সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

“জঙ্গলের সবচেয়ে সুন্দর বাসিন্দা”

“জঙ্গলের সবচেয়ে সুন্দর বাসিন্দা”

“জঙ্গলের সবচেয়ে সুন্দর বাসিন্দা”

সুইডেনের সচেতন থাক! সংবাদদাতা কর্তৃক

জুন মাসের কোন এক দিন ‘জঙ্গলের সবচেয়ে সুন্দর বাসিন্দাকে’ আমি প্রথম দেখি। এখানকার কেউ কেউ একে এই নামেই ডাকে। এটা হল ধূসর রঙের বড় প্যাঁচা। এছাড়া ল্যাপল্যান্ড প্যাঁচা নামেও এটা পরিচিত।

এই সুন্দর বড় প্যাঁচাগুলোকে ফিনল্যান্ড, উত্তর সুইডেন আর সেইসঙ্গে সাইবেরিয়ার পূর্বাঞ্চল, আলাস্কা ও কানাডায় দেখা যায়। এরা সাধারণত লোকচক্ষুর আড়ালে থাকতেই ভালবাসে আর তাই আপনি যদি আগে থেকে না জানেন যে এগুলো কোথায় বাসা বেঁধেছে, তাহলে এদের খুঁজে বের করা খুবই মুশকিল হয়ে দাঁড়ায়। আর একবার যদি আপনি এদের বাসা পেয়ে যান, তাহলে দেখতে পাবেন যে এই প্যাঁচাদের কোন ভয়ডর নেই।

শিকারির গতিবিধির ওপর নজর রাখা

পুরুষ ল্যাপল্যান্ড প্যাঁচা যখন খাবারের খোঁজে বেরিয়েছিল তখন আমি এটার ওপর নজর রেখেছিলাম। হঠাৎ করে গাছের ডাল থেকে উড়ে গিয়ে সে ইঁদুর ধরার চেষ্টা করে। সে কি তার শিকারকে ধরতে পেরেছিল? নিশ্চয়ই! ধীরে ধীরে সে যখন তার বিরাট ডানা দুটো মেলে ওপরের দিকে উঠছিল তখন আমি স্পষ্ট দেখতে পেয়েছিলাম যে তার তীক্ষ্ণ নখের মধ্যে একটা ছোট ইঁদুর ঝুলছে। তার ডানার এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্ত প্রায় ১৪০ সেন্টিমিটার প্রসারিত।

অন্য জাতের প্যাঁচাদের মতো ল্যাপল্যান্ড প্যাঁচা বছর বছর বাচ্চা দেয় না। বিরাটকায় প্যাঁচাগুলো শুধু ছোট ছোট ইঁদুর বা এই জাতীয় অন্যান্য প্রাণী খেয়ে বেঁচে থাকে, তাই যে বছর এরা যথেষ্ট পরিমাণে খাবার পায় না সেই বছর বাচ্চা জন্ম দেওয়া একেবারেই বন্ধ থাকে। কিন্তু, যখন প্রচুর পরিমাণে খাবার পায় তখন প্রতিটা বাসায় তিন-চারটে বা তারও বেশি বাচ্চা থাকে।

জীবনসঙ্গী বাছাই করা

বসন্তকাল হল প্যাঁচাদের জীবনসঙ্গী বাছাই করার সময়। আর স্ত্রী প্যাঁচা খুব সাবধানে তার সঙ্গী বাছাই করে। অনেক মেয়েরা যেমন সঙ্গী বাছাই করার সময় চেহারাকেই প্রাধান্য দেয়, স্ত্রী প্যাঁচারা কিন্তু তেমন নয়। কয়েকজন পাখি পর্যবেক্ষক বলেছেন, পুরুষ প্যাঁচাকে দেখাতে হয় যে সে খুবই দক্ষ শিকারি। কারও সঙ্গে ঘর বাঁধার চিন্তা করার আগে স্ত্রীর জন্য পুরুষ প্যাঁচাকে অনেক খাবার জোগাতে হয়।

যথেষ্ট ইঁদুর যদি পাওয়া যায় এবং পুরুষ প্যাঁচা যদি দক্ষ “জোগানদাতা” হয়, তাহলে স্ত্রী প্যাঁচার জন্য সে প্রচুর খাবার জোগাবে আর তা খেয়ে স্ত্রী প্যাঁচা মোটাসোটা হবে। এই ওজন দেখেই বোঝা যায় সে কয়টা ডিম পাড়বে।

ডিম পাড়ার সময় হলে পুরুষ প্যাঁচাকেই সমস্ত শিকার করতে হয় আর এর জন্য তার অনেক শক্তির দরকার হয়। স্ত্রী প্যাঁচার কাকুতিপূর্ণ ডাক শুনে পুরুষ প্যাঁচা সেই শক্তি পায় কারণ স্ত্রী প্যাঁচা তখন তার পুরো শক্তি ডিম পাড়ার ও এই মূল্যবান ডিমগুলোকে দেখাশোনা করার কাজে লাগায়।

বাসা খুঁজে বের করা

আকাশের ওপর দিয়ে পুরুষ প্যাঁচা যখন শিকার বয়ে নিয়ে যাচ্ছিল তখন আমি আমার বাইনাকুলারটা দিয়ে তাকে দেখেছিলাম। শেষ পর্যন্ত বাসাটা কোথায় তা আমি খুঁজে পাই। ল্যাপল্যান্ড প্যাঁচারা নিজেরা কখনও বাসা বাঁধে না। জঙ্গলের অন্যান্য শিকারি পাখিরা খড়কুটো দিয়ে বাসা বাঁধলে সেটা গিয়ে দখল করে। বাসা না পেলে প্যাঁচারা মরা গাছের গুঁড়িতে থাকে।

ওই বাসার মধ্যে নরম পালকে ঢাকা দুটো ছানা আমি দেখতে পাই, যেগুলো অবাক চোখে চারপাশের সমস্ত কিছু দেখছে। কিচিরমিচির করে ক্ষুধার্ত চোখে তারা মায়ের দিকে তাকিয়েছিল আর মা কাছেই বসে তাদের দেখছিল। এই সময় কেউ যদি বাচ্চাদের খুব কাছে যেতে চায় তবে বিপদ হতে পারে। স্ত্রী প্যাঁচার যদি মনে হয় যে তার বাচ্চাদের ওপর বিপদ আসছে, তাহলে সে নিঃশব্দে উড়ে এসে তীক্ষ্ণ নখ দিয়ে ওই অবাঞ্ছিত অতিথিকে আক্রমণ করবে। তাই, খুব সাবধানে এবং যথেষ্ট দূর থেকে প্যাঁচাদের দেখা উচিত।

খাওয়ানো ও শিক্ষা দেওয়া

পুরুষ প্যাঁচা বাসায় উড়ে এসে তার নখ থেকে শিকারটাকে ঠোঁটে নেয় এবং একটা বাচ্চাকে ইঁদুরটা খেতে দেয়। একটাকে খাওয়ানোর সময় পরের আরেকটা বাচ্চা খাওয়ার জন্য চিৎকার করতে থাকে।

পেট পুরে খাওয়া শেষ হলেই প্রথম বাচ্চাটা একটা মজার কাণ্ড করে। বাচ্চাটার চোখ দুটো এতক্ষণ পর্যন্ত উজ্জ্বল ও পুরোপুরি খোলা ছিল কিন্তু হঠাৎ করে সে এমন করে যেন অনেক মদ খেয়ে একেবারে মাতাল হয়ে গেছে! খাবার হজম করার জন্য সে তার সমস্ত শক্তি কাজে লাগায় এবং শীঘ্রিই নিজেকে গুটিয়ে নরম, তুলতুলে পালকের কুণ্ডলীর মতো হয়ে যায়। কিন্তু, এর কাছেই অন্য যে বাচ্চাটা আছে সেটা ধীরে ধীরে পুরোপুরি চোখ মেলে তাকায় এবং খাওয়া শেষে যে ঢুলু ঢুলু ভাব আসে তার থেকে আবার স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসে।

জুন মাসের মাঝামাঝি পর্যন্ত এভাবেই চলতে থাকে। এর মধ্যে ছোট বাচ্চাগুলোর বয়স প্রায় চার সপ্তা হয়ে যায় আর এগুলো তাদের মায়ের ডাকে ডানা ঝাপটে বাসা থেকে বেরুতে পারে। প্রথমে তারা খুব দক্ষভাবে গাছ বেয়ে উঠতে শেখে। মাটিতে থাকলে শিকারি পশুদের আক্রমণের যতটা ভয় থাকে, গাছে থাকলে ততটা থাকে না।

কিছুদিন পর, বাচ্চারা ডানা ঝাপটে এক ডাল থেকে আরেক ডালে উড়ে যাওয়ার চেষ্টা করে আর এভাবে ওড়ার অভ্যাস করে। কয়েক দিন পর তারা উড়তে শেখে, শিকার করে আর সেইসঙ্গে তাদের চেহারা বদলে যায় ফলে তারাও “জঙ্গলের সবচেয়ে সুন্দর বাসিন্দা” হয়ে ওঠে।

[১৮ পৃষ্ঠার চিত্র সৌজন্যে]

© Joe McDonald

© Michael S. Quinton

[১৯ পৃষ্ঠার চিত্র সৌজন্যে]

© Michael S. Quinton

© Michael S. Quinton