সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

নার্স তাদেরকে আমাদের কেন দরকার?

নার্স তাদেরকে আমাদের কেন দরকার?

নার্স তাদেরকে আমাদের কেন দরকার?

“নার্সিং হল সবচেয়ে কঠিন কাজগুলোর মধ্যে একটা। সমবেদনা প্রেরণা দেয় কিন্তু জ্ঞানই হল আমাদের একমাত্র কর্মশক্তি।” —মেরি আ্যডিলেড নাটিং, ১৯২৫, নার্সিংয়ের ওপর বিশ্বের প্রথম অধ্যাপিকা।

সাধারণ অর্থে নার্সিং বলতে যা বোঝায় তা হাজার হাজার বছর আগে, এমনকি বাইবেলের সময়ও ছিল। (১ রাজাবলি ১:২-৪) ইতিহাসে এমন অনেক উল্লেখযোগ্য মহিলাদের কথা পাওয়া যায়, যারা অসুস্থদের সেবা করেছিলেন। উদাহরণ হিসেবে হাঙ্গেরীর এলিজাবেথের (১২০৭-৩১) কথাই চিন্তা করুন। তিনি রাজা এন্ড্রু দ্বিতীয়ের মেয়ে ছিলেন। ১২২৬ সালে এক দুর্ভিক্ষের সময় তিনি লোকেদের খাবার বিতরণ করার ব্যবস্থা করেছিলেন। এরপর, তিনি কয়েকটা হাসপাতাল বানিয়েছিলেন এবং সেখানে কুষ্ঠদের দেখাশোনা করেছিলেন। এলিজাবেথ মাত্র ২৪ বছর বয়সে মারা যান আর তার এই ছোট্ট জীবনের বেশির ভাগ সময়ই তিনি অসুস্থদের সেবা করে কাটিয়েছিলেন।

নার্সিংয়ের ইতিহাস নিয়ে কথা বলতে গেলে ফ্লোরেন্স নাইটিংগেলের কথা বলতেই হয়। ১৮৫৩-৫৬ সালে ক্রিমিয়ায় যুদ্ধ চলাকালে ইংরেজি বংশোদ্ভব এই সাহসী নারী আরও ৩৮ জন নার্সের সঙ্গে স্কুটারির একটা সামরিক হাসপাতালের সংস্কার করেছিলেন। স্কুটারি ছিল কনস্টেনটিনোপল শহরের একেবারে প্রান্তে অবস্থিত একটা এলাকা। তিনি যখন সেখানে যান তখন ওখানে মৃত্যুর হার ছিল ৬০ শতাংশ কিন্তু ১৮৫৬ সালে তিনি যখন ওই হাসপাতাল ছেড়ে আসেন তখন মৃত্যুর হার দাঁড়ায় ২ শতাংশেরও কম।—৬ পৃষ্ঠার বাক্স দেখুন।

জার্মানির কাইজারওয়ার্থের ইনস্টিটিউশন অফ প্রটেস্টান্ট ডিকনেসেস প্রতিষ্ঠানেরও নার্সিংকে এগিয়ে নেওয়ার পিছনে অনেক অবদান ছিল। ক্রিমিয়ায় যাওয়ার আগে নাইটিংগেল এখানে কাজ করেছিলেন। পরে, আরও কয়েকটা উল্লেখযোগ্য নার্সিং দল গড়ে উঠেছিল। যেমন, আগ্নেস কার্ল ১৯০৩ সালে প্রফেসনাল অরগানাইজেশন ফর জার্মান নার্সেস স্থাপন করেছিলেন।

আজকে, স্বাস্থ্যসেবায় নার্সরাই সবচেয়ে বড় পেশাদার দল। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার একটা রিপোর্ট বলে যে, এখন ১৪১টা দেশে ৯০,০০,০০০-রও বেশি নার্স ও ধাত্রীরা সেবা করছেন। তারা কত জরুরি কাজই না করছেন! দি আটলান্টিক মানথ্‌লি  বলে যে নার্সরা “যত্ন, জ্ঞান ও আস্থা মিশিয়ে একটা কাপড় বোনেন, যা রোগীর সেরে ওঠার জন্য খুবই জরুরি।” তাই নার্সদের বিষয়ে আমরা এই প্রশ্ন করতে পারি যে, তারা না থাকলে আমাদের কী হতো?

সুস্থ হয়ে ওঠার পিছনে নার্সদের ভূমিকা

একটা বিশ্বকোষ নার্সিংয়ের সংজ্ঞা এভাবে দেয় যে এটা “এমন এক প্রক্রিয়া যেখানে একজন নার্সের সাহায্যে রোগী কোন একটা অসুখ বা আঘাত থেকে সেরে ওঠে অথবা যতটা সম্ভব স্বাবলম্বী হয়ে ওঠে।”

অবশ্য, এই প্রক্রিয়ায় আরও অনেক কিছু জড়িত। নার্সিং বলতে শুধু নাড়ি স্পন্দন ও রক্তচাপ পরীক্ষা করার মতো সাধারণ পরীক্ষাগুলো করা বোঝায় না। বরং রোগীর সেরে ওঠার পিছনে নার্সদের এক জরুরি ভূমিকা রয়েছে। দি আ্যমেরিকান মেডিকেল এসোসিয়েশন এনসাইক্লোপিডিয়া অফ মেডিসিন  বলে যে, “নার্সরা রোগের চেয়ে রোগীদের নিয়ে বেশি চিন্তা করেন আর তারা রোগীর শরীরের যন্ত্রণা কমাতে, মনের দুশ্চিন্তা দূর করতে এবং সম্ভব হলে রোগীকে অন্য রোগের হাত থেকে বাঁচাতে একান্তভাবে কাজ করেন।” শুধু তাই নয়, নার্সরা “সহানুভূতির সঙ্গে রোগীর দেখাশোনা করেন, যার মানে হচ্ছে ধৈর্য ধরে রোগীর দুশ্চিন্তা ও ভয়ের কথা শোনা এবং তা দূর করার জন্য তাদের সহযোগিতা করা ও সান্ত্বনা দেওয়া।” এটা আরও বলে যে, একজন রোগীর যখন বাঁচার আর কোন আশা থাকে না তখন নার্সদের কাজ হল “ওই রোগীকে কম যন্ত্রণা পেয়ে এবং যতটা সম্ভব মর্যাদার সঙ্গে মরতে সাহায্য করা।”

অনেক নার্সরাই তাদের যতটুকু করা কর্তব্য শুধু ততটুকুই করেন না। উদাহরণ হিসেবে এলেন ডি. বেয়ারের কথা বলা যায়, যিনি নিউ ইয়র্ক শহরে মন্টিফিয়র মেডিকেল সেন্টারে তার নিজের অভিজ্ঞতার কথা লিখেছিলেন। তিনি সকালবেলাতে ডাক্তারদের সঙ্গে ঘুরে ঘুরে রোগী দেখার সময় তাড়াহুড়া করতে চাইতেন না। তিনি লেখেন: “আমি রোগীদের সঙ্গে সময় কাটাতে চাইতাম। তাদের জন্য কাজ করতে চাইতাম যেমন, তারা ঠিকমতো শ্বাস নিতে পারছে কি না তা খেয়াল রাখতাম, তাদের হাঁটাচলা করতে সাহায্য করতাম, তাদের ক্ষতস্থান পরিষ্কার করে ওষুধ লাগাতাম, তাদের প্রশ্নের উত্তর দিতাম, বিভিন্ন বিষয় তাদেরকে বুঝিয়ে দিতাম এবং সান্ত্বনা দিতাম। রোগীদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে মেলামেশা করতে ও তাদের সঙ্গে কাছের সম্পর্ক গড়ে তুলতে আমার খুবই ভাল লাগত।”

তাই, কোন সন্দেহ নেই যে যারা অসুখের কারণে হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন তারা সবাই-ই এমন একজন সহানুভূতিশীল নার্সের কথা মনে করতে পারেন, যার এইরকম আত্মত্যাগের মনোভাব ছিল। কিন্তু এখন প্রশ্ন আসে যে একজন দক্ষ নার্স হওয়ার জন্য কী দরকার?

(g০০ ১১/৮)

[৩ পৃষ্ঠার চিত্র]

ফ্লোরেন্স নাইটিংগেল

[সৌজন্যে]

Courtesy National Library of Medicine