শিক্ষকতা আত্মত্যাগ এবং ঝুঁকিগুলো
শিক্ষকতা আত্মত্যাগ এবং ঝুঁকিগুলো
“শিক্ষকদের কাছ থেকে খুব বেশি আশা করা হয় কিন্তু আমাদের স্কুলের নিবেদিত শিক্ষকরা লোকেদের কাছ থেকে খুব কমই . . . তাদের চেষ্টার জন্য প্রশংসা পান।”—ক্যান ইলটিস, ইউনিভারসিটি অফ সিডনি, অস্ট্রেলিয়া।
স্বীকার করতেই হবে যে, এটাকে “সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পেশা” বলা হয়, যা অনেক সমস্যা নিয়ে আসে যেমন, কম বেতন থেকে শুরু করে নিম্নমানের ক্লাসরুম; অতিরিক্ত লেখালেখির কাজ থেকে শুরু করে প্রচুর ছাত্রছাত্রী; অসম্মান এবং দৌরাত্ম্য থেকে শুরু করে বাবামার অবহেলা। কিছু শিক্ষক কীভাবে এই সমস্যাগুলোর মোকাবিলা করেন?
সম্মানের অভাব
নিউ ইয়র্ক সিটির চারজন শিক্ষককে আমরা জিজ্ঞেস করেছিলাম যে, কোন্ বিষয়গুলো তাদের কাছে বড় বড় সমস্যা বলে মনে হয়। সবাই একমত হয়ে উত্তর দিয়েছিলেন: “সম্মানের অভাব।”
কেনিয়ার উইলিয়ামের মতে, এই বিষয়ে আফ্রিকার পরিস্থিতিও একেবারে পালটে গেছে। তিনি বলেন: “ছেলেমেয়েদের মধ্যে কোন নিয়মশৃঙ্খলা নেই বললেই চলে। আমি যখন ছোট ছিলাম [এখন তার বয়স ৪০ এর কোঠায়], তখন আফ্রিকার সমাজে শিক্ষকরা ছিলেন সবচেয়ে সম্মানের পাত্র। ছোটবড় সবাই শিক্ষককে এক আদর্শ হিসেবে দেখত। সেই সম্মান এখন আর দেখাই যায় না। ছেলেমেয়েদের ওপর, এমনকি আফ্রিকার গ্রামগুলোর মধ্যেও ধীরে ধীরে পাশ্চাত্যের প্রভাব পড়ছে। সিনেমা, ভিডিও এবং সাহিত্যগুলো কর্তৃত্বের প্রতি সম্মান না দেখানোকে একটা বীরত্বের কাজ হিসেবে তুলে ধরে।”
জুলিয়ানো, যিনি ইতালিতে শিক্ষকতা করেন, তিনি দুঃখ করে বলেন: “ছেলেমেয়েরা বিদ্রোহী এবং অবাধ্য মনোভাবের দ্বারা এতটাই প্রভাবিত হয়েছে যে, তা পুরো সমাজে ছড়িয়ে পড়েছে।”
মাদকদ্রব্য এবং দৌরাত্ম্য
দুঃখের সঙ্গে বলতে হয় যে, স্কুলগুলোতেও মাদকদ্রব্য গ্রহণ একটা সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে—এতটাই যে, যুক্তরাষ্ট্রের শিক্ষক এবং গ্রন্থকার লুয়েন জনসন লিখেছেন: “মাদকদ্রব্য গ্রহণ রোধ করাটা কিন্ডারগার্টেন থেকে শুরু করে প্রায় প্রত্যেকটা স্কুলের পাঠ্যপুস্তকের বিষয়বস্তু হয়ে উঠেছে। [বাঁকা অক্ষরে মুদ্রণ আমাদের।] বেশির ভাগ বয়স্ক ব্যক্তিরা যতটা না জানে তার চেয়ে . . . ছোট ছেলেমেয়েরা মাদকদ্রব্য সম্বন্ধে আরও বেশি জানে।” তিনি আরও বলেন: “যে-ছাত্রছাত্রীরা নিজেদেরকে অসহায়, স্নেহহীন, একাকী, ক্লান্ত বা নিরাপদহীন বলে মনে করে, সম্ভবত তারাই মাদকদ্রব্য গ্রহণ করে।”—দুই অংশের পাঠ্যপুস্তক, এক অংশ ভালবাসা (ইংরেজি)।
অস্ট্রেলিয়ার শিক্ষক ক্যান জিজ্ঞেস করেন: “আমাদের শিক্ষকরা কীভাবে নয় বছর বয়সী এক ছাত্রকে শিক্ষা দেবেন, যাকে কিনা তার নিজের বাবামা মাদকদ্রব্যের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিয়েছেন এবং যে-এখন তাতে আসক্ত হয়ে পড়েছে?” মিখায়েল, যার বয়স এখন ৩০ এর কোঠায়, তিনি জার্মানির একটা বড় স্কুলে শিক্ষকতা করেন। তিনি লেখেন: “আমরা খুব ভাল করেই জানি যে, স্কুলে মাদকদ্রব্যের ব্যাবসা করা হচ্ছে; কিন্তু খুব কমই তা ধরা পড়ে।” এ ছাড়া তিনি নিয়মশৃঙ্খলার অভাবের কথা বলেন, যা “ধ্বংসাত্মক প্রবণতার মাধ্যমে দেখা যায়” ও সেইসঙ্গে “টেবিল এবং দেওয়ালগুলো নোংরা ও আসবাবপত্রগুলো ভাঙচুর করা হয়। দোকানে চুরি বা এইরকম কাজের জন্য আমার কিছু ছাত্রকে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে। আর এতে অবাক হওয়ার কিছু নেই যে, স্কুলে প্রায়ই চুরি হয়!”
আ্যমিরা, মেক্সিকোর গুয়ানাজুয়াটো রাজ্যে শিক্ষকতা করেন। তিনি স্বীকার করেন: “পরিবারের মধ্যে আমরা দৌরাত্ম্য এবং মাদকদ্রব্যের প্রতি আসক্তির মতো সমস্যাগুলোর মোকাবিলা করি, যা সরাসরি ছেলেমেয়েদের ওপর প্রভাব ফেলে। তারা এমন একটা পরিবেশের মধ্যে রয়েছে, যেখানে তারা অশ্লীল কথাবার্তা এবং অন্যান্য অনৈতিকতা শেখে। আরেকটা বড় সমস্যা হল দরিদ্রতা।
যদিও এখানে স্কুলের পড়াশোনার জন্য কোন খরচ লাগে না তবে নোটবই, কলম এবং অন্যান্য জিনিসপত্র বাবামাদের কিনে দিতে হয়। কিন্তু, সবকিছুর আগে খাবারের ব্যবস্থা করতে হয়।”স্কুলে বন্দুক?
যুক্তরাষ্ট্রে সম্প্রতি স্কুলগুলোতে গোলাগুলির ঘটনা দেখায় যে, বন্দুকের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত দৌরাত্ম্যগুলো সেই দেশে আর ছোটখাটো কোন সমস্যা নয়। একটা রিপোর্ট বলে: “হিসেব করে দেখা গেছে যে, প্রতিদিন ৮৭,১২৫টা পাবলিক স্কুলে ১,৩৫,০০০ বন্দুক আনা হচ্ছে। স্কুলে বন্দুকের সংখ্যা কমানোর জন্য সরকার মেটাল ডিটেক্টরস, নজর রাখার জন্য ক্যামেরা ও গন্ধ শুঁকে বন্দুক বের করে আনার জন্য বিশেষভাবে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত কুকুর ব্যবহার করছে, তালা দিয়ে আটকানো ছেলেমেয়েদের ব্যবহারের ছোট আলমারি খুঁজছে, পরিচয় পত্র দেখছে এবং স্কুলে বইয়ের ব্যাগ আনা নিষেধ করছে।” (আমেরিকায় শিক্ষকতা, ইংরেজি) এইধরনের নিরাপত্তা ব্যবস্থা দেখে একজন ব্যক্তি হয়তো জিজ্ঞেস করতে পারেন, আমরা কি স্কুল নাকি জেলখানার কথা বলছি? রিপোর্ট আরও বলে যে, স্কুলে বন্দুক নিয়ে আসার জন্য ৬,০০০রেরও বেশি ছাত্রছাত্রীকে স্কুল থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে!
নিউ ইয়র্ক সিটির একজন শিক্ষক আইরিস, সচেতন থাক! পত্রিকাকে বলেছে: “ছাত্রছাত্রীরা স্কুলে অস্ত্র লুকিয়ে রাখে। স্ক্যানারগুলোও সেই অস্ত্র বের করতে পারে না। স্কুলে দাঙ্গাহাঙ্গামা করাও হল আরেকটা বড় সমস্যা।”
এই অরাজকতাপূর্ণ পরিবেশের বিপরীতে বিবেকবান শিক্ষকরা শিক্ষা এবং এর মূল্য দিতে গিয়ে হিমশিম খেয়ে যান। তাই এতে অবাক হওয়ার কিছু নেই যে, অনেক শিক্ষক হতাশায় এবং মানসিক কষ্টে ভোগেন। জার্মানির থুরিনজিয়ার শিক্ষক এসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট রল্ফ বুশ বলেন: “দশ লক্ষের মধ্যে প্রায় এক তৃতীয়াংশ শিক্ষক চাপের কারণে অসুস্থতায় ভোগেন। চাকরি নিয়ে তারা মানসিক কষ্টে ভোগেন।”
ছেলেমেয়েদের বাচ্চা থাকা
আরেকটা বড় সমস্যা হল কৈশোরে যৌনসঙ্গম। আমেরিকায় শিক্ষকতা এর গ্রন্থকার জর্জ এস. মরিসন সেই দেশ সম্বন্ধে বলেন: “প্রায় দশ লক্ষ কিশোরী (১১ শতাংশ ১৫-১৯ বছর বয়সী মেয়েরা) প্রতি বছর গর্ভবতী হয়।” সমস্ত উন্নত দেশগুলোর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে কিশোরী গর্ভবতীর সংখ্যা সবচেয়ে বেশি।
আইরিসের কথা থেকে এই পরিস্থিতি সম্বন্ধে নিশ্চিত বোঝা যায়, যিনি বলেন: “সমস্ত কিশোর-কিশোরী যৌনতা এবং পার্টি নিয়ে কথাবার্তা বলে। এটা তাদেরকে আচ্ছন্ন করে রেখেছে। আর এখন স্কুলের কমপিউটারগুলোতে ইন্টারনেট রয়েছে! এর মানে হল চ্যাট করা এবং অশ্লীল চিত্র দেখা।” স্পেনের মাদ্রিদের আনখাল রিপোর্ট করেন: “ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে বাছবিচারহীন যৌনতা জীবনের একটা অঙ্গ হয়ে উঠেছে। আমাদের এখানে কিশোরীদের গর্ভবতী হওয়ার অনেক ঘটনা রয়েছে।”
“বিশিষ্ট বেবিসিটারস”
কিছু শিক্ষকদের আরেকটা অভিযোগ হল যে, অনেক বাবামা ঘরে তাদের ছেলেমেয়েদেরকে শিক্ষা দেওয়ার দায়িত্ব নিজেদের কাঁধে নিতে চান না। শিক্ষকরা মনে করেন যে, বাবামাদের তাদের ছেলেমেয়েদের সবচেয়ে প্রথম শিক্ষক হওয়া উচিত। ভদ্র আচরণ ঘর থেকেই শুরু হওয়া উচিত। তাই এতে অবাক হওয়ার কিছু নেই যে, আমেরিকান ফেডারেশন অফ টিচারস এর প্রেসিডেন্ট স্যান্ড্রা ফেল্ডম্যান বলেন যে, ‘শিক্ষকদের বিশিষ্ট বেবিসিটার মনে না করে অন্যান্য পেশার লোকেদের মতো করে দেখা উচিত।’
স্কুলে যে-নিয়মশৃঙ্খলা শেখানো হয়, তাতে বাবামারা প্রায়ই সহযোগিতা করেন না। আগের প্রবন্ধে বলা লিমেরিজ, সচেতন থাক! পত্রিকাকে বলেন: “আপনি যদি দুষ্ট ছেলেমেয়েদের নামে প্রিন্সিপ্যালের কাছে অভিযোগ করেন, তা হলে পরের বিষয়টা আপনি জানবেন যে বাবামারা আপনার ওপর আঘাত আনবে!” অবাধ্য ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গে মোকাবিলা করার বিষয়ে আগে বলা বুশ বলেন: “পরিবারে লালন-পালন করার বিষয়টা এখন আর নেই। আপনি আর ধরে নিতে পারেন না যে, বেশির ভাগ ছেলেমেয়ে এমন পরিবারগুলো থেকে এসেছে যেখানে উত্তম এবং সঠিকভাবে লালনপালন করা হয়েছে।” আর্জেন্টিনার মেনডোজার ইসটেলা বলেন: “আমরা শিক্ষকরা ছাত্রছাত্রীদেরকে ভয় পাই। আমরা
যদি তাদেরকে কম নম্বর দিই, তা হলে তারা আমাদের দিকে পাথর ছুঁড়ে মারে বা আমাদের ওপর আক্রমণ চালায়। আমাদের যদি গাড়ি থাকে, তা হলে তারা সেটার ক্ষতি করে।”তাই এতে কি অবাক হওয়ার কিছু আছে যে, অনেক দেশে শিক্ষকের অভাব রয়েছে? কারনেজি কর্পোরেশন অফ নিউ ইয়র্কের প্রেসিডেন্ট ভারটেন গ্রেগোরিয়ান সতর্ক করেন: “আগামী দশ বছরের মধ্যে আমাদের [যুক্তরাষ্ট্রে] স্কুলগুলোতে ২৫ লক্ষেরও বেশি শিক্ষক লাগবে।” বড় বড় শহরগুলো “পুরোদমে ভারত, ওয়েস্ট ইন্ডিজ, দক্ষিণ আফ্রিকা, ইউরোপ এবং অন্যান্য যে-সমস্ত জায়গায় ভাল শিক্ষক পাওয়া যায়, সেখানে খোঁজ করছে।” অবশ্য এর অর্থ হল যে, সেই এলাকাগুলো একইভাবে শিক্ষকদের অভাবে ভুগছে।
কেন শিক্ষকদের অভাব?
একজন জাপানি স্কুল শিক্ষক ইয়োশিনোরি, যার ৩২ বছরের অভিজ্ঞতা রয়েছে তিনি বলেন যে, “ভাল উদ্দীপনা সহ শিক্ষকতা হল এক আদর্শ কাজ এবং জাপানের সমাজে এই কাজকে অনেক শ্রদ্ধার চোখে দেখা হয়।” দুঃখজনক যে, সমস্ত সংস্কৃতির বেলায় তা সত্য নয়। আগে বলা গ্রেগরিয়ানও বলেন যে, শিক্ষকদেরকে “যথাযোগ্য সম্মান, স্বীকৃতি এবং বেতন দেওয়া হয় না। . . . [যুক্তরাষ্ট্রের] বেশির ভাগ রাজ্যে স্নাতক বা মাস্টার ডিগ্রির দরকার হয় এমন যে-কোন পেশার চেয়ে শিক্ষকতার জন্য আরও কম বেতন দেওয়া হয়।”
শুরুতে বলা ক্যান ইলটিস লেখেন: “কী হয় যখন শিক্ষকরা জানতে পারেন যে, যেখানে কম যোগ্যতা লাগে এমন চাকিরগুলোতে শিক্ষকতার চেয়ে বেশি বেতন দেওয়া হয়? অথবা যখন দেখেন, যে-ছাত্রদেরকে তারা মাত্র ১২ মাস আগে শিখিয়েছেন . . . তারা এখন শিক্ষকরা যা পাচ্ছেন বা পাঁচ বছরে যা কামিয়েছেন তার চেয়ে বেশি পাচ্ছে? নিশ্চিতভাবেই এইধরনের উপলব্ধি একজন শিক্ষকের আত্মসম্মানকে বিপদের মধ্যে ফেলে দেয়।”
উইলিয়াম আ্যয়ার্স লেখেন: “শিক্ষকদেরকে অনেক কম বেতন
দেওয়া হয় . . . উকিলদেরকে যা দেওয়া হয় তার থেকে আমরা চার ভাগের এক ভাগ, হিসাবরক্ষকদের চেয়ে অর্ধেক এবং ট্রাক ড্রাইভার ও জাহাজ নির্মাণকর্মীদের চেয়েও কম পাই। . . . অন্য আর এমন কোন পেশা নেই যেখানে চাহিদা অনেক বেশি কিন্তু আর্থিক ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয় অনেক কম। (শিক্ষা দেওয়া—একজন শিক্ষকের ভ্রমণ, ইংরেজি) যুক্তরাষ্ট্রের প্রাক্তন সরকারি উকিল জেনেট রিনো সেই একই বিষয়ে ২০০০ সালের নভেম্বর মাসে বলেন, “আমরা মানুষকে চাঁদে পাঠাতে পারি। . . . আমাদের ক্রীড়াবিদদের আমরা মোটা অঙ্কের বেতন দিই। তা হলে আমাদের শিক্ষকদেরকে আমরা কেন দেব না?”লিমেরিজ বলেন, ‘শিক্ষকদেরকে সাধারণত খুব কম বেতন দেওয়া হয়। আমার এত বছরের অধ্যয়ন জীবনে আমি এখনও এই নিউ ইয়র্ক সিটিতে খুব কম বার্ষিক বেতন পাই ও সেইসঙ্গে এই বিরাট শহরের চাপপূর্ণ এবং নিম্ন জীবনযাপন তো রয়েছেই।’ রাশিয়ার সেন্ট পিটার্সবার্গের একজন শিক্ষক ভালেন্টিনা বলেন: “আয়ের বিষয়ে চিন্তা করলে শিক্ষকতার কাজ খুব সম্মানের নয়। সবসময়ই সর্বনিম্ন মানের চেয়ে বেতন আরও কম।” আর্জেন্টিনার চুবুটের মার্লিন এই বিষয়ে একমত: “কম বেতনের জন্য আমাদের দুতিন জায়গায় কাজ করতে হয়, এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় দৌড়াতে হয়। এটা আসলেই আমাদের কার্যকারিতাকে নষ্ট করে দেয়।” কেনিয়ার নাইরোবির একজন শিক্ষক আর্থার, সচেতন থাক! পত্রিকাকে বলেন: “অর্থনৈতিক মন্দাভাবের মধ্যে শিক্ষক হিসেবে আমার জীবন খুব সহজ নয়। আমার অনেক সহকর্মী স্বীকার করবেন যে, এই কম বেতন দেখে অনেকে আমাদের এই পেশা বেছে নেওয়ার আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছে।”
নিউ ইয়র্ক সিটির একজন শিক্ষিকা ডায়ানা অভিযোগ করেন যে, অতিরিক্ত লেখালেখির কাজ শিক্ষকদের ঘন্টার পর ঘন্টা সময় নিয়ে নেয়। আরেকজন শিক্ষক লেখেন: “সারাদিন নিয়মকানুন, পুনরাবৃত্তি এবং রুটিনের পিছনেই চলে যায়।” একটা সাধারণ অভিযোগ ছিল: “সারাদিন ধরে হাজারো ফর্ম পূরণ করা—এক অবাস্তব বিষয়।”
কম শিক্ষক কিন্তু বেশি ছাত্রছাত্রী
জার্মানির ডুরেনের বেরটল্ট আরেকটা নিয়মিত অভিযোগ সম্বন্ধে বলেন: “ক্লাসগুলো খুব বেশি বড়! কোন কোন ক্লাসে ৩৪ জন ছাত্রছাত্রী রয়েছে। এর মানে হল যে-ছাত্রছাত্রীর সমস্যা রয়েছে, তাদের দিকে আমরা মনোযোগ দিতে পারি না। তারা অলক্ষিত রয়ে যায়। অনেকের প্রয়োজনকে অবহেলা করা হয়।”
আগে বলা লিমেরিজ বলেন: “উদাসীন বাবামা ছাড়াও গত বছর আমার বড় সমস্যা ছিল যে আমার ক্লাসে ৩৫ জন ছেলেমেয়ে ছিল। ৬ বছর বয়সী ৩৫ জনের সঙ্গে কাজ করার কথা একটু কল্পনা করুন!”
আইরিস বলেন: “নিউ ইয়র্কে বিশেষ করে অঙ্ক এবং বিজ্ঞানের শিক্ষকের অভাব রয়েছে। তারা যে-কোন জায়গায় ভাল চাকরি পেতে পারেন। তাই, এই শহরে অনেক বিদেশি শিক্ষকদেরকে ধার করে আনতে হয়েছে।”
স্পষ্টতই, শিক্ষকতা এমন এক পেশা যেখানে অনেক দাবি করা হয়। তা হলে কোন্ বিষয়টা শিক্ষকদেরকে প্রেরণা দিয়েছে? কেন তারা তা চালিয়ে যান এবং ধৈর্য ধরেন? আমাদের শেষ প্রবন্ধ এই প্রশ্নগুলোর উত্তর দেবে।(g০২ ৩/৮)
[৯ পৃষ্ঠার ব্লার্ব]
হিসেব করে দেখা গেছে যে, প্রতিদিন ১,৩৫,০০০ বন্দুক যুক্তরাষ্ট্রের স্কুলগুলোতে নিয়ে আসা হয়
[১০ পৃষ্ঠার বাক্স/চিত্র]
কোন্ বিষয়টা সফল শিক্ষক করে তোলে?
একজন সফল শিক্ষককে আপনি কীভাবে সংজ্ঞায়িত করবেন? তিনি কি এমন একজন ব্যক্তি যিনি ছেলেমেয়েদের স্মৃতিশক্তি গড়ে তুলবেন, যাতে তারা মনে রাখতে পারে এবং পরীক্ষায় পাশ করতে পারে? নাকি তিনি একজনকে প্রশ্ন করতে, চিন্তা করতে এবং যুক্তি করতে শেখান? কে একজন সন্তানকে ভাল নাগরিক হতে সাহায্য করেন?
“শিক্ষক হিসেবে আমরা যখন বুঝতে পারি যে, আমরা হলাম ছেলেমেয়েদের জীবনের দীর্ঘ ও কঠিন ভ্রমণের সঙ্গী এবং যখন আমরা তাদের সঙ্গে মর্যাদা ও সম্মানের সঙ্গে ব্যবহার করি, তখন আমরা একজন যোগ্য শিক্ষক হওয়ার পথে থাকি। এটা খুব সহজ আবার অনেক কঠিনও।”—শিক্ষা দেওয়া—একজন শিক্ষকের ভ্রমণ।
একজন ভাল শিক্ষক প্রত্যেকটা ছাত্রের ক্ষমতা বুঝতে পারেন এবং জানেন যে কীভাবে তা বিকশিত করতে হয়। উইলিয়াম আ্যয়ার্স বলেন: “আমাদের আরও ভাল একটা পথ খুঁজে বের করা দরকার, যে-পথ শক্তি, অভিজ্ঞতা, দক্ষতা এবং ক্ষমতার ওপর গড়ে উঠবে . . . আমেরিকার স্থানীয় এক মার ঘটনা আমার মনে পড়ে যার পাঁচ বছরের এক সন্তান ছিল এবং সেই সন্তানকে ডাকা হতো ‘ঢিলা ছাত্র’: ‘উইন্ড-ওল্ফ ৪০টারও বেশি পাখিদের নাম এবং তাদের ভ্রমণ-অভ্যাস সম্বন্ধে জানে। সে জানে যে, নিখুঁতভাবে ভারসাম্য বজায় রাখতে পারে এমন একটা ঈগলের লেজে ১৩টা পালক আছে। তার এমন একজন শিক্ষকের প্রয়োজন, যিনি তার ক্ষমতা সম্বন্ধে পুরোপুরি জানেন।’”
প্রত্যেকটা ছেলেমেয়ের ভিতর থেকে সবচেয়ে ভাল কিছু বের করে আনার জন্য শিক্ষকদেরকে খুঁজে বের করতে হবে যে, কোন্ বিষয়টা তাকে আগ্রহী করে বা প্রেরণা দেয় এবং কেন সে এমনভাবে কাজ করে। আর একজন নিবেদিত শিক্ষককে ছেলেমেয়েদেরকে ভালবাসতে হবে।
[সৌজন্যে]
United Nations/Photo by Saw Lwin
[১১ পৃষ্ঠার বাক্স]
পড়াশোনা কি সবসময় মজার হতে হবে?
শিক্ষক উইলিয়াম আ্যয়ার্স শিক্ষকতা সম্বন্ধে দশটা ভুল ধারণার তালিকা বানান। সেগুলোর মধ্যে একটা হল: “ভাল শিক্ষকরা পড়াশোনাকে সবসময় মজার করে তোলেন।” তিনি আরও বলেন: “মজা করা মনোযোগ নষ্ট করে, মনকে অন্যদিকে নিয়ে যায়। ক্লাউনরা মজা করে। রসিকতাও মজার কৌতুক হতে পারে। পড়াশোনা হতে পারে মনোযোগপূর্ণ, নিবিষ্ট, বিস্ময়কর, দ্বন্দ্ব, এবং গভীর আনন্দদায়ক। এটা যদি মজার হয়, তা হলে ভাল। কিন্তু এটাকে যে মজার হতেই হবে তা নয়।” তিনি আরও বলেন: “শিক্ষকতার জন্য অনেক জ্ঞান, ক্ষমতা, দক্ষতা, বিচক্ষণতা এবং বোঝার ক্ষমতা দরকার আর সবচেয়ে বড় কথা এর জন্য একজন চিন্তাশীল ও যত্নবান ব্যক্তি দরকার।”—শিক্ষা দেওয়া—একজন শিক্ষকের ভ্রমণ।
জাপানের নাগোয়া শহরের সুমিও তার ছাত্রদের মধ্যে এই সমস্যা খুঁজে পান: “উচ্চবিদ্যালয়ের অনেক ছাত্রছাত্রীদের মজা করা ছাড়া আর কোন কিছুতেই আগ্রহ নেই এবং যেগুলোর জন্য কোন চেষ্টার প্রয়োজন হয় না, তারা সেগুলো করতে চায়।”
নিউ ইয়র্কের ব্রুকলিনের একজন ছাত্র উপদেষ্টা রোজা বলেন: “ছেলেমেয়েদের সাধারণ মনোভাব হল পড়াশোনা অনেক বিরক্তিকর বিষয়। শিক্ষকরা বিরক্তিকর। তারা মনে করে যে সমস্ত কিছুই মজার হওয়া উচিত। তারা বুঝতে পারে না, তুমি পড়াশোনা করে কতটা শিখবে তা নির্ভর করে তুমি পড়াশোনার জন্য কতটা চেষ্টা কর।”
সবসময় মজা করার ফলে ছেলেমেয়েদের পক্ষে চেষ্টা এবং আত্মত্যাগ করা কঠিন হয়ে পড়ে। ওপরে বলা সুমিও বলেন: “গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টা হল, তারা বুঝতে পারে না যে, কোন্ বিষয়টা ভবিষ্যতে ছাপ ফেলবে। উচ্চবিদ্যালয়ের এইরকম ছাত্রছাত্রী অনেক কম আছে যারা মনে করে যে, এখন যদি কোন কিছুর জন্য তারা কঠোর পরিশ্রম করে, তা হলে তা ভবিষ্যতে সার্থক হবে।”
[৭ পৃষ্ঠার চিত্র]
ডায়ানা, যুক্তরাষ্ট্র
[৮ পৃষ্ঠার চিত্র]
‘চারিদিকে মাদকদ্রব্যের ব্যাবসা ছড়িয়ে পড়েছে কিন্তু খুব কমই তা ধরা পড়ে।’—মিখায়েল, জার্মানি
[৮ পৃষ্ঠার চিত্র]
“পরিবারের মধ্যে আমরা দৌরাত্ম্য এবং মাদকদ্রব্যের প্রতি আসক্তির মতো সমস্যাগুলোর মোকাবিলা করি।”—আ্যমিরা, মেক্সিকো
[৯ পৃষ্ঠার চিত্র]
‘শিক্ষকদের বিশিষ্ট বেবিসিটার মনে না করে অন্যান্য পেশার লোকেদের মতো করে দেখা উচিত।’
—স্যান্ড্রা ফেল্ডম্যান, আমেরিকান ফেডারেশন অফ টিচারস এর প্রেসিডেন্ট