তাকে আমি কীভাবে না করব?
যুবক-যুবতীদের জিজ্ঞাস্য . . .
তাকে আমি কীভাবে না করব?
“এই বছর গরমের সময় আমার মণ্ডলীর একজন ভাই আমার প্রেমে পড়ে। আমি তাকে পছন্দ করতাম না। কিন্তু সমস্যা হল যে, তাকে কোনরকম কষ্ট না দিয়ে কীভাবে না করব তা আমার জানা ছিল না।”—এলিজাবেথ। *
“আমি কি তোমার সঙ্গে একটু আলাপ করতে পারি?” কোন যুবক কি তোমাকে কখনও এরকম কথা বলেছে? একজন যুবতী * হওয়ায় এই কথা শুনে তুমি হয়তো খুশি হয়েছিলে ও তোমার মনে শিহরণ জেগেছিল, এমনকি কিছুটা রোমাঞ্চিতও হয়েছিলে! আবার এমনও হতে পারে যে, প্রস্তাব শুনে তুমি এতটাই হকচকিয়ে গিয়েছিলে যে, এর উত্তরে কী বলবে তা খুঁজে পাচ্ছিলে না।
কেউ যদি তোমাকে বলে যে সে তোমাকে ভালবাসে, তখন তোমার মনের মধ্যে হয়তো নানা জল্পনাকল্পনা শুরু হয়ে যায়। বিশেষ করে যদি তোমার বিয়ের বয়স হয়ে থাকে ও তুমি তার প্রস্তাবে রাজি হওয়ার মতো অবস্থায় থাক! * তাসত্ত্বেও, এর উত্তরে তুমি হ্যাঁ নাকি না বলবে তার অনেকটা নির্ভর করে, কে তোমাকে প্রস্তাব দিচ্ছে তার ওপর। সে যদি মনের দিক দিয়ে একজন পরিপক্ব ব্যক্তি হয় এবং তাকে যদি তোমার ভাল লাগে, তাহলে এর উত্তর দেওয়া তোমার জন্য খুব একটা কঠিন নয়। কিন্তু, একজন আদর্শ স্বামী হওয়ার মতো যোগ্যতা যদি তার মধ্যে না থাকে, তাহলে কী? কিংবা, তার অনেক ভাল গুণ থাকা সত্ত্বেও তুমি যদি তাকে সেই চোখে না দেখতে পার, তাহলেই বা কী বলা যায়?
সেইসঙ্গে এইরকম একজন মেয়ের কথা ভেবে দেখ, যে কিছু সময়ের জন্য এক ছেলের সঙ্গে মেলামেশা করার পর বুঝতে পেরেছে যে ওই ছেলের সঙ্গে সে বাকি জীবন কাটাতে পারবে না। কিন্তু, সম্পর্ক ছেদ না করে সে তার সঙ্গে মেলামেশা করেই চলে। সে জিজ্ঞেস করে, “কীভাবে আমি তাকে না করব?”
তুমি যদি তাকে না ভালবাস
প্রাচীনকালে পিতৃকূলপতিদের সময়ে, সাধারণত বাবামা যার সঙ্গে বিয়ে ঠিক করতেন ছেলেমেয়েরা তাকেই বিয়ে করত। (আদিপুস্তক ২৪:২-৪, ৮) পশ্চিমা দেশগুলোতে বেশির ভাগ খ্রীষ্টানরা নিজেরাই তাদের জীবনসাথি বেছে নেন। এই ব্যাপারে বাইবেল একটা কথাই বলে যে, একজন খ্রীষ্টান যেন “কেবল প্রভুতেই” বিয়ে করেন।—১ করিন্থীয় ৭:৩৯.
কিন্তু, তার মানে কি এই যে খ্রীষ্টান ভাইদের মধ্যে যে কেউ তোমার প্রতি আগ্রহ দেখালেই কিংবা তুমি কারও সঙ্গে অল্প কদিন মেলামেশা করেছ বলেই তাকে তোমার বিয়ে করতে হবে? এই বিষয়ে, বাইবেলের একজন যুবতীর কথা পরমগীত ২:৭) ওই বুদ্ধিমতী যুবতী চায়নি যে, কেউ তাকে চাপ দিক আর এর ফলে আবেগের বশে সে কোন সিদ্ধান্ত নিয়ে নেয়। সে শলোমনকে নয় কিন্তু এক সাধারণ রাখালকে ভালবাসত।
ভেবে দেখ, যে মধ্যপ্রাচ্যের শূনেম গ্রামে থাকত। তখনকার রাজা শলোমন তাকে দেখে তার প্রেমে পাগল হয়ে গিয়েছিলেন। কিন্তু, তিনি যখন তার মন জয় করার চেষ্টা করেছিলেন তখন ওই যুবতী শুধু তাকে প্রত্যাখ্যানই করেনি সেইসঙ্গে যে দাসীরা রাজার পক্ষ হয়ে তার সঙ্গে কথা বলেছিল তাদেরকে সে অনুরোধ করেছিল: “তোমরা প্রেমকে জাগাইও না, উত্তেজনা করিও না, যে পর্য্যন্ত তাহার বাসনা না হয়।” (আজকে যারা বিয়ে করার কথা চিন্তা করছে তারা এর থেকে একটা গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা পেতে পারে আর তা হল, যে কারও প্রেমে পড়া যায় না। তাই, কিছুদিন কোন ছেলের সঙ্গে মেলামেশা করার পর একজন যুবতীর হয়তো মনে হতে পারে যে, সে আসলে ওই ছেলেকে ভালবাসে না। হতে পারে যে ওই ছেলের বড় কোন দুর্বলতা দেখেই তার এমন মনে হচ্ছে। কিংবা ওই ছেলেকে তার ভাল না-ও লাগতে পারে। যদি এইরকম মনে হয়, তাহলে এইধরনের অনুভূতিকে উপেক্ষা করা বোকামি হবে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সব ঠিক হয়ে যাবে ভেবে এই অনুভূতিগুলোকে উপেক্ষা করা ঠিক হবে না। * তামারা নামে এক যুবতী, যে ছেলের সঙ্গে সে মেলামেশা করছিল তার সম্পর্কে বলে, “তার সম্বন্ধে আমার মনে অনেক সন্দেহ ছিল। সেগুলো সামান্য বা ছোটখাটো বিষয়ে নয় কিন্তু রীতিমতো বড় বড় বিষয়ে ছিল আর তাই তার সঙ্গে যখন আমার সম্পর্ক ছিল তখন সেই বিষয়গুলো সবসময় আমার মনে খোঁচা দিত আর আমি অস্বস্তি বোধ করতাম।” পরে সে বুঝতে পারে যে এইরকম দ্বিধাদ্বন্দ্বের চেয়ে সম্পর্ক চুকিয়ে ফেলা আরও ভাল।
না বলা এত কঠিন কেন
তবে, একজন যুবকের প্রস্তাব ফিরিয়ে দেওয়ার কথা মুখে বলা যতটা সহজ কাজে আসলে ততটা নয়। শুরুতে বলা এলিজাবেথের মতো তুমিও হয়তো তাকে কষ্ট দিতে চাও না। এটা ঠিক যে, অন্যদের অনুভূতির কথা আমাদের ভেবে দেখতে হবে। বাইবেল খ্রীষ্টানদেরকে ‘করুণার চিত্ত পরিধান করিতে’ এবং তারা অন্যদের কাছ থেকে যেমন ব্যবহার আশা করে, অন্যদের সঙ্গেও সেইরকম ব্যবহার করতে উৎসাহ দেয়। (কলসীয় ৩:১২; মথি ৭:১২) কিন্তু, তার মানে কি এই যে, এই যুবককে তুমি দুঃখ দিতে বা আঘাত করতে চাও না বলে তুমি তার সঙ্গে প্রেমের ভান করবে? একদিন আগে হোক বা পরে হোক, তোমার মনে কী আছে তা সে একসময় জানবেই আর তুমি যদি এই কথাটা দেরি করে বল, তাহলে তার কষ্ট কমবে না বরং আরও বাড়বে। তুমি তাকে কষ্ট দিতে চাও না ভেবে তাকে বিয়ে করলে এর পরিণতি আরও খারাপ হবে। করুণা দেখিয়ে যদি বিয়ে করা হয়, তাহলে সেই বিয়ের ভিত কখনও মজবুত হয় না।
তোমার মনের মধ্যে হয়তো এই টানাপোড়েন চলছে, ‘তাকে যদি আমি বিয়ে না করি, তাহলে আমার হয়তো আর কোনদিনই বিয়ে হবে না।’ টিন পত্রিকার একটা প্রবন্ধে যেমন বলা হয়েছে যে একটা মেয়ে হয়তো এভাবে যুক্তি দেখাতে পারে: “সে হয়তো ‘পুরোপুরি আমার মনের মতো’ নয় কিন্তু এই কথা তো ঠিক যে একমাত্র সে-ই আমাকে বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছে আর আমিও সারাজীবন একা থাকতে চাই না।” মানুষ মাত্রই সঙ্গী চায়। কিন্তু, তাই বলে এই আকাঙ্ক্ষা মেটানোর মানে এই নয় যে, তুমি যে কাউকেই বিয়ে করতে পার। এর মানে হল, এমন কাউকে খোঁজা যাকে তুমি সত্যিই ভালবাসতে পারবে এবং বিয়ের ব্যাপারে বাইবেলে যে দায়িত্বগুলোর কথা বলা আছে, সেগুলো সে ঠিক ঠিক পালন করবে। (ইফিষীয় ৫:৩৩) তাই, জীবনসঙ্গী বাছাই করার ব্যাপারে তাড়াহুড়ো করে কোন সিদ্ধান্ত নিও না! কেউ কেউ তাড়াহুড়ো করে বিয়ে করে পরে অনুশোচনা করেছে।
কেউ কেউ কোন ছেলের গুরুতর কিছু দোষ আছে জেনেও তার সঙ্গে মেলামেশা চালিয়ে যায়। তারা হয়তো এভাবে যুক্তি দেখায়, ‘তাকে আরেকটু সময় দিলে তার স্বভাবচরিত্র হয়তো বদলাতেও পারে।’ এই যুক্তিটাকে কি তোমার আসলেই ঠিক বলে মনে হয়? শত হলেও, বদভ্যাস ও চালচলন সাধারণত ব্যক্তির রন্ধ্রে রন্ধ্রে মিশে থাকে আর সেগুলো পালটানো এত সহজ নয়। আর এমনকি সে যদি রাতারাতি তার কিছু বদভ্যাস বদলায়ও, তোমার কি মনে হয় যে সেগুলো সে চিরদিনের জন্য বদলেছে? এইরকম অবস্থায় ক্যারেন নামে একজন
যুবতী, বুদ্ধিমতীর মতো তার ছেলে বন্ধুর সঙ্গে মেলামেশা করা বন্ধ করে দিয়েছিল যখন সে বুঝতে পারে যে তাদের দুজনের লক্ষ্য এক নয়। সে স্বীকার করে, “ও খুব সুদর্শন ছিল আর তাই ওকে না বলা আমার জন্য এত সহজ ছিল না। কিন্তু, আমি জানতাম যে এই সম্পর্ক ছেদ করাই ঠিক।”খুব ভেবেচিন্তে কৌশলে কথা বল
এটা ঠিক যে, কাউকে না বলা সহজ কাজ নয়। খুব সহজেই ভেঙে যেতে পারে এমন জিনিস ভরতি একটা প্যাকেটকে যেমন খুব সাবধানে নাড়াচাড়া করতে হয়, তেমনই এইরকম পরিস্থিতিতে খুব ভেবেচিন্তে, কৌশলে কথা বলতে হয়। এখানে কয়েকটা পরামর্শ দেওয়া হল, যেগুলো কাজে লাগতে পারে।
তোমার বাবামা অথবা মণ্ডলীর কোন পরিপক্ব খ্রীষ্টানের সঙ্গে বিষয়টা নিয়ে কথা বল। তুমি যদি অবাস্তব কিছু আশা কর, তাহলে তারা তা শুধরে দিতে পারেন।
সরাসরি ও স্পষ্টভাবে কথা বল। তুমি কী বলতে চাচ্ছ সেই সম্বন্ধে তার মনে সন্দেহের কোন অবকাশ রেখো না। শুধু “না” বললেই অনেকে সরে যায়। কিন্তু, যদি দরকার হয়, তাহলে জোর গলায় বল, “দুঃখিত, আমি আসলে আপনাকে নিয়ে এভাবে চিন্তা করছি না।” কিন্তু সাবধান থেকো, যাতে সে তোমার কোন আচরণে এরকম না ভেবে বসে যে সে যদি তোমাকে কয়েকবার অনুরোধ করে, তাহলে তুমি হয়তো তোমার সিদ্ধান্ত পালটাতে পার। তাকে তুমি ভালবাস না, এই কথাটা স্পষ্টভাবে বলে দিলে তোমার সিদ্ধান্তের ব্যাপারে তার মনে আর কোন বিভ্রান্তি থাকবে না এবং সে সহজেই তার দুঃখ কাটিয়ে উঠতে পারবে।
সৎ ও কৌশলী হও। হিতোপদেশ ১২:১৮ পদ বলে: “কেহ কেহ অবিবেচনার কথা বলে, খড়্গাঘাতের মত।” সরাসরি কথা বলা জরুরি কিন্তু বাইবেল আমাদেরকে বলে যে আমাদের কথা ‘অনুগ্রহ সহযুক্ত, লবণে আস্বাদযুক্ত’ হতে হবে।—কলসীয় ৪:৬.
তোমার সিদ্ধান্তে অটল থাক। তোমার শুভাকাঙ্ক্ষী বন্ধুবান্ধবরা হয়তো জানে না যে, কেন তুমি এই সিদ্ধান্ত নিয়েছ আর তাই তারা হয়তো তোমাকে আরেকবার ভেবে দেখার জন্য বলতে পারে। কিন্তু, তুমি যে সিদ্ধান্ত নেবে তার পরিণতি তোমাকেই ভোগ করতে হবে, তোমার শুভাকাঙ্ক্ষী বন্ধুবান্ধবদের নয়।
তোমার কথার সঙ্গে যেন কাজের মিল থাকে। আগে তোমরা দুজন হয়তো ভাল বন্ধু ছিলে আর এই ঘটনার পরেও তোমরা হয়তো একই রকম বন্ধুত্ব বজায় রাখতে চাইতে পার। কিন্তু, এটা আসলে বাস্তবসম্মত নয় বা আদৌ সম্ভব নয়। তোমাকে সে ভালবেসে ফেলেছে। তাই, এরকম ভাবা কি যুক্তিসংগত যে সে তোমার প্রতি তার সমস্ত অনুভূতিকে ভুলে যাবে ও কিছুই হয়নি এমন ভাব দেখাতে পারবে? তাই, তার সঙ্গে ফোনে নিয়মিত কথা না বলে বা কোন সামাজিক অনুষ্ঠানে একসঙ্গে খুব বেশি সময় না কাটিয়ে বরং যতটুকু দরকার ততটুকু আন্তরিকতা দেখানোই ভাল, তা না হলে তার দুঃখ আরও বাড়বে। আর তা হবে তার আবেগ নিয়ে ছিনিমিনি খেলা, যা একেবারেই ঠিক নয়।
প্রেরিত পৌল খ্রীষ্টানদেরকে একে অন্যের সঙ্গে “সত্য” কথা বলতে পরামর্শ দিয়েছিলেন। (ইফিষীয় ৪:২৫) এটা করা কঠিন হলেও তা তোমার ও তার জন্য অনেক উপকার নিয়ে আসবে।(g০১ ৩/২২)
[পাদটীকাগুলো]
^ কিছু নাম পালটে দেওয়া হয়েছে।
^ এই প্রবন্ধটা যুবতীদের উদ্দেশে লেখা হলেও এর নীতিগুলো যুবকদের জন্যও খাটে।
^ অল্প বয়সে ডেটিং করার বিপদ কী হতে পারে, সেই বিষয়ে ২০০১ সালের ২২শে জানুয়ারি (ইংরেজি) সংখ্যায় আলোচনা করা হয়েছিল।
^ ১৯৮৮ সালের ২২শে জুলাই সচেতন থাক! (ইংরেজি) পত্রিকায় প্রকাশিত “যুবক-যুবতীদের জিজ্ঞাস্য . . . আমাদের সম্পর্ক কি ভেঙে দেওয়া উচিত?” প্রবন্ধটা দেখ।
[১৯ পৃষ্ঠার ব্লার্ব]
যে কারও প্রেমে পড়া যায় না
[২০ পৃষ্ঠার চিত্র]
তোমার অনুভূতি সরাসরি ও স্পষ্টভাবে জানিয়ে দাও