বিশ্ব নিরীক্ষা
বিশ্ব নিরীক্ষা
বৃষ্টিবহুল অরণ্য
ভারতে কেবল কেরালার দক্ষিণাঞ্চলের রাজ্যে বৃষ্টিবহুল অরণ্য আছে বলে মনে করা হতো। নিউ দিল্লির ডাউন টু আর্থ পত্রিকা বলে, কিন্তু কিছুদিন আগে পরিবেশবিজ্ঞানী সৌম্যদীপ দত্ত উত্তরপূর্ব রাজ্যের আসাম ও অরুণাচল প্রদেশকে সংযুক্ত করে এমন ৫০০ বর্গকিলোমিটার জায়গা জুড়ে বৃষ্টিবহুল অরণ্য আবিষ্কার করেছেন। এই অরণ্যে বিভিন্ন ধরনের বন্য প্রাণী রয়েছে—“৩২ প্রজাতির স্তন্যপায়ী প্রাণী ও ২৬০ প্রজাতির পাখি, এর মধ্যে রয়েছে বিরল প্রজাতির হাতি, বাঘ এবং ক্লাউডেড লিওপার্ড, চাইনিজ প্যাঙ্গোলিন, সাম্বার, উল্লুক গিবন, কালিজ পেজেন্ট, হর্নবিল এবং গেছো হাঁস।” ডাউন টু আর্থ বলে, কিন্তু জঙ্গলের অন্যান্য উপাদানগুলোর আন্তর্জাতিক চাহিদা থাকায় তা অনেক বৃষ্টিবহুল অরণ্যের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। কিছু প্রকৃতিবিজ্ঞানী ভয় পান যে, অতিরিক্ত চাষাবাদ করার ফলে যদি এইধরনের উপাদানগুলো কমে যায়, তাহলে বৃষ্টিবহুল অরণ্যগুলোকে আর সংরক্ষিত করে রাখা যাবে না, বরং এগুলোকে কেবল কৃষি জমিতে পরিণত করা যেতে পারে।(g০১ ১০/৮)
ম্যালেরিয়ার ওষুধ আর কার্যকারী নয়
টাইমস অফ জাম্বিয়া খবরের কাগজ বলে, ‘জাম্বিয়ায় ম্যালেরিয়া প্রতিরোধের জন্য যে ওষুধটা সবচেয়ে বেশি দেওয়া হয়ে থাকে তা হল, ক্লোরোকুইন কিন্তু সরকারি ওষুধের দোকানগুলো থেকে এই অসুখের প্রথম চিকিৎসা হিসেবে ওষুধটাকে বাতিল করতে হবে’ এবং এর জায়গায় আরও বেশি কার্যকারী ওষুধ আনতে হবে। একটা গবেষণার পর এই ওষুধটাকে বাতিল করার বিষয়টা আসে, যা ইঙ্গিত করে যে “জাম্বিয়াতে প্রতি বছর ম্যালেরিয়ার প্রতিরোধক হিসেবে ক্লোরোকুইনের ক্ষমতা কমজোর হয়ে যাওয়ার কারণেই পাঁচ বছরের নিচে ২৫,০০০ শিশুর মধ্যে ১২,০০০ শিশু মারা যাচ্ছে।” পূর্ব ও পশ্চিম আফ্রিকার আরও অন্যান্য অনেক দেশে এই ওষুধটাকে বাতিল করা হচ্ছে। টাইমস পত্রিকা বলে, “যদিও ৩০ বছরেরও বেশি সময় ধরে ক্লোরোকুইনকে সফলতার সঙ্গে ব্যবহার করে আসা হচ্ছে কিন্তু এটা এখন ম্যালেরিয়ার চিকিৎসায় আর কার্যকারী নয়, যে রোগটা এখনও এই দেশের এক নম্বর ঘাতক ব্যাধি হয়ে আছে।”(g০১ ১০/২২)
হাতির মতো স্মৃতিশক্তি?
কেনিয়ার আ্যমবোসেলি ন্যাশনাল পার্কে কর্মরত গবেষকরা লক্ষ্য করেছেন যে, হাতির পালের বেঁচে থাকা যে একটা মুখ্য কারণের ওপর নির্ভর করে তা হল, এর সবচেয়ে বয়স্কা স্ত্রী হাতির স্মৃতিশক্তি। সায়েন্স নিউজ বলে, ‘৩৫ বছর বয়সী স্ত্রী হাতিদের চেয়ে, ৫৫ বছর বয়সী স্ত্রী হাতিগুলো অপরিচিতদের মধ্যে থেকে বন্ধুদের স্পষ্টভাবে চিনতে পারে।’ ডাকার আওয়াজ অথবা নিচু স্বরে করা গুড় গুড় আওয়াজকে মনে করে বয়স্কা স্ত্রী হাতিগুলো অপরিচিত ডাককে চিনতে পারে এবং পালকে এক আত্মরক্ষী দল করে তোলে। রিপোর্টটা বলে যে, “একটা স্ত্রী হাতি তার প্রায় ১০০টা সাথিকে তাদের ডাক দিয়ে চিনতে পারে।” তাই, শিকারীরা যখন এক বয়স্কা স্ত্রী হাতিকে মেরে ফেলে, এর মানে পুরো হাতির পালের জন্য এক বিশাল জ্ঞানভাণ্ডারকে হারানো।(g০১ ১১/২২)
মদ আর সাইকেল চালানো একসঙ্গে নয়
নিউ সায়েনটিস্ট পত্রিকা বলে, মদ খেয়ে গাড়ি চালানো যতটা বিপদজনক, মদ খেয়ে সাইকেল চালানোও একইরকম বিপদজনক হতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রে মেরিল্যান্ডের জনস্ হপকিন্স ইউনিভারসিটির গয়া লি বলেন, “গাড়ি চালানোর চেয়ে সাইকেল চালাতে আরও বেশি মানসিক দক্ষতা ও শারীরিক সমন্বয় সাধনের দরকার হয়, তাই মদ এইক্ষেত্রে এমনকি আরও বিরাট প্রভাব ফেলতে পারে।” লি ও তার সহকর্মীরা ৪৬৬ জন সাইকেল চালককে নিয়ে গবেষণা করেছিলেন ও লক্ষ্য করেছিলেন যে, যারা চার বা পাঁচ পেগ মদ খেয়ে সাইকেল চালিয়েছিল তাদের গুরুতরভাবে আহত হওয়ার বা মারা যাওয়ার ঝুঁকি ২০ গুণ বেশি ছিল। এমনকি মাত্র এক পেগ মদ খেয়ে সাইকেল চালানো ছয় গুণ বেশি বিপদজনক। নিউ সায়েনটিস্ট বলে, ‘তার চেয়ে আরও বেশি বিপদজনক হল সাইকেল চালকরা যত বেশি মদ খায়, হেলমেট পরার সম্ভাবনা তত কম থাকে।’ (g০১ ১০/২২)
কলাগাছ থেকে কাগজ তৈরি
গাছ থেকে কলা কেটে নেওয়ার পর এর কাণ্ডগুলোকে প্রায়ই মাটিতে এমনিই ফেলে রাখা হয়, যাতে সেগুলো পচে সার হয়। কিন্তু, জাপানের আসাহি শিমবুন খবরের কাগজ বলে, নাগোয়া সিটি ইউনিভারসিটির অধ্যাপক হিরোশি মোরিশিমা কলাগাছের কাণ্ড থেকে কাগজ তৈরি করে সাফল্য অর্জন করেছেন। গাছের তন্তুগুলো “লম্বা ও শক্ত এবং ম্যানিলা হেম্প থেকে কাগজ তৈরি করার কাঁচামালের মতো এটার গুণগত মান ভাল।” কলাগাছের কাণ্ড থেকে মেশিনে তৈরি কাগজের গুণগত মান রেগুলার কপি পেপারের মতোই আর এটা রিসাইকেল্ড কপি পেপারের চেয়েও শক্ত প্রমাণিত হয়েছে। ওই খবরের
কাগজ বলে, “সারা পৃথিবীতে ১২৩টা দেশে কলা উৎপাদিত হয় এবং বছরে ৫,৮০,০০,০০০ টন কলা উৎপাদন করা হয় আর তাই এই উৎসটা খুবই সম্ভাবনাপূর্ণ।” (g০১ ১০/২২)ধর্মীয় লুট
ফ্রেঞ্চ ক্যাথলিক খবরের কাগজ ল্যা ক্র্যা মন্তব্য করে, “কড়া আইন সত্ত্বেও, ইউরোপে ধর্মীয় জিনিসগুলোর চুরি ও ক্রয়বিক্রয় কমছে না।” যে জিনিসগুলো চুরি হচ্ছে সেগুলোর মধ্যে রয়েছে ক্রুশ, আসবাবপত্র, সোনা ও রুপোর পাত্র, পাথরের মূর্তি, চিত্র এবং এমনকি বেদি। ইন্টারন্যাশনাল কাউন্সিল অফ মিউজিয়ামের কথা অনুসারে, সম্প্রতি চেক প্রজাতন্ত্র থেকে ৩০,০০০ থেকে ৪০,০০০টা জিনিস চুরি হয়েছে এবং ইতালিতে ৮৮,০০০টারও বেশি জিনিস চুরি হয়েছে। ফ্রান্সে ৮৭টা ক্যাথিড্রাল চোরদের প্রধান লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়েছে। ১৯০৭ থেকে ১৯৯৬ সালের মধ্যে ফ্রান্সের বিভিন্ন ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে প্রায় ২,০০০টা “ঐতিহাসিক স্মারক” চুরি হয়ে গেছে এবং ১০ শতাংশেরও কম জিনিসপত্র আবার ফেরত পাওয়া গেছে। এইরকম লুটপাট রোধ করা খুবই কঠিন কারণ গির্জাগুলোতে যে কেউ সহজেই ঢুকতে পারে এবং নিরাপত্তা ব্যবস্থা ততটা জোরালো নয়। (g০১ ১২/৮)
দুধ উৎপাদনে বিশ্বের নেতা
দ্যা হিন্দুস্থান টাইমস বলে, দুধ উৎপাদনকারী দেশ হিসেবে বিশ্বে ভারত সবচেয়ে প্রথমে রয়েছে। ওই রিপোর্ট বলে, “প্রকৃতি নিয়ে গবেষণাকারী [ওয়াশিংটন ডি.সি.-তে] বিশ্ব নিরীক্ষা প্রতিষ্ঠান ভারতের দুধ বিপ্লবের ভূয়ষী প্রশংসা করেছে।” “১৯৯৪ সাল থেকে দুধ ভারতের প্রধান খামারজাত দ্রব্য হয়েছে উঠেছে এবং ১৯৯৭ সালে যুক্তরাষ্ট্রের চেয়েও ভারত বেশি দুধ উৎপাদন করেছে আর বিশ্বের সবচেয়ে বড় দুধ উৎপাদনকারী দেশ হয়ে উঠেছে।” বিশ্বনিরীক্ষা প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান লেস্টার ব্রাউন বলেন: “লক্ষণীয় বিষয় হল, এটা তারা করতে পেরেছে কারণ গবাদি পশুকে খাবার হিসেবে শস্য না দিয়ে খামারের উপজাত দ্রব্য এবং শস্য চাষ করার পর যে খড়কুটো থাকে, সেগুলো খেতে দিয়েছে। ভারত গবাদি পশুর জন্য মানুষের খাদ্য থেকে শস্য না নিয়েও পুষ্টি সরবরাহ করতে পেরেছে।” (g০১ ১২/২২)
কলের জল বনাম বোতলের জল
দ্যা নিউ ইয়র্ক টাইমস বলে, “বোতলের জল এত বেশি জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে যে, সারা পৃথিবীতে প্রায় ৭০০টারও বেশি ব্র্যান্ডের বোতলের জল উৎপাদন করা হচ্ছে।” কিন্তু, “অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায় দামি বোতলের জল ও কলের জলের মধ্যে পার্থক্যটা কেবল পাত্র।” প্রকৃতির জন্য বিশ্ব তহবিল (ডব্লুডব্লুএফ) যেমন বলে, “অনেক দেশে বোতলের জল কলের জলের চেয়ে খুব একটা নিরাপদ বা স্বাস্থ্যকর নয়, যদিও এগুলো আসল দামের চেয়ে প্রায় ১,০০০ গুণ বেশি দামে বিক্রি হয়।” কলের জল ব্যবহার করা শুধু পয়সাই বাঁচায় না কিন্তু সেইসঙ্গে পরিবেশকে রক্ষা করে, কারণ প্রতি বছর বোতলের জলের জন্য ১৫ লক্ষ টন প্লাস্টিক ব্যবহৃত হয় এবং “বোতল উৎপাদন ও সেগুলোকে নষ্ট করার সময় বিষাক্ত রাসায়নিক পদার্থ এমন গ্যাস নির্গত করে, যা আবহাওয়ার পরিবর্তনে অবদান রাখে।” ডব্লুডব্লুএফ ইন্টারন্যাশনালের ফ্রেশ ওয়াটার প্রোগ্রামের প্রধান ড. বিকশ্যাম গুজা বলেন, “ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রে বোতলের জল উৎপাদন করার কারখানাগুলোতে যতটা না নীতি প্রয়োগ করা হয়, কলের জল নিয়ন্ত্রিত করার জন্য এর চেয়ে বেশি নীতি প্রয়োগ করা হয়।” (g০১ ১২/৮)
অশ্লীল বিষয়গুলোর ব্যাবসা
দ্যা নিউ ইয়র্ক টাইমস ম্যাগাজিন বলে, “পেশাদার ফুটবল, বাস্কেটবল এবং বেসবলের ব্যাবসাকে একসঙ্গে জুড়লেও সেটা অশ্লীল বিষয়গুলোর ব্যাবসার সমান করতে পারে না। আমেরিকাতে বছরে লোকেরা সিনেমার টিকিটের জন্য এবং নাটক দেখার জন্য সব মিলিয়ে যত পয়সা খরচ করে, তার চেয়ে বেশি তারা অশ্লীল বিষয়গুলোর জন্য খরচ করে।” “যুক্তরাষ্ট্রে, অশ্লীল বিষয়গুলোর সঙ্গে রেডিও ও টেলিভিশনের চ্যানেলগুলোতে দেখানো অশ্লীলতা, ক্যাবেল টিভিতে প্রতিটা সিনেমার জন্য পয়সা দিয়ে দেখা ছবিগুলো, ইন্টারনেট ওয়েবসাইট, হোটেলের রুমে দেখানো অশ্লীল সিনেমাগুলো, ফোন সেক্স, সেক্স টয়গুলো এবং . . . পত্রপত্রিকাগুলোকে যদি আপনি ধরেন, তাহলে এগুলোর জন্য লোকেরা বছরে ১,০০০ কোটি থেকে ১,৪০০ কোটি মার্কিন ডলার ব্যয় করে।” ওই প্রবন্ধ আরও বলে: “১,০০০ কোটি মার্কিন ডলারের অশ্লীল বিষয়গুলোর ব্যাবসাকে আর সাইড ব্যাবসা বলা যায় না, যেখানে ৬০ কোটি ডলারের ব্রোডওয়ে চলচিত্রের ব্যাবসা হল মুখ্য ব্যাবসা। অতএব, অশ্লীল বিষয়গুলোর ব্যাবসাই এখন মুখ্য ব্যাবসা।” উদাহরণস্বরূপ, গত বছর হলিউডে ৪০০টা ছবি মুক্তি পেয়েছে অথচ অশ্লীল চলচ্চিত্র শিল্প “প্রাপ্তবয়স্ক”-দের জন্য ১১,০০০টা ভিডিও তৈরি করেছে। কিন্তু আমেরিকার খুব কম নাগরিক স্বীকার করবে যে, তারা সেগুলো দেখে। টাইমস পত্রিকা বলে, “অশ্লীল বিষয়গুলোর মতো জমজমাট আর কোন ব্যাবসা নেই।” “অশ্লীল বিনোদন হল এমন একটা বিনোদন, যে বিষয়ে লোকেরা বলে যে তারা সেটা দেখে না কিন্তু অবাক হওয়ার মতো ব্যাপার হল, এটা কখনোই বন্ধ হয় না।”(g০১ ১২/৮)