সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

যা দেখা যায় না তা দেখার চেষ্টা করা কী দেখা যায়?

যা দেখা যায় না তা দেখার চেষ্টা করা কী দেখা যায়?

যা দেখা যায় না তা দেখার চেষ্টা করা কী দেখা যায়?

নতুন নতুন কলাকৌশল ব্যবহার করে মানুষ যখন চোখের সামনে থেকে পর্দা সরিয়ে দিয়ে, আগে যা দেখতে পেত না তা দেখে তখন কী হয়? আগে যে সম্বন্ধে সে কিছুই জানত না এখন সেই সম্বন্ধে কিছুটা হলেও জানতে পারে।—নিচের বাক্স দেখুন।

আগে মনে করা হতো যে পৃথিবী মহাবিশ্বের একেবারে কেন্দ্রে অবস্থিত। কিন্তু, দূরবিনের সাহায্যে দেখা গেছে যে পৃথিবী এবং অন্যান্য গ্রহগুলো সূর্যকে ঘিরে নিজ নিজ কক্ষপথে ঘুরছে। কয়েক বছর আগে শক্তিশালী অণুবীক্ষণ যন্ত্র উদ্ভাবন করা হয়েছে আর মানুষ সেই যন্ত্রের সাহায্যে পরমাণুকে পরীক্ষানিরীক্ষা করে দেখতে পেয়েছে যে, বিভিন্ন ধরনের পরমাণু মিলে কীভাবে অণু গঠন করে।

জীবনের জন্য জল একটা অতি দরকারি উপাদান। এক অণু জলের গঠন কীরকম তা দেখুন। তাদের বিন্যাস অনুযায়ী দুই পরমাণু হাইড্রোজেন এক পরমাণু অক্সিজেনের সঙ্গে যুক্ত হয়ে এক অণু জল গঠন করবে। আর এক ফোঁটা জলে এইরকম কোটি কোটি অণু রয়েছে! এক অণু জলের গঠন এবং বিভিন্ন অবস্থায় এর ধর্মগুলো পরীক্ষা করে আমরা কী জানতে পারি?

জলের বিস্ময়

এক ফোঁটা জলকে এমনিতে সরল বলে মনে হলেও, জল খুবই জটিল উপাদান। ইংল্যান্ডের লন্ডনে ইমপেরিয়াল কলেজের বিজ্ঞানবিষয়ক লেখক ড. জন এমস্লে বলেছিলেন যে, “সমস্ত রাসায়নিক পদার্থের মধ্যে এটাকে নিয়েই সবচেয়ে বেশি পরীক্ষানিরীক্ষা করা হয়েছে কিন্তু এর সম্বন্ধেই সবচেয়ে কম জানা গেছে।” নিউ সায়েনটিস্ট পত্রিকা বলেছিল: “পৃথিবীতে জলই হল সবচেয়ে চেনাজানা তরল পদার্থ কিন্তু এটাই আবার সবচেয়ে বেশি রহস্যময়।”

ড. এমস্লে বুঝিয়ে বলেছিলেন যে জলের গঠন সরল হলেও “অন্য কোন পদার্থের ধর্ম এর মতো জটিল নয়।” উদাহরণ হিসেবে তিনি বলেছিলেন: “HO এর আসলে গ্যাস হওয়া উচিত ছিল, . . . কিন্তু এটা তরল। এছাড়াও, এটা যখন জমে বরফ হয় তখন . . . ডুবে না গিয়ে ভেসে থাকে” কিন্তু সাধারণ নিয়ম অনুযায়ী এর ডুবে যাওয়ারই কথা। এই অদ্ভুত ধর্ম সম্বন্ধে আ্যমেরিকান এসোসিয়েশন ফর দ্যা এডভান্সমেন্ট অফ সায়েন্সের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ড. পল ই. ক্লপস্টেগ বলেছিলেন:

“মাছের মতো জলজ প্রাণীদের বেঁচে থাকার জন্য এটাকে একটা অসাধারণ গঠন বলে মনে হয়। একবার ভেবে দেখুন তো জল যদি ঠাণ্ডা হয়ে জমতে শুরু করত ও ওপরে বলা ধর্মটা প্রদর্শন না করত, তাহলে কী হতো। জল জমে বরফ হতে শুরু করত এবং পুরো নদীর জল বরফ না হওয়া পর্যন্ত জমতেই থাকত আর এর ফলে প্রায় সমস্ত জলজ প্রাণীরা মারা যেত।” ড. ক্লপস্টেগ বলেছিলেন, জলের এই অদ্ভুত ধর্ম “প্রমাণ করে যে এই মহাবিশ্বে একজন মহান ও উদ্দেশ্যপরায়ণ ব্যক্তি কাজ করছেন।”

নিউ সায়েনটিস্ট পত্রিকা বলে যে, গবেষকরা এখন মনে করেন তারা জলের এই অদ্ভুত ধর্মের কারণ জানেন। তারাই প্রথম একটা সূত্র উদ্ভাবন করেছেন, যা একেবারে ঠিক ঠিক করে জলের আয়তন বেড়ে যাওয়ার বিষয়টা তুলে ধরে। গবেষকরা বুঝতে পেরেছেন যে, ‘জল ও বরফের আণবিক গঠনে অক্সিজেন পরমাণুগুলোর মধ্যে যে নির্দিষ্ট ফাঁকা জায়গাগুলো রয়েছে সেখানেই এর রহস্য লুকিয়ে আছে।’

এটা কি অসাধারণ নয়? যে অণুকে এমনিতে এত সরল মনে হয় অথচ এর রহস্য বোঝার জন্য মানুষকে কত মাথা ঘামাতে হয়। আর একবার ভেবে দেখুন তো আমাদের শরীরের বেশির ভাগ অংশই জল! আপনিও কি দুটো মৌলিক পদার্থের তিনটে পরমাণু দিয়ে গঠিত এই বিস্ময়কর অণুর মধ্যে ‘একজন মহান ও উদ্দেশ্যপরায়ণ ব্যক্তি যে কাজ করছেন তার প্রমাণ’ দেখতে পান? এক অণু জল এত ক্ষুদ্র যে খালি চোখে দেখা যায় না কিন্তু এর চেয়েও জটিল অনু রয়েছে।

অতি জটিল অণু

এই পৃথিবীতে ৮৮টা প্রাকৃতিক মৌলিক পদার্থ রয়েছে আর কিছু অণু এই মৌলিক পদার্থগুলোর হাজার হাজার পরমাণু দিয়ে গঠিত। উদাহরণ হিসেবে এক অণু ডিএনএ-র (ডি-অক্সিরাইবোনিউক্লিক এসিডের সংক্ষিপ্ত রূপ) কথা বলা যায়, যেটা সমস্ত জীবিত বস্তুর বংশগতির বৈশিষ্ট্য ধারণ করে। আর এই এক অণু ডিএনএ কয়েকটা মৌলিক পদার্থের কোটি কোটি পরমাণু দিয়ে গঠিত!

ডিএনএ অণু এত বেশি জটিল, যা আমরা ধারণা করতে পারি না কিন্তু এর ব্যাস মাত্র ০·০০০০০২৫ মিলিমিটার, এত ছোট যে শক্তিশালী অণুবীক্ষণ যন্ত্র ছাড়া এটা দেখা যায় না। মাত্র ১৯৪৪ সালে বিজ্ঞানীরা আবিষ্কার করেছেন যে ডিএনএ একজন ব্যক্তির বিশেষ কোন বৈশিষ্ট্যর জন্য দায়ী। এটা আবিষ্কারের পর পরই অতি জটিল এই অণুকে নিয়ে ব্যাপক গবেষণা শুরু হয়ে গিয়েছিল।

এই মহাবিশ্বের সমস্ত কিছুই বিভিন্নরকমের অণু দিয়ে গঠিত আর তার মধ্যে ডিএনএ ও জল হল মাত্র দুটো অণু। যেহেতু এমন অনেক অণু রয়েছে যেগুলো জীব ও জড় দুটো বস্তুতেই পাওয়া যায়, তাই বলে কি আমরা ধরে নেব যে জীব ও জড়ের মধ্যে খুব সামান্য পার্থক্য আছে?

বহু দিন ধরে অনেক লোকেরা এইরকমটাই মনে করত। এই বিষয়ে জীবাণুবিজ্ঞানী মাইকেল ডেনটন বলেছিলেন: “১৯২০ ও ৩০ দশকের অনেক বিজ্ঞানীরা আশা করেছিলেন যে জৈবরসায়ন সম্বন্ধে জ্ঞান বাড়লে জীব ও জড় বস্তুর মধ্যে যে পার্থক্য আছে তা দূর করা সম্ভব হবে।” কিন্তু, শেষ পর্যন্ত কী দেখা গিয়েছিল?

জীবন অসাধারণ ও অতুলনীয়

যদিও বিজ্ঞানীরা আশা করেছিলেন যে তারা জীব ও জড় বস্তুর মধ্যবর্তী পরিবর্তনগুলো বা পরিবর্তনের ধারাবাহিক ধাপগুলো খুঁজে পাবেন কিন্তু ডেনটন বলেছিলেন, এগুলোর মধ্যে যে সুনির্দিষ্ট পার্থক্য রয়েছে তা “শেষ পর্যন্ত ১৯৫০ দশকের প্রথম দিকে আণবিক জীববিদ্যা আবিষ্কার হওয়ার পর প্রমাণিত হয়েছে।” এখন বিজ্ঞানীদের কাছে যে বিষয়টা স্পষ্ট হয়ে গেছে সেই সম্বন্ধে ডেনটন আরও বলেছিলেন:

“আমরা এখন শুধু জীব ও জড় জগতের মধ্যে যে পার্থক্য আছে সেটাই জানি না কিন্তু এও জানি যে প্রকৃতির অন্যান্য সমস্ত পার্থক্যের মধ্যে এই পার্থক্যটাই সবচেয়ে বেশি স্পষ্ট ও মৌলিক। একটা জীব কোষ এবং স্ফটিক বা তুষারফলকের মতো সবচেয়ে জটিল অজৈব পদার্থের বিন্যাসের মধ্যে পার্থক্য যতটা ধারণা করা সম্ভব ঠিক ততটাই বিশাল ও নিশ্চিত।”

কিন্তু, এর মানে এই নয় যে একটা অণু সৃষ্টি করা খুব সহজ। অণু থেকে জীবকোষ (ইংরেজি) বই বলে, “একটা ক্ষুদ্র অণুর গঠন প্রণালীর সংশ্লেষণ খুবই জটিল।” এটা আরও বলে, কিন্তু এইরকম অণু সৃষ্টি করা “যে প্রক্রিয়ায় প্রথম সজীব কোষ উৎপন্ন হয়েছে সেই তুলনায় একেবারে সহজ।”

কিছু কোষ স্বতন্ত্রভাবে বেঁচে থাকতে পারে, যেমন ব্যাকটেরিয়া। আবার এগুলো বহুকোষী দেহের অংশ হিসেবে কাজ করে, যেমন মানুষ। সাধারণ আকারের ৫০০টা কোষের আকার ইংরেজি ফুলস্টপের সমান হবে। আর তাই এতে অবাক হওয়ার কিছু নেই যে একটা কোষের কাজ খালি চোখে দেখা যায় না। অণুবীক্ষণ যন্ত্রের সাহায্যে মানুষের শরীরের একটা কোষ দেখার চেষ্টা করলে কী দেখা যাবে?

কোষ—হঠাৎ এমনি এমনি হয়েছে নাকি কেউ তৈরি করেছেন?

সজীব কোষের জটিলতা দেখে একজন ব্যক্তি অবাক না হয়ে পারবে না। বিজ্ঞানবিষয়ক একজন লেখক বলেছিলেন: “সবচেয়ে সরল যে সজীব কোষ রয়েছে তার স্বাভাবিক বৃদ্ধির জন্য একই সময়ে হাজার হাজার রাসায়নিক বিক্রিয়া সংঘটিত হওয়া দরকার।” তিনি জিজ্ঞেস করেছিলেন: “একটা ছোট্ট কোষের মধ্যে একই সঙ্গে কীভাবে ২০,০০০টা বিক্রিয়া সংঘটিত হয়?”

মাইকেল ডেনটন সবচেয়ে ছোট সজীব কোষকে ‘অতি ক্ষুদ্রতম এক কারখানার’ সঙ্গে তুলনা করেছেন ‘যার মধ্যে আছে নিখুঁতভাবে তৈরি হাজার হাজার জটিল অণুপরিমাণ যন্ত্রপাতি, যা লাখ লাখ পরমাণু দিয়ে গঠিত আর মানুষের তৈরি যে কোন যন্ত্র থেকে অনেক বেশি জটিল ও জড় জগতের সঙ্গে এর কোন মিল নেই।’

বিজ্ঞানীরা এখনও কোষের জটিলতাকে বুঝে উঠতে পারেননি, যেমন ২০০০ সালের ১৫ই ফেব্রুয়ারির দ্যা নিউ ইয়র্ক টাইমস বলেছিল: “জীববিজ্ঞানীরা সজীব কোষগুলো সম্বন্ধে যতই জানতে পারছেন, সেগুলো ব্যাখ্যা করা তাদের কাছে ততই কঠিন বলে মনে হচ্ছে। মানুষের দেহের সাধারণ কোষগুলো এত ছোট যে তা খালি চোখে দেখা যায় না কিন্তু যে কোন মুহূর্তে এর ১,০০,০০০ জিনের মধ্যে ৩০,০০০ জিন সক্রিয় ও নিষ্ক্রিয় হতে পারে আর এভাবে কোষকে সক্রিয় রাখার জন্য প্রয়োজনীয় কাজগুলো নিয়ন্ত্রণ করে বা অন্য কোষের বার্তার প্রতি সাড়া দেয়।”

টাইমস জিজ্ঞেস করেছিল: “এত ছোট ও জটিল একটা যন্ত্রকে কীভাবে পরীক্ষা করা যেতে পারে? আর যদি কোন অলৌকিক উপায়ে মানুষের একটা কোষ সম্বন্ধে পুরোপুরি জানা যায়ও, মানুষের শরীরে অন্তত আরও ২০০ রকমের কোষ রয়েছে।”

ন্যাচার পত্রিকা “সৃষ্টির প্রকৃত যন্ত্রগুলো” নামে একটা প্রবন্ধে মানুষের শরীরের প্রতিটা কোষের মধ্যে ছোট্ট মোটর আবিষ্কারের বিষয়ে বলেছিল। এগুলো চক্রাকারে আবর্তিত হয়ে আ্যডিনোসিন ট্রাইফসফেট উৎপন্ন করে, যা হল কোষের শক্তির উৎস। একজন বিজ্ঞানী জিজ্ঞেস করেছিলেন: “আমরা যখন আণবিক যন্ত্রের নকশা ও গঠনকৌশল জানতে পারব, যা কোষের আণবিক প্রক্রিয়ার মতোই তখন কী করব?”

কোষের সৃজনশীল ক্ষমতা সম্বন্ধে একটু ভেবে দেখুন! আমাদের শরীরের শুধু একটা কোষের ডিএনএ-র মধ্যে যে তথ্য রয়েছে, তা লেখার জন্য এই পৃষ্ঠার মতো প্রায় দশ লাখ পৃষ্ঠা দরকার! এর চেয়েও বড় কথা হল, যতবার একটা কোষ বিভাজিত হয়ে আরেকটা নতুন কোষ তৈরি করে ততবার এই একই তথ্য ওই নতুন কোষে চলে যায়। আপনার শরীরে সব মিলিয়ে একশ লাখ কোটি কোষ রয়েছে। এই কোষগুলোতে ওই তথ্য কীভাবে চলে এসেছে বলে আপনি মনে করেন? এটা কি হঠাৎ করে এমনি এমনি হয়েছে নাকি একজন দক্ষ নকশাকারী এটা করেছিলেন?

আপনিও হয়তো জীববিজ্ঞানী রাসেল চার্লস আর্টিস্টের মতো একই সিদ্ধান্তে পৌঁছেছেন। তিনি বলেছিলেন: “[কোষের] উৎপত্তি এবং কীভাবে তা আরও কোষ উৎপন্ন করে চলে, তার কারণ ব্যাখ্যা করতে চাইলে একজন বুদ্ধিমান ব্যক্তি যে এটা সৃষ্টি করেছিলেন তা যদি আমরা মেনে না নিই, তাহলে আমরা কঠিন সমস্যার মুখোমুখি হই।”

এক বিস্ময়কর শৃঙ্খলা

কয়েক বছর আগে কার্টলি এফ. ম্যাদার যখন হারভার্ড ইউনিভারসিটির ভূগোলের অধ্যাপক ছিলেন তখন তিনি এই সিদ্ধান্তে পৌঁছেছিলেন: “আমরা এমন এক মহাবিশ্বে আছি যেটা হঠাৎ এমনি এমনি অস্তিত্বে আসেনি বা নিজের খেয়ালখুশি মতো চলছে না বরং নিয়ম-শৃঙ্খলার মধ্যে চলছে। এটাকে যিনি পরিচালনা করছেন তিনি যুক্তিবাদী এবং সবচেয়ে বেশি সম্মান পাওয়ার যোগ্য। প্রকৃতির অপূর্ব গাণিতিক বিন্যাসের কথা ভেবে দেখুন, যার ফলে আমরা প্রত্যেকটা মৌলিক পদার্থকে পর্যায়ক্রমে আণবিক সংখ্যা দিতে পারি।”

আসুন আমরা ‘প্রকৃতির অপূর্ব গাণিতিক বিন্যাস’ সম্বন্ধে একটু দেখি। প্রাচীন কাল থেকে যে মৌলিক পদার্থগুলোকে * মানুষ চেনে তার মধ্যে রয়েছে সোনা, রুপো, তামা, টিন ও লোহা। মধ্যযুগে অপরসায়নবিদরা আর্সেনিক, বিসমুথ ও আ্যন্টিমনি আবিষ্কার করেন এবং সপ্তদশ শতাব্দীতে আরও অনেক মৌলিক পদার্থ আবিষ্কার করা হয়। ১৮৬৩ সালে বর্ণালীবীক্ষণ যন্ত্র, যেটা প্রত্যেকটা মৌলিক পদার্থের স্বতন্ত্র রংগুলোকে আলাদা করতে পারে, সেটা ব্যবহার করে ইনডিয়ামকে শনাক্ত করা হয়েছিল আর সেটাই ছিল ৬৩ নং মৌলিক পদার্থ।

ওই সময় রুশ রসায়নবিদ দিমিত্রি ইভানোভিচ মিনডিলেইফ বলেছিলেন যে, মৌলিক পদার্থগুলোকে বিশৃঙ্খলভাবে সৃষ্টি করা হয়নি। শেষে ১৮৬৯ সালের ১৮ই মার্চ রাশিয়ান কেমিক্যাল সোসাইটিতে “মৌলিক পদার্থের পর্যায়ক্রমিক বিন্যাসের তত্ত্ব” নামে তার লেখা প্রবন্ধটা পড়া হয়। ওই প্রবন্ধে তিনি বলেছিলেন যে “[মৌলিক পদার্থগুলোর] বিন্যাস হঠাৎ এমনি এমনি হয়নি যেমন অনেকে মনে করতে পারে . . . বরং এটা নির্দিষ্ট এবং যথাযথ নিয়ম অনুযায়ী হয়েছে।”

এই বিখ্যাত প্রবন্ধে মিনডিলেইফ ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন: “আমাদের এখনও আ্যলুমিনিয়াম ও সিলিকনের মতো ৬৫ থেকে ৭৫ আণবিক ওজনের অজ্ঞাত মৌলিক পদার্থগুলো আবিষ্কার করার আশা করা উচিত।” মিনডিলেইফ ১৬টা নতুন মৌলিক পদার্থের জন্য জায়গা খালি রেখেছিলেন। যখন তার এই ভবিষ্যদ্বাণীর প্রমাণ চাওয়া হয়েছিল তখন তিনি বলেছিলেন: “আমার কোন প্রমাণের দরকার নেই। প্রকৃতির নিয়ম ব্যাকরণের নিয়মের মতো নয় আর এর কোন ব্যতিক্রম নেই।” তিনি আরও বলেছিলেন: “আমি বিশ্বাস করি যে আমার বলা অজ্ঞাত মৌলিক পদার্থগুলো যখন আবিষ্কৃত হবে, তখন লোকেরা আমাদের অনেক সম্মান করবে।”

আর ঠিক হয়েছিলও তাই! এনসাইক্লোপিডিয়া আ্যমেরিকানা বলে: ‘পরের ১৫ বছরে গ্যালিয়াম, স্ক্যান্ডেনিয়াম ও জার্মেনিয়াম আবিষ্কৃত হয়, যেগুলোর ধর্ম মিনডিলেইফের বলা মৌলিক পদার্থের সঙ্গে অনেক মিল রয়েছে আর এভাবেই পর্যায়সারণীর সত্যতা প্রমাণিত হয়েছিল এবং এর নির্মাতা বিখ্যাত হয়ে গিয়েছিল।” বিংশ শতাব্দীর প্রথম দিকে সমস্ত মৌলিক পদার্থ আবিষ্কৃত হয়।

গবেষক রসায়নবিদ এলমার ডব্লিউ. মোরের বলেছিলেন “এই সুন্দর বিন্যাস হঠাৎ এমনি এমনি হতে পারে না।” মৌলিক পদার্থগুলোর সমন্বয়পূর্ণ বিন্যাস হঠাৎ এমনি এমনি হয়েছে কি না সেই সম্বন্ধে রসায়নের অধ্যাপক জন ক্লিভল্যান্ড কথ্রান বলেছিলেন: “যে মৌলিক পদার্থগুলো পাওয়া যাবে বলে [মিনডিলেইফ] ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন, তার সবগুলো আবিষ্কার হওয়ায় এবং তার ভবিষ্যদ্বাণী অনুযায়ী সেগুলোর ধর্ম প্রায় একইরকম হওয়ায় এইরকম কোন সম্ভাবনা থাকতে পারে না। তার বিখ্যাত সূত্রকে কখনোই ‘পর্যায় হঠাৎ’ বলা হয়নি বরং এটাকে ‘পর্যায় সূত্র’ বলা হয়।”

মৌলিক পদার্থগুলো নিয়ে ব্যাপক গবেষণা করে এবং সেগুলো কীভাবে মহাবিশ্বের সমস্ত কিছু গঠন করার জন্য একে অন্যের সঙ্গে যুক্ত হয় তা জানার পর ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন গণিত অধ্যক্ষ ও বিখ্যাত পদার্থবিদ পি. এ. এম. ডিরেক বলেছিলেন: “একজন এই পরিস্থিতিকে এভাবে বর্ণনা করে বলতে পারেন যে ঈশ্বর হলেন একজন উচ্চমানের গণিতবিদ্‌, মহাবিশ্বকে তৈরি করার সময় তিনি এক অত্যন্ত আধুনিক অংকের ব্যবহার করেছেন।”

খালি চোখে দেখা যায় না এমন অতি ক্ষুদ্র পরমাণু, অণু ও সজীব কোষ এবং আমাদের দৃষ্টিসীমার বাইরের বিরাটকায় ছায়াপথগুলোকে দেখে সত্যিই অবাক হতে হয়! এটা আমাদের বলে দেয় যে আমরা কত নগণ্য। আপনার কি এরকম মনে হয়? এগুলোতে আপনি কী দেখতে পান? আপনার চোখ যা দেখতে পায়, তার চেয়েও বেশি কিছু কি আপনি দেখতে পান?

[পাদটীকা]

^ মৌলিক পদার্থগুলোতে শুধু একরকমের পরমাণু রয়েছে। পৃথিবীতে কেবল ৮৮টা প্রাকৃতিক মৌলিক পদার্থ আছে।

[৫ পৃষ্ঠার বাক্স/চিত্রগুলো]

এত দ্রুত যে চোখে পড়ে না

যেহেতু ঘোড়া খুব দ্রুত দৌড়ায়, তাই ছুটে চলার সময় একটা নির্দিষ্ট মুহূর্তে এর চার পা-ই মাটি থেকে ওপরে উঠে যায় কি না, এই নিয়ে উনিশ শতাব্দীর লোকেদের মধ্যে তর্কবিতর্ক হতো। অবশেষে, ১৮৭২ সালে এডওয়ার্ড মায়ব্রিজ আলোকচিত্র নিয়ে পরীক্ষানিরীক্ষা করতে শুরু করেছিলেন আর এভাবেই পরে বিষয়টা মিটমাট হয়েছিল। তিনিই প্রথমে দ্রুতগতিতে ছুটে চলা কোন কিছুর ছবি তোলার কৌশল উদ্ভাবন করেন।

মায়ব্রিজ ২৪টা ক্যামেরাকে এক সারিতে একটু দূরে দূরে রেখেছিলেন। প্রত্যেকটা ক্যামেরার শাটার থেকে একটা করে দড়ি পথের ওপর রাখা হয়, যাতে ঘোড়া ওই পথের ওপর দিয়ে দৌড়ে যাওয়ার সময় এর পায়ের আঘাতে দড়িতে টান পড়ে শাটারগুলো খুলে যায়। এভাবে তোলা ছবিগুলো পরীক্ষা করে দেখে গেছে যে, একসময় ঘোড়ার চারটে পা-ই মাটি থেকে পুরোপুরি ওপরে উঠে যায়।

[সৌজন্যে]

Courtesy George Eastman House

[৭ পৃষ্ঠার চিত্র]

বরফ ডুবে না গিয়ে জলে ভাসে কেন?

[৭ পৃষ্ঠার চিত্র]

একটা ডিএনএ অণুর ব্যাস ০·০০০০০২৫ মিলিমিটার কিন্তু এতে যে তথ্য রয়েছে তা লিখতে দশ লাখ পৃষ্ঠা লাগবে

[সৌজন্যে]

Computerized model of DNA: Donald Struthers/Tony Stone Images

[৮ পৃষ্ঠার চিত্র]

মানুষের শরীরে একশ লাখ কোটি কোষ রয়েছে আর প্রত্যেকটা কোষে একই সময়ে হাজার হাজার রাসায়নিক বিক্রিয়া সংঘটিত হয়

[সৌজন্যে]

Copyright Dennis Kunkel, University of Hawaii

[৯ পৃষ্ঠার চিত্রগুলো]

রুশ রসায়নবিদ মিনডিলেইফ বলেছিলেন যে, মৌলিক পদার্থগুলোকে বিশৃঙ্খলভাবে সৃষ্টি করা হয়নি

[সৌজন্যে]

Courtesy National Library of Medicine