কপার ক্যানিয়নে স্বাগতম
কপার ক্যানিয়নে স্বাগতম
মেক্সিকোর সচেতন থাক! সংবাদদাতা কর্তৃক
প্রকৃতির এক বিস্ময়কর সৃষ্টি কপার ক্যানিয়ন, সিয়েরা ম্যাড্রা অক্সিডেন্টাল নামে পরিচিত মেক্সিকোর উত্তরাঞ্চলের পর্বত সারিতে অবস্থিত। কপার ক্যানিয়ন প্রায় ৫০,০০০ বর্গ কিলোমিটার জায়গা জুড়ে বিস্তৃত, যার আকার প্রায় কোস্টারিকার সমান।
কিন্তু, এই নামটা শুনে কেউ কেউ তালগোল পাকিয়ে ফেলতে পারেন। কপার ক্যানিয়ন শুধু একটা ক্যানিয়নই নয় কিন্তু বিভিন্ন দিক দিয়ে আরও ২০টা ক্যানিয়ন এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে। কপার ক্যানিয়ন এর মধ্যে একটা আর এটার জন্যই পুরো জায়গাটার নাম কপার ক্যানিয়ন হয়েছে। আবিষ্কারক রিচার্ড ফিশারের কথা অনুযায়ী, এখানে কমপক্ষে তিনটে ক্যানিয়ন আমেরিকার গ্র্যান্ড ক্যানিয়নের চেয়েও আরও বেশি গভীর। *
কপার ক্যানিয়ন অত্যন্ত বিশাল বলে বেশির ভাগ পর্যটকরা শুধু অল্প যে কয়েকটা জায়গা থেকে তা ভালভাবে দেখা যায় সেখানে যেতে পারেন। কপার, সিনফোরোসা ও ইউরিক ক্যানিয়নে সবচেয়ে অপূর্ব দৃশ্য দেখা যায়। কিন্তু কেউ কেউ মনে করেন, ডেভেসেডারো থেকেই সবচেয়ে অপরূপ দৃশ্য দেখা যায়। কারণ এখান থেকে একসঙ্গে কপার, ইউরিক এবং টেরেরিকুয়ে ক্যানিয়নের অপূর্ব দৃশ্যাবলি দেখা যায়।
জলবায়ুর বৈচিত্র্য
উচ্চতার আকস্মিক পরিবর্তন কপার ক্যানিয়নের জলবায়ু এবং গাছপালাকে প্রভাবিত করে। মিগেল গ্লিসন এবং আরও কয়েকজন পর্যটক যখন ইউরিক ক্যানিয়নে উঠেছিলেন তখন তারা সরাসরি তা দেখেছিলেন। মেক্সিকো ডেসকোনোসিডো পত্রিকায় তিনি লেখেন: “হঠাৎ করে আমাদের গরম লাগতে থাকে এবং পাইন গাছগুলো আর চোখে পড়ে না কিন্তু গ্রীষ্মপ্রধান অঞ্চলের গাছপালা যেমন কলা, আভাকাদো এবং কমলালেবুর গাছ দেখতে পাই। আমাদের চোখকে যেন আমরা বিশ্বাসই করাতে পারছিলাম না। শুধু এটুকু বলাই যথেষ্ট যে আমি আমার জীবনে কখনও এত অল্প সময়ে ও অল্প দূরত্বের মধ্যে শীতপ্রধান অঞ্চলের গাছপালা ও উষ্ণমণ্ডলীয় অঞ্চল দেখিনি।”
ক্যানিয়নগুলোর উঁচু উঁচু মালভূমিগুলো ১৫ প্রজাতির পাইন ও ২৫ প্রজাতির ওক গাছপালায় ভরা। এছাড়াও কপার ক্যানিয়নে, দ্রুত বেড়ে ওঠে এমন বড় বড় গাছ ও চিরসবুজ গুল্ম রয়েছে। গরমের সময় ঢালু পর্বতমালায় রংবেরঙের ফুল ফোটে। তারাওমারা বলে পরিচিত এখানকার অধিবাসীরা কিছু কিছু ফুল খেয়ে থাকে বা প্রাকৃতিক ওষুধ হিসেবে ব্যবহার করে। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ১,৮০০ মিটারেরও উঁচু পর্বতমালায় বছরের বেশির ভাগ সময়ই আবহাওয়া হয় নাতিশীতোষ্ণ বা ঠাণ্ডা থাকে। শীতকালে সামান্য বৃষ্টি হয় এবং কখনও কখনও তুষার পড়ে।
ওপরে ওঠার সময় আমরা বিভিন্ন প্রজাতির গাছ ও ক্যাকটাস দেখতে পাই। নিচের দিকে গ্রীষ্মমণ্ডলীয় জলবায়ু দেখা যায়, তবে এখানে গড় তাপমাত্রা প্রায় ১৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস থাকায় আবহাওয়া কিছুটা ঠাণ্ডা। অন্যদিকে, গরমের সময় এই অঞ্চলে খুব অস্বস্তি লাগে কারণ সেই সময় এখানকার তাপমাত্রা ৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস থেকে ৪৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে ওঠানামা করে এবং প্রচুর বৃষ্টি হয় আর এর ফলে নদীনালা উপচে পড়ে।
চূড়া থেকে নেমে আসা দুটো
চমৎকার জলপ্রপাত এই এলাকার সৌন্দর্যকে আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। এর মধ্যে বিশ্বের সবচেয়ে উঁচু জলপ্রপাতগুলোর মধ্যে একটা হল পিয়েড্রা ভোলাদা, যা ৪৫৩ মিটার উঁচু এবং অন্যটা হল ব্যাসাসিয়েচি যেটা প্রায় ২৪৬ মিটার উঁচু থেকে নেমে আসে।বন্য জীবজন্তুদের আবাস
কপার ক্যানিয়নে বিভিন্ন প্রজাতির জীবজন্তু রয়েছে। বলা হয়ে থাকে যে, মেক্সিকোর প্রায় ৩০ শতাংশ স্তন্যপায়ী জীবজন্তু এই এলাকাতে বাস করে। এর মধ্যে রয়েছে ভল্লুক, পুমা, ভোঁদর, হরিণ, মেক্সিকোর নেকড়ে, বন্য শূকর, বনবিড়াল, রেকুন, ভোঁদর জাতীয় অন্য প্রাণী, বাদুড়, কাঠবিড়ালী এবং খরগোশ।
সোনালী ঈগল এবং বিদেশি বাজপাখি সহ কপার ক্যানিয়নে প্রায় ৪০০ প্রজাতির পাখি রয়েছে। এই ক্যানিয়নগুলো উত্তর ও মধ্য আমেরিকার এমন জায়গায় অবস্থিত যে শীতের সময় এখানে অতিথি পাখিরা আসে। অন্যান্য পাখিরা এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় যাওয়ার সময় কিছু সময়ের জন্য এখানে এসে বিশ্রাম নেয়।
কপার ক্যানিয়নের বিস্ময়কর প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের জন্য সমস্ত কৃতিত্বের দাবিদার অবশ্যই যিহোবা ঈশ্বর। রাজা দায়ূদ যেমন একসময় বলেছিলেন, “হে সদাপ্রভু, মহত্ত্ব, পরাক্রম, গৌরব, জয় ও প্রতাপ তোমারই; কেননা স্বর্গে ও পৃথিবীতে যাহা কিছু আছে, সকলই তোমার।”—১ বংশাবলি ২৯:১১.
(g০০ ১১/৮)
[পাদটীকা]
^ ইউরিক ক্যানিয়ন ১,৮৭৯ মিটার গভীর; সিনফোরোসা ক্যানিয়ন ১,৮৩০ মিটার এবং ব্যাটোপিলাস ক্যানিয়ন প্রায় ১,৮০০ মিটার গভীর। আর গ্র্যান্ড ক্যানিয়ন প্রায় ১,৬১৫ মিটার গভীর।
[১৮ পৃষ্ঠার বাক্স/চিত্র]
ট্রেন থেকে দেখা দৃশ্য
আমেরিকা-মেক্সিকো সীমান্ত ওহিনাগা থেকে প্রশান্ত মহাসাগরের টোপোলোবাম্পো বন্দর পর্যন্ত প্রায় ৯৪১ কিলোমিটার দীর্ঘ চিওয়ায়া-প্যাসিফিক রেলপথ রয়েছে। এই রেলপথ দিয়ে যাওয়ার সময় কপার ক্যানিয়নকে দেখা যায়। এই অঞ্চলের ভূমির বৈশিষ্ট্যের জন্য এই রেলপথটাকে স্থাপত্যকলার এক সেরা কাজ বলা যায়। ট্রেনে করে এই পথ দিয়ে যাবার সময় বিভিন্ন আকারের প্রায় ৩৭টা সেতু পার হতে হয়। এর মধ্যে সবচেয়ে বড় সেতু ফুয়ের্টা নদীর ওপর অবস্থিত, যেটার দৈর্ঘ্য প্রায় ৫০০ মিটার। চিনিপাস নদীর ওপর অবস্থিত সবচেয়ে উঁচু সেতুর উচ্চতা প্রায় ৯০ মিটার।
এছাড়াও, এই পথে মোট ৯৯টা সুরঙ্গ পার হতে হয়। সবচেয়ে দীর্ঘ সুরঙ্গটার নাম হল এল ডেসকানসো আর এটা প্রায় ১,৮১০ মিটার দীর্ঘ। ট্রেনে করে এই পথ দিয়ে যাবার সময় পর্যটকরা কপার ক্যানিয়নের অপূর্ব দৃশ্য দেখতে পারেন।
[১৫ পৃষ্ঠার মানচিত্রগুলো]
(পুরোপুরি ফরম্যাট করা টেক্সটের জন্য এই প্রকাশনা দেখুন)
কপার ক্যানিয়ন অঞ্চল
আমেরিকা
মেক্সিকো
চিনহুয়াহুয়া
ওজিনাগা
লা জুনতা
চিনহুয়াহুয়া
ক্রিল
ডেভেসেডারো
টোপোলোবাম্পো
[১৫ পৃষ্ঠার চিত্র]
ব্যাসাসিয়েচি জলপ্রপাত
[সৌজন্যে]
© Tom Till
[১৬, ১৭ পৃষ্ঠার চিত্র]
ডেভেসেডারো থেকে দেখা দৃশ্য
[সৌজন্যে]
© Tom Till
[১৭ পৃষ্ঠার চিত্র]
পুরো ক্যানিয়ন জুড়ে তারাওমারা উপজাতি বাস করে
[সৌজন্যে]
George Hunter/ H. Armstrong Roberts
[১৭ পৃষ্ঠার চিত্র]
আরারেকো হ্রদ
[১৫ পৃষ্ঠার চিত্র সৌজন্যে]
George Hunter/H. Armstrong Roberts