সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

প্রতিশোধ নেওয়ার মধ্যে দোষের কী আছে?

প্রতিশোধ নেওয়ার মধ্যে দোষের কী আছে?

যুবক-যুবতীদের জিজ্ঞাস্য . . .

প্রতিশোধ নেওয়ার মধ্যে দোষের কী আছে?

“সে আমাকে অপমান করেছিল।”—কানিল, বয়স ১৫ বছর, খুনের দায়ে এখন জেলে রয়েছে।

চৌদ্দ বছর বয়সী আ্যন্ড্রু স্কুলে এক নাচের আসরে তার শিক্ষিকাকে খুন করেছে। তার অভিযোগ হল, সে শিক্ষক-শিক্ষিকা ও বাবামাকে ঘৃণা করে আর মেয়েরা তাকে অগ্রাহ্য করেছে বলে তাদের ওপর তার অনেক রাগ।

টাইম পত্রিকা এটাকে এক “মারাত্মক প্রবণতা” বলে উল্লেখ করে। এক উগ্র কিশোর একটা মারাত্মক অস্ত্র গোপনে স্কুলে নিয়ে আসে এবং তার সহপাঠী ও শিক্ষক-শিক্ষিকাদেরকে গুলি করে। এইধরনের দুঃখজনক ঘটনাগুলো যুক্তরাষ্ট্রে এত অহরহ ঘটছে যে, একটা টিভি নিউজ নেটওয়ার্ক এই প্রবণতাকে “হিংস্রতার এক বিস্ফোরণ” বলে বর্ণনা করেছে।

তবুও ভাল যে, স্কুলে গোলাগুলি তুলনামূলকভাবে এখনও বেশ কম। তাসত্ত্বেও, রাগের কারণে ঘটা সাম্প্রতিক অপরাধগুলো দেখায় যে, কিছু যুবক-যুবতী সত্যি সত্যি কতটা রাগ করতে পারে। কোন্‌ কারণগুলোর জন্য তারা এইরকম রাগে ফেটে পড়ে বলে মনে হয়? এটা স্পষ্ট যে, কিছু যুবক-যুবতী কর্তৃপক্ষের অন্যায় আচরণ বা ক্ষমতার অপব্যবহার দেখে ক্ষেপে গিয়েছিল। আবার কেউ কেউ তাদের বন্ধুবান্ধবদের অনবরত ঠাট্টার জন্য রেগে ওঠে। ১২ বছর বয়সী এক কিশোর প্রথমে তার এক সহপাঠীকে ও তারপর নিজেকে গুলি করে কারণ সে অতিরিক্ত মোটা ছিল বলে তাকে নিয়ে সবাই হাসাহাসি করত।

এটা স্বীকার করতে হবে যে, বেশির ভাগ যুবক-যুবতী হয়তো কখনও এত চরম হিংস্রতার মধ্যে জড়িয়ে পড়ার কথা ভাবে না। কিন্তু, তুমি যখন বর্ণবাদ, নিষ্ঠুরতা বা নির্মম হাসিঠাট্টার শিকার হও, তখন ব্যথা ও কষ্টের অনুভূতিকে রোধ করা এত সহজ হয় না। স্কুল জীবনের কথা মনে করে বেন বলে: “আমার বয়সী বেশির ভাগ ছেলেদের মধ্যে আমি খাটো ছিলাম। আর আমার মাথা ন্যাড়া ছিল বলে ছেলেরা সবসময়ই আমাকে খেপাতো এবং মাথায় মারত। এইজন্য আমি খুব রেগে যেতাম। আর সহ্য করতে না পেরে যখন আমি শিক্ষকদের কাছে এই ব্যাপারে সাহায্য চাই, তখন তারা আমাকে পাত্তা দেননি। এটা আমাকে আরও বেশি রাগিয়ে তোলে!” বেন আরও বলে: “আমার কাছে কোন বন্দুক ছিল না বলেই, তখন আমি এই লোকেদেরকে গুলি করিনি।”

যে যুবক-যুবতীরা অন্যেরা তাদেরকে দুঃখ দিয়েছে বলে তারাও তাদেরকে কষ্ট দিতে চায়, তাদের সম্বন্ধে তুমি কী মনে কর? আর তুমি নিজে যদি এইধরনের খারাপ ব্যবহারের শিকার হয়ে থাক, তাহলে তোমার কী করা উচিত? এর উত্তর পেতে ঈশ্বরের বাক্য কী বলে, তা ভেবে দেখ।

আত্মসংযম—শক্তির এক প্রতীক!

খারাপ ব্যবহার ও অবিচার নতুন কিছু নয়। একজন বাইবেল লেখক এই উপদেশ দিয়েছিলেন: “ক্রোধ হইতে নিবৃত্ত হও, কোপ ত্যাগ কর, রুষ্ট হইও না, হইলে কেবল দুষ্কার্য্য করিবে।” (গীতসংহিতা ৩৭:৮) প্রায়ই রাগ করার অর্থ হচ্ছে আত্মসংযম হারিয়ে ফেলা এবং রাগের পরিণতির কথা চিন্তা না করেই তা প্রকাশ করে দেওয়া। নিজেকে “রুষ্ট” হতে দিলে তা একজনকে রাগে ফেটে পড়ার দিকে চালিত করতে পারে! এর ফল কী হতে পারে?

বাইবেল থেকে কয়িন ও হেবলের কথা ভেবে দেখ। তার ভাই হেবলের বিরুদ্ধে “কয়িন অতিশয় ক্রুদ্ধ হইল।” ফলে, “তাহারা ক্ষেত্রে গেলে কয়িন আপন ভ্রাতা হেবলের বিরুদ্ধে উঠিয়া তাহাকে বধ করিল।” (আদিপুস্তক ৪:৫, ৮) অসংযত রাগ দেখিয়েছিলেন এমন আরেক উদাহরণ হলেন রাজা শৌল। যুবক দায়ূদের সামরিক কৌশলে ঈর্ষান্বিত হয়ে তিনি কেবল দায়ূদের দিকেই নয় কিন্তু তার নিজের ছেলে যোনাথনের দিকেও বড়শা নিক্ষেপ করেছিলেন।—১ শমূয়েল ১৮:১১; ১৯:১০; ২০:৩০-৩৪.

এটা ঠিক যে, কখনও কখনও রাগ করার সঠিক কারণ থাকে। কিন্তু, সংযত না হলে এমনকি উপযুক্ত রাগের পরিণতিও খারাপ হতে পারে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, শিমিয়োন ও লেবি যখন শুনেছিল যে, শিখিম তাদের বোন দীণাকে ধর্ষণ করেছে, তখন শিখিমের ওপর রাগ করার উপযুক্ত কারণ তাদের ছিল। কিন্তু শান্ত না থেকে তারা রেগে আগুন হয়ে গিয়েছিল, যা তাদের পরবর্তী কথাগুলো থেকে বোঝা যায়: “যেমন বেশ্যার সহিত, তেমনি আমাদের ভগিনীর সহিত ব্যবহার করা কি তাহার উচিত ছিল?” (আদিপুস্তক ৩৪:৩১) আর তাদের রাগ যখন চরমে উঠে গিয়েছিল, তখন তারা শিখিমের গ্রামে গিয়ে “আপন আপন খড়্গ গ্রহণ করিয়া নির্ভয়ে নগর আক্রমণ করতঃ সকল পুরুষকে বধ করিল।” তাদের রাগ সংক্রামক ছিল কারণ “যাকোবের পুত্ত্রগণ” এই মারাত্মক আক্রমণে অংশ নিয়েছিল। (আদিপুস্তক ৩৪:২৫-২৭) এমনকি বেশ কয়েক বছর পর শিমিয়োন ও লেবির বাবা যাকোব তাদের অসংযত রাগের নিন্দা করেছিলেন।—আদিপুস্তক ৪৯:৫-৭.

এর থেকে আমরা একটা গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা পাই: অসংযত রাগ আসলে শক্তির কোন প্রতীক নয় বরং দুর্বলতার এক প্রতীক। হিতোপদেশ ১৬:৩২ পদ বলে: “যে ক্রোধে ধীর, সে বীর হইতেও উত্তম, নিজ আত্মার শাসনকারী নগর-জয়কারী হইতেও শ্রেষ্ঠ।” (বাঁকা অক্ষরে মুদ্রণ আমাদের।)

প্রতিশোধ নেওয়া হল বোকামি

এইজন্য শাস্ত্র উপদেশ দেয়: “মন্দের পরিশোধে কাহারও মন্দ করিও না; . . . তোমরা আপনারা প্রতিশোধ লইও না।” (রোমীয় ১২:১৭, ১৯) প্রতিশোধ নেওয়া—তা সে মারপিট করেই হোক বা গালিগালাজ করেই হোক—অন্যায়। এছাড়া, এভাবে প্রতিশোধ নিলে কোন লাভ হয় না ও তা বোকামি। কারণ হিংস্রতা কেবল হিংস্রতারই জন্ম দেয়। (মথি ২৬:৫২) আর অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ আরও বেশি গালিগালাজের সূত্রপাত করে। এছাড়াও, মনে রাখবে যে বেশির ভাগ সময়ই রাগের উপযুক্ত কারণ থাকে না। উদাহরণ হিসেবে, তুমি কি সত্যি করে বলতে পারবে, যে তোমাকে দুঃখ দিয়েছে, সে আসলেই তোমার প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করে? নাকি সে অবিবেচনাবশত কিংবা অনভিজ্ঞতার কারণে এমনটা করে ফেলেছে? আর যদি তার মধ্যে খারাপ ইচ্ছা থেকেও থাকে, তবুও কি প্রতিশোধ নেওয়া ঠিক হবে?

উপদেশক ৭:২১, ২২ পদে বলা বাইবেলের কথাগুলো ভেবে দেখ: “যত কথা বলা যায়, সকল কথায় মন দিও না; দিলে হয় ত শুনিবে, তোমার দাস তোমাকে শাপ দিতেছে। কেননা তুমিও অন্যকে পুনঃ পুনঃ শাপ দিয়াছ, তাহা তোমার মন জ্ঞাত আছে।” হ্যাঁ, লোকেরা তোমার সম্বন্ধে খারাপ কিছু বলুক, তা শুনতে কারোই ভাল লাগে না। কিন্তু বাইবেল স্বীকার করে যে, এটা জীবনের এক অংশ। তোমার কি কখনও এরকম মনে হয়নি যে অন্যদের সম্বন্ধে তুমি যা বলেছিলে তা বরং না বললেই ভাল হতো? তাহলে, কেউ যখন তোমাকে দুঃখ দিয়ে কিছু বলে, তখন কেন তুমি ভেঙে পড়বে? প্রায়ই দেখা যায়, উপহাসকে মোকাবিলা করার সবচেয়ে ভাল উপায় হল সেটাকে পাত্তা না দেওয়া।

একইভাবে, তোমার সঙ্গে কেউ যখন খারাপ ব্যবহার করে, তখন অতিরিক্ত আবেগপ্রবণ হয়ে পড়া হল বোকামি। ডেভিড নামে এক কিশোর আগের কথা মনে করে বলে যে, তার কয়েকজন খ্রীষ্টান বন্ধুর সঙ্গে বাস্কেটবল খেলার সময় কী হয়েছিল। ডেভিড বলে, “অন্য দলের একজন আমাকে বল দিয়ে আঘাত করেছিল।” সঙ্গে সঙ্গে ডেভিড ভেবেছিল যে ইচ্ছে করেই তাকে মারা হয়েছে আর তাই সে ফিরে আরেকজন খেলোয়াড়কে বলটা ছুঁড়ে মেরেছিল। ডেভিড স্বীকার করে, “রাগে আমার গা জ্বলছিল।” কিন্তু, পরিস্থিতি আরও খারাপের দিকে মোড় নেওয়ার আগে ডেভিড যিহোবার কাছে প্রার্থনা করেছিল। সে মনে মনে বলেছিল, ‘এ আমি কী করছি, আমার খ্রীষ্টান ভাইয়ের সঙ্গে ঝগড়া করতে চাচ্ছি?’ এরপর তারা একে অন্যের কাছে ক্ষমা চেয়েছিল।

এইরকম পরিস্থিতিতে যীশু খ্রীষ্টের উদাহরণ মনে করে দেখা উপকারী। “তিনি নিন্দিত হইলে প্রতিনিন্দা করিতেন না; দুঃখভোগ কালে তর্জ্জন করিতেন না।” (১ পিতর ২:২৩) হ্যাঁ, চাপপূর্ণ পরিস্থিতিতে সঙ্গে সঙ্গে প্রতিক্রিয়া না দেখিয়ে তুমি যাতে সংযম দেখাতে পার, সেইজন্য ঈশ্বরের কাছে সাহায্য চেয়ে প্রার্থনা কর। “যাহারা তাঁহার কাছে যাচ্ঞা করে তাহাদিগকে” তিনি উদারভাবে “পবিত্র আত্মা দান করিবেন।” (লূক ১১:১৩) কেউ তোমাকে দুঃখ দিলে তাকে পালটা দুঃখ না দিয়ে তুমি হয়তো তার কাছে যেতে পার এবং বিষয়টা নিয়ে তার সঙ্গে কথা বলতে পার। (মথি ৫:২৩, ২৪) কিংবা কেউ যদি তোমাকে হয়রান করেই চলে, হতে পারে স্কুলের কোন দুষ্ট সহপাঠী, তাহলে তুমিও পালটা হিংস্রভাবে আক্রমণ কর না। এর বদলে নিজেকে রক্ষা করার জন্য তোমাকে বাস্তবসম্মত কয়েকটা পদক্ষেপ নিতে হবে। *

রাগকে দমন করেছিল এমন এক যুবতী

অনেক যুবক-যুবতী বাইবেলের এই নীতিগুলোকে কাজে লাগিয়ে ভাল ফল পেয়েছে। উদাহরণ হিসেবে ক্যাটরিনার কথা বলা যায়। তাকে ছেলেবেলায় দত্তক দেওয়া হয়েছিল। সে বলে: “আমার একটা সমস্যা ছিল যে, আমি খুব রেগে যেতাম কারণ আমি বুঝতে পারতাম না যে, কেন আমার জন্মদাত্রী মা আমাকে দত্তক দিয়েছিল। তাই আমি আমার যত রাগ আমার দত্তক মায়ের ওপর ঢালতাম। আমি ভাবতাম যে, ছোটখাটো সামান্য কারণে আমি যদি তাকে দুঃখ দিতে পারি, তাহলে সেটা আমার জন্মদাত্রী মায়ের ওপরই প্রতিশোধ নেওয়া হবে। এর জন্য যা যা করা দরকার আমি সবই করতাম যেমন, গালিগালাজ করা, পা দিয়ে জোরে শব্দ করা, মেজাজ দেখানো। দরজা জোরে ধাক্কা দিয়ে বন্ধ করা আমার প্রিয় কাজ ছিল। আমি প্রায়ই বলতাম, ‘আমি তোমাকে ঘৃণা করি!’—এই সমস্ত কিছু করার কারণটা হল আমার অনেক রাগ ছিল। আগের কথা মনে করে এখন আমার ভাবতে কষ্ট হয় যে, আমি এত খারাপ ব্যবহার করেছি।”

কী ক্যাটরিনাকে তার রাগকে সংযত করতে সাহায্য করেছে? সে বলে: “বাইবেল পড়া! এটা খুবই জরুরি কারণ যিহোবা আমাদের অনুভূতি বোঝেন।” এছাড়া ক্যাটরিনা ও তার পরিবার ঠিক তাদের অবস্থা নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে এমন সচেতন থাক! পত্রিকা পড়ে সান্ত্বনা খুঁজে পেয়েছে। * সে আগের কথা মনে করে বলে, “আমরা সবাই একসঙ্গে বসে একে অন্যের অনুভূতি বোঝার চেষ্টা করতাম।”

তুমিও তোমার রাগকে দমন করতে পার। তোমাকে কেউ উপহাস করলে, তোমার সঙ্গে কেউ নিষ্ঠুর কথাবার্তা বললে বা খারাপ ব্যবহার করলে বাইবেলে গীতসংহিতা ৪:৪ পদের এই কথাগুলো মনে করবে: “তোমরা ভয় [“রাগ,” NW] কর, পাপ করিও না।” (বাঁকা অক্ষরে মুদ্রণ আমাদের।) ওই কথাগুলো তোমাকে মারাত্মক রাগ দমন করতে সাহায্য করতে পারে। (g০১ ১০/২২)

[পাদটীকাগুলো]

^ ন্যায়বিচারহীন শিক্ষক, স্কুলের দুষ্ট সহপাঠী ও জ্বালাতনকারী ব্যক্তিদের সঙ্গে ব্যবহার করা সম্বন্ধে বাস্তবসম্মত উপদেশের জন্য ১৯৮৪ সালের ৮ই ফেব্রুয়ারি; ১৯৮৫ সালের ২২শে আগস্ট এবং ১৯৮৯ সালের ৮ই আগস্টের সচেতন থাক! (ইংরেজি) এর “যুবক-যুবতীদের জিজ্ঞাস্য . . . ” প্রবন্ধগুলো দেখ।

^ ১৯৯৬ সালের ৮ই মে সচেতন থাক! (ইংরেজি) এর “দত্তক নেওয়া—আনন্দ ও চ্যালেঞ্জগুলো” (ইংরেজি) ধারাবাহিক প্রবন্ধগুলো দেখ।

[১৫ পৃষ্ঠার চিত্র]

প্রায়ই দেখা যায়, উপহাসকে মোকাবিলা করার সবচেয়ে ভাল উপায় হল সেটাকে পাত্তা না দেওয়া