বিশ্ব নিরীক্ষা
বিশ্ব নিরীক্ষা
ব্যথা ছাড়া হার্ট আ্যটাক
হার্ট আ্যটাকের সময় যে বুকে প্রচণ্ড ব্যথা হয় অর্থাৎ সাঁড়াশির মতো কোন কিছু যেন বুকের ওপর চেপে বসে, সেই সম্বন্ধে প্রায় সবাই-ই জানে। টাইম পত্রিকা বলে, খুব অল্প লোকেরা জানে যে “এক তৃতীয়াংশ রোগীরা হার্ট আ্যটাকের সময় কোন ব্যথা অনুভব করে না।” দ্যা জার্নাল অফ দি আ্যমেরিকান মেডিক্যাল এসোসিয়েশন-এ প্রকাশিত একটা গবেষণা বলে, সেই কারণে এই বিষয়টা বোঝা সহজ হয় যে “বুকে ব্যথা অনুভব করে না বলেই রোগীরা হার্ট আ্যটাকের সঙ্গে সঙ্গে বা দুঘন্টার মধ্যে হাসপাতালে যান না।” কিন্তু, জীবনরক্ষার চিকিৎসায় একটু দেরি মানেই বিপদ। তাই, কোন্ বিষয়ে খেয়াল রাখা উচিত? টাইম পত্রিকা বলে, হার্ট আ্যটাক হলে “এর পরেই সম্ভবত যে লক্ষণটা সবচেয়ে বেশি দেখা যায় তা হল, অনেকক্ষণ পর পর শ্বাস নেওয়া।” ওই প্রবন্ধ বলে, অন্যান্য লক্ষণগুলো হল বমি বমি ভাব, প্রচণ্ড ঘেমে ওঠা এবং “যে কোন ধরনের ‘বুক জ্বালাপোড়া,’ যা হাঁটলে বা অন্য কোন কাজ করলে আরও বেশি লাগে।” (g০১ ১/২২)
আঠালো পায়ের আঙুল
কাঁচের মতো মসৃণ ছাদ দিয়েও টিকটিকি খুব সহজেই চলতে পারে। কিন্তু, কীভাবে তারা তা করে? যে বিজ্ঞানীরা বছরের পর বছর ধরে এই প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করেছেন তারা এখন এর কারণটা খুঁজে পেয়েছেন বলে মনে করেন। সায়েন্স নিউজ পত্রিকা বলে, এক দল বিজ্ঞানী ও প্রকৌশলী এই সিদ্ধান্তে পৌঁছেছেন যে “টিকটিকির পায়ের একেবারে ছোট ছোট লোমগুলো যখন কোন তলের ওপর লাগে তখন আশ্চর্যজনকভাবে সেখানে আঠালো শক্তি উৎপন্ন হয়। প্রতিটা লোম থেকে অতি ক্ষুদ্র সরু দণ্ড বের হয়, যেগুলোকে স্প্যাটুলা বলা হয়। টিকটিকির পায়ের নিচে কোটি কোটি স্প্যাটুলা থাকে আর টিকটিকি যখন কোন তলের ওপর পা রাখে তখন আন্তঃআণবিক শক্তি নির্গত হয় ও এর ফলে এটা তলকে খুব শক্তভাবে আঁকড়ে ধরে।” গবেষকরা এও লক্ষ্য করেছেন যে, টিকটিকিরা যেভাবে কোন কিছুর ওপর পা ফেলে তাতে “মনে হয় যেন এরা একই সময়ে দুটো কাজ করে অর্থাৎ তলকে আঁকড়ে ধরে ও পাগুলোকে টান দেয়।” ওই পত্রিকা বলে, এর ফলে “প্রতিটা লোমের আঁকড়ে ধরার ক্ষমতা সাধারণভাবে আঁকড়ে ধরার চেয়ে দশগুণ বেশি শক্তিশালী হয়।” (g০১ ১/২২)
টিভি দেখায় ব্রিটিশরা শীর্ষে
লন্ডনের দি ইনডিপেনডেন্ট খবরের কাগজ বলে যে, “এক চতুর্থাংশ ব্রিটিশরা এক সপ্তায় যতখানি সময় কাজ করে ততখানি সময় টিভিও দেখে।” গবেষকরা বলেন যে, ব্রিটিশরা সাধারণত সপ্তায় ২৫ ঘন্টা টেলিভিশন দেখেন কিন্তু প্রায় ২১ শতাংশ ব্রিটিশ গড়ে ৩৬ ঘন্টারও বেশি সময় টিভি দেখেন। ওই খবরের কাগজ বলে, “এই গবেষণা থেকে দেখা যায় যে শুধু যুবক-যুবতীরাই এত সময় ধরে টিভি দেখে না কিন্তু এর মধ্যে নারী-পুরুষ এবং বয়স্ক ব্যক্তিরাও আছেন।” সপ্তায় ৩০ ঘন্টা টিভি দেখে এমন একটা পরিবার বলেছিল যে, টেলিভিশন তাদেরকে “এমন কিছু জুগিয়েছিল যা কঠিন বাস্তবতাকে ভুলে থাকতে” সাহায্য করেছিল। কিন্তু, এত বেশি টিভি দেখার পরিণতি খুবই মারাত্মক। লন্ডনের দ্যা গার্ডিয়ান উইকলি বলে যে ২০টা দেশের ওপর সমীক্ষা চালিয়ে দেখা গেছে, যুক্তরাজ্য “টিভি দেখার তালিকায় শীর্ষে আছে।” অথচ “শিক্ষার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ তিনটে মানদণ্ডের দিক দিয়ে ব্রিটেন ঠিকই নিচে রয়েছে।” (g০১ ১/২২)
মানুষের সবচেয়ে ভাল বন্ধু?
মেক্সিকো সিটির এল ইউনিভারসেল এর রিপোর্ট অনুসারে, ছোট বাচ্চাদেরকে কুকুরের সামনে ছেড়ে দিয়ে যদি খেয়াল করা না হয়, তাহলে কুকুর তাদের কামড় দিয়ে বসতে পারে। ওই রিপোর্টটা বলে, “বেশির ভাগ সময়েই প্রথমে বাচ্চারা আক্রমণ করে আর কুকুর শুধু নিজেকে রক্ষা করতে চায়।” মেক্সিকোর একটা হাসপাতালে গত পাঁচ বছরে কুকুরে কামড়ানো ৪২৬টা বাচ্চার চিকিৎসা করা হয়েছে। এই বাচ্চাদের মধ্যে ১২ শতাংশ বাচ্চা সারা জীবনের জন্য বিকলাঙ্গ হয়ে গেছে বা তাদের চেহারা বিকৃত হয়ে গেছে। ওই রিপোর্টে বাবামাদেরকে অনুরোধ করা হয় যেন তারা তাদের বাচ্চাদেরকে কুকুর সম্বন্ধে মৌলিক বিষয়গুলো শিখিয়ে দেন: এদের খেলনা, ঘর ও খাওয়ার পাত্রকে নষ্ট কর না; কুকুর যখন খাবার খায় বা ঘুমিয়ে থাকে তখন এর কাছে যাবে না; এর লেজ টানবে না অথবা এর পিঠে চড়ার চেষ্টা করবে না। (g০১ ৩/৮)
পর্যাপ্ত ঘুম
ইউনিভারসিটি অফ ব্রিটিশ কলম্বিয়ার মনোবিজ্ঞানী স্ট্যানলি কোরেন বলেন, “আমরা এমন এক সমাজে বাস করি যেখানে লোকেরা খুব বেশি ঘুমাতে পারে না আর তা খুবই বিপদজনক।” থ্রি মাইল আইল্যান্ডের পারমাণবিক বিস্ফোরণ এবং এক্সজোন ভেলডেজ-এ তেল নষ্ট হওয়ার জন্য অপর্যাপ্ত ঘুমকেই দায়ী করা হয়। কানাডার ম্যাকলিনস্ পত্রিকা বলে যে, ঘুম ঘুম ভাবের কারণে উত্তর আমেরিকায় প্রতি বছর ১,০০,০০০ এরও বেশি গাড়ি দুর্ঘটনা হয়। স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘুম বিষয়ক বিশেষজ্ঞ ড. উইলিয়াম
ডেমেন্ট সাবধান করে দেন: “লোকেরা আসলে বুঝতেই পারে না যে তাদের কতখানি ঘুম দরকার।” ভাল ঘুমের জন্য গবেষকরা পরামর্শ দেন: ঘুমাতে যাবার অন্তত তিন ঘন্টা আগে রাতের খাবার খান। রোজ একই সময়ে ঘুমাতে যান ও ঘুম থেকে উঠুন। শোবার ঘরে টিভি বা কমপিউটার রাখবেন না। চা-কফি, মদ ও সিগারেট খাবেন না। আপনার পা গরম রাখার জন্য মোজা পরে শুতে যান। বিছানায় যাওয়ার আগে গরম জল দিয়ে স্নান করুন। রোজ ব্যায়াম করুন—কিন্তু ব্যায়াম করার পরেই সঙ্গে সঙ্গে ঘুমাতে যাবেন না। শেষে ম্যাকলিনস বলে: “এরপরেও যদি আপনার ঘুম না আসে, তাহলে উঠে কোন কাজ করুন। যখন ক্লান্ত বোধ করেন তখনই শুতে যান ও এরপর আপনার রোজকার সময়মতো বিছানা ছাড়ুন।” (g০১ ৩/৮)রান্নাঘরকে পরিষ্কার রাখা
কানাডার ভ্যানকুভার সান খবরের কাগজ বলে, যে রান্নাঘরে সারাক্ষণই কাজ চলতে থাকে সেখানে লুকনো রোগ জীবাণু ধ্বংস করার জন্য “[সাধারণ] ব্লিচই সবচেয়ে ভাল।” ওই রিপোর্ট নিচের পরামর্শগুলো দেয়: রোজ ৪ লিটার কুসুম গরম জলে ৩০ মিলিলিটার ব্লিচ মিশিয়ে দ্রবণ তৈরি করুন। জল পুরোপুরি গরম হলে ব্লিচ বাষ্পীভূত হয়ে যাবে। একটা পরিষ্কার কাপড় এই দ্রবণে ডুবিয়ে পুরো রান্নাঘর মুছে ফেলুন। তারপর বাতাসে রান্নাঘর শুকান। বেশি সময় ধরে বাতাসে শুকালে ব্লিচ জীবাণু মেরে ফেলে। সাবান মেশানো গরম জলে থালা বাসন ধুয়ে ব্লিচ দ্রবণে কয়েক মিনিট ডুবিয়ে সেগুলোকে জীবাণুমুক্ত করুন। থালাবাসন শুকিয়ে যাওয়ার পর সেগুলোতে আর কোন রাসায়নিক পদার্থ থাকবে না। রান্নাঘরের স্পঞ্জ, থালাবাসন মোছার কাপড় ও ব্রাশগুলো রোজ ধোন এবং এভাবে ব্লিচ দিয়ে জীবাণুমুক্ত করুন। আর আপনার হাতের ময়লা দিয়ে যাতে খাবার দূষিত না হয় সেইজন্য খুব ভাল করে হাত ধোন, বিশেষ করে নখ পরিষ্কার করুন। (g০১ ৩/৮)
ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে অযৌক্তিক লড়াই
ইউএসএ টুডে বলে, “আমেরিকার লোকেরা তাদের ঘরে জীবাণুদের বিরুদ্ধে এক বিভ্রান্তকর লড়াই করছেন।” ওই খবরের কাগজের রিপোর্ট অনুযায়ী, টাফ্টস্ বিশ্ববিদ্যালয়ের ডাক্তার এবং জীবাণুবিজ্ঞানী স্টুয়ার্ট লেভি বলেন, বাজারে “ব্যাকটেরিয়া-প্রতিরোধী এত এত জিনিস উৎপাদনের ফলে . . . এমন সব ব্যাকটেরিয়ার উদ্ভব হচ্ছে যেগুলোকে শুধু ব্যাকটেরিয়া প্রতিরোধী সাবান ও জীবাণু-প্রতিরোধী পদার্থ দিয়েও ধ্বংস করা যায় না।” লেভি বলেন, ব্যাকটেরিয়া প্রতিরোধী বস্তু দিয়ে ঘরকে জীবাণুমুক্ত করা অনেকটা “মশা মারতে কামান দাগা”-র মতোই। অন্যদিকে, ঘরদোর পরিষ্কার করার জিনিসগুলো যেমন ব্লিচ, হাইড্রোজেন পার অক্সাইড, গরম জল এবং সাবান ময়লা পরিষ্কার করে ঠিকই কিন্তু ব্যাকটেরিয়াকে এমন অবস্থায় বদলে দেয় না, যাতে ওগুলো দিয়ে এদেরকে ধ্বংস করা যায়।” লেভি বলেন, “ব্যাকটেরিয়ার সঙ্গে আমাদের অনন্ত সম্পর্ক রয়েছে।” (g০১ ১/২২)
পয়সা দিয়ে পোকামাকড় মারা
দ্যা টাইমস্ অফ ইন্ডিয়া বলে যে, ভারতের উত্তর প্রদেশ রাজ্যের বন বিভাগ, হপলো নামে ২.৫ সেন্টিমিটার লম্বা পাখাযুক্ত পোকা দমন করার জন্য এক অভিযান শুরু করেছে, যাতে এগুলো বনের প্রায় ৬,৫০,০০০টা শাল গাছ নষ্ট করতে না পারে। এই পোকাগুলো সম্প্রতি খুব বেশি পরিমাণে বৃদ্ধি পাচ্ছে বলে এই প্রজাতির গাছগুলোর জন্য তা হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই পোকামাকড়গুলো গাছের বাকল ও কাণ্ডে গর্ত করে সেখানে থাকে ও এর ফলে গাছগুলো শুকিয়ে এক সময় মারা যায়। এই পোকাগুলোকে ধরার জন্য বন বিভাগ “গাছের ফাঁদ” ব্যবহার করছে। এই পোকাগুলো যেখানে বেশি পাওয়া যায় সেখানে ছোট ছোট শাল গাছের বাকলগুলো টুকরো টুকরো করে কেটে বিছিয়ে দেওয়া হয়েছে। এই বাকলগুলো থেকে একধরনের তরল পানীয় নিঃসৃত হয় আর এর সংস্পর্শে এসে পোকাগুলো বেতাল হয়ে পড়ে, ফলে সেগুলোকে ধরা সহজ হয়। এখানকার ছেলেদেরকে এই কাজে লাগিয়ে দেওয়া হয়েছে আর প্রতিটা পোকার জন্য তাদেরকে ৭৫ পয়সা (প্রায় দুই সেন্ট) করে দেওয়া হয়। (g০১ ৩/৮)
অবসর নেওয়ায় বিষণ্ণ ভাব
নির্দিষ্ট সময়ের আগেই চাকরি থেকে অবসর নেওয়ার কিছু উপকার হয়তো আছে কিন্তু এটা একজনের মনের ওপর গভীর চাপ সৃষ্টি করতে পারে। ব্রাজিলের ডিয়ারিও ডি পেরনামবুকো বলে যে, প্রাক্তন সরকারি চাকুরেরা তাদের বিভিন্ন সমস্যার অভিযোগ করেছিলেন যে তারা ‘অতৃপ্তি, বিরক্তি, নিরাপত্তাহীনতা, নিজের পরিচয় হারিয়ে ফেলার কারণে হতাশ হয়ে পড়েন এবং তারা এমন মনে করেন যেন তাদের সবকিছুই শেষ হয়ে গেছে।’ বৃদ্ধদের স্বাস্থ্য বিষয়ক বিশেষজ্ঞ গাইডো শ্যাসনিক বলেন, “যারা নির্দিষ্ট সময়ের আগে অবসর নেন তাদের মধ্যে পুরুষদের মদ্যপানে আসক্ত হওয়া এবং মহিলাদের ওষুধের প্রতি আসক্তি জন্মানো অস্বাভাবিক কিছু নয়।” যারা অবসর নেওয়ার কথা ভাবছেন তাদের সম্বন্ধে মনোবিজ্ঞানী গ্রেস স্যানতোস বলেন, “ধার করা বা নতুন কোন কাজ শেখা তাদের উচিত নয় আর ধার করে তারা যাতে বিপদে না পড়েন সেইজন্য অন্যদের পরামর্শ তাদের শোনা উচিত।” (g০১ ৩/৮)