সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

শিক্ষকতা পরিতৃপ্তি এবং আনন্দ

শিক্ষকতা পরিতৃপ্তি এবং আনন্দ

শিক্ষকতা পরিতৃপ্তি এবং আনন্দ

“কোন্‌ বিষয়টা আমাকে শিক্ষকতা চালিয়ে যেতে সাহায্য করেছে? যদিও শিক্ষকতা কঠিন এবং ক্লান্তিকর হতে পারে কিন্তু ছেলেমেয়েদের শেখার আগ্রহ এবং তাদের উন্নতি আমাকে তা চালিয়ে যাওয়ার প্রেরণা দিয়েছে।”—লিমেরিজ, নিউ ইয়র্ক সিটির একজন শিক্ষক।

সমস্ত বাধা, সমস্যা এবং হতাশা সত্ত্বেও সারা পৃথিবীতে হাজার হাজার শিক্ষক তাদের পছন্দের পেশায় রয়েছেন। যথেষ্ট স্বীকৃতি পাওয়া যায় না জানা সত্ত্বেও, কোন্‌ বিষয়টা হাজার হাজার ছাত্রকে শিক্ষকতার যোগ্যতা অর্জনের জন্য চেষ্টা করতে প্রেরণা দিয়েছে? কোন্‌ বিষয়টা তাদেরকে তা চালিয়ে যেতে সাহায্য করেছে?

ভারতের রাজধানী নিউ দিল্লির স্কুল শিক্ষিকা ম্যারিয়ান বলেন: “নিজেকে এমন একজন ব্যক্তি হিসেবে মনে করা খুবই পরিতৃপ্তিকর, যিনি কিশোর-কিশোরীদেরকে তাদের সবচেয়ে কঠিন সময়ে পরিচালনা দিতে সাহায্য করেন। অল্পবয়সী ছেলেমেয়েরা যখন আপনার সাহায্যে সাড়া দেয় এবং ভবিষ্যতে আপনার কথা মনে করে আনন্দ পায়, তখন আপনি যে-পরিতৃপ্তি পান, তা অন্য আর কোন পেশা দিতে পারে না।”

আগের প্রবন্ধগুলোতে বলা একজন শিক্ষক জুলিয়ানো বলেন: “এই বিষয়টা বুঝতে পারা সবচেয়ে বড় পরিতৃপ্তিকর যে, আপনি কোন একটা বিষয়ে ছেলেমেয়েদের আগ্রহ জাগিয়ে তুলতে সফল হয়েছেন। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, ইতিহাস সম্বন্ধে কোন একটা বিষয় বলার পর কিছু ছাত্রছাত্রী বলে: ‘দয়া করে থামবেন না। আমাদেরকে আরও বলুন!’ এইধরনের স্বতঃস্ফূর্ত অভিব্যক্তি স্কুলের এক বিষণ্ণ সকালকে আলোয় ভরিয়ে দিতে পারে কারণ আপনি বুঝতে পারেন যে তরুণ-তরুণীদের মধ্যে আপনি সেই আবেগ জাগিয়ে তুলেছেন, যা তাদের কাছে নতুন। কোন একটা বিষয় বুঝতে পারার ফলে তাদের চোখেমুখে যে-আলো ফুটে ওঠে, তা দেখা অনেক আনন্দের।”

ইতালির একজন শিক্ষক ইলিনা বলেন: “আমি বিশ্বাস করি যে পৃথিবীতে হঠাৎ কখনও ঘটে চলা গুরুত্বপূর্ণ ঘটনার চেয়ে রোজকার ছোটখাটো বিষয়ে, ছেলেমেয়েদের সামান্য সফলতায় আরও বেশি পরিতৃপ্তি পাওয়া যায়।”

অস্ট্রেলিয়ার কানি, যার বয়স ৩০ এর কোঠায়, তিনি বলেন: “একজন ছাত্র যাকে আপনি শিক্ষা দিয়েছেন, সে যদি আপনার চেষ্টার জন্য আপনাকে কৃতজ্ঞতা জানিয়ে একটা চিঠি লেখে, তখন তা সত্যিই আনন্দদায়ক হয়।”

আর্জেন্টিনার মেনডোজার ওস্কার একই বিষয়ে বলেন: “রাস্তায় বা অন্য কোন জায়গায় ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গে দেখা হলে তারা যখন আমার শিক্ষার জন্য আমার প্রতি কৃতজ্ঞতা দেখায়, তখন শিক্ষা দেওয়ার কাজটা আমি সত্যিই সার্থক বলে মনে করি।” স্পেনের মাদ্রিদের আনখাল বলেন: “কোন সন্দেহ নেই যে, আমার জীবনকে এই অপূর্ব কিন্তু কঠিন পেশায় বিলিয়ে দেওয়ার মধ্যে সবচেয়ে বড় পরিতৃপ্তি হল, যে-অল্পবয়সী ছেলেময়েদেরকে আমি শিক্ষা দিয়েছি তাদেরকে সৎ নারী-পুরষ হিসেবে গড়ে উঠতে দেখা, যেখানে কিছুটা হলেও আমার অবদান আছে।”

শুরুতে বলা লিমেরিজ বলেন: “সত্যিই আমি শিক্ষকদেরকে এক অদ্বিতীয় ব্যক্তি হিসেবে দেখি। এইধরনের বিরাট এক জটিল দায়িত্ব নেওয়াও কিছুটা অস্বাভাবিক। কিন্তু, আপনি যদি কিছুটা বৈসাদৃশ্য আনতে পারেন, তা সেটা দশজন বা একজনের বেলায়ই হোক, তা হলে আপনি আপনার কাজ সম্পন্ন করেছেন এবং এর চেয়ে ভাল অনুভূতি আর নেই। আপনি তা আনন্দের সঙ্গে করেন।”

আপনি কি আপনার শিক্ষকদেরকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন?

একজন ছাত্র বা ছাত্রী অথবা বাবামা হিসেবে আপনি কি কখনও শিক্ষকদের সময়, চেষ্টা এবং আগ্রহের জন্য ধন্যবাদ জানিয়েছেন? অথবা ধন্যবাদ জানিয়ে কি একটা ছোট্ট নোট বা চিঠি দিয়েছেন? কেনিয়ার নাইরোবির আর্থার একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় সম্বন্ধে বলেন: “শিক্ষকরা প্রশংসা পেয়েও সতেজ হয়ে ওঠেন। শিক্ষকদের এবং তাদের কাজের প্রতি সরকার, বাবামা এবং ছাত্রছাত্রীদের গভীর সম্মান দেখানো উচিত।”

গ্রন্থকার এবং শিক্ষক লুয়েন জনসন লেখেন: “শিক্ষকদের সম্বন্ধে আমি যতটা নেতিবাচক চিঠি পাই তার চেয়ে শত শত বেশি প্রশংসার চিঠি পাই, যা আমার বিশ্বাসকে দৃঢ় করে যে, খারাপদের চেয়ে বরং অনেক বেশি ভাল শিক্ষক আছেন।” আগ্রহের বিষয় হল যে, অনেকে গোয়েন্দা ভাড়া করে নিয়ে আসে যাতে তিনি “পুরনো শিক্ষকের বাড়ি খুঁজে পেতে সাহায্য করেন। লোকেরা তাদের শিক্ষকদেরকে খুঁজে তাদেরকে ধন্যবাদ জানাতে চায়।”

শিক্ষকরা একজন ব্যক্তির শিক্ষার প্রয়োজনীয় ভিত স্থাপন করে দেয়। এমনকি বড় বড় বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে সবচেয়ে ভাল অধ্যাপকরা সেই শিক্ষকদের কাছে ঋণী, যারা শিক্ষা, জ্ঞান ও বোঝার ক্ষমতা গড়ে তোলার জন্য সময় দিয়েছেন এবং চেষ্টা করেছেন। নাইরোবির আর্থার বলেন: “জনসেবা এবং বেসরকারি বিভাগে যে-সমস্ত উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা আছেন তারা জীবনের কোন একটা সময়ে শিক্ষকদের কাছ থেকে শিক্ষা পেয়েছেন।”

সেই সমস্ত নারী-পুরুষদের প্রতি আমাদের কত কৃতজ্ঞতা দেখানো উচিত, যারা আমাদের আগ্রহ জাগিয়ে তুলেছেন, আমাদের মন ও হৃদয়কে উদ্দীপিত করেছেন এবং দেখিয়েছেন যে, কীভাবে আমাদের জ্ঞান লাভ করার এবং বোঝার ক্ষমতার তৃষ্ণা মেটানো যায়!

সর্বমহান শিক্ষক যিহোবা ঈশ্বরের প্রতি আমাদের আরও কত বেশি কৃতজ্ঞ হওয়া উচিত, যিনি হিতোপদেশ ২:১-৬ পদের কথাগুলো লিখতে অনুপ্রেরণা দিয়েছেন: “বৎস, তুমি যদি আমার কথা সকল গ্রহণ কর, যদি আমার আজ্ঞা সকল তোমার কাছে সঞ্চয় কর, যদি প্রজ্ঞার দিকে কর্ণপাত কর, যদি বুদ্ধিতে মনোনিবেশ কর; হাঁ, যদি সুবিবেচনাকে আহ্বান কর, যদি বুদ্ধির জন্য উচ্চৈঃস্বর কর; যদি রৌপ্যের ন্যায় তাহার অন্বেষণ কর, গুপ্ত ধনের ন্যায় তাহার অনুসন্ধান কর; তবে সদাপ্রভুর ভয় বুঝিতে পারিবে, ঈশ্বরবিষয়ক জ্ঞান প্রাপ্ত হইবে। কেননা সদাপ্রভুই প্রজ্ঞা দান করেন, তাঁহারই মুখ হইতে জ্ঞান ও বুদ্ধি নির্গত হয়।”

“যদি” শর্তটা লক্ষ্য করুন, যা ভাবিয়ে তোলার মতো এই পদে কয়েকবার এসেছে। কল্পনা করুন যে, আমরা যদি এই আহ্বান মেনে নিতে ইচ্ছুক হই, তা হলে আমরা ‘ঈশ্বরবিষয়ক জ্ঞান প্রাপ্ত হইব’! নিশ্চিতভাবেই তা আমাদের সকলের জন্য সবচেয়ে বড় শিক্ষা।(g০২ ৩/৮)

[১৩ পৃষ্ঠার বাক্স]

এক সুখী মা

নিচের এই চিঠিটা নিউ ইয়র্ক সিটির একজন শিক্ষক পেয়েছেন:

“আপনি আমার ছেলেমেয়েদের জন্য যা করেছেন, তার জন্য আমি আপনাকে হৃদয়ের গভীর থেকে ধন্যবাদ জানাতে চাই। আপনার যত্ন, দয়া, দক্ষতা দিয়ে আপনি তাদেরকে সফল হতে সাহায্য করেছেন আর আমি নিশ্চিত যে আপনার সাহায্য ছাড়া তারা কখনও তা করতে পারত না। আপনার জন্যই আমি আমার ছেলেমেয়েদের নিয়ে গর্বিত—যা আমি কখনও ভুলব না। ইতি বিনীত, এস. বি।”

আপনি কি এমন কোন শিক্ষককে চেনেন, যাকে আপনি উৎসাহ দিতে পারেন?

[১২ পৃষ্ঠার চিত্র]

কোন একটা বিষয় বুঝতে পারার ফলে ‘ছাত্রছাত্রীদের চোখেমুখে যে-আলো ফুটে ওঠে, তা দেখা অনেক আনন্দের।’ —জুলিয়ানো, ইতালি

[১৩ পৃষ্ঠার চিত্রগুলো]

‘একজন ছাত্র যদি আপনার চেষ্টার জন্য আপনাকে কৃতজ্ঞতা জানিয়ে একটা চিঠি লেখে, তখন তা সত্যিই আনন্দদায়ক হয়।’ কানি, অস্ট্রেলিয়া