলেন, যিনি সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তাঁর ব্যক্তিত্বকে বদলে “নতুন নিয়মে” প্রেমময় ও করুণাময় ঈশ্বর হয়েছেন।

ঈশ্বর সম্বন্ধে এরকম ধারণা নতুন কিছু নয়। সাধারণ কালের দ্বিতীয় শতাব্দীর মারসিওন, প্রথমে ঈশ্বরের বিষয়ে এইরকম কথা বলেছিলেন। তিনি একজন খ্রীষ্টান ছিলেন ও রহস্যবাদেও বিশ্বাস করতেন। মারসিওন “পুরাতন নিয়মের” ঈশ্বরকে মেনে নিতে চাননি। কারণ তিনি বলেছিলেন যে ওই ঈশ্বর খুবই হিংস্র, প্রতিশোধপরায়ণ এবং অত্যাচারী। তিনি এতটাই নিষ্ঠুর যে শুধু তাদেরকে আশীর্বাদ করেন, যারা তাঁকে উপাসনা করে। আবার এই মারসিওনই “নতুন নিয়মের” ঈশ্বরকে একজন সিদ্ধ ঈশ্বর বলেন, যিনি প্রেমময়, করুণাময়, উদার ও ক্ষমাবান। আর পৃথিবীতে থাকতে যীশু খ্রীষ্ট এই গুণগুলো দেখিয়েছিলেন।

যিহোবা নিজেকে পরিস্থিতির সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেন

যিহোবা নামের মানে হল “তিনি অস্তিত্বে আনেন।” এর থেকে বোঝা যায় যে যিহোবা তাঁর সমস্ত প্রতিজ্ঞা পূরণ করেন। মোশি যখন ঈশ্বরকে তাঁর নাম জিজ্ঞেস করেছিলেন তখন তাঁর নামের অর্থকে তিনি এভাবে বলেছিলেন: “‘আমি যে আছি সেই আছি।’” (যাত্রাপুস্তক ৩:১৪) আর রদারহ্যামের অনুবাদ এটাকে এভাবে বলে: “আমি যা চাই তাই হব।”

অতএব, যিহোবা তাঁর ন্যায্য উদ্দেশ্য ও প্রতিজ্ঞাগুলো পূরণ করার জন্য যা কিছু হওয়ার বা করার দরকার হোক না কেন, তিনি তা-ই হবেন বা করবেন। আর এর প্রমাণ আমরা তাঁর বিভিন্ন উপাধি থেকে পাই যেমন, বাহিনীগণের যিহোবা, বিচারকর্তা, সার্বভৌম, উদ্যোগী, প্রভু সদাপ্রভু, সৃষ্টিকর্তা, পিতা, মহান শিক্ষক, পালক, প্রার্থনা শ্রবণকারী, মুক্তিদাতা, সুখী ঈশ্বর এবং আরও অনেক কিছু। যিহোবা তাঁর প্রেমময় উদ্দেশ্যগুলো পূরণ করার জন্য সমস্তই হয়েছেন।—যাত্রাপুস্তক ৩৪:১৪; বিচারকর্ত্তৃগণের বিবরণ ১১:২৭; গীতসংহিতা ২৩:১; ৬৫:২; ৭৩:২৮; ৮৯:২৬; যিশাইয় ৮:১৩; ৩০:২০; ৪০:২৮; ৪১:১৪; ১ তীমথিয় ১:১১.

তার মানে কি এই যে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ঈশ্বরের ব্যক্তিত্ব এবং নিয়মনীতিগুলোও বদলে যায়? না, কারণ ঈশ্বর সম্বন্ধে যাকোব ১:১৭ পদ বলে: “চঞ্চল ছায়ার মত করে তিনি বদলে যান না।” (প্রে.বা.) তাহলে কী করে যিহোবা তাঁর ব্যক্তিত্বকে না বদলেই বিভিন্ন পরিস্থিতির সঙ্গে নিজেকে খাপ খাইয়ে নিতে পারেন?

এটা বোঝার জন্য বাবামায়েদের উদাহরণ দেওয়া যায়, যারা তাদের বাচ্চাদের মঙ্গলের জন্য বিভিন্ন কাজ করে থাকেন। একদিনেই একজন বাবা কিংবা মা রান্না করেন, ঘরদোর পরিষ্কার করেন, বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতি সারান, বাচ্চার অসুখ হলে তার সেবা করেন, বাচ্চাদের বন্ধু হন, পরামর্শ দেন, শাসন করেন, শিক্ষক হন ও আরও অন্যান্য অনেক কাজ করেন। একেক সময় একেক কাজ করতে তারা কিন্তু তাদের ব্যক্তিত্বকে বদলান না; তারা দরকার মতো তাদের কাজের সঙ্গে নিজেদের খাপ খাইয়ে নেন। যিহোবার বেলায়ও একই কথা খাটে কিন্তু তা আরও অনেক বড় আকারে। তিনি তাঁর উদ্দেশ্য পূর্ণ করার জন্য ও তাঁর সৃষ্ট প্রাণীদের উপকারের জন্য কী কী করতে পারেন তার কোন সীমা নেই।—রোমীয় ১১:৩৩.

উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, ইব্রীয় এবং খ্রীষ্টান গ্রিক শাস্ত্র, দুজায়গাতেই যিহোবাকে প্রেমময় ও করুণাময় ঈশ্বর বলা হয়েছে। সা.কা.পূ. অষ্টম শতাব্দীর ভাববাদী মীখা যিহোবার বিষয়ে বলেছিলেন: “কে তোমার তুল্য ঈশ্বর?—অপরাধ ক্ষমাকারী, ও আপন অধিকারের অবশিষ্টাংশের অধর্ম্মের প্রতি উপেক্ষাকারি! তিনি চিরকাল ক্রোধ রাখেন না, কারণ তিনি দয়ায় প্রীত।” (মীখা ৭:১৮) একইভাবে প্রেরিত যোহন লিখেছিলেন: “ঈশ্বর প্রেম।”—১ যোহন ৪:৮.

আবার ইব্রীয় ও গ্রিক, দুজায়গাতেই যিহোবাকে ন্যায়বিচারক বলা হয়েছে কারণ যারা বার বার অন্যায় করে, তাঁর আজ্ঞা লঙ্ঘন করেও অনুতাপ করে না ও অন্যদের ক্ষতি করে তাদেরকে তিনি শাস্তি দেন। গীতরচক বলেছিলেন, “[যিহোবা] সমুদয় দুষ্টকে সংহার করিবেন।” (গীতসংহিতা ১৪৫:২০) একইভাবে যোহন ৩:৩৬ পদ বলে: “যে কেহ পুত্ত্রে বিশ্বাস করে সে অনন্ত জীবন পাইয়াছে; কিন্তু যে কেহ পুত্ত্রকে অমান্য করে, সে জীবন দেখিতে পাইবে না, কিন্তু ঈশ্বরের ক্রোধ তাহার উপরে অবস্থিতি করে।”

যিহোবার গুণগুলো একটুও বদলায় না

যিহোবার ব্যক্তিত্ব এবং তাঁর মুখ্য গুণগুলো যেমন প্রেম, প্রজ্ঞা, ন্যায়বিচার ও শক্তি একটুও বদলায়নি। তিনি ইস্রায়েলের লোকেদের বলেছিলেন: “আমি সদাপ্রভু, আমার পরিবর্ত্তন নাই।” (মালাখি ৩:৬) মানুষকে সৃষ্টি করার প্রায় ৩,৫০০ বছর পর ঈশ্বর এই কথা বলেছিলেন। মন দিয়ে বাইবেল পড়লে বোঝা যায় ঈশ্বরের এই কথাটা পুরোপুরি সত্য কারণ বাইবেলে আমরা দেখি যে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ঈশ্বরের নিয়মনীতি এবং গুণগুলো একটুও বদলায়নি। শত শত বছরে যিহোবা ঈশ্বরের ব্যক্তিত্ব কোমল হয়নি কারণ এর কোন দরকার ছিল না।

সারা বাইবেল জুড়ে যেমন দেখা যায় যে সঠিক বিষয়ের বেলায় ঈশ্বর আগে যেমন দৃঢ় ছিলেন এখনও তেমনই দৃঢ়, আবার এদনে প্রথম মানুষের জন্য তাঁর যতখানি ভালবাসা ছিল এখনও মানুষকে তিনি ততখানিই ভালবাসেন। বাইবেলের বিভিন্ন ঘটনায় যিহোবার ব্যক্তিত্বকে আলাদা আলাদা বলে মনে হলেও, এগুলো আসলে তাঁর অটল ব্যক্তিত্বেরই বিভিন্ন দিক। বিভিন্ন পরিস্থিতিকে মোকাবিলা করার সময় ও আলাদা আলাদা লোকেদের দিয়ে কাজ করানোর সময় আলাদা মনোভাব ও আলাদা সম্পর্কের দরকার হয়।

তাই বাইবেল পড়ে এটা একেবারে স্পষ্ট হয়ে যায় যে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ঈশ্বরের ব্যক্তিত্ব একটুও বদলায়নি এবং ভবিষ্যতেও বদলাবে না। যিহোবা সবসময় একই আছেন এবং তিনি কখনোই বদলাবেন না। তাঁর ওপর সবসময়ই ভরসা করা যায় ও তাঁকে বিশ্বাস করা যায়। আমরা সবসময় তাঁর ওপর নির্ভর করতে পারি।

[১২, ১৩ পৃষ্ঠার চিত্রগুলো]

ঈশ্বর সদোম ও ঘমোরা শহর ধ্বংস করেছিলেন . . .

. . . আবার তিনিই ধার্মিক নতুন জগৎ আনবেন