সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

আফ্রিকায় এইডস ছড়িয়ে পড়ছে

আফ্রিকায় এইডস ছড়িয়ে পড়ছে

আফ্রিকায় এইডস ছড়িয়ে পড়ছে

“আমরা একধরনের সমসাময়িক মহাপ্রলয়ের সঙ্গে মোকাবিলা করছি।”

আফ্রিকার এইচআইভি/এইডস এর বিশেষ ইউএন প্রতিনিধি স্টিভেন লুইসের ওই কথাগুলো, আফ্রিকার উপ-সাহারা অঞ্চলে এইডস সম্বন্ধে অনেকের উদ্বেগকে প্রতিফলিত করে।

এইচআইভি ছড়িয়ে পড়ার সঙ্গে অনেকগুলো বিষয় জড়িত। এইডসের কারণে অন্যান্য সমস্যাগুলো আরও বেশি জোরালো হয়ে উঠেছে। আফ্রিকার কিছু দেশে যেধরনের পরিস্থিতি বিদ্যমান এবং পৃথিবীর অন্যান্য যে-জায়গাগুলোতে এইডস ছড়িয়ে পড়ছে, সেগুলো প্রায়ই নিম্নলিখিত বিষয়গুলোর সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত।

নৈতিকতা। যেহেতু এইচআইভি সংক্রমণের প্রধান মাধ্যম হল যৌন সম্পর্ক, তাই শুদ্ধ নৈতিক মানের অভাবই এই রোগটিকে ছড়িয়ে দিচ্ছে। অথচ অনেকে মনে করে যে, অবিবাহিত ব্যক্তিদের মধ্যে যৌন সম্পর্কের প্রতি অনীহা গড়ে তোলা বাস্তবধর্মী নয়। দক্ষিণ আফ্রিকার জোহানাসবার্গের একটা সংবাদপত্র দ্যা স্টার-এ ফাঁসোয়া ডিউফোর লেখেন: ‘যুবক-যুবতীদের কেবল যৌনতা থেকে দূরে থাকতে বললেই কাজ হবে না। কারণ প্রতিদিন তারা এমন সব যৌন বিষয়বস্তুর দ্বারা জর্জরিত হচ্ছে, যেগুলোতে তুলে ধরা হয় যে, তাদের দেখতে কেমন হওয়া উচিত ও তাদের কীরকম আচরণ করা উচিত।’

যুবক-যুবতীদের আচরণের দ্বারাই এই বিশ্লেষণের সত্যতা প্রমাণিত হয়েছে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, একটা দেশের সমীক্ষা ইঙ্গিত করেছিল যে, ১২ থেকে ১৭ বছরের কিশোর-কিশোরীর মধ্যে প্রায় এক তৃতীয়াংশ যৌন সম্পর্কে লিপ্ত হয়েছিল।

দক্ষিণ আফ্রিকায় ধর্ষণকে একটা জাতীয় সংকট বলে বর্ণনা করা হয়েছে। জোহানাসবার্গের সিটিজেন সংবাদপত্রের একটা রিপোর্টে বলা হয়েছিল যে, “এটা এতটাই বৃদ্ধি পেয়েছে যে, এই দেশের নারী ও সেইসঙ্গে শিশুদের যেকোনো স্বাস্থ্য সংক্রান্ত ঝুঁকির তুলনায় এর ঝুঁকি অনেক গুণ বেশি।” সেই একই প্রবন্ধ মন্তব্য করেছিল: “সম্প্রতি শিশু ধর্ষণের সংখ্যা দ্বিগুণ হয়ে গেছে . . . এই কাজগুলো করা হয় এরকম একটা কাল্পনিক বিশ্বাসের ওপর ভিত্তি করে যে, এইচআইভি ভাইরাসের দ্বারা সংক্রামিত ব্যক্তি যদি কোনো কুমারীকে ধর্ষণ করে, তা হলে সে সুস্থ হয়ে উঠবে।”

যৌন সংক্রামক রোগ (এসটিডি)। এই অঞ্চলে যৌন সংক্রামক রোগের হার অনেক বেশি। দক্ষিণ আফ্রিকার চিকিৎসা বিষয়ক পত্রিকা (ইংরেজি) মন্তব্য করেছিল: “এসটিডি রোগের উপস্থিতি এইচআইভি-১ সংক্রমণের ঝুঁকিকে ২ থেকে ৫ গুণ বাড়িয়ে তোলে।”

দারিদ্র। আফ্রিকার অনেক দেশ দারিদ্রের সঙ্গে লড়াই করছে আর এটাই এমন একটা পরিবেশের সৃষ্টি করছে, যা এইডস ছড়িয়ে দেওয়ার পক্ষে সহায়ক। উন্নত দেশগুলোতে যেগুলোকে মৌলিক চাহিদা হিসেবে গণ্য করা হয়, সেগুলো অধিকাংশ অনুন্নত দেশগুলোতে পাওয়া যায় না। বৃহত্তর এলাকাগুলোতে কোনো বিদ্যুৎ নেই ও এমনকি বিশুদ্ধ পানীয় জল পর্যন্ত পায় না। গ্রামাঞ্চলে রাস্তাগুলো চলার জন্য অনুপযুক্ত বা এর কোনো অস্তিত্বই নেই। অধিবাসীদের অনেকেই পুষ্টির অভাবে ভুগছে এবং চিকিৎসাগত সুবিধা খুবই সীমিত।

ব্যাবসা ও শ্রমশিল্পের ওপরে এইডসের একটা নেতিবাচক প্রভাব আছে। যত বেশি কর্মী এর দ্বারা সংক্রামিত হচ্ছে, খনি কোম্পানিগুলো বুঝতে পারছে যে, তাদের উৎপাদনের হার হ্রাস পাচ্ছে। কিছু কোম্পানি এটাও বিবেচনা করছে যে, এধরনের ক্ষতিপূরণের জন্য কীভাবে কয়েকটি কাজকে স্বয়ংক্রিয় এবং যান্ত্রিক করা যেতে পারে। এটা অনুমান করা হয়েছে যে, ২০০০ সালে একটা প্ল্যাটিনাম খনিতে এইডসের দ্বারা সংক্রামিত কর্মীর সংখ্যা প্রায় দ্বিগুণ হয়ে গিয়েছিল এবং প্রায় ২৬ শতাংশ কর্মী এর দ্বারা সংক্রামিত হয়েছিল।

এইডসের দুঃখজনক এক পরিণতি হল বিরাট সংখ্যক শিশু অনাথ হয়ে পড়ে, যখন তাদের বাবামারা এই রোগের দ্বারা আক্রান্ত হয়। বাবামাকে এবং অর্থনৈতিক সুরক্ষা হারানো ছাড়াও এই শিশুদের এইডসের সঙ্গে জড়িত কলঙ্ককেও সহ্য করতে হয়। আত্মীয়স্বজন অথবা সমাজের অন্যান্য লোকেরা এতই দরিদ্র যে, তারা সাহায্য দিতে পারে না অথবা তারা তা দিতে চায় না। অনেক অনাথ স্কুল ছেড়ে দেয়। কেউ কেউ বেশ্যাবৃত্তিতে যোগ দেয় আর এভাবে রোগ আরও ছড়িয়ে পড়ে। বহু দেশ এই অনাথদের সাহায্য করার জন্য সরকারি অথবা ব্যক্তিগত কর্মসূচি গ্রহণ করেছে।

অজ্ঞানতা। এইচআইভির দ্বারা সংক্রামিত বিশাল সংখ্যক লোক এই বিষয়ে অজ্ঞাত। এই রোগের সঙ্গে জড়িত কলঙ্কের কথা ভেবে অনেকে পরীক্ষা পর্যন্ত করতে চায় না। এইচআইভি/এইডস এর এক যুগ্ম রাষ্ট্রসংঘ কর্মসূচির (ইউএনএইডস) একটা প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে মন্তব্য করা হয়েছিল যে, “যেসব লোকেদের এইচআইভি আছে বা তারা সংক্রামিত হয়েছে বলে সন্দেহ করা হয়, তাদের হয়তো স্বাস্থ্য সংক্রান্ত সমস্ত সুযোগ-সুবিধা, বাসস্থান ও চাকরি থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে, বন্ধুবান্ধব ও সহকর্মীরা হয়তো তাদের পরিত্যাগ করেছে, বিমার সুযোগ থেকে তাদের হয়তো সরিয়ে দেওয়া হয়েছে অথবা বিদেশে তাদের প্রবেশ হয়তো বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।” অনেককে খুন পর্যন্ত করা হয়েছে যখন তাদের এইচআইভির দ্বারা আক্রান্ত হওয়ার বিষয়টা প্রকাশ পেয়েছে।

সংস্কৃতি। আফ্রিকার বেশ কিছু সংস্কৃতিতে নারীদের প্রায়ই তাদের সঙ্গীকে বিবাহের বাইরে কোনো যৌন সংসর্গ সম্বন্ধে প্রশ্ন করার, যৌন সম্পর্কের ক্ষেত্রে অসম্মত হওয়ার অথবা সুরক্ষিত যৌন সম্পর্ক স্থাপন করার বিষয়ে কোনো প্রস্তাব দেওয়ার অধিকার থাকে না। সংস্কৃতিগত বিশ্বাস প্রায়ই এইডস সম্বন্ধে অজ্ঞানতা এবং বাস্তবতাকে মেনে না নেওয়ার বিষয়টাকে প্রতিফলিত করে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, অসুস্থতার জন্য হয়তো প্রেতচর্চাকে দায়ী করা হয় আর এর ফলে ওঝার সাহায্য নেওয়া হয়।

চিকিৎসাগত সুযোগ-সুবিধার অভাব। এইডসের জন্য যে-সীমিত সুযোগ-সুবিধা রয়েছে, ইতিমধ্যেই সেগুলোর অতিরিক্ত ব্যবহার হয়ে গেছে। দুটি বড় হাসপাতাল রিপোর্ট করে যে, সেখানকার রোগীদের মধ্যে অর্ধেকেরও বেশি এইচআইভি পজিটিভের দ্বারা আক্রান্ত। কোয়াজুলু-নেটালের একটি হাসপাতালের প্রধান মেডিক্যাল অফিসার বলেছিলেন যে, তার বিভাগটি ১৪০ শতাংশ হারে কাজ করছে। অনেক সময় দুজন রোগীকে একটা বিছানায় থাকতে হয় আর তৃতীয় জনকে বিছানার নিচে মেঝেতে থাকতে হয়!—দক্ষিণ আফ্রিকার চিকিৎসা বিষয়ক পত্রিকা।

আফ্রিকার পরিস্থিতি ইতিমধ্যেই অত্যন্ত দুঃখজনক হলেও লক্ষণগুলো দেখায় যে, এই পরিস্থিতি আরও খারাপ আকার ধারণ করবে। ইউএনএইডস এর পিটার পিও বলেছিলেন, “আমরা এখনও এই মহামারীর প্রাথমিক পর্যায়ে আছি।”

এটা স্পষ্ট যে, কিছু দেশে এই রোগের সঙ্গে মোকাবিলা করার জন্য চেষ্টা চালানো হচ্ছে। ২০০১ সালের জুন মাসে প্রথমবার রাষ্ট্রসংঘের সাধারণ অধিবেশন এইচআইভি/এইডস নিয়ে আলোচনা করার জন্য বিশেষ কনফারেন্সের ব্যবস্থা করেছিল। মানুষের এই প্রচেষ্টা কি সাফল্য নিয়ে আসবে? কখন এইডসের এই মৃত্যুজনক অভিযানকে থামানো যাবে? (g০২ ১১/০৮)

[৫ পৃষ্ঠার বাক্স/চিত্র]

এইডসের ওষুধ নিভাইরাপিন ও দক্ষিণ আফ্রিকার উভয়সংকট

নিভাইরাপিন কী? সাংবাদিক নিকল ইটানোর মতানুসারে এটা হল, “রিট্রোভাইরাস নিবারক এক ওষুধ যেটার পরীক্ষা দেখায় যে, [মায়ের কাছ থেকে] সন্তানের মধ্যে এইডস ছড়িয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা অনেকটা হ্রাস করে।” একটি জার্মান ওষুধ কোম্পানি আগামী পাঁচ বছরের জন্য দক্ষিণ আফ্রিকাকে এই ওষুধটি বিনামূল্যে সরবরাহ করার প্রস্তাব দেয়। তবুও, ২০০১ সালের আগস্ট মাস পর্যন্ত সরকার এই প্রস্তাবটি গ্রহণ করেনি। কেন তা করা হয়নি?

পৃথিবীর যেকোনো দেশের তুলনায় দক্ষিণ আফ্রিকায় ৪৭ লক্ষ লোকের এইচআইভি পজিটিভ রয়েছে। লন্ডনের দি ইকনমিস্ট ২০০২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে রিপোর্ট করেছিল যে, দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট থাবো উমবেকি “এইচআইভির দ্বারা যে এইডস হয়, সেই সর্বসাধারণ মতবাদের প্রতি সন্দেহ প্রকাশ করেন” এবং “এই এইডস নিবারক ওষুধটির দাম, নিরাপত্তা ও উপকারিতা সম্বন্ধেও তার যথেষ্ট সন্দেহ আছে। তিনি এই ওষুধের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেননি কিন্তু দক্ষিণ আফ্রিকার ডাক্তারদের এই ওষুধ ব্যবহার করতে নিরুৎসাহিত করা হয়েছে।” কেন এটা একটা প্রধান চিন্তার বিষয় হয়ে উঠেছে? কারণ দক্ষিণ আফ্রিকায় প্রতি বছর হাজার হাজার শিশু এইচআইভি নিয়ে জন্মাচ্ছে এবং ২৫ শতাংশ গর্ভবতী মহিলা এই জীবাণু বহন করছে।

মতবাদের এই সংঘর্ষের ফলে আদালতে একটা মকদ্দমা পেশ করা হয়েছিল, যাতে করে নিভাইরাপিন বন্টনের জন্য সরকারের ওপর চাপ দেওয়া যেতে পারে। ২০০২ সালের এপ্রিল মাসে দক্ষিণ আফ্রিকার সাংবিধানিক আদালত তাদের রায় জানায়। দ্যা ওয়াশিংটন পোস্ট-এ লেখা রাভি নেসম্যানের কথানুসারে আদালত নির্দেশ দেয় যে, “সরকারের সেই সমস্ত স্বাস্থ্য কেন্দ্রে এই ওষুধ সরবরাহ করতে হবে, যাদের এটা প্রয়োগ করার ব্যবস্থা আছে।” দক্ষিণ আফ্রিকার সরকার দেশের ১৮টি জায়গায় এই ওষুধটি পরীক্ষা করার জন্য সরবরাহ করেছে আর এই নতুন আইন দেশের এইচআইভি পজিটিভ বহনকারী গর্ভবতী নারীদের কাছে একটা আশার কারণ হয়ে উঠেছে।

[৬ পৃষ্ঠার বাক্স/চিত্র]

এক চতুর জীবাণু কোষকে ফাঁদে ফেলে

কিছুক্ষণের জন্য মানুষের ইমিউনোডিফিশিয়ানসি ভাইরাসের (এইচআইভি) ছোট্ট জগতে প্রবেশ করুন। একজন বিজ্ঞানী মন্তব্য করেন: “বহু বছর ধরে ইলেকট্রন মাইক্রোস্কোপের দ্বারা ভাইরাসের বিভিন্ন অংশের পরীক্ষানিরীক্ষা করার পরও আমি এত ক্ষুদ্র কোনো কিছুর মধ্যে গঠনশৈলীর সূক্ষ্মতা ও জটিলতা দেখে এখনও অবাক ও উত্তেজিত হয়ে যাই।”

ভাইরাস একটা ব্যাকটেরিয়ামের থেকেও ছোট আর এই ব্যাকটেরিয়াম মানুষের সাধারণ কোষের থেকে অনেক অনেক ছোট। একজন বিশেষজ্ঞের মতানুসারে, এইচআইভি এতই ছোট যে, “২৩ কোটি [এইচআইভির কণিকা] ইংরেজি যতিচিহ্নের (.) মধ্যে ঢুকিয়ে দেওয়া যেতে পারে।” ভাইরাসের পরিমাণ কখনও বাড়তে পারে না যতক্ষণ না এটা প্রধান কোষের মধ্যে অনুপ্রবেশ করে এবং কোষগুলোকে নিজের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসে।

যখন এইচআইভি মানুষের দেহে আক্রমণ করে, তখন এটাকে দেহের প্রতিরোধ ব্যবস্থার সঙ্গে প্রচণ্ড লড়াই করতে হয়। * দেহের প্রতিরোধক ব্যবস্থা গঠিত হয় শ্বেত রক্তকণিকার দ্বারা, যা হাড়ের মজ্জা থেকে উৎপাদিত হয়। শ্বেত রক্তকণিকার মধ্যে থাকে দুটি প্রধান ধরনের লিমফোসাইট যাদের বলা হয় টি কোষ ও বি কোষ। অন্যান্য ধরনের শ্বেত রক্তকণিকাও থাকে, যাদের বলা হয় ফ্যাগোসাইটস অর্থাৎ “কোষ খাদক।”

বিভিন্ন ধরনের টি কোষের নির্দিষ্ট কাজ রয়েছে। যেগুলোকে সাহায্যকারী টি কোষ বলা হয়, সেগুলো দেহের প্রতিরোধ ব্যবস্থার ক্ষেত্রে একটা মুখ্য ভূমিকা পালন করে। সাহায্যকারী টি কোষগুলো দেহের মধ্যে বহিরাগত কোনো আক্রমণকারীকে শনাক্ত করতে পারে এবং সেইসব কোষের উৎপাদনের নির্দেশ দিয়ে থাকে যেগুলো সেই শত্রুকে আক্রমণ ও ধ্বংস করতে পারে। আক্রমণের সময় এইচআইভির প্রধান লক্ষ্যবস্তু হয়ে ওঠে এই সাহায্যকারী টি কোষগুলো। ধ্বংসকারী টি কোষগুলো সেই দেহ কোষগুলোকে নষ্ট করার জন্য সক্রিয় হয়ে ওঠে, যেগুলো দেহের মধ্যে আক্রমণ করে থাকে। বি কোষগুলো আ্যন্টিবডি উৎপাদন করে, যেগুলো সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য বহাল থাকে।

এক চতুর পরিকল্পনা

এইচআইভিকে রিট্রোভাইরাস হিসেবে গণ্য করা হয়। এইচআইভির জেনিটিক প্রতিলিপি, আরএনএ-র (রাইবোনিউক্লিক আ্যসিড) আকারে থাকে, ডিএনএ-র (ডি-অক্সিরাইবোনিউক্লিক আ্যসিড) আকারে নয়। রিট্রোভাইরাসের একটা নির্দিষ্ট শ্রেণীর অন্তর্ভুক্ত হল এইচআইভি, যেটাকে বলা হয় লেন্টিভাইরাসেস কারণ এটা রোগের গুরুতর লক্ষণগুলো প্রকাশিত হওয়ার অনেক আগে থেকে দেহের মধ্যে থাকতে পারে।

প্রধান কোষের মধ্যে এইচআইভি প্রবেশ করতে পারলে, সেটা কোষের প্রক্রিয়াকে এমনভাবে ব্যবহার করতে পারে যাতে নিজ লক্ষ্য সম্পন্ন হয়। এটা এইচআইভির অনেক প্রতিলিপি প্রস্তুত করার জন্য কোষের ডিএনএ-কে “পুনরায় প্রক্রিয়াকরণ করে।” কিন্তু তা করার আগে এইচআইভিকে একটা ভিন্ন “ভাষা” ব্যবহার করতে হয়। এটার নিজস্ব আরএনএ-কে ডিএনএ-তে পরিবর্তিত করতে হয় যাতে প্রধান কোষের প্রক্রিয়াটি সেটা পড়তে ও বুঝতে পারে। এটা সম্পাদন করার জন্য এইচআইভি একধরনের এনজাইম ব্যবহার করে, যাকে বলা হয় বিপরীত ট্রান্সস্কৃপটেস। হাজার হাজার এইচআইভির নতুন কণিকা উৎপাদন করার পর এক সময় কোষটি মারা যায়। আর এই নতুন উৎপাদিত কণিকাগুলো অন্যান্য কোষগুলোকে আক্রমণ করে।

একবার যখন সাহায্যকারী টি কোষগুলোর সংখ্যা লক্ষণীয়ভাবে হ্রাস পেতে শুরু করে, তখন অন্যান্য শক্তিগুলো আক্রমণের ভয়ে ভীত না হয়েই দেহের ওপর কর্তৃত্ব বিস্তার করে। দেহ তখন সমস্ত রকম রোগ ও সংক্রমণের দ্বারা সংক্রামিত হয়। সংক্রামিত ব্যক্তিবিশেষ তখন পুরোপুরি এইডসের কবলে এসে পড়ে। আর এভাবে এইচআইভি সম্পূর্ণ প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে দুর্বল করে দিতে সফল হয়।

এটা হচ্ছে একটা সরল ব্যাখ্যা। অবশ্যই মনে রাখতে হবে যে, গবেষকরা এখনও প্রতিরোধ ব্যবস্থা এবং কীভাবে এইচআইভি কাজ করে সেই সম্বন্ধে অনেক কিছু জানে না।

দুই দশক ধরে, এই ছোট্ট ভাইরাসটি পৃথিবীব্যাপী চিকিৎসা সংক্রান্ত প্রধান পর্যবেক্ষকদের মানসিক ও দৈহিক ক্ষমতাকে ব্যস্ত রেখেছে আর এর ফলে প্রচুর অর্থ ব্যয় হয়েছে। তাই এইচআইভি সম্বন্ধে অনেক কিছু জানা গেছে। ডা. সেরউইন বি. নোল্যান্ড নামে একজন সার্জন কয়েক বছর আগে মন্তব্য করেছিলেন: “যে-পরিমাণ তথ্য . . . মানুষের ইমিউনোডিফিশিয়ানসি ভাইরাস সম্বন্ধে পাওয়া গেছে এবং এর মারাত্মক আক্রমণকে প্রতিরোধ করার জন্য যতটা প্রগতি ঘটেছে, তা অবশ্যই বিস্ময়কর।”

তবুও, এইডসের এই মৃত্যুজনক অভিযান আতঙ্কময় গতিতে এগিয়েই চলেছে।

[পাদটীকা]

^ ২০০১ সালের ৮ই ফেব্রুয়ারি সচেতন থাক! (ইংরেজি) পত্রিকার ১৩-১৫ পৃষ্ঠা দেখুন।

[চিত্র]

এইচআইভি, প্রতিরোধ ব্যবস্থার লিম্ফোসাইট কোষগুলোকে আক্রমণ করে এবং এর প্রক্রিয়াকে এমনভাবে বদলে দেয় যাতে এইচআইভি উৎপাদিত হতে পারে

[সৌজন্যে]

CDC, Atlanta, Ga.

[৭ পৃষ্ঠার চিত্র]

হাজার হাজার যুবক-যুবতী বাইবেলের মানগুলো মেনে চলছে