সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

যৌন হয়রানিকে আমি কীভাবে মোকাবিলা করতে পারি?

যৌন হয়রানিকে আমি কীভাবে মোকাবিলা করতে পারি?

যুবক-যুবতীদের জিজ্ঞাস্য . . .

যৌন হয়রানিকে আমি কীভাবে মোকাবিলা করতে পারি?

“ছেলেরা শিস দেয় ও আজেবাজে মন্তব্য করে।”—কার্লা, আয়ারল্যান্ড।

“মেয়েরা বার বার ফোন করে। তারা তোমাকে দুর্বল করে দিতে চায়।”—জেসন, আমেরিকা।

“সে আমার হাত ধরার চেষ্টা করত।”—ইয়োকিকো, জাপান।

“মেয়েরা আমার দিকে তাকিয়ে খারাপ ইঙ্গিত করে।”—আলেকজান্ডার, আয়ারল্যান্ড।

“স্কুল বাস থেকে একটা ছেলে সবসময় আমাকে দেখে কিছু না কিছু বলত। সে কিন্তু সত্যি সত্যি আমার প্রেমে পড়েনি। সে শুধুই আমাকে হয়রানি করত।”—রোজিলিন, আমেরিকা।

খারাপ চাহনি, অশ্লীল ইঙ্গিতপূর্ণ “প্রশংসা,” অশালীন রসিকতা, সবার সামনে গায়ে হাত দেওয়া। কারও ইচ্ছার বিরুদ্ধে বার বার এগুলো করে যখন কাউকে বিরক্ত করা হয় তখন সেটাকে যৌন হয়রানি বলা যেতে পারে। সারা পৃথিবীতে মোট কতজন যৌন হয়রানির শিকার হয় তা বের করা খুবই কঠিন, তবুও বিভিন্ন সমীক্ষা থেকে দেখা যায় যে আমেরিকাতে স্কুলের বেশির ভাগ ছেলেমেয়েরাই এর শিকার হয়েছে।

যৌন হয়রানি বলতে আসলে কী বোঝায়? ড. ভিক্টোরিয়া শ তার লেখা যৌন হয়রানি ও লিঙ্গ বৈষম্যকে মোকাবিলা করা (ইংরেজি) বইয়ে এর মানে কী তা বুঝিয়ে দিয়েছেন। যৌন হয়রানি হল “কাউকে যৌনভাবে উত্ত্যক্ত করা . . . এটা শারীরিক (যৌন কামনা নিয়ে কারও গায়ে হাত দেওয়া), মৌখিক (কারও চেহারা ও শরীরের গঠন সম্বন্ধে অবাঞ্ছিত মন্তব্য করা) বা নীরবেও করা যেতে পারে।” কখনও কখনও কুপ্রস্তাবও হয়রানির মধ্যে পড়ে।

স্কুলে সাধারণত তোমার বন্ধুরাই তোমাকে হয়রানি করতে পারে। কিন্তু মাঝে মাঝে বড়রাও, যেমন শিক্ষকরা আপত্তিকর আচরণ করে থাকেন। রেডবুক পত্রিকার একটা প্রবন্ধ বলে যে হাতে গোনা মাত্র কয়েকজন শিক্ষক যৌন হয়রানির দোষে ধরা পড়েন কিন্তু “হাজার হাজার দোষী শিক্ষকরা পর্দার আড়ালেই থেকে যান।”

বাইবেলের সময়েও মেয়েরা এবং কখনও কখনও ছেলেরাও এইরকম হয়রানির শিকার হয়েছিল। (আদিপুস্তক ৩৯:৭; রূতের বিবরণ ২:৮, ৯, ১৫) আর বাইবেল এই বিষয়ে ভবিষ্যদ্বাণী করেছিল: “শেষ কালে কঠিন সময় আসবে। লোকেরা স্বার্থপর হবে, লোভী হবে, অহংকার করবে এবং নিজেকে বড় মনে করবে; তারা অন্যকে অপমান করবে . . . ; দয়া দেখাবে না, করুণা দেখাবে না, অন্যের নামে মিথ্যা রটাবে, হিংস্র ও প্রচণ্ড হবে।” (২ তীমথিয় ৩:১-৩, টুডেস ইংলিশ ভারসন) তাই, এতে অবাক হওয়ার কিছু নেই যে তুমিও হয়তো যৌন হয়রানির শিকার হবে।

ঈশ্বর এটাকে যেভাবে দেখেন

এটা ঠিক যে যৌন হয়রানির শিকার হলে সব যুবক-যুবতীই মন খারাপ করে না। অন্যকে হয়রানি করে কেউ কেউ মজা পায়, আবার কেউ কেউ এটাকে হাসিঠাট্টা বলে মনে করে। আমেরিকায় করা একটা সমীক্ষা থেকে দেখা গিয়েছিল, যৌন হয়রানির শিকার হয়েছে এমন লোকেদের মধ্য শতকরা ৭৫ জনই স্বীকার করেছিল যে, তারা নিজেরাও অন্যদের হয়রানি করেছে। কিছু লোকেরা যৌন হয়রানিকে হালকাভাবে নিয়ে এবং উঠতি বয়সের ছেলেমেয়েরা এরকম একটু আধটু করে থাকে বলে উড়িয়ে দিয়ে এই সমস্যাকে আরও বাড়িয়ে তুলতে পারে। কিন্তু ঈশ্বর এটাকে কীভাবে দেখেন?

ঈশ্বরের বাক্য বাইবেল সবরকমের যৌন হয়রানিকেই খারাপ বলে। সেখানে আমাদের বলা হয়েছে যৌনতা সম্বন্ধে যে আইন আছে তা অমান্য করে আমরা যেন অন্যদের “অধিকারের ওপর হস্তক্ষেপ” না করি। (১ থিষলনীকীয় ৪:৩-৮, NW) আর বিশেষ করে যুবকদের বলা হয়েছে তারা যেন “যুবতীদিগকে সম্পূর্ণ শুদ্ধ ভাবে ভগিনীর ন্যায়” দেখে। (১ তীমথিয় ৫:১, ২) এছাড়াও বাইবেল ‘নোংরা ঠাট্টা-তামাশা’ করতেও নিষেধ করে। (ইফিষীয় ৫:৩, ৪, প্রেমের বাণী) তাই, হয়রানির শিকার হলে রাগ হওয়ার, মন খারাপ করার, হতভম্ব হয়ে পড়ার আর এমনকি হীনমন্যতায় ভোগার যুক্তিসংগত কারণ তোমার রয়েছে!

আমার কী করা উচিত?

কেউ যদি তোমাকে এভাবে হয়রানি করে তখন তোমার কী করা উচিত? অনেক সময় নরমভাবে বা অস্পষ্ট করে কিছু বললে হয়রানি আরও বেড়ে যায়। বাইবেল আমাদের জানায় যে যোষেফকে যখন তার মালিকের স্ত্রী ব্যভিচারের প্রস্তাব দিয়েছিল তখন যোষেফ তাকে নরম স্বরে না বলেননি। বরং ওই অনৈতিক প্রস্তাবে তিনি জোর গলায় না বলেছিলেন। (আদিপুস্তক ৩৯:৮, ৯, ১২) একইভাবে আজকেও দৃঢ় মনোভাব দেখানো ও স্পষ্ট করে না বলা, হয়রানির হাত থেকে নিজেকে বাঁচানোর সবচেয়ে ভাল উপায়।

তবে কেউ বিরক্ত করলে তার মানে এই নয় যে সে তোমাকে হয়রানি করছে। এটাকে হয়তো হয়রানি বলে মনে হতে পারে কিন্তু আসলে সে তোমার মনোযোগ আকর্ষণ করতে চাইছে। তাই, মনে কর না যে তার এই যেচে এসে ঘনিষ্ঠ হওয়ার চেষ্টাকে থামিয়ে দেওয়ার জন্য তোমাকে তার সঙ্গে খুব খারাপ ব্যবহার করতে হবে। ‘আমি এধরনের কথা পছন্দ করি না’ বা ‘দয়া করে আমার গায়ে হাত দেবে না’ এইরকম কিছু বললেই হয়তো সে তোমার মনোভাব বুঝে নেবে। তবে খেয়াল রাখবে তোমার কথার যেন দাম থাকে। তোমার না যেন না-ই হয়! আন্দ্রিয়া নামের এক যুবতী এই বিষয়ে বলে: “তারা যদি তোমার কথা না বোঝে, তাহলে তাদেরকে তোমার সরাসরি বলতে হবে। আর বেশির ভাগ সময় সরাসরিই বলতে হয়।” ‘এরকম করবে না বা এরকম কথা বলবে না’ কথাগুলো জোর গলায় বললে কাজ হতে পারে।

কিন্তু তারপরও যদি কেউ তোমাকে হয়রানি করেই চলে, তাহলে তা আর একা একা সামলানোর চেষ্টা কর না। বাবামা অথবা অন্য কোন অভিজ্ঞ লোকেদের সঙ্গে এই বিষয়টা নিয়ে কথা বল। এই পরিস্থিতিকে কীভাবে মোকাবিলা করা যায় সেই বিষয়ে তারা হয়তো কিছু বাস্তব পরামর্শ দেবেন। কিন্তু, কোনভাবেই তা থামাতে না পারলে শেষ পর্যন্ত তারা হয়তো স্কুল কর্তৃপক্ষকে তা জানাতে পারেন। এতে তোমার হয়তো কিছুটা অস্বস্তি লাগতে পারে কিন্তু এর ফলে তোমাকে হয়তো আর হয়রানির শিকার হতে হবে না।

হয়রানি করার সুযোগ না দেওয়া

তবে হয়রানি করার সুযোগ না দিলেই সবচেয়ে ভাল হয়। তা কীভাবে করা যায়? এই বিষয়ে আন্দ্রিয়া পরামর্শ দেয়: “তোমার আচারব্যবহারে যেন কখনোই প্রকাশ না পায় যে তুমি কাউকে পছন্দ কর। কারণ এটা অন্যেরা জানবে আর এর ফলে তোমার ওপর চাপ আসতেই থাকবে।” এই ব্যাপারে তোমার কাপড়চোপড়ও কিন্তু অনেকখানি ভূমিকা রাখে। মারা নামের এক যুবতী বলে: “আমি দিদিমা-ঠাকুমাদের মতো কাপড়চোপড় পরতে পছন্দ করি না কিন্তু তাই বলে আমি আবার সেইরকমের কাপড়চোপড়ও পরি না, যেগুলো আমার শরীরকে আকর্ষণীয় করে তোলে।” তুমি যদি অনৈতিক প্রস্তাবে না কর অথচ যৌন উত্তেজনাকে বাড়িয়ে তোলে এমন কাপড়চোপড় পর, তাহলে তা দুরকম ধারণা দিতে পারে। বাইবেল “ভদ্রভাবে ও ভাল বিচারবুদ্ধি ব্যবহার করে” কাপড়চোপড় পরার পরামর্শ দেয়।—১ তীমথিয় ২:৯, প্রে.বা.

লোকেরা তোমার সঙ্গে কীরকম ব্যবহার করবে সেটা তোমার বন্ধুরা কেমন তার ওপরও নির্ভর করে। (হিতোপদেশ ১৩:২০) রোজিলিন বলে: “একটা দলের মধ্যে কয়েকটা মেয়ে যদি ছেলেদের মনোযোগ কাড়তে চায়, তাহলে ছেলেরা ভেবে নিতে পারে যে ওই দলের সব মেয়েই বুঝি এরকম।” কার্লাও একই কথা বলে: “তুমি যদি এমন ছেলেমেয়েদের সঙ্গে মেলামেশা কর যারা চুপচাপ মন্তব্য শুনে যায় বা চায় অন্যরা তার দিকে নজর দিক, তাহলে তুমিও হয়রানির শিকার হবে।”

বাইবেলে দীণা নামে একটা মেয়ের কথা বলা আছে। সে কনান দেশের মেয়েদের সঙ্গে মেলামেশা করেছিল, যে দেশের মেয়েরা চরিত্রহীনা বলে পরিচিত ছিল। আর এর ফলে দীণা যৌন হয়রানির শিকার হয়েছিল। (আদিপুস্তক ৩৪:১, ২) তাই বাইবেল ঠিক কথাই বলে: “তোমরা ভাল করিয়া দেখ, কিরূপে চলিতেছ; অজ্ঞানের ন্যায় না চলিয়া জ্ঞানবানের ন্যায় চল।” (ইফিষীয় ৫:১৫) হ্যাঁ, কীরকম কাপড়চোপড় পর, কীভাবে কথা বল এবং কাদের সঙ্গে মেলামেশা কর তা ‘ভাল করিয়া’ দেখে তুমি নিজেকে হয়রানির হাত থেকে বাঁচাতে পার।

কিন্তু, একজন খ্রীষ্টান যুবক বা যুবতীর জন্য হয়রানির হাত থেকে রেহাই পাওয়ার সবচেয়ে ভাল উপায় হল তার ধর্ম সম্বন্ধে অন্যদের জানানো। টিমন নামের এক যিহোবার সাক্ষি যুবক বলে: “আমার সহপাঠীরা জানত যে আমি একজন সাক্ষি আর তাই প্রায় সবরকমের হয়রানির হাত থেকেই আমি রেহাই পেয়ে গিয়েছিলাম।” আন্দ্রিয়া বলে: “তুমি যে একজন সাক্ষি তা তাদেরকে বললে পরিস্থিতি একেবারে অন্যরকম হয়ে যায়। তারা বুঝতে পারবে যে অনেক দিক দিয়েই তুমি তাদের চেয়ে আলাদা আর নৈতিক ব্যাপারে তুমি খুবই দৃঢ়।”—মথি ৫:১৫, ১৬.

হয়রানির শিকার হলে

প্রাণপণ চেষ্টা করার পরও অভদ্র, খারাপ লোকেদের হাত থেকে তুমি পুরোপুরি রেহাই পাবে না। তাই অন্যে যদি তোমাকে হয়রানি করে, যতক্ষণ পর্যন্ত তুমি একজন খ্রীষ্টানের মতো আচারণ কর ততক্ষণ পর্যন্ত নিজেকে দোষী ভাবার কোন কারণ নেই। (১ পিতর ৩:১৬, ১৭) এটা যদি তোমার মনে কাঁটার মতো বিধঁতে থাকে, তাহলে তোমার বাবামা বা মণ্ডলীর অভিজ্ঞ ভাইবোনদের সঙ্গে কথা বল। রোজিলিন স্বীকার করে যে, একজন যখন হয়রানির শিকার হয় তখন তার পক্ষে হাসিখুশি থাকা খুবই মুশকিল হয়। সে বলে, “যাকে তুমি তোমার মনের কথা খুলে বলতে পারবে, তেমন কারও সঙ্গে মেলামেশা করে অনেক উপকার পাবে।” এছাড়াও মনে রাখবে যে “সদাপ্রভু সেই সকলেরই নিকটবর্ত্তী, যাহারা তাঁহাকে ডাকে।”—গীতসংহিতা ১৪৫:১৮, ১৯.

খারাপ ব্যবহারকে রোখা খুব সহজ নয় কিন্তু তা করাই সঠিক। উদাহরণ হিসেবে বাইবেলের শূনেমীয়া যুবতীর কথা ভেবে দেখ। আজকে হয়রানি বলতে যা বোঝায় সে যদিও সেইরকম হয়রানির শিকার হয়নি কিন্তু সে যিহূদার ধনী ও ক্ষমতাবান রাজা শলোমনের কাছ থেকে অবাঞ্ছিত প্রস্তাব পেয়েছিল। যেহেতু সে অন্য আরেক ছেলেকে ভালবাসত, তাই শলোমনের প্রস্তাবে সে রাজি হয়নি। আর এই কারণেই সে গর্ব করে নিজের বিষয়ে বলতে পেরেছিল: “আমি ভিত্তিস্বরূপা।”—পরমগীত ৮:৪, ১০.

তার মতো তুমিও নৈতিক দিক দিয়ে অটল থাক ও দৃঢ়সংকল্প হও। যখন কোন অবাঞ্ছিত প্রস্তাব আসে তখন “ভিত্তিস্বরূপা” হও। সবাইকে তোমার খ্রীষ্টীয় বিশ্বাস সম্বন্ধে জানাও। তা করে তুমি “অনিন্দনীয় ও অমায়িক” থাকতে পারবে এবং তোমার আত্মবিশ্বাস থাকবে যে তুমি ঈশ্বরকে খুশি করেছ।—ফিলিপীয় ২:১৫. *

[পাদটীকা]

^ যৌন হয়রানি সম্বন্ধে মে ২২, ১৯৯৬; আগস্ট ২২, ১৯৯৫ এবং মে ২২, ১৯৯১ সংখ্যার সচেতন থাক! (ইংরেজি) পত্রিকায় আরও পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

[২৬ পৃষ্ঠার চিত্র]

খ্রীষ্টীয় বিশ্বাস সম্বন্ধে লোকেদের জানালে তা তোমাকে সুরক্ষা জোগাতে পারে

[২৬ পৃষ্ঠার চিত্র]

খারাপ ছেলেমেয়েদের সঙ্গে মেলামেশা না করে তুমি হয়রানির হাত থেকে নিজেকে বাঁচাতে পার