সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

ঈশ্বরের নাম আমার জীবনকে পালটে দিয়েছিল!

ঈশ্বরের নাম আমার জীবনকে পালটে দিয়েছিল!

ঈশ্বরের নাম আমার জীবনকে পালটে দিয়েছিল!

বলেছেন স্যান্ডি ইয়াসি জোসি

মরমোনরা যখন আমাদের দরজায় কড়া নাড়ে, তখন আমি ও আমার বোনেরা লুকাবার জন্য খাটের তলায় গিয়ে হি হি করে হাসতে থাকি এবং একে অপরকে ঠেলতে থাকি। * শেষে, আমাকে যখন দরজা খুলতে হয়েছিল, তখন আমি তাদেরকে রেগেমেগে বলেছিলাম যে, পরম্পরাগতভাবে আমরা নাভাজো আর তাই সাদা চামড়ার লোকেদের ধর্ম সম্বন্ধে তারা আমাদেরকে কিছু বলুক, তা আমরা চাই না।

আমাদের বাবামা দরকারি কিছু কেনাকাটা করার জন্য দোকানে গিয়েছিলেন। তারা ঠিক সন্ধ্যার মধ্যেই ফিরে আসেন। ফিরে আসার পর তারা জানতে পারেন যে আমি মরমোনদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করেছি। তারা আমাকে বকুনি দিয়ে বলেছিলেন যে, আর কখনও যেন কারও সঙ্গে অসম্মান দেখিয়ে কথা না বলি। আমাদেরকে অন্যদের প্রতি সম্মান দেখাতে ও দয়ার সঙ্গে ব্যবহার করতে শেখানো হয়েছিল। আমার মনে আছে হঠাৎ একদিন আমাদের বাড়িতে একজন লোক বেড়াতে আসেন। বাবামা বাইরে খাবারদাবার রান্না করেছিলেন। তারা প্রথমে সেই অতিথিকে খেতে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন এবং পরে আমরা খেয়েছিলাম।

সংরক্ষিত এলাকায় (রিজারভেশনে) আমাদের জীবন

হোপি ইন্ডিয়ান রিজারভেশন থেকে আমরা ১৫ কিলোমিটার উত্তরপশ্চিমে আরিজোনার হাওয়েল মেসায় থাকতাম, যেটা ঘনবসতিপূর্ণ নগর ও শহরগুলো থেকে অনেক দূরে ছিল। এটা যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণপশ্চিমে অবস্থিত, যেখানে মরুভূমির অপূর্ব দৃশ্য ও মাঝে মধ্যে অসাধারণ লাল বালুশিলা দেখা যায়। সেখানে অনেক মেসা অর্থাৎ উঁচু খাড়া মালভূমি আছে। এখান থেকে আট কিলোমিটার দূরে আমরা আমাদের ভেড়াগুলোকে দেখতে পেতাম। আমার মাতৃভূমি এই দেশে যে শান্তি ছিল, তা আমি কতই না ভালবাসতাম!

আমি যখন হাইস্কুলে পড়ি, তখন মাসতুতো ভাইবোনদের সঙ্গে আমি খুব ঘনিষ্ঠ হয়ে যাই, যারা আমেরিকান ইন্ডিয়ান মুভমেন্ট-কে (এআইএম) * সমর্থন করত। আমেরিকার একজন অধিবাসী হওয়ায় আমি খুব গর্বিত ছিলাম আর বছরের পর বছর ধরে অত্যাচারিত হওয়ায় সাদা চামড়ার লোকদের বিরুদ্ধে আমি মনে মনে বিদ্বেষ পোষণ করতাম এবং আমি মনে করতাম যে, এই সমস্ত কিছু ব্যুরো অফ ইন্ডিয়ান এফ্যায়র্স (বিআইএ) এর কারণে হয়েছিল। আমার মাসতুতো ভাইবোনদের মতো আমি কখনও খোলাখুলিভাবে ঘৃণা প্রকাশ করতাম না। সেই ঘৃণা আমি মনের মধ্যেই রেখে দিয়েছিলাম। এর ফলে যাদের কাছেই বাইবেল থাকত তাদেরকে আমি ঘৃণা করতাম।

আমার যুক্তি ছিল যে, বাইবেলের কারণেই সাদা চামড়ার লোকেরা আমাদের দেশ ও অধিকার এবং আমাদের পবিত্র প্রথাগুলো মেনে চলার ব্যাপারে আমাদের যে স্বাধীনতা ছিল সেগুলোকে ছিনিয়ে নেওয়ার ক্ষমতা পেয়েছিল! বোর্ডিং স্কুলে পড়ার সময় আমাদেরকে যখন গির্জায় যাওয়ার জন্য বাধ্য করা হয়েছিল, তখন প্রটেস্টান্ট ও ক্যাথলিকদের ধর্মীয় অনুষ্ঠানগুলোতে অংশ নেওয়া এড়িয়ে চলতে আমি এমনকি আমার বাবার স্বাক্ষর পর্যন্ত নকল করার চেষ্টা করেছিলাম। এই স্কুলগুলোর উদ্দেশ্য ছিল আমরা যাতে তাদের ধাঁচে গড়ে উঠি ও আমাদের আদিবাসীদের সংস্কৃতি ভুলে যাই। এমনকি আমাদের নিজেদের ভাষায় কথা বলার সুযোগও দেওয়া হতো না!

প্রকৃতি ও পরিবেশের প্রতি আমাদের গভীর সম্মান ছিল। রোজ সকালে আমরা পূর্বদিকে মুখ করে প্রার্থনা করতাম ও ভুট্টার পবিত্র পরাগকে * ছিটিয়ে ধন্যবাদ জানাতাম। আমাকে এভাবেই নাভাজোদের রীতি অনুসারে উপাসনা করতে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছিল এবং আমি মনপ্রাণ দিয়ে গর্বের সঙ্গে তা করতাম। স্বর্গে যাওয়া সম্বন্ধে খ্রীষ্টীয়জগতের ধারণা আমার মনে কোন সাড়া জাগায়নি এবং জ্বলন্ত নরকে কষ্ট পাওয়ার শিক্ষাও আমি বিশ্বাস করতাম না। আমার এই পৃথিবীতে থাকার আন্তরিক ইচ্ছা ছিল।

স্কুলের ছুটির সময় আমি আমার পরিবারের সঙ্গে আনন্দ করতাম। হোগান অর্থাৎ আমাদের নাভাজোদের ঘর পরিষ্কার করা এবং কাপড় বোনা ও ভেড়াদের যত্ন নেওয়া ছিল আমার প্রতিদিনের কাজ। নাভাজোরা বহু শতাব্দী ধরে মেষপালকের কাজ করে আসছে। প্রতিবার আমি যখন আমাদের হোগান (নিচে দেওয়া ছবিটা দেখুন) পরিষ্কার করতাম, তখন আমি একটা ছোট্ট লাল বই লক্ষ্য করতাম, যেটার মধ্যে বাইবেলের গীতসংহিতা এবং “নূতন নিয়ম” এর কয়েকটা বই ছিল। আমি সেটাকে এখানে-সেখানে ফেলে রাখতাম কিন্তু কখনও চিন্তা করিনি যে এটার মধ্যে কী রয়েছে ও সেগুলোর মানে কী। কিন্তু এটা থেকে আমি ছাড়া পাইনি।

বিয়ে—মোহভরা ও মোহমুক্ত

হাইস্কুল থেকে গ্র্যাজুয়েশন করার পর আমি নিউ মেক্সিকোর আলবুকারকিতে কারিগরি শিক্ষার স্কুলে ভর্তি হওয়ার জন্য পরিকল্পনা করি। সেখান থেকে চলে আসার আগে আমার হবু বরের সঙ্গে পরিচয় হয়। বিয়ে করার জন্য আমি নাভাজো রিজারভেশনে ফিরে যাই, যেটাকে আমরা রেজ বলতাম। আমার বাবামার বিয়ে হয়ে অনেক বছর হয়ে গিয়েছিল। আমি তাদের মতোই হতে চেয়েছিলাম, তাই আমি বিয়ে করি। আমি গৃহিণী হয়ে খুব খুশি ছিলাম এবং আমাদের ঘরোয়া জীবন বিশেষ করে আমাদের ছেলে লিওনেলের জন্মের পর আনন্দে কাটছিল। একটা দুঃখজনক খবর শোনার আগে পর্যন্ত আমি ও আমার স্বামী খুব সুখেই দিন কাটাচ্ছিলাম!

আমার স্বামীর আরেকজন স্ত্রীলোকের সঙ্গে সম্পর্ক ছিল! তার অবিশ্বস্ততার জন্য আমাদের বিয়ে ভেঙে যায়। আমি মানসিকভাবে একেবারে ভেঙে পড়ি ও তাকে তীব্র ঘৃণা করতে শুরু করি। আমি প্রতিশোধ নিতে চেয়েছিলাম! কিন্তু আমাদের ছেলে ও আর্থিক সংস্থান নিয়ে আমাদের বিবাহবিচ্ছেদের লড়াইয়ের সময় আমি খুবই বিষণ্ণ হয়ে গিয়েছিলাম, নিজেকে অযোগ্য মনে করতাম ও নিরাশ হয়ে পড়েছিলাম। নিজের দুঃখ দূর করার জন্য আমি কয়েক কিলোমিটার দৌড়াতাম। আমি সারাক্ষণই কাঁদতাম ও খাওয়া-দাওয়ার ব্যাপারে কোন আগ্রহই ছিল না। আমি নিজেকে একেবারে নিঃসঙ্গ মনে করতাম।

কিছুদিন পেরিয়ে যাওয়ার পর আমার একজন ব্যক্তির সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে ওঠে, যার বিবাহিত জীবনেও একই সমস্যা ছিল। আমাদের দুজনের মনেই দুঃখ ছিল। সে আমার প্রতি সহানুভূতি দেখিয়েছিল এবং মানসিকভাবে আমাকে সাহায্য করেছিল, যা আমার খুবই দরকার ছিল। আমি তাকে আমার মনের কথা বলেছিলাম এবং জীবন সম্বন্ধে আমার অনুভূতি তাকে জানিয়েছিলাম। সে আমার কথা শুনেছিল দেখে আমি বুঝেছিলাম যে সে যত্নশীল। তাই আমরা বিয়ে করার পরিকল্পনা করি।

কিন্তু পরে আমি জানতে পারি যে সে-ও অবিশ্বস্ত! যদিও আমার জন্য এটা খুবই কঠিন ও বেদনাদায়ক ছিল, তবুও তার সঙ্গে আমি আমার সম্পর্ককে মুছে ফেলি। আমি নিজেকে অবহেলিত মনে করতাম ও গভীরভাবে বিষণ্ণ হয়ে পড়েছিলাম। আমি খুব বদমেজাজি হয়ে গিয়েছিলাম, প্রতিশোধ নিতে ও আত্মহত্যা করতে চেয়েছিলাম। আমি দুবার আত্মহত্যা করার চেষ্টা করি। আমি শুধু মরতে চেয়েছিলাম।

প্রথমবার সত্য ঈশ্বর সম্বন্ধে আমার অস্পষ্ট জ্ঞান

ঈশ্বরের কাছে আমি কেঁদে কেঁদে প্রার্থনা করতাম যাঁকে আমি চিনতাম না। কিন্তু তবুও, আমি বিশ্বাস করতে শুরু করেছিলাম যে, একজন সর্বশক্তিমান ব্যক্তি বলে কেউ আছেন যিনি এই অসাধারণ নিখিল বিশ্বকে সৃষ্টি করেছেন। সূর্যাস্তের অপূর্ব দৃশ্য দেখে আমি মুগ্ধ হয়ে যেতাম এবং চিন্তা করতাম যে এই বিস্ময়কর বিষয়গুলো উপভোগ করার সুযোগ যিনি দিয়েছেন তিনি কতই না চমৎকার। আমি যাঁকে চিনতাম না তাঁকে ভালবাসতে শুরু করি। আমি তাঁকে বলতে শুরু করি: “ঈশ্বর, তুমি যদি সত্যিই থেকে থাকো, তাহলে আমাকে সাহায্য কর, নির্দেশনা দাও এবং আবার আমাকে সুখী কর।”

ইতিমধ্যে আমার পরিবারের লোকেরা বিশেষ করে আমার বাবা খুব চিন্তিত হয়ে পড়েছিলেন। বাবা আমাকে সুস্থ করার জন্য কয়েকজন লোককে ভাড়া করেন, যারা জাদুমন্ত্র করে রোগ সারায়। বাবা বলেছিলেন যে এদের মধ্যে দক্ষ ব্যক্তি তোমার কাছ থেকে কখনও টাকাপয়সা চাইবে না এবং সে যা বলে তা কাজে দেখাবে। আমার বাবামাকে খুশি করতে আমি অনেকবার আশীর্বাদ পাওয়ার জন্য নাভাজোদের ধর্মীয় অনুষ্ঠানগুলোতে যোগ দিই।

হোগানে আমি একা একা দিন কাটাতাম, আমার সঙ্গে শুধু একটা রেডিও ছিল। মনে ঘৃণা নিয়ে আমি একজন পাদরির সমালোচনা শুনেছিলাম কারণ আমি অন্তর থেকে যীশুকে মানতাম না। আমি খুবই বিরক্ত হয়ে গিয়েছিলাম! সাদা চামড়ার লোকদের ধর্মকে আমি একদম সহ্য করতে পারতাম না ও এমনকি আমার নিজের ধর্মকেও না! আমি মনে মনে ঠিক করি যে ঈশ্বরকে আমি নিজের মতো করে খুঁজব।

একা থাকার সময় আমি সেই ছোট্ট লাল বইটা আবার লক্ষ্য করি। আমি বুঝতে পারি যে এটা বাইবেলেরই অংশ। গীতসংহিতা পড়ে আমি রাজা দায়ূদের কষ্ট এবং বিষণ্ণতা সম্বন্ধে জানতে পারি ও সান্ত্বনা পাই। (গীতসংহিতা ৩৮:১-২২; ৫১:১-১৯) কিন্তু অহংকার থাকায় আমি যা কিছু পড়েছিলাম, তার কিছুই গুরুত্বের সঙ্গে নিইনি। আমি সাদা চামড়ার লোকদের ধর্মকে মানতে রাজি ছিলাম না।

বিষণ্ণ মনোভাব সত্ত্বেও, আমি আমার ছেলেকে ভালভাবে যত্ন নিতে পেরেছিলাম। সে আমার উৎসাহের উৎস হয়েছিল। টিভিতে যে ধর্মীয় কার্যক্রমগুলোর মধ্যে প্রার্থনা করা হতো, আমি সেগুলো দেখতে শুরু করি। হতাশ হয়ে সাহায্য পাওয়ার জন্য আমি ৮০০ নম্বরে একটা ফোন করি। আমার কাছে যখন ৫০ বা ১০০ ডলার চাওয়া হয়েছিল, তখন আমি রেগেমেগে ফোন রেখে দিই!

বিবাহবিচ্ছেদের জন্য যে মামলা চলছিল সেটা আমাকে খুবই বিষণ্ণ করে দিয়েছিল, বিশেষ করে যখন দেখি যে আমার স্বামী বিচারকের সামনে মিথ্যে বলছিল। আমাদের ছেলের তত্ত্বাবধানের বিষয়টা নিয়ে লড়াই চলার কারণে বিবাহবিচ্ছেদের মামলা শেষ হতে অনেক সময় লেগে গিয়েছিল। কিন্তু আমি জয়ী হয়েছিলাম। আমার বাবা বিচারের সময় নীরব থেকে আমাকে প্রেমের সঙ্গে সাহায্য করেছিলেন। তিনি দেখেছিলেন যে আমি খুব দুঃখ পেয়েছি।

সাক্ষিদের সঙ্গে আমার প্রথম পরিচয়

এক সময় আমি বেঁচে থাকার প্রেরণা পাই। একদিন আমি লক্ষ্য করি যে এক নাভাজো পরিবার আমার প্রতিবেশীর সঙ্গে কথা বলছে। আমি চুপি চুপি তাদের ওপর লক্ষ্য রাখতে থাকি। এই অতিথিরা ঘরে-ঘরে গিয়ে একটা কাজ করতেন। তারা আমার বাড়িতেও আসেন। স্যান্ড্রা একজন নাভাজো ছিলেন এবং নিজেকে তিনি একজন যিহোবার সাক্ষি হিসেবে পরিচয় দিয়েছিলেন। অন্য সবকিছু থেকে যে বিষয়টা আমার মনোযোগ কেড়েছিল তা হল যিহোবার নাম। আমি বলেছিলাম: “যিহোবা কে? আপনাদের ধর্মটা নিশ্চয়ই নতুন। তা না হলে, গির্জায় আমাকে যিহোবার নাম শেখানো হয়নি কেন?”

তিনি শান্তভাবে বাইবেল থেকে গীতসংহিতা ৮৩:১৮ পদ খোলেন যেখানে বলা আছে: “আর জানুক যে তুমি, যাঁহার নাম সদাপ্রভু, [“যিহোবা,” NW] একা তুমিই সমস্ত পৃথিবীর উপরে পরাৎপর।” তিনি ব্যাখ্যা করেছিলেন যে ঈশ্বরের একটা ব্যক্তিগত নাম আছে আর তাঁর পুত্র যীশু খ্রীষ্ট হলেন যিহোবার একজন সাক্ষি। তিনি আমাকে যিহোবা ও যীশু সম্বন্ধে শেখার প্রস্তাব দিয়েছিলেন এবং যে সত্য অনন্ত জীবনে লইয়া যায় * বইটা দিয়ে গিয়েছিলেন। উৎসাহের সঙ্গে আমি বলেছিলাম: “হ্যাঁ। আমি এই নতুন ধর্মকে পরীক্ষা করে দেখতে চাই!”

আমি এক রাতের মধ্যে বইটা পড়ে শেষ করেছিলাম। এই বইটার বিষয়বস্তু একেবারে নতুন ও আলাদা ছিল। এটাতে ব্যাখ্যা করা হয়েছিল যে, জীবনের এক উদ্দেশ্য আছে এবং জীবনের প্রতি আমার আগ্রহকে আবার জাগিয়ে তোলার জন্য এটাই আমার প্রয়োজন ছিল। আমি বাইবেল অধ্যয়ন করা শুরু করি ও আমার অনেক প্রশ্নের উত্তর বাইবেল থেকে পেয়ে আমি খুব খুশি হয়েছিলাম। আমি যা কিছু শিখেছিলাম সবই বিশ্বাস করেছিলাম। সেগুলো অর্থপূর্ণ বলে মনে হয়েছিল এবং সেটাই সত্য ছিল!

আমি লিওনেলকে ছবছর বয়স থেকে বাইবেলের সত্য শেখাতে শুরু করেছিলাম। আমরা একসঙ্গে প্রার্থনা করতাম। আমরা এই বলে পরস্পরকে উৎসাহ দিতাম যে যিহোবা যত্ন নেন ও আমাদের তাঁর ওপর ভরসা রাখা উচিত। কখনও কখনও সমস্যাগুলোর সঙ্গে লড়াই করে যাওয়ার মতো শক্তি আমার থাকত না। কিন্তু তার ছোট ছোট হাত দিয়ে আমাকে জড়িয়ে ধরে, আত্মবিশ্বাস ও সান্ত্বনাভরা স্বরে বলা “মা, কেঁদো না, যিহোবা আমাদের যত্ন নেবেন” এই কথাগুলো আমার ওপর বিরাট প্রভাব ফেলেছিল। সেই কথাগুলো আমাকে কতই না সান্ত্বনা দিয়েছিল ও বাইবেলের অধ্যয়ন চালিয়ে যেতে আমাকে দৃঢ় রেখেছিল! নির্দেশনা পাওয়ার জন্য আমি সবসময়ই প্রার্থনা করতাম।

খ্রীষ্টীয় সভাগুলোর প্রভাব

যিহোবার প্রতি আমাদের কৃতজ্ঞতাই আমাদেরকে টুবা শহরে যিহোবার সাক্ষিদের সভাগুলোতে যোগ দেওয়ার জন্য আসা-যাওয়া মিলিয়ে ২৪০ কিলোমিটার পথ যাত্রা করতে অনুপ্রাণিত করেছিল। গ্রীস্মের সময় আমরা সপ্তায় দুবার সভাতে যোগ দিতাম এবং শীতের সময় আবহাওয়া খারাপ থাকায় রবিবারে পুরো দিন যোগ দিতাম। একবার আমাদের গাড়ি যখন খারাপ হয়ে গিয়েছিল, তখন আমরা পথ চলতি গাড়ি থামিয়ে সেটাতে করে কিংডম হলে পৌঁছাই। দূরের যাত্রা খুবই ক্লান্তিকর ছিল কিন্তু লিওনেল বলেছিল যে মরণ না আসা পর্যন্ত আমাদের কখনোই সভাগুলোকে বাদ দেওয়া উচিত নয় আর এই কথাগুলো আমাকে যিহোবার কাছ থেকে পাওয়া আধ্যাত্মিক নির্দেশনাকে অবহেলা না করার গুরুত্ব বুঝতে সাহায্য করেছিল।

যখনই আমরা সভাগুলোতে দুর্দশাবিহীন জীবন নিয়ে অনন্তকাল বেঁচে থাকা সম্বন্ধে গানগুলো গাইতাম, তখন আমার চোখ থেকে ঝরঝর করে জল পড়ত। যিহোবার সাক্ষিদের কাছ থেকে আমি সান্ত্বনা ও উৎসাহ পেতাম। তারা নিজেদের বাড়িতে দুপুরের খাবার ও জলখাবারের জন্য আমাদেরকে আমন্ত্রণ জানিয়ে আতিথেয়তা দেখাতেন এবং আমরা তাদের পারিবারিক বাইবেল অধ্যয়নগুলোতে যোগ দিতাম। তারা আমাদের প্রতি আগ্রহ দেখাতেন ও আমাদের কথা শুনতেন। বিশেষ করে প্রাচীনরা আমাদের প্রতি সহানুভূতি দেখাতে প্রধান ভূমিকা রেখেছিলেন এবং যিহোবা ঈশ্বর যে যত্ন নেন, আমাদের এই বিশ্বাসকে তারা আরও দৃঢ় করেছিলেন। সত্যিকারের বন্ধু পেয়ে আমি খুব খুশি হয়েছিলাম। তারা আমাকে সতেজ করেছিলেন ও এমনকি আমি যখন মনে করতাম যে আমি আর পেরে উঠছি না, তখন তারা আমার সঙ্গে কেঁদেও ছিলেন।—মথি ১১:২৮-৩০.

দুটো বিরাট সিদ্ধান্ত

যিহোবার ব্যবস্থাগুলো পেয়ে আমি যখন পরিতৃপ্ত হই, তখন আমার ছেলে বন্ধু আমার সঙ্গে সমস্যা মিটমাট করার জন্য ফিরে এসেছিল। আমি তখনও তাকে ভালবাসতাম আর তাই তাকে আমি ফিরিয়ে দিতে পারিনি। আমরা বিয়ে করার পরিকল্পনা করি। আমি ভেবেছিলাম যে সত্য তাকে পালটে দেবে। সেটাই ছিল আমার জীবনের সবচেয়ে বিরাট ভুল! আমি সুখী ছিলাম না। আমার বিবেক আমাকে খুবই দংশন করত। সে সত্যকে মেনে না নিয়ে আমাকে হতাশ করেছিল।

আমি একজন প্রাচীনকে আমার মনের কথা বলি। তিনি শাস্ত্র থেকে যুক্তি দিয়ে আমাকে বুঝিয়েছিলেন এবং আমার সিদ্ধান্তের জন্য প্রার্থনা করেছিলেন। আমি শেষে বুঝতে পেরেছিলাম যে, অসিদ্ধ মানুষদেরকে আমরা যতই সম্মান করি না কেন, তারা আমাদেরকে কষ্ট দেবে কিন্তু যিহোবা কখনও আমাকে দুঃখ অথবা যন্ত্রণা দেবেন না। আসলে আমি শিখেছিলাম যে আইনত স্বীকৃতি ছাড়া বিয়েগুলোতে কোন নিরাপত্তা নেই। আমি একটা সিদ্ধান্ত নিই। এই সম্পর্ক শেষ করা সত্যিই খুব কঠিন ও যন্ত্রণাদায়ক ছিল। যদিও আমাকে আর্থিক দিক দিয়ে কষ্ট পেতে হবে, তারপরও আমার মনপ্রাণ দিয়ে যিহোবার ওপর ভরসা রাখার প্রয়োজন ছিল।

আমি যিহোবাকে ভালবাসতাম ও তাঁকে সেবা করে যাব বলে ঠিক করি। ১৯৮৪ সালের ১৯শে মে যিহোবার কাছে আমার জীবন উৎসর্গীকরণের প্রতীকস্বরূপ জলে বাপ্তিস্ম নিয়েছিলাম। আমার ছেলে লিওনেলও একজন বাপ্তাইজিত যিহোবার সাক্ষি। নিজের পরিবার ও আমার আগের স্বামীর কাছ থেকে আমরা অনেক তাড়না ভোগ করেছিলাম কিন্তু সবসময়ই আমরা যিহোবার হাতে সবকিছু ছেড়ে দিয়েছি। আমরা কখনও উৎসাহ হারিয়ে ফেলিনি। অবশেষে ১১ বছর পর আমার পরিবার নরম হয়েছিল এবং আমাদের নতুন জীবনধারাকে মেনে নিয়েছিল।

আমি তাদের খুব ভালবাসি আর আমি শুধু চাই যেন তারাও যিহোবার সম্বন্ধে শিখে সুখী হতে পারে। আমার বাবা মনে করতেন যে আমি খুবই হতাশ এবং আত্মহত্যা করতে চাই, তাই তিনি সাহসের সঙ্গে আমার সঙ্গ দিয়েছিলেন। আমাকে সুখী দেখে তিনি আনন্দিত হয়েছিলেন। আমি জেনেছিলাম যে মানসিকভাবে সুস্থ হওয়ার জন্য যিহোবার কাছে প্রার্থনা করা, যিহোবার সাক্ষিদের সভাগুলোতে যোগ দেওয়া ও ঈশ্বরের বাক্যকে কাজে লাগানো খুবই জরুরি।

ভবিষ্যতের আশা

আমি সেই দিনের অপেক্ষায় আছি যখন সমস্ত কষ্ট, অসিদ্ধতা, মিথ্যা ও ঘৃণা একেবারে দূর হয়ে যাবে। অফুরন্ত শস্য, পিচ ফল ও এপরিকোট গাছ যেগুলো একসময় এখানে ছিল সেগুলোতে ভরা আমাদের নাভাজোদের ভূমির কথা আমি কল্পনা করি। বিভিন্ন উপজাতির লোকেরা নদীগুলোর ও বৃষ্টির জলের সাহায্যে নিজেদের শুষ্ক ভূমিকে এক সুন্দর পরমদেশে পরিণত করার কাজ করছে, তাদের সেই আনন্দকে আমি দেখতে পাই। এছাড়া আমি কল্পনা করি আমাদের হোপি প্রতিবেশী ও অন্যান্য উপজাতিগুলোর সঙ্গে আমরা মিলেমিশে বাস করছি, যাদের সঙ্গে কিছুদিন আগেও আমাদের প্রতিদ্বন্দ্বিতা ছিল। আজকে আমি দেখতে পাচ্ছি যে ঈশ্বরের বাক্য কীভাবে সমস্ত জাতি, উপজাতি ও গোষ্ঠীগুলোকে এক করছে। ভবিষ্যতে আমি দেখতে পারব পুনরুত্থানের মাধ্যমে পরিবারগুলো ও বন্ধুবান্ধবেরা নিজেদের মৃত প্রিয় লোকেদের সঙ্গে মিলিত হচ্ছে। ভবিষ্যতে যে অনন্ত জীবন রয়েছে তা এক মহা আনন্দের সময় হবে। এইধরনের ভবিষ্যৎ সম্বন্ধে জানতে চায় না, এমন কোন ব্যক্তির কথা আমি ভাবতেও পারি না।

নাভাজো দেশে ঐশিক বৃদ্ধি

টুবা শহরে একটা কিংডম হল এবং নাভাজো ও হোপি রিজারভেশনে * চারটে মণ্ডলী অর্থাৎ চিনলে, কায়েন্টা, টুবা শহর ও কেম্স ক্যানয়ানে যে বৃদ্ধি ঘটছে, তা দেখা সত্যিই চমৎকার। ১৯৮৩ সালে আমি যখন প্রথমবার ঐশিক পরিচর্যা বিদ্যালয়ে যোগ দিই, তখন আমি ভেবেছিলাম যে এই বিদ্যালয় একদিন নাভাজো ভাষায়ও হবে। আমি যা কল্পনা করেছিলাম আজ তা-ই হয়েছে। ১৯৯৮ সাল থেকে এই বিদ্যালয় নাভাজো ভাষায় হচ্ছে।

ঈশ্বরের যে একটা ব্যক্তিগত নাম আছে, তা অন্যদেরকে জানানো প্রচুর আশীর্বাদ এনে দিয়েছে। নাভাজো ভাষায় অনুবাদ করা পৃথিবীতে অনন্তজীবন উপভোগ করুন!, ঈশ্বর আমাদের কাছ থেকে কী চান? এবং নতুন আপনি ঈশ্বরের বন্ধু হতে পারেন! ব্রোশারগুলোর মধ্যে বিশ্বাসকে শক্তিশালী করার মতো যে কথাগুলো পাওয়া যায়, সেগুলো নিজেদের ভাষায় পড়া ও লোকদেরকে বলার যে আনন্দ, তা ভাষায় প্রকাশ করা যায় না। বাইবেলের এই শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করার জন্য আমি বিশ্বস্ত ও বুদ্ধিমান দাসশ্রেণীর কাছে কৃতজ্ঞ কারণ এর ফলে নাভাজোর লোক ডিনে সহ সমস্ত জাতি, উপজাতি ও ভাষার লোকেরা উপকার পেতে পারেন।—মথি ২৪:৪৫-৪৭.

নিজের ভরণপোষণের জন্য আমি পূর্ণ-সময়ের চাকরি করি ও সেইসঙ্গে নিয়মিত সহায়ক অগ্রগামীর কাজ করে আনন্দ পেয়ে থাকি। একা থেকে আমি ভাল আছি এবং কোন বাধা ছাড়াই যিহোবাকে সেবা করতে চাই। আমার গোত্রের লোকেদের ও বিশেষ করে হতাশ ব্যক্তিদেরকে এই কথা বলতে পেরে আমি সন্তুষ্ট ও খুশি যে “সদাপ্রভু ভগ্নচিত্তদের নিকটবর্ত্তী, তিনি চূর্ণমনাদের পরিত্রাণ করেন।”—গীতসংহিতা ৩৪:১৮.

আমি আর কখনও এমন ভাবি না যে বাইবেলের ধর্ম হল সাদা চামড়ার লোকেদের ধর্ম। ঈশ্বরের বাক্য বাইবেল হল সবার জন্য বিশেষ করে যারা এটা শিখতে চায় ও কাজে লাগাতে চায়। আপনার কাছে যখন যিহোবার সাক্ষিরা আসেন, তখন তাদেরকে দেখাবার সুযোগ করে দিন যে কীভাবে প্রকৃত সুখী হওয়া যায়। তারা আপনার কাছে যিহোবা, ঈশ্বরের নামের সুসমাচার নিয়ে আসছেন, যে নাম আমার জীবনকে পালটে দিয়েছে! “হ্যাঁ, ঈশ্বরের নাম হল যিহোবা।”(g০১ ৭/৮)

[পাদটীকাগুলো]

^ মরমোন ধর্ম সম্বন্ধে বিস্তারিত তথ্যের জন্য ১৯৯৫ সালের ৮ই নভেম্বরের সচেতন থাক! (ইংরেজি) পত্রিকা দেখুন।

^ এআইএম হল নাগরিক অধিকারের একটা সংগঠন, যেটা ১৯৬৮ সালে আমেরিকার একজন অধিবাসী দ্বারা প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। এটা সরকারি এজেন্সি বিআইএ-কে প্রায়ই সমালোচনা করত যেটা অধিবাসীদের সুখস্বাচ্ছন্দ্যকে বাড়িয়ে তোলার জন্য ১৮২৪ সালে স্থাপিত হয়। বিআইএ রিজারভেশনে থাকা ন-অধিবাসীদেরকে খনিজ, জল ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা দিত।—ওয়ার্ল্ড বুক এনসাইক্লোপিডিয়া।

^ পরাগকে একটা পবিত্র বস্তু হিসেবে ধরা হয় এবং জীবন ও পুনর্জন্মের প্রতীক হিসেবে এটাকে প্রার্থনা ও আচার-অনুষ্ঠানে ব্যবহার করা হয়। নাভাজোরা বিশ্বাস করে যে, কেউ যখন পরাগ ছড়ানো পথে হাঁটে, তখন তার শরীর পবিত্র হয়ে যায়।—দি এনসাইক্লোপিডিয়া অফ নেটিভ আমেরিকান রিলিজিয়ন্স।

^ যিহোবার সাক্ষিদের দ্বারা প্রকাশিত কিন্তু বর্তমানে ছাপানো হয় না।

^ আরও তথ্যের জন্য ১৯৯৬ সালের ৮ই সেপ্টেম্বরের সচেতন থাক! (ইংরেজি) পত্রিকার “আ্যমেরিকান ইন্ডিয়ান—তাদের ভবিষ্যৎ কী?” এই ধারাবাহিক প্রবন্ধগুলোকে দেখুন।

[২৭ পৃষ্ঠার চিত্র]

এক আদর্শ নাভাজো হোগান

[২৭ পৃষ্ঠার চিত্র]

আমার ছেলে, লিওনেলের সঙ্গে

[২৮ পৃষ্ঠার চিত্র]

১৯৯৩ সালে মস্কোতে আন্তর্জাতিক সম্মেলনে রাশিয়ার বন্ধুদের সঙ্গে

[২৯ পৃষ্ঠার চিত্র]

আরিজোনায় কায়েন্টা মণ্ডলীতে আমার আত্মিক পরিবারের সঙ্গে