সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

খ্রীষ্টানদের কি গির্জায় যাওয়া উচিত?

খ্রীষ্টানদের কি গির্জায় যাওয়া উচিত?

বাইবেলের দৃষ্টিভঙ্গি

খ্রীষ্টানদের কি গির্জায় যাওয়া উচিত?

“আগে আমি গির্জায় যেতাম কিন্তু এখন আর যাই না।” “আমি মনে করি, যে কোন জায়গায়ই ঈশ্বরকে উপাসনা করা যায়, এর জন্য যে গির্জায় যেতে হবে এমন কথা কোন নেই।” “আমি ঈশ্বরে ও বাইবেলে বিশ্বাস করি ঠিকই, তবে গির্জায় যাওয়ার কোন দরকার আছে বলে মনে করি না।” আপনি কি কাউকে এইরকম কথা বলতে শুনেছেন? আজকে প্রায়ই লোকেদের, বিশেষ করে পশ্চিমা দেশগুলোর লোকেদের মুখে এইরকম কথা বেশি শোনা যায়। যে লোকেরা একসময় গির্জায় যেতেন তারা এখন মনে করেন যে গির্জায় যাওয়ার কোন দরকার নেই। কিন্তু এই ব্যাপারে বাইবেল কী বলে?

কিং জেমস ভারসন-এ ১১০ বারেরও বেশি “গির্জা” ও “গির্জাগুলো” শব্দ দুটো পাওয়া যায়। অন্যান্য অনুবাদগুলোতেও এই শব্দগুলো ব্যবহার করা হয়। যে গ্রিক শব্দকে “গির্জা” হিসেবে অনুবাদ করা হয়েছে তার আক্ষরিক অর্থ হল “ডাক দেওয়া” বা অন্য কথায় কিছু লোকেদের সমাবেশ। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, কিং জেমস ভারসন বাইবেলে প্রেরিত ৭:৩৮ পদ বলে যে মোশি “প্রান্তরে গির্জায় ছিলেন” অর্থাৎ তিনি ইস্রায়েল জাতির সমবেত লোকেদের মাঝে ছিলেন। আরেক জায়গায় যিরূশালেমের খ্রীষ্টানদের কথা বোঝাতে গিয়ে শাস্ত্র বলে যে, “গির্জার ওপর প্রচণ্ড তাড়না শুরু হয়েছিল।” (প্রেরিত ৮:১, দ্যা যিরূশালেম বাইবেল) পৌল তার লেখা একটা চিঠিতে “[ফিলীমনের] ঘরের গির্জাকে” অর্থাৎ সেখানকার মণ্ডলীকে মঙ্গলবাদ করেছিলেন।—ফিলীমন ২, রিভাইজড স্ট্যান্ডার্ড ভারসন।

অতএব, এটা স্পষ্ট যে “গির্জা” শব্দটা বাইবেলে যেভাবে ব্যবহার করা হয়েছে, তা উপাসনার জায়গাকে নয় কিন্তু উপাসকদের দলকে বোঝায়। দ্বিতীয় শতাব্দীর একজন ধর্মগুরু আলেকজান্দ্রিয়ার ক্লেমেন্ট এই কথা স্বীকার করে লিখেছিলেন: উপাসনার “জায়গাকে নয় কিন্তু নির্বাচিত ব্যক্তিদের নিয়ে গঠিত মণ্ডলীকে আমি গির্জা বলি।” কিন্তু তারপরেও এই প্রশ্ন থেকে যায় যে, খ্রীষ্টানদের উপাসনা ঈশ্বরের কাছে গ্রহণযোগ্য হওয়ার জন্য তাদের কি নির্দিষ্ট কোন জায়গায় বা বিল্ডিংয়ে মিলিত হওয়া উচিত?

ইস্রায়েল জাতির উপাসনা

মোশির ব্যবস্থায় প্রত্যেক যিহুদি পুরুষকে বছরে তিনটে উৎসবের জন্য একটা নির্দিষ্ট জায়গায় উপস্থিত থাকতেই হতো। তাদের সঙ্গে স্ত্রী ও ছোট ছেলেমেয়েরাও আসত। (দ্বিতীয় বিবরণ ১৬:১৬; লূক ২:৪১-৪৪) কখনও কখনও যাজক ও লেবীয়রা, সমবেত লোকেদের সামনে ঈশ্বরের ব্যবস্থা পড়ে তাদেরকে তা শেখাতেন। তারা ‘স্পষ্ট উচ্চারণপূর্ব্বক পাঠ করিতেন এবং তাহার অর্থ করিয়া বুঝাইয়া দিতেন।’ (নহিমিয় ৮:৮) বিশ্রামবারের বছরগুলোর জন্য ঈশ্বর নির্দেশনা দিয়েছিলেন: “তুমি লোকদিগকে, পুরুষ, স্ত্রী, বালক-বালিকা ও তোমার নগর-দ্বারের মধ্যবর্ত্তী বিদেশী সকলকে একত্র করিবে, যেন তাহারা শুনিয়া শিক্ষা পায়, ও তোমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভুকে ভয় করে, এবং এই ব্যবস্থার সমস্ত কথা যত্নপূর্ব্বক পালন করে।”—দ্বিতীয় বিবরণ ৩১:১২.

কেবল যিরূশালেম মন্দিরে গিয়ে একজন ব্যক্তি ঈশ্বরের উদ্দেশে বলি উৎসর্গ করতে পারতেন এবং যাজকদের কাছ থেকে শিক্ষা পেতেন। (দ্বিতীয় বিবরণ ১২:৫-৭; ২ বংশাবলি ৭:১২) পরে, উপাসনার জন্য ইস্রায়েলে আরও অন্যান্য গৃহও স্থাপন করা হয়েছিল যেগুলোকে সমাজগৃহ বলা হতো। সমাজগৃহে শাস্ত্র পড়া ও প্রার্থনা করা হতো। তাসত্ত্বেও, যিরূশালেমের মন্দিরই ছিল উপাসনার প্রধান জায়গা। বাইবেল লেখক লূকের কথা থেকে এই বিষয়টা বোঝা যায়। তিনি একজন বয়স্কা মহিলা হান্নার কথা বলেন, যিনি “ধর্ম্মধাম হইতে প্রস্থান না করিয়া উপবাস ও প্রার্থনা সহকারে রাত দিন উপাসনা করিতেন।” (লূক ২:৩৬, ৩৭) অন্যান্য ধার্মিক লোকেদের সঙ্গে সত্য উপাসনায় রত থাকাই ছিল হান্নার জীবনের প্রথম বিষয়। ঈশ্বর-ভয়শীল অন্যান্য যিহুদিরাও একই পথে চলতেন।

খ্রীষ্টের মৃত্যুর পর সত্য উপাসনা

যীশুর মৃত্যুর পর তাঁর অনুগামীরা আর মোশির আইন মেনে চলতে বাধ্য ছিলেন না বা তাদেরকে মন্দিরে গিয়েও উপাসনা করতে হতো না। (গালাতীয় ৩:২৩-২৫) কিন্তু, এরপরেও তারা প্রার্থনা ও ঈশ্বরের বাক্য অধ্যয়ন করার জন্য মিলিত হতেন। এর জন্য তাদের কোন বড় বড় বিল্ডিং ছিল না বরং এর বদলে লোকেদের বাড়ি বা জনসাধারণের জায়গা ব্যবহার করতেন। (প্রেরিত ২:১, ২; ১২:১২; ১৯:৯; রোমীয় ১৬:৪, ৫) প্রথম শতাব্দীর খ্রীষ্টানরা আচার-অনুষ্ঠান পালন বা শোভাযাত্রা করতেন না বরং তাদের সভাগুলো খুব সাধারণভাবেই হতো।

রোমীয় সাম্রাজ্যের নৈতিক অবস্থা খুব খারাপ হওয়া সত্ত্বেও, ওই সভাগুলোতে বাইবেলের যে নীতিগুলো শেখানো হতো সেগুলো একেবারেই আলাদা ছিল। সেইজন্যই কিছু অবিশ্বাসী লোকেরা প্রথমবারের মতো সভায় এসে বলতে পেরেছিলেন: “ঈশ্বর বাস্তবিকই তোমাদের মধ্যবর্ত্তী।” (১ করিন্থীয় ১৪:২৪, ২৫) হ্যাঁ, ঈশ্বর সত্যিই তাদের মাঝে ছিলেন। “এইরূপে মণ্ডলীগণ [“গির্জাগুলো,” RS, JB] বিশ্বাসে দৃঢ়ীকৃত হইতে থাকিল, এবং দিন দিন সংখ্যায় বৃদ্ধি পাইল।”—প্রেরিত ১৬:৫.

সেই সময়ে কোন খ্রীষ্টান কি পৌত্তলিক উপাসকদের মন্দিরগুলোতে বা একা একা উপাসনা করে ঈশ্বরের অনুমোদন পেতেন? এই ব্যাপারে বাইবেলে স্পষ্ট নির্দেশনা পাওয়া যায়: কেউ যদি চায় যে তাদের উপাসনা ঈশ্বরের গ্রহণযোগ্য হোক, তাহলে তাদেরকে অবশ্যই একমাত্র সত্য গির্জা বা মণ্ডলীর অর্থাৎ প্রকৃত উপাসকদের ‘এক দেহের’ অংশ হতে হতো। আর তারা যীশুর শিষ্য অর্থাৎ খ্রীষ্টান বলে পরিচিত ছিলেন।—ইফিষীয় ৪:৪, ৫; প্রেরিত ১১:২৬.

আজকের দিন সম্বন্ধে কী বলা যায়?

আমাদেরকে একটা গির্জায় উপাসনা করতে বলার বদলে বাইবেল গির্জার সঙ্গে অর্থাৎ “জীবন্ত ঈশ্বরেরর মণ্ডলী,” যে লোকেরা “আত্মায় ও সত্যে ভজনা” করে তাদের সঙ্গে উপাসনা করতে বলে। (১ তীমথিয় ৩:১৫; যোহন ৪:২৪) ঈশ্বরের অনুমোদিত ধর্মীয় সভাগুলোতে লোকেদেরকে অবশ্যই ‘পবিত্র আচার ব্যবহার ও ভক্তি’ শেখানো উচিত। (২ পিতর ৩:১১) সেখানে আসেন এমন সবাইকে পরিবক্ব খ্রীষ্টান হয়ে ওঠার জন্য তাদের সাহায্য করা উচিত, যারা ‘সদসৎ বিষয়ের বিচারণ [“ন্যায়-অন্যায়কে পৃথক,” NW]’ করতে পারেন।—ইব্রীয় ৫:১৪.

যিহোবার সাক্ষিরা প্রথম শতাব্দীর খ্রীষ্টানদের উদাহরণ অনুকরণ করার জন্য প্রাণপণ চেষ্টা করেন। সারা পৃথিবীতে ৯১,৪০০টারও বেশি মণ্ডলীগুলো বাইবেল অধ্যয়ন করার এবং একে অন্যকে উৎসাহ দেওয়ার জন্য নিয়মিত কিংডম হলে, কারও বাড়ি বা অন্যান্য জায়গায় মিলিত হন। আর তা প্রেরিত পৌলের বলা এই কথাগুলোর সঙ্গে মিল রাখে: “আইস, আমরা পরস্পর মনোযোগ করি, যেন প্রেম ও সৎক্রিয়ার সম্বন্ধে পরস্পরকে উদ্দীপিত করিয়া তুলিতে পারি; এবং আপনারা সমাজে সভাস্থ হওয়া পরিত্যাগ না করি।”—ইব্রীয় ১০:২৪, ২৫. (g০১ ৩/৮)