সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

বিশ্ব নিরীক্ষা

বিশ্ব নিরীক্ষা

বিশ্ব নিরীক্ষা

খাবারের প্রতিযোগিতায় ইঁদুর ও মানুষ

অস্ট্রেলিয়ার কমনওয়েল্থ সায়েনটিফিক আ্যন্ড ইন্ডাসট্রিয়াল রিসার্চ অরগেনাইজেশন (সিএসআইআরও) অনুযায়ী, পৃথিবীব্যাপি প্রতিটা মানব শিশুর জন্ম হওয়ার সঙ্গে দশটা ইঁদুরের বাচ্চারও জন্ম হচ্ছে। প্রতিদিন প্রায় ৩,৬০,০০০ জন নতুন মানব শিশুকে খাওয়াতে হবে কিন্তু ৩৬,০০,০০০ নবজাত ইঁদুর বাচ্চারাও খাবার চায়। উদাহরণ হিসেবে, ইন্দোনেশিয়াতে প্রায় ২৩ কোটি জনসংখ্যা রয়েছে এবং প্রায় ৬০ শতাংশ ব্যক্তি তাদের প্রতিদিনের খাওয়ার প্রয়োজন মেটাতে ভাতের ওপর নির্ভর করে। অথচ সেই দেশে প্রতি বছর ইঁদুরগুলো প্রায় ১৫ শতাংশ চাল খেয়ে ফেলে। সিএসআইআরও এর বিজ্ঞানী ডা. গ্র্যান্ট সিঙ্গেলটোন বলেন, “অর্থাৎ ইঁদুরগুলো যে-পরিমাণ চাল খাচ্ছে, তা দিয়ে পুরো এক বছর ইন্দোনেশিয়ার দুকোটি জনগণকে খাওয়ানো যায়।” (g০২ ৬/২২)

তেল-প্রিয় হাতিরা

ভারতের উত্তরপূর্বের ডিগবয়েতে হাতিদের তেলের প্রতি আকর্ষণ রয়েছে। অয়েল ইন্ডিয়া লিমিটেড এর একজন সিনিয়র ইঞ্জিনিয়ার রমেন চক্রবর্তী বলেন, ‘হাতিরা তৈলখনি অঞ্চলগুলোতে নির্দ্বিধায় ঘুরে বেড়ায়, প্রায়ই পাইপলাইনগুলোর প্রধান ভাল্বগুলোকে খুলে দেয়, যেগুলো তেলকূপগুলোকে শোধনাগারের সঙ্গে যুক্ত করে। একটা ভাল্ব খুললে যে-আওয়াজ হয়, সেটা শুনে হাতিরা আনন্দ পায় বলে মনে করা হয়, বিশেষ করে এগুলোর একটা যদি সেই ভাল্ব হয়, যেটা বাষ্পকে নিয়ন্ত্রণ করে যা অশোধিত পদার্থকে প্যারাফিনে পরিণত হতে বাধা দেয়।’ ইণ্ডিয়ান এক্সপ্রেস খবরের কাগজ রিপোর্ট করে, হাতিরা তেল ছিটকে বেরিয়ে আসার “হু-শ-শ আওয়াজ” শুনেই শুধু আনন্দ পায় না কিন্তু “অশোধিত পেট্রোলিয়ামের সঙ্গে বেরিয়ে আসা কাদা ও জলের” জন্য তেলের কূপগুলোর কাছে যেতে আকৃষ্ট হয়। “জল নোনা হয় আর হাতিরা সেটা ভালবাসে।” আগ্রহের বিষয় যে, ঘটনাক্রমে সেখানে তেলের আবিষ্কার একটা হাতির দ্বারাই হয়েছিল। সেই অঞ্চলের প্রথম রেললাইনের জন্য এই জন্তুটা যখন রেলের পাতগুলো বয়ে ক্যাম্পে ফিরে এসেছিল, তখন ব্রিটিশ অফিসাররা এর পায়ে একধরনের তেলতেলে কিছু বস্তু লক্ষ করেছিল এবং হাতির হেঁটে আসা পথ অনুসরণ করে বুদ্‌বুদ্‌ করে ওঠা তেলের খনির সন্ধান পেয়েছিল। এর ফলে ১৮৮৯ সালে এশিয়ার প্রথম তেল কূপ খোলা হয়েছিল। (g০২ ৭/২২)

অবিবাহিত বাবামাদের দ্বারা জন্ম হওয়া বাচ্চার সংখ্যাই বেশি

জার্মানির খবরের কাগজ ভেস্টডয়িশি আ্যলগেমিনি জেইটাং রিপোর্ট করে যে, ইউরোস্ট্যাট নামে ইউরোপের এক পরিসংখ্যান মাধ্যম অনুযায়ী সম্প্রতি ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন-এ জন্ম নেওয়া ৪টা বাচ্চার মধ্যে ১টা বাচ্চা অবিবাহিত বাবামার। ১৯৮০ সালে এর হার ছিল ১০ জনের মধ্যে ১ জনেরও কম। অবিবাহিত বাবামার দ্বারা জন্ম নেওয়া বাচ্চার হার সবচেয়ে কম হল গ্রিসে—৪ শতাংশ। অন্যদিকে, সুইডেনে জন্ম নেওয়া সমস্ত বাচ্চার মধ্যে অর্ধেকেরও বেশি বাচ্চার বাবামা অবিবাহিত। আয়ারল্যান্ডে সবচেয়ে বিরাট পরিবর্তন দেখা গিয়েছে। সেখানে অবিবাহিত বাবামার দ্বারা জন্ম হওয়া বাচ্চাদের সংখ্যা ১৯৮০ সালে মাত্র ৫ শতাংশ ছিল কিন্তু তা ২০০০ সালে বেড়ে ৩১.৮ শতাংশ হয়ে গিয়েছিল। রিপোর্ট জানায়, এইধরনের বিরাট বৃদ্ধিগুলো “প্রমাণ করে যে, বিবাহ ও পরিবার সম্বন্ধে ইউরোপীয়দের মনোভাবে এক লক্ষণীয় পরিবর্তন হয়েছে।” (g০২ ৫/৮)

একশ বছর বয়সেও সুখী ও স্বাস্থ্যবান

ইয়োমিউরি শিমবুন খবর কাগজের এক রিপোর্ট অনুযায়ী, “১০০ বছরেরও বেশি বয়সী ব্যক্তিদের মধ্যে শতকরা ৮০ ভাগ ব্যক্তি মনে করে যে, তারা প্রতিদিন সুস্বাস্থ্যে এবং ভাল রয়েছে।” জাপানে শতায়ুঃ ব্যক্তিদের সংখ্যা ১৯৮১ সালে প্রথমে ১,০০০ ছাড়িয়ে গিয়েছিল এবং ২০০০ সালে সেটা ১৩,০০০-এ পৌঁছেছে। সম্প্রতি, জাপানের স্বাস্থ্য ও শক্তি প্রতিষ্ঠান ১,৯০০ জনেরও বেশি শতায়ুঃ ব্যক্তির ওপর একটা সমীক্ষা চালায়, বস্তুতপক্ষে এটা ১০০ বছরের বেশি বয়সের ব্যক্তিদের “জীবনের গুণগত মান” এর ওপর করা বৃহত্তম এক সমীক্ষা যা আগে কখনও করা হয়নি। খবরের কাগজ রিপোর্ট করেছিল যে, “২৫.৮ শতাংশ মহিলাদের বিপরীতে বিরাট সংখ্যক পুরুষ অর্থাৎ ৪৩.৬ শতাংশ জন বলে যে, তাদের ‘জীবনে এক উদ্দেশ্য রয়েছে।’” শতায়ুঃ ব্যক্তিদের অধিকাংশ উল্লেখ করেছিল যে, তাদের জীবনের উদ্দেশ্যগুলোর মধ্যে রয়েছে, “পরিবার,” “দীর্ঘায়ু” এবং “ভাল স্বাস্থ্য উপভোগ করা ও সুখী থাকা।” তাই, ইয়োমিউরি শিমবুন পরামর্শ দেয় যে, “কোন উদ্দেশ্য নিয়ে বেঁচে থাকা দীর্ঘায়ু এনে দেয়।” (g০২ ৫/৮)

ঈশ্বরের নামে চুরি

উত্তর আমেরিকার নিরাপত্তা প্রশাসন সংঘের প্রেসিডেন্ট দেবোরা বর্টনার বলেছিলেন, ‘আমি একজন বিনিয়োগ নিয়ন্ত্রণকারী হিসেবে ২০ বছর ধরে কাজ করছি আর আমি দেখেছি যে, অন্যান্য যেকোন উপায়ের চেয়ে ঈশ্বরের নামে বেশি টাকা চুরি হয়। আপনি যখন বিনিয়োগ করেন, তখন কেউ কেবল আপনার ধর্ম অথবা আপনার বিশ্বাসের প্রতি আগ্রহ দেখায় বলে সেই সম্বন্ধে গা ছাড়া ভাব দেখানো উচিত নয়।’ খ্রীষ্টীয় শতাব্দী (ইংরেজি) পত্রিকা অনুযায়ী, “গত তিন বছরে ২৭টা প্রদেশে বিনিয়োগ নিয়ন্ত্রণকারীরা শত শত ব্যক্তি ও কোম্পানির বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিয়েছে, যারা বিনিয়োগীদের আস্থা পাওয়ার জন্য আধ্যাত্মিক অথবা ধর্মীয় বিশ্বাসকে কাজে লাগিয়েছে। . . . এক লজ্জাজনক পরিস্থিতিতে যা [পাঁচ বছরেরও বেশি] ব্যাপ্ত ছিল” এক প্রটেস্টান্ট প্রতিষ্ঠান “সমগ্র দেশের ১৩,০০০ জনেরও বেশি বিনিয়োগকারীদের থেকে ৫৯ কোটি ডলার জোগাড় করেছিল। সেই প্রতিষ্ঠানকে বিনিয়োগ নিয়ন্ত্রণকারীরা ১৯৯৯ সালে বন্ধ করে দিয়েছিল এবং এর তিনজন কর্তৃপক্ষকে জালিয়াতির অপরাধে দোষী করা হয়েছিল।” খ্রীষ্টান শতাব্দী রিপোর্ট করে যে, আরও তিনটা ঘটনায় “মোট ১৫০ কোটি ডলার লোকসান হয়েছে।” (g০২ ৫/২২)

গির্জার ব্যাবসা

কম উপস্থিতি ও দান আসা কমে যাওয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের গির্জাগুলো বিভিন্ন বিল পরিশোধ করার জন্য ব্যাবসা শুরু করছে। ইন্ডিয়ানার মান্সটারের ফ্যামিলি খ্রিস্টিয়ান সেন্টার এর উচ্চপদস্থ যাজক স্টিফেন মানসি বলেন, “এটাই প্রত্যেক উদ্যোগী গির্জার ভবিষ্যৎ।” দ্যা ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল অনুযায়ী, গির্জার ব্যবসায়িক কর্মকাণ্ডের মধ্যে রয়েছে গির্জার লবিতে কফি ও ডোনাটস বিক্রি থেকে শুরু করে গির্জার ছাদে পুরোদমে রেস্তরাঁগুলো খোলা। ফ্লোরিডার জ্যাকসোনভিলে একটা গির্জা তাদের গির্জার চত্বরের কাছাকাছি একটা শপিং মল খুলেছে। এই মলে একটা ট্রাভেল এজেন্সি, একটা বিউটি পার্লার ও কৃষ্ণবর্ণ আমেরিকার বাসিন্দাদের ঐতিহ্যগত খাবারের এক রেস্তরাঁ রয়েছে। গির্জার প্রতিষ্ঠাতা ও বিশপ ভন ম্যাকলাফলিন বলেন: “যীশু চান যে, তিনি আমাদের যে-উপহারগুলো দেন, তা যেন আমরা গ্রহণ করি এবং সুদ পাই।” তিনি আরও বলেন যে, ২০০০ সালে গির্জার ব্যাবসা ১০ কোটি টাকারও বেশি রাজস্ব আয় করেছিল। (g০২ ৬/২২)

ফ্রান্সে বাইবেল পাঠ

লা ক্রোইক্স ক্যাথলিক খবরের কাগজে প্রকাশিত একটা সমীক্ষা অনুযায়ী, যদিও সমীক্ষা করা ব্যক্তিদের মধ্যে ৪২ শতাংশ ফরাসি ব্যক্তির বাইবেল রয়েছে কিন্তু মাত্র ২ শতাংশ ব্যক্তি বলে যে, তারা প্রায় প্রতিদিন সেটা পড়ে। বাহাত্তর শতাংশ ব্যক্তি বলে যে, তারা “কখনও বাইবেল পড়ে না।” যাদের ওপর সমীক্ষা চালানো হয়েছিল তাদের মধ্যে ৫৪ শতাংশ ব্যক্তি বাইবেলকে “একটা সেকেলে বই” বলে মনে করে, যেটার “আধুনিক জগতের সঙ্গে কোন মিল নেই।” এই রিপোর্ট ব্যাখ্যা দেয় যে, “ফরাসিরা বাইবেলকে প্রথমে সাংস্কৃতিক দৃষ্টিভঙ্গিতে বিবেচনা করে,” এর মধ্যে “যিহুদি ও খ্রীষ্টধর্মের উৎস” জানার জন্য ব্যাখ্যা খোঁজে। লা ক্রোইক্স উল্লেখ করে যে, “প্রতি বছর ফ্রান্সে প্রায় ২,৫০,০০০ বাইবেল ও ৩০,০০০ নতুন নিয়ম বিক্রি হয়।”(g০২ ৭/৮)

মাউন্ট এভারেস্ট পরিষ্করণ

পৃথিবীর সবচেয়ে উঁচু পর্বত, মাউন্ট এভারেস্টের (৮,৮৮২ মিটার) সাধারণ চিত্র এক অকৃত্রিম সৌন্দর্য ও চমৎকারিত্বের মধ্যে একটা। কিন্তু নিউ দিল্লির পত্রিকা ডাউন টু আর্থ একটা রিপোর্ট প্রকাশ করে যে, মাউন্ট এভারেস্ট এক প্রকাণ্ড জঞ্জালের স্তূপে পরিণত হয়েছে। গত কয়েক বছরে, এভারেস্টে যে-শত শত ব্যক্তি আরোহণ করেছে তারা বাস্তবে অনেক জঞ্জাল ফেলে রেখে এসেছে, যেগুলোর মধ্যে রয়েছে “অক্সিজেনের খালি সিলিন্ডার, পুরনো মই বা দণ্ড ও প্লাস্টিকের ছড়ি।” সেই রিপোর্ট বলে, সবচেয়ে নোংরা ক্যাম্প হল “সাউথ কোল ক্যাম্প, যেখান থেকে অধিকাংশ আরোহণকারীরা শেষবারের মতো পাহাড়ের চূড়াতে গিয়ে পৌঁছায়।” নেপাল পর্বতারোহণ সংঘের একজন কর্মকর্তা ভূমি লাল লামা বলেছিলেন যে, “আমরা প্রতি এক কিলো জঞ্জাল জমা করার জন্য [সেরপাদের] ৬৫০ টাকা বেতন হিসেবে দেওয়ার কথা ভেবে দেখছি।” এই রিপোর্ট জানায় যে, সেরপারা এভারেস্টে চড়ার জন্য “সাধারণত নির্দেশক ও লোকেদের জিনিসপত্র বহন করার কাজ করে।” (g০২ ৭/৮)

এশিয়ায় বায়ু দূষণের ঝুঁকি

পরিবেশ সম্বন্ধীয় পত্রিকা ডাউন টু আর্থ বলে যে, “ভারতে প্রতি বছর ৪০,০০০রেরও বেশি লোক বায়ু দূষণের কারণে মারা যায়।” বিশ্ব ব্যাংক ও স্টকহোম পরিবেশ সংস্থার দ্বারা করা গবেষণা দেখায় যে, ইউরোপ ও আমেরিকা উভয় জায়গাতে যতটা বায়ু দূষণ রয়েছে, সেটার চেয়ে এশিয়ার বায়ু দূষণ হাজার গুণ বেশি এবং এটা শিওল, বেজিং, ব্যাংকক, জাকার্তা ও ম্যানিলায় হাজার হাজার ব্যক্তির মৃত্যুর জন্য দায়ী। উদাহরণ হিসেবে, ম্যানিলায় প্রতি বছর শ্বাস-সংক্রান্ত রোগগুলোতে ৪,০০০রেরও বেশি লোক মারা যায় আর ৯০,০০০ জন ব্যক্তি চরম দীর্ঘস্থায়ী ব্রংকাইটিস রোগে ভোগে। এমনকি বেইজিং ও জাকার্তায় মৃত্যুর সংখ্যা আরও বেশি। পত্রিকা জানায় এই সমস্যার কারণ হল, “নিম্ন মানের জ্বালানির ব্যবহার, শক্তি উৎপাদনের অকার্যকারী পদ্ধতি, নষ্ট গাড়িগুলোর ব্যবহার এবং যানযট।” (g০২ ৮/২২)