হাসি—আপনার মন ও শরীরের জন্য ভাল!
হাসি—আপনার মন ও শরীরের জন্য ভাল!
জাপানের সচেতন থাক! সংবাদদাতা কর্তৃক
মন থেকে হলে এটা মনের সমস্ত সন্দেহকে দূর করে দেয়। বছরের পর বছর ধরে জমা হওয়া ভুল ধারণার পাহাড়কে ভেঙে দেয়। অবিশ্বাস ও সন্দেহে কঠিন হওয়া মন গলতে শুরু করে। এটা অনেকের মনে স্বস্তি ও আনন্দ এনে দেয়। এটা বলে “সবকিছু ভুলে যাও।” এটা জানায়, “এসো আমরা আবার বন্ধু হই।” কী সেই জিনিস যার এত শক্তি? তা হল আপনার মুখের হাসি।
হাসি মানে কী? ডিকশনারিগুলোতে বলা আছে যে হাসি হল, ‘মুখের একটা ভঙ্গি যার ফলে ঠোঁটের দুই কোণ কিছুটা ওপরের দিকে বেঁকে যায় এবং খুশি, আনন্দ ও সম্মতিকে প্রকাশ করে।’ আর মিষ্টি হাসির রহস্য তো এখানেই। হাসি হল কথা না বলে অন্যের কাছে মনের অনুভূতিকে জানানোর উপায়। কিন্তু হাসি ঘৃণা বা অবজ্ঞাকেও প্রকাশ করে, তবে এটা সম্পূর্ণ আলাদা বিষয়।
এখন প্রশ্ন আসে যে হাসি কি সত্যিই বিশেষ কিছু? আপনার কি সেই সময়ের কথা মনে পড়ে যখন কেউ একজন আপনার দিকে তাকিয়ে হেসেছিল বলে আপনার মনে হয়েছিল যে আপনার সমস্ত দুশ্চিন্তা চলে গিয়ে মন একেবারে হালকা হয়ে গেছে? বা কেউ মুখ গম্ভীর করে রাখার ফলে আপনি ঘাবড়ে গিয়েছিলেন আর আপনার মনে হয়েছিল সে আপনাকে অবজ্ঞা করছে? হ্যাঁ, হাসি সত্যিই বিশেষ কিছু। যিনি হাসছেন এবং যার দিকে তাকিয়ে হাসা হচ্ছে তাদের দুজনের ওপরই এটা ছাপ ফেলে। ইয়োব, যার কথা বাইবেলে বলা আছে, তিনি তার শত্রুদের সম্বন্ধে বলেছিলেন: “আমি তাহাদের প্রতি হাসিলে তাহারা বিশ্বাস করিত না, তাহারা আমার মুখের দীপ্তি নিস্তেজ করিত না।” (ইয়োব ২৯:২৪) এখানে ইয়োবের মুখের “দীপ্তি” বলতে হয়তো তার মনের আনন্দ বা হাসিমাখা মুখকে বুঝিয়েছে।
আজকেও হাসি ঠিক একই কাজ করে। মিষ্টি হাসি মনের মধ্যে অনেক দিনের জমে থাকা চাপকে হালকা করে দেয়। এটা প্রেশার কুকারের সেফটি ভাল্ভের মতো কাজ করে। আমাদের মনে যখন চাপ থাকে বা আমরা হতাশ বোধ করি, তখন হাসি ওই চাপ দূর করতে এবং হতাশাকে কাটিয়ে উঠতে সাহায্য করে। উদাহরণ হিসেবে তোমোকোর কথা বলা যায়। তিনি প্রায়ই খেয়াল করতেন যে অন্যেরা তার দিকে তাকিয়ে আছে। তিনি ভাবতেন, তারা বুঝি তার মধ্যে কোন খুঁত খুঁজছে কারণ লোকেরা যখনই বুঝত ব্যাপারটা তোমোকো খেয়াল করেছেন, সঙ্গে সঙ্গে তারা চোখ সরিয়ে নিত। এই কারণে তার নিজেকে একা মনে হতো আর সবসময় মন খারাপ লাগত। একদিন তার এক বান্ধবী তাকে পরামর্শ দিয়েছিলেন যে তার যখন লোকেদের চোখে চোখ পড়ে যাবে তখন সে যেন হাসে। তোমোকো পর পর দুসপ্তা তা করার চেষ্টা করেন আর কী আশ্চর্য অন্যেরা তার হাসির জবাবে তার দিকে তাকিয়ে হেসেছিল! আর এর ফলে তার মনের সমস্ত চাপ দূর হয়ে গিয়েছিল। তিনি
বলেন: “আমার জীবন খুশিতে ভরে ওঠে।” হ্যাঁ, হাসি অন্যের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ককে আরও সহজ করে দেয় এবং আমরা খুব সহজেই অন্যের বন্ধু হতে পারি।আপনার এবং অন্যদের ওপর ভাল ছাপ ফেলে
হাসি একজন ব্যক্তির আবেগ-অনুভূতির ওপর ছাপ ফেলতে পারে। এটা একজনের মনকে সুন্দর রাখতে সাহায্য করে। শুধু তাই নয়, এটা স্বাস্থ্যের জন্যও ভাল। একটা প্রবাদ বলে, “হাসি এক ভাল ওষুধ।” ডাক্তাররাও বলেন যে একজনের মনের সঙ্গে শরীরের অনেকখানি সম্পর্ক রয়েছে। এই বিষয়ের ওপর করা অনেক গবেষণা দেখায় যে মনের মধ্যে অনেক দিনের জমে থাকা চাপ, খারাপ চিন্তা এবং এরকম আরও অনেক কিছু আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে দুর্বল করে দেয়। কিন্তু এক চিলতে হাসি আমাদের মনকে ভাল করে দেয় আর এমনকি জোরে জোরে হাসলে তা আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে মজবুত করে।
হাসি একজন ব্যক্তির ওপরও অনেকখানি ছাপ ফেলে। মনে করুন আপনাকে কেউ পরামর্শ দিচ্ছেন বা আপনার কোন ভুল শুধরে দিচ্ছেন। যিনি আপনাকে পরামর্শ দিচ্ছেন তার চেহারা কেমন থাকুক বলে আপনি চান? গম্ভীর বা রাগী রাগী ভাব থাকলে আপনার ওপর হয়তো তার রাগ, বিরক্তি ও অবজ্ঞাকে বোঝাতে পারে আর এমনকি আপনারা একে অন্যকে শত্রু ভাবতেও শুরু করে দিতে পারেন। কিন্তু তার মুখে যদি এক চিলতে মিষ্টি হাসি থাকে, তাহলে আপনি কি আরও স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করবেন না আর তার দেওয়া পরামর্শ সহজেই মেনে নেবেন না? হ্যাঁ, এক চিলতে হাসি গম্ভীর পরিবেশে ভুল বোঝাবুঝির হাত থেকে রেহাই দেয়।
ভাল চিন্তা সহজেই মুখে হাসি ফোটায়
আমরা পেশাদার অভিনেতাদের মতো নই, যারা যখন-তখন চকিতে মুখে হাসি ফোটাতে পারে। তাদের মতো আমরা হতেও চাই না। আমরা লোক দেখানো হাসি হাসতে চাই না, আমরা মন থেকে হাসতে চাই। একজন স্কুল শিক্ষিকা বলেছিলেন: ‘মন থেকে সমস্ত চাপ ঝেড়ে ফেলে দিয়ে হাসা খুবই জরুরি নতুবা আপনার হাসিকে লোক দেখানো বলে মনে হতে পারে।’ আমরা কী করে মন থেকে হাসতে পারি? এই ব্যাপারে বাইবেল আমাদের সাহায্য করে। আমাদের কথাবার্তা সম্বন্ধে মথি ১২:৩৪, ৩৫ পদ বলে: “হৃদয় হইতে যাহা ছাপিয়া উঠে, মুখ তাহাই বলে। ভাল মানুষ ভাল ভাণ্ডার হইতে ভাল দ্রব্য বাহির করে, এবং মন্দ মানুষ মন্দ ভাণ্ডার হইতে মন্দ দ্রব্য বাহির করে।”
মনে রাখবেন, হাসি হল কথা না বলে আমাদের অনুভূতিকে জানানোর এক উপায়। “হৃদয় হইতে যাহা ছাপিয়া উঠে” আমরা মুখে তাই বলি এবং “ভাল ভাণ্ডার” হতে “ভাল দ্রব্য” বের হয় তা মনে রাখা দেখায় যে সত্যিকারের হাসি আমাদের চিন্তাভাবনা ও আবেগ-অনুভূতি থেকে আসে। তাই কোন সন্দেহ নেই যে আমাদের মনে যা আছে তা একদিন আগে হোক বা পরে হোক, একসময় প্রকাশ পেয়ে যাবেই আর তা শুধু আমাদের কথা বা কাজের মধ্যে দিয়েই নয় সেইসঙ্গে আমাদের চেহারায়ও ফুটে উঠবে। অতএব, আমাদের সবসময় ভাল চিন্তা করার চেষ্টা করে চলা দরকার। কারণ অন্যদের সম্বন্ধে আমরা কী ভাবি তা আমাদের চেহারায় ফুটে ওঠে। তাই আসুন আমরা আমাদের
পরিবারের লোকেদের, প্রতিবেশীদের ও কাছের বন্ধুদের ভাল গুণগুলো দেখার চেষ্টা করি। তা করলে আমরা সহজেই তাদের দিকে তাকিয়ে হাসতে পারব। আর এটা হবে সত্যিকারের হাসি কারণ আমাদের মনে তাদের জন্য ভাল চিন্তা, করুণা ও দয়া রয়েছে। এছাড়া আমাদের চোখেও তা ফুটে উঠবে আর এতে করে তারা বুঝবে যে আমরা মন থেকেই হাসছি।কিন্তু অনেকের কাছেই তারা যে পরিবার থেকে এসেছেন বা যে পরিবেশে মানুষ হয়েছেন তার জন্য অন্যের দিকে তাকিয়ে হাসা শক্ত কাজ বলে মনে হয়। প্রতিবেশীদের জন্য তাদের মনে ভাল চিন্তা আছে ঠিকই কিন্তু কারও দিকে তাকিয়ে হাসার অভ্যাস তাদের নেই। উদাহরণ হিসেবে জাপানি পুরুষদের কথা বলা যায়। তাদের কাছ থেকে আশা করা হয় যে তারা গম্ভীর হবেন এবং সবসময় চুপচাপ থাকবেন। আর তাই তাদের অনেকেই অপরিচিতদের দিকে তাকিয়ে হাসেন না। অন্য জাতির লোকেরাও হয়তো এমনটা হতে পারেন। কিংবা কিছু লোকেরা হয়তো লাজুক স্বভাবের হন আর এই কারণে অন্যদের দিকে তাকিয়ে হাসাটা তাদের কাছে মুশকিল বলে মনে হয়। তাই একজন কতটুকু হাসেন বা সবসময়ই হাসেন কিনা তা দিয়ে একজনের বিচার করা আমাদের উচিত হবে না। মানুষের একজনের সঙ্গে আরেকজনের যেমন মিল নেই, তেমনই তাদের চরিত্র ও অন্যের সঙ্গে ভাববিনিময় করার ধরনও আলাদা।
যাইহোক, অন্যদের দিকে তাকিয়ে হাসা যদি আপনার কাছে শক্ত কাজ বলে মনে হয়, তাহলে বার বার তা করার চেষ্টা করুন না কেন? বাইবেল পরামর্শ দেয়: “আইস, আমরা সৎকর্ম্ম করিতে করিতে নিরুৎসাহ না হই; . . আইস . . . সকলের প্রতি . . . সৎকর্ম্ম করি।” (গালাতীয় ৬:৯, ১০) অন্যদের প্রতি “সৎকর্ম্ম” করার একটা উপায় হল, তাদের দিকে তাকিয়ে হাসা আর এটা আপনি যখন-তখন করতে পারেন কারণ তা আপনার নাগালের মধ্যে রয়েছে! তাই, অন্যদের কাছে এগিয়ে গিয়ে হাসি মুখে শুভেচ্ছা বিনিময় করুন এবং তাদের উৎসাহ দিয়ে কথা বলুন। এতে করে অন্যেরাও আপনার সঙ্গে একইরকম করবেন। শুধু তাই নয়, অভ্যাস করলে হাসা আপনার কাছে আর শক্ত কাজ বলে মনে হবে না।
[২৭ পৃষ্ঠার বাক্স]
সাবধানবাণী
দুঃখের বিষয় হল যে আমাদের দিকে তাকিয়ে যারা হাসেন তারা সবাই-ই মন থেকে হাসেন না। ধোঁকাবাজ, বিবেকহীন পণ্য বিক্রেতারা এবং অন্যরা হয়তো আমাদের দিকে তাকিয়ে মিষ্টি করে হাসতে পারে। কারণ তারা জানে যে হাসি মানুষের মন ভোলাতে ও তাদের অপ্রস্তুত করে দিতে পারে। লম্পট বা যে লোকেদের মনে খারাপ উদ্দেশ্য রয়েছে তারাও মন ভোলানো হাসি দিতে পারে। কিন্তু তাদের এই হাসির কোন দামই নেই; তারা মানুষকে ধোঁকা দেয়। (উপদেশক ৭:৬) তাই আমাদের মনে রাখা দরকার যে আমরা ‘শেষ কালের’ বিষম সময়ে আছি কিন্তু সেইসঙ্গে আমাদের অন্যদেরকে মিছেমিছি সন্দেহ করাও উচিত নয়। আর যীশুর পরামর্শ মেনে আমাদের “সর্পের ন্যায় সতর্ক ও কপোতের ন্যায় অমায়িক” হওয়া দরকার।—২ তীমথিয় ৩:১; মথি ১০:১৬.
[২৮ পৃষ্ঠার চিত্র]
অন্যদের কাছে এগিয়ে গিয়ে হাসি মুখে শুভেচ্ছা বিনিময় করুন