আপনার জীবনের ওপর কি রাশিচক্রের প্রভাব পড়তে দেওয়া উচিত?
বাইবেলের দৃষ্টিভঙ্গি
আপনার জীবনের ওপর কি রাশিচক্রের প্রভাব পড়তে দেওয়া উচিত?
“গ্রহনক্ষত্রের অবস্থান বিচার করে ভাগ্য গণনা করতে চায় এমন লোকের অভাব নেই, তা সে যুবকই হোক বা বৃদ্ধই হোক।”—পোপ দ্বিতীয় জন পল।
আমেরিকায় করা একটা সমীক্ষা থেকে জানা যায় যে, সেখানকার প্রতি ৪ জনের মধ্যে ১ জন লোক কোন সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে তাদের রাশি পরীক্ষা করে। শুধু এই দেশেই রাশিচক্র গণনা করা হয় না। পৃথিবীর প্রায় সমস্ত দেশেই টাকাপয়সা, বিদেশ যাওয়ার পরিকল্পনা, পেশা বদল, বিয়ের তারিখ ঠিক করা এবং রণকৌশল সম্বন্ধে পরামর্শের জন্য রাশিচক্র যাচাই করা হয়। দাবি করা হয় যে একজন ব্যক্তির রাশি তার পছন্দসই জীবনসঙ্গীকে খুঁজে পেতে সাহায্য করতে পারে আর এমনকি তা জানিয়ে দিতে পারে যে কোন্ স্বামীস্ত্রীর কখনোই বনিবনা হবে না। এই কারণে প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের লক্ষ লক্ষ লোক জ্যোতিষীবিদ্যার দিকে ঝুঁকে পড়েছে। কিন্তু প্রশ্ন হল যে, এই রাশিচক্র কোথা থেকে এসেছে?
ইতিহাস
প্রাচীনকালের চেনাজানা সভ্যতাগুলোতে বিভিন্ন ধরনের রাশিচক্রের প্রমাণ পাওয়া যায়। এমনকি বাইবেলও “গ্রহগণের [“রাশিচক্রের নক্ষত্রপুঞ্জের,” NW]” কথা বলে। (২ রাজাবলি ২৩:৫) প্রাচীনকালে হিন্দুরা ও সেইসঙ্গে চৈনিক, মিশরীয়, গ্রিক এবং আরও অন্যান্য লোকেরা রাশিচক্র গণনা করত বলে প্রমাণ পাওয়া যায়। কিন্তু সবচেয়ে প্রথমে প্রাচীন বাবিলনে রাশিচক্রের হদিস পাওয়া যায়।
বাবিলনীয়রা ভবিষ্যৎ জানার জন্য জ্যোতির্বিদ্যা গড়ে তুলেছিল। গ্রহনক্ষত্রের গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করে তারা বিভিন্ন ছক ও সারণী তৈরি করেছিল। এগুলো দিয়েই মানুষের ভাগ্য গণনা করা হতো এবং পৃথিবীতে কী কী ঘটনা ঘটবে, তা আগেই বলে দেওয়া হতো। অনেক সময় রাজনৈতিক বা সামরিক ব্যাপারে কোন সিদ্ধান্ত নেওয়া হতো না যতক্ষণ পর্যন্ত না জ্যোতিষীদের ডেকে তাদের পরামর্শ নেওয়া হতো। এই কারণেই বিশেষ জ্ঞান ও দৈব শক্তি রয়েছে বলে দাবি করত এমন এক শ্রেণীর পুরোহিতরা বেশ প্রভাবশালী হয়ে উঠেছিল। বাবিলনের সমস্ত বড় বড় মন্দিরে একটা করে মানমন্দির ছিল।
আজকেও রাশিচক্র অনেক লোকেদের জীবনের ওপর গভীর প্রভাব ফেলে। যারা কোষ্ঠী বিশ্বাস করে না বলে দাবি করে এমনকি তারাও হয়তো কখনও কখনও নিছক কৌতূহলের বশে বা মজা করার জন্য তা গণনা করে থাকে। এটা ঠিক যে জ্যোতিষীদের কিছু কিছু ভবিষ্যদ্বাণী ফলে গিয়েছে। কিন্তু এর মানে কি এই যে রাশিচক্র গণনা করে কোন উপকার পাওয়া যায়? ঈশ্বরের প্রাচীনকালের দাসেরাই বা জ্যোতির্বিদ্যাকে কোন্ চোখে দেখতেন?
লুকনো বিপদ
বিশ্বস্ত যিহুদিরা বাবিলনীয়দের মতো জ্যোতির্বিদ্যায় বিশ্বাস করত না আর তা না করার পিছনে সঠিক কারণও ছিল। ঈশ্বর তাদের স্পষ্টভাবে সাবধান করে দিয়েছিলেন: “তোমার মধ্যে যেন এমন কোন লোক পাওয়া না যায়, . . . যে মন্ত্র ব্যবহার করে, বা গণক, বা মোহক, বা মায়াবী, বা ঐন্দ্রজালিক, বা ভূতড়িয়া, বা গুণী বা প্রেতসাধক। কেননা সদাপ্রভু এই সকল কার্য্যকারীকে ঘৃণা করেন।” (বাঁকা অক্ষরে মুদ্রণ আমাদের।) *—দ্বিতীয় বিবরণ ১৮:১০-১২.
ঈশ্বরের দাসেরা জ্যোতির্বিদ্যার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিয়েছিলেন। যেমন, বিশ্বস্ত রাজা যোশিয় “যাহারা বালের, সূর্য্যের ও চন্দ্রের এবং গ্রহগণের [“রাশিচক্রের নক্ষত্রপুঞ্জের,” NW] . . . উদ্দেশে ধূপ জ্বালাইত, তাহাদিগকে তিনি নিবৃত্ত করিলেন।” যোশিয়ের এই কাজকে “সদাপ্রভুর সাক্ষাতে . . . ন্যায্য” বলা হয়েছিল আর এইজন্য ঈশ্বর তাকে আশীর্বাদও করেছিলেন। (২ রাজাবলি ২২:২; ২৩:৫) কিন্তু কেউ কেউ হয়তো জিজ্ঞেস করতে পারেন, ‘সব না হলেও জ্যোতিষীদের কিছু কিছু ভবিষ্যদ্বাণী কি ফলে না?’
আগ্রহের বিষয় হল যে, আমরা খ্রীষ্টান গ্রিক শাস্ত্রে একটা মেয়ের কথা দেখতে পাই যে “ভাগ্য-কথন দ্বারা তাহার কর্ত্তাদের বিস্তর লাভ জন্মাইত।” কোন সন্দেহ নেই যে, এই মেয়ের কিছু ভবিষ্যদ্বাণী ফলেছিল কারণ তার কর্তারা তার এই ক্ষমতার জন্য অনেক লাভবান হয়েছিলেন। কিন্তু, এই মেয়ের ভবিষ্যৎ বলার যে ক্ষমতা তার পিছনে কে ছিল? বাইবেল বলে যে সে “দৈবজ্ঞ আত্মাবিষ্টা” ছিল।—প্রেরিত ১৬:১৬.
বাইবেল জানায়, “সমস্ত জগৎ সেই পাপাত্মার মধ্যে শুইয়া রহিয়াছে” অর্থাৎ শয়তান দিয়াবলের অধীনে রয়েছে। (১ যোহন ৫:১৯) শয়তান ও মন্দ দূতেরা কিছু কিছু ভবিষ্যদ্বাণীকে সত্য প্রমাণ করার জন্য কোন কোন ঘটনাকে সেভাবে ঘটায় আর এভাবেই তারা লক্ষ লক্ষ লোকেদের আকৃষ্ট করেছে।
আসলে জ্যোতির্বিদ্যা হল ‘দিয়াবলের একটা চাতুরী,’ যা কাজে লাগিয়ে সে লোকেদের নিয়ন্ত্রণ ও তাদেরকে প্রভাবিত করে যাতে তারা তার উদ্দেশ্যকে সফল করার জন্য কাজ করে। তাই, এতে অবাক হওয়ার কিছুই নেই যে বাইবেল খ্রীষ্টানদেরকে শয়তানের ধূর্ত চাতুরীগুলো যার একটা হল জ্যোতির্বিদ্যা, তার বিরুদ্ধে “দাঁড়াইতে” পরামর্শ দেয়। (ইফিষীয় ৬:১১) তাহলে, এর মানে কি এই যে ভবিষ্যৎ সম্বন্ধে কোন নির্দেশনাই আমাদের দেওয়া হয়নি?
বাইবেল—এক নির্ভরযোগ্য নির্দেশিকা
আজকে লক্ষ লক্ষ লোকেরা প্রমাণ পেয়েছেন যে, বিভিন্ন সিদ্ধান্ত নেওয়ার ব্যাপারে বাইবেল এক নির্ভরযোগ্য নির্দেশিকা। এই বিষয়ে গীতরচক দায়ূদ বলেছিলেন, “সদাপ্রভুর সাক্ষ্য বিশ্বসনীয়, অল্পবুদ্ধির জ্ঞানদায়ক।” (গীতসংহিতা ১৯:৭; ১১৯:১০৫) কিন্তু এর মানে এই নয় যে, একজন ব্যক্তি কখন কী করবে না করবে তার সবকিছুই বাইবেল পরিষ্কার করে বলে দেবে। তবে ঈশ্বরের বাক্যে নীতি দেওয়া আছে যেগুলো আমাদের জ্ঞানেন্দ্রিয়গুলোকে প্রশিক্ষিত করতে পারে। আর এতে করে আমরা কোন্টা ভাল ও কোন্টা খারাপ, তা বুঝতে পারব এবং সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারব।—ইব্রীয় ৫:১৪.
এই কারণেই সত্য খ্রীষ্টানরা শখ বা নিছক কৌতূহলের বশে কোষ্ঠী গণনা করেন না। বরং তারা মন্দ দূতেদের চাতুরীগুলোর বিরুদ্ধে ঈশ্বরের বাক্যে যে সাবধানবাণীগুলো দেওয়া আছে তা মেনে চলেন। রাশিচক্রকে নয় বরং বাইবেলকে আপনার জীবনের ওপর প্রভাব ফেলতে দিয়ে আপনি চিরজীবন ঈশ্বরের আশীর্বাদ পেতে পারেন।—গীতসংহিতা ৩৭:২৯, ৩৮.
(g০০ ১১/৮)
[পাদটীকা]
^ গণক বলতে দৈব শক্তির মাধ্যমে সমস্ত ধরনের জ্ঞান, বিশেষ করে ভবিষ্যতের ঘটনাগুলো সম্বন্ধে জ্ঞান লাভ করা বোঝায়।
[২৬ পৃষ্ঠার চিত্র]
প্রাচ্যের রাশিচক্র
[২৬ পৃষ্ঠার চিত্র]
পাশ্চাত্যের রাশিচক্র