সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

এক বিস্ময়কর সম্রাট

এক বিস্ময়কর সম্রাট

এক বিস্ময়কর সম্রাট

সম্রাট পেঙ্গুইনই হল সবচেয়ে বড় জাতের পেঙ্গুইন। এগুলো এক মিটারেরও বেশি লম্বা হয় এবং এদের ওজন প্রায় ৪০ কিলো। অন্যান্য পেঙ্গুইনরা যখন আ্যন্টার্কটিকার হাড়কাঁপানো ঠাণ্ডার হাত থেকে রেহাই পাবার জন্য উত্তর দিকে যাত্রা করে, সম্রাট পেঙ্গুইনরা তখন কিনা দক্ষিণে অর্থাৎ আ্যন্টার্কটিকার দিকেই যেতে শুরু করে! কিন্তু কেন? অবাক হওয়ার মতো ব্যাপার হল, এরা ডিম পাড়ার ও বাচ্চা জন্ম দেওয়ার জন্য আ্যন্টার্কটিকায় যায়।

স্ত্রী পেঙ্গুইন যখন ডিম পাড়ে তখন পুরুষ পেঙ্গুইন সঙ্গে সঙ্গে বরফের ওপর থেকে সেটাকে তুলে নিয়ে তার নিজের পায়ের ওপর রেখে দেয়। এরপর ডিমটাকে সে তার পেটের নিচে চামড়ার থলির মধ্যে ঢেকে রাখে। স্ত্রী পেঙ্গুইন এরপর খাবারের খোঁজে সমুদ্রে চলে যায়। ৬৫ দিন ধরে অত্যন্ত প্রতিকূল আবহাওয়ার মধ্যে পুরুষ পেঙ্গুইন ডিমে তা দেয়। এই কদিন তার শরীরে জমে থাকা চর্বি থেকেই সে তার খাবারের চাহিদা জোগায়। মাঝে মাঝে আ্যন্টার্কটিকায় ঘন্টায় ২০০ কিলোমিটার বেগে প্রচণ্ড তুষারঝড় হতে পারে। আর এইরকম হাড়কাঁপানো শীতল হাওয়ার মধ্যে শরীরের তাপমাত্রা ঠিক রাখার জন্য চতুর পেঙ্গুইনগুলো দল বেঁধে থাকে এবং পালা করে করে একজন একবার বাইরের দিকে থাকে ও আবার ভেতরের দিকে চলে যায়।

স্ত্রী পেঙ্গুইন যখন ফিরে আসে ঠিক সেই সময়েই ডিম ফুটে বাচ্চা বের হয়। কিন্তু, হাজার হাজার একইরকম পেঙ্গুইনদের মধ্যে থেকে সে কীভাবে তার সাথিকে খুঁজে পায়? একটা গান গেয়ে। প্রথম যখন তাদের দেখা হয়েছিল তখন তারা দুজনে যে গান গেয়েছিল সেটাই আবার তাদের মনে পড়ে যায়। স্ত্রী পেঙ্গুইনগুলো যখন ফিরে আসে তখন পুরুষ ও স্ত্রী পেঙ্গুইনগুলো গলা ছেড়ে এই গানটা গায়। এইরকম বেসুরো গান শুনে মানুষের কানে হয়তো তালা লাগতে পারে এবং তারা হয়তো তালগোল পাকিয়ে ফেলতে পারে কিন্তু এই গান শুনেই সম্রাট পেঙ্গুইনগুলো শীঘ্রিই তাদের সাথিকে খুঁজে বের করে। তারপর পুরুষ পেঙ্গুইনগুলো অনিচ্ছা সত্ত্বেও বাচ্চাগুলোকে মায়ের কাছে ফিরিয়ে দেয়। এর মধ্যে পুরুষ পেঙ্গুইনগুলোর খিদে পেতে শুরু করে আর তারা খাবার ও জলের সন্ধানে হেলেদুলে এবং পেটের ওপর ভর দিয়ে প্রায় ৭৫ কিলোমিটার বরফে ঢাকা পথ পাড়ি দেয়।

[৩১ পৃষ্ঠার চিত্র সৌজন্যে]

By courtesy of John R. Peiniger