সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

নির্যাতিত নারীদের জন্য সাহায্য

নির্যাতিত নারীদের জন্য সাহায্য

নির্যাতিত নারীদের জন্য সাহায্য

নির্যাতনের শিকার এমন নারীদেরকে সাহায্য করার জন্য কী করা যেতে পারে? প্রথমত, তারা কীধরনের কষ্ট ভোগ করছেন তা একজনকে বুঝতে হবে। নির্যাতনকারীরা শুধু শারীরিকভাবেই আঘাত করে না। প্রায়ই মুখে হুমকি দেওয়া ও ভয় দেখানো হয়, যাতে নির্যাতিত ব্যক্তি নিজেকে অযোগ্য ও অসহায় বলে মনে করেন।

প্রথম প্রবন্ধে বলা রোক্সানার কাহিনী বিবেচনা করুন। মাঝেমধ্যে তার স্বামী শূল বিঁধানো কথাবার্তা বলে। রোক্সানা জোর গলায় বলেন, ‘সে আমাকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে। সে আমাকে বলে: “অশিক্ষিত মূর্খ, স্কুলও পাশ করতে পারনি। আমাকে ছাড়া ছেলেমেয়েদের কীভাবে মানুষ করবে? তুমি এক অলস ও অযোগ্য মা। তুমি কি মনে কর যে, আমাকে ছেড়ে চলে গেলে বাচ্চাদেরকে তোমার কাছে নিয়ে যেতে সরকার অনুমতি দেবে?”’

রোক্সানার স্বামী টাকাপয়সা না দিয়ে তার আধিপত্য বজায় রাখে। সে রোক্সানাকে গাড়ি ব্যবহার করতে দেয় না এবং সারাদিনে রোক্সানা কী করে না করে, তা জানার জন্য বারবার ফোন করে। কোন ব্যাপারে রোক্সানা যদি তার পছন্দের কথা জানায়, তাহলে সে তেলেবেগুনে জ্বলে ওঠে। ফলে, রোক্সানা শিখেছেন যে তিনি কখনও তার মতামত প্রকাশ করবেন না।

অতএব স্পষ্ট বোঝা যায় যে, বিবাহ সাথির প্রতি নির্যাতন হল অত্যন্ত জটিল একটা বিষয়। তাদেরকে উৎসাহ দেওয়ার জন্য তাদের কথা শোনার সময় সমবেদনা দেখান। মনে রাখবেন, একজন নির্যাতিত ব্যক্তির সঙ্গে যেরকম ব্যবহার করা হয়ে আসছে সেগুলো নিজের মুখে বলা খুবই কঠিন হয়ে পড়ে। আপনার লক্ষ্য হওয়া উচিত, নির্যাতিত ব্যক্তি যখন এই পরিস্থিতিকে নিজের মতো মোকাবিলা করতে থাকেন, তখন তাকে সান্ত্বনা দেওয়া।

কিছু নির্যাতিত নারীদের হয়তো কর্তৃপক্ষের কাছে সাহায্য চাওয়ার দরকার হতে পারে। কখনও কখনও এক সংকটময় মুহূর্ত যেমন, পুলিশের হস্তক্ষেপ একজন নির্যাতনকারীকে তার কাজ যে কতটা ভয়াবহ তা বুঝতে সাহায্য করতে পারে। কিন্তু এটা স্বীকার করতেই হবে যে, সংকটময় মুহূর্ত কেটে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে স্বভাবকে পালটানোর যে ইচ্ছা সেটা প্রায়ই লুপ্ত হয়ে যায়।

নির্যাতিত স্ত্রীর কি তার স্বামীকে ছেড়ে চলে যাওয়া উচিত? বিবাহিত ব্যক্তিদের পৃথকভাবে বাস করাকে বাইবেল হালকাভাবে নেয় না। সেইসঙ্গে বাইবেল কোন নির্যাতিত স্ত্রীকে এমন পুরুষের সঙ্গে থাকতে বাধ্য করে না, যে তার স্ত্রীর স্বাস্থ্য ও এমনকি জীবনকে বিপন্ন করে। খ্রীষ্টান প্রেরিত পৌল লিখেছিলেন: “যদি চলিয়া যায়, তবে সে অবিবাহিতা থাকুক, কিম্বা স্বামীর সহিত সম্মিলিতা হউক।” (বাঁকা অক্ষরে মুদ্রণ আমাদের।) (১ করিন্থীয় ৭:১০-১৬) যেহেতু চরম পরিস্থিতিতে পৃথক থাকাকে বাইবেল নিষেধ করে না, তাই এই ক্ষেত্রে একজন স্ত্রী পৃথক থাকবেন কী থাকবেন না, তা তার ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত। (গালাতীয় ৬:৫) স্বামীকে ছেড়ে চলে যাওয়ার জন্য প্ররোচিত করা কিংবা একজন নির্যাতিতা স্ত্রীর স্বাস্থ্য, জীবন ও আধ্যাত্মিক বিষয়গুলো যখন ঝুঁকির মধ্যে থাকে, তখন সেই স্ত্রীকে তার নিষ্ঠুর স্বামীর সঙ্গেই বাস করার জন্য জোর দেওয়া কারও উচিত নয়।

নির্যাতনকারীদের জন্য কি কোন আশা আছে?

বিবাহিত সাথির সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করা মানে খোলাখুলিভাবে বাইবেলের নীতিগুলোকে লঙ্ঘন করা। ইফিষীয় ৪:২৯, ৩১ পদে আমরা পড়ি: “তোমাদের মুখ হইতে কোন প্রকার কদালাপ বাহির না হউক, . . . সর্ব্বপ্রকার কটুকাটব্য, রোষ, ক্রোধ, কলহ, নিন্দা এবং সর্ব্বপ্রকার হিংসেচ্ছা তোমাদের হইতে দূরীকৃত হউক।”

যে স্বামী নিজেকে খ্রীষ্টের শিষ্য বলে দাবি করে সে যদি তার স্ত্রীর ওপর নির্যাতন করে, তাহলে সে কখনোই বলতে পারে না যে সে তার স্ত্রীকে ভালবাসে। সে যদি তার স্ত্রীর সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করে, তাহলে তার অন্যান্য ভাল কাজগুলোর কি কোন দাম থাকবে? একজন “প্রহারক” কখনও খ্রীষ্টীয় মণ্ডলীতে বিশেষ সুযোগগুলো পেতে পারে না। (১ তীমথিয় ৩:৩; ১ করিন্থীয় ১৩:১-৩) আসলে, নিজেকে খ্রীষ্টান বলে দাবি করেন, এমন কেউ যদি অনুতাপ না দেখিয়ে অনিয়ন্ত্রিত রাগ দেখিয়েই চলে, তাহলে তাকে খ্রীষ্টীয় মণ্ডলী থেকে সমাজচ্যুত করা হতে পারে।—গালাতীয় ৫:১৯-২১; ২ যোহন ৯, ১০.

হিংস্র পুরুষরা কি তাদের স্বভাব বদলাতে পারে? কেউ কেউ বদলেছেন। কিন্তু, সাধারণত একজন নির্যাতনকারী ততক্ষণ পর্যন্ত বদলাতে পারবেন না, যতক্ষণ না তিনি (১) স্বীকার করেন যে, তার আচরণ অন্যায়, (২) তার স্বভাব পালটাতে চান এবং (৩) সাহায্য চান। যিহোবার সাক্ষিরা দেখেছেন যে, বদলানোর জন্য বাইবেল এক জোরালো প্রভাব ফেলতে পারে। অনেক আগ্রহী ব্যক্তিরা যিহোবার সাক্ষিদের সঙ্গে বাইবেল অধ্যয়ন করে ঈশ্বরকে খুশি করার আকাঙ্ক্ষা গড়ে তুলেছেন। এই নতুন বাইবেল ছাত্ররা যিহোবা ঈশ্বর সম্বন্ধে শিখেছেন যে, “দৌরাত্ম্যপ্রিয় লোক তাঁহার প্রাণের ঘৃণাস্পদ।” (গীতসংহিতা ১১:৫) অবশ্য, একজন নির্যাতনকারীর তার স্বভাবকে পালটানো বলতে শুধু মারধর না করাই বোঝায় না। এর মধ্যে রয়েছে তার স্ত্রীর প্রতি সম্পূর্ণ এক নতুন মনোভাব গড়ে তোলা।

কোন পুরুষ যখন ঈশ্বরবিষয়ক জ্ঞান লাভ করেন, তখন তিনি তার স্ত্রীকে দাসী হিসেবে নয় কিন্তু “সহকারিণী” হিসেবে দেখতে শেখেন এবং নিচু চোখে দেখেন না কিন্তু “সমাদর” করেন। (আদিপুস্তক ২:১৮; ১ পিতর ৩:৭) সেইসঙ্গে তিনি সমবেদনা দেখাতে এবং তার স্ত্রীর মতামতও যে শোনা দরকার, তা বুঝতে শেখেন। (আদিপুস্তক ২১:১২; উপদেশক ৪:১) যিহোবার সাক্ষিরা যে বাইবেল অধ্যয়ন করার প্রস্তাব দেন, তা অনেক দম্পতিকে সাহায্য করেছে। খ্রীষ্টীয় পরিবারে কোন নিষ্ঠুর, নির্মম বা উৎপীড়কের জায়গা নেই।—ইফিষীয় ৫:২৫, ২৮, ২৯.

“ঈশ্বরের বাক্য জীবন্ত ও কার্য্যসাধক।” (ইব্রীয় ৪:১২) তাই, বাইবেলে যে প্রজ্ঞা রয়েছে তা দম্পতিদেরকে তারা যে সমস্যাগুলোর মুখোমুখি হন, তা খুঁটিয়ে দেখতে সাহায্য করে এবং এগুলোকে মোকাবিলা করার জন্য উপযুক্ত সাহস জোগায়। এর চেয়ে বড় কথা হল, যিহোবার স্বর্গীয় রাজা যখন সমস্ত বাধ্য মানবজাতির ওপর শাসন করবেন, তখন নির্যাতন মুক্ত এক জগতের নিশ্চিত ও সান্ত্বনাদায়ক আশা রয়েছে। বাইবেল বলে: “তিনি আর্ত্তনাদকারী দরিদ্রকে, এবং দুঃখী ও নিঃসহায়কে উদ্ধার করিবেন। তিনি চাতুরী ও দৌরাত্ম্য হইতে তাহাদের প্রাণ মুক্ত করিবেন।”—গীতসংহিতা ৭২:১২, ১৪.(g০১ ১১/৮)

[১২ পৃষ্ঠার ব্লার্ব]

খ্রীষ্টীয় পরিবারে কোন নিষ্ঠুর, নির্মম বা উৎপীড়কের জায়গা নেই

ভুল ধারণাগুলোকে শোধরানো

নির্যাতিত স্ত্রীরাই তাদের স্বামীদের এইরকম আচরণের জন্য দায়ী।

অনেক নির্যাতনকারী তাদের কাজের জন্য নিজেরা যে দায়ী তা স্বীকার করে না বরং দাবি করে যে, তাদের স্ত্রীরা তাদেরকে জ্বালাতন করে। এমনকি পারিবারের কিছু বন্ধুবান্ধবরাও মনে করে যে, স্ত্রীর সঙ্গে মানিয়ে নেওয়া বেশ কঠিন আর তাই তার স্বামী মাঝেমধ্যে নিজের ওপর নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলে। কিন্তু এইরকম কথা বলা মানে, নির্যাতিতকে দোষ দেওয়া এবং নির্যাতনকারীকে সমর্থন করা। আসলে, নির্যাতিত স্ত্রীরা তাদের স্বামীকে শান্ত করার জন্য অনেক চেষ্টা করে থাকেন। এছাড়া, যে কোন পরিস্থিতিতেই নিজের সঙ্গীকে মারধর করা কখনোই ঠিক নয়। নির্যাতনকারী—এক মনস্তাত্ত্বিক রেখাচিত্র (ইংরেজি) বই বলে: “স্ত্রীদের ওপর নির্যাতন করার জন্য যে সমস্ত পুরুষকে আদালত চিকিৎসার জন্য পাঠিয়ে দিয়েছে তাদের রন্ধ্রে রন্ধ্রে দৌরাত্ম্য মিশে গেছে। তারা নির্যাতন করাকে রাগ ও হতাশা থেকে মুক্তির পথ হিসেবে, সংঘর্ষ দমন ও সমাধান করার এবং চাপ লাঘবের এক উপায় বলে মনে করে। . . . বেশির ভাগ সময়ই তারা এমনকি স্বীকার করে না যে এই নির্যাতনের জন্য তারা দায়ী বা এটাকে গুরুত্বের সঙ্গেও নেয় না।”

মদ খাওয়ার কারণে একজন পুরুষ তার স্ত্রীকে মারধর করে।

এটা ঠিক যে, কিছু কিছু পুরুষ মদ খাওয়া অবস্থায় থাকলে বেশি হিংস্র হয়ে যায়। কিন্তু তাই বলে মদকে দোষ দেওয়া কি ঠিক হবে? নির্যাতনের শুরু যখন ঘরে (ইংরেজি) বইয়ের লেখিকা কে. জে. উইলসন লেখেন, “নির্যাতনকারী মদ খাওয়া অবস্থায় থাকলে তার ওই স্বভাবের জন্য নিজেকে দায়ী না করে কিছুর ওপর দোষ চাপানোর জন্য সে সুযোগ পেয়ে যায়।” তিনি আরও বলেন: “আমাদের সমাজে, মাতাল কোন ব্যক্তি যখন স্ত্রীর ওপর নির্যাতন করে, তখন সেই বিষয়টাকে সবাই মেনে নেয় বলেই মনে হয়। একজন নির্যাতিত নারী তখন তার স্বামীকে নির্যাতনকারী হিসেবে না দেখে মাতাল হিসেবে ভাবতে শুরু করে।” উইলসন বলেন যে, এইধরনের চিন্তাধারা একজন নারীকে এই মিথ্যা আশা দিতে পারে যে, “তার স্বামী যদি মদ খাওয়া বন্ধ করে দেয় একমাত্র তাহলেই তার ওপর নির্যাতন করা বন্ধ হবে।”

বর্তমানে, অনেক গবেষক মদ খাওয়া ও নির্যাতনকে একেবারে আলাদা দুটো সমস্যা হিসেবে দেখতে শুরু করেছেন। আসলে, অতিরিক্ত মদ খায় বা মাদকাসক্ত বেশির ভাগ পুরুষই তাদের স্ত্রীদেরকে মারধর করে না। যখন পুরুষরা নারীদেরকে নির্যাতন করে (ইংরেজি) নামক বইয়ের লেখকরা বলেন: “নির্যাতন করে নারীদের ওপর জোর খাটানো, ভয় দেখানো এবং তাদেরকে বশে নিয়ে আসায় সফল হওয়ার দরুণই নির্যাতন দিন-দিন চলতেই থাকে। . . . মদ ও মাদকদ্রব্য গ্রহণ নির্যাতনকারীর জীবনের অঙ্গ। কিন্তু মদ খায় বলেই সে নির্যাতন করে, এমনটা ভাবা একেবারেই ভুল হবে।”

নির্যাতনকারীরা সকলের প্রতি হিংস্র।

একজন নির্যাতনকারী প্রায়ই অন্যদের এক ভাল বন্ধু হয়ে থাকে। সে অন্যদের সামনে পুরোপুরি আলাদা এক ব্যক্তিত্ব প্রকাশ করে। সেইজন্যই হয়তো তার পারিবারিক বন্ধুরা যখন শোনে যে সে নির্যাতন করে, তখন তা বিশ্বাস করতে পারে না। কিন্তু আসল সত্যটা হল, স্ত্রী নির্যাতনকারী তার স্ত্রীর ওপর জোর খাটানোর উপায় হিসেবে নিষ্ঠুরতাকে বেছে নেয়।

নারীরা খারাপ ব্যবহার পাওয়ার পরও কোনরকম প্রতিবাদ করেন না।

কোথাও যাবার জায়গা নেই এমন নারীর অবস্থা বুঝতে না পারার কারণে সম্ভবত এইরকম ধারণা জন্ম নেয়। নির্যাতিত স্ত্রীর বন্ধুবান্ধবরা হয়তো তাকে এক বা দুসপ্তা তাদের কাছে নিয়ে রাখতে পারে কিন্তু এরপর সে কী করবে? একটা চাকরি খোঁজা এবং বাচ্চাদের দেখাশোনা করার সঙ্গে সঙ্গে ঘর ভাড়া দেওয়া হয়তো তাকে শুধু হতাশ করবে। আর ছেলেমেয়েদেরকে সঙ্গে নিয়ে পালাতে আইন হয়তো নিষেধ করতে পারে। কেউ কেউ পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছেন কিন্তু তাদেরকে খুঁজে বের করার পর জোর করে কিংবা ভুলিয়ে ভালিয়ে আবার ফিরিয়ে আনা হয়েছে। যে বন্ধুবান্ধবরা এই বিষয়গুলো বুঝতে পারে না, তারা হয়তো ভুলভাবে মনে করতে পারে যে, এই স্ত্রীরা তাদের প্রতি খারাপ ব্যবহারের কোন প্রতিবাদ করেননি।