এক অদ্বিতীয় পুনর্মিলন ৩০ বছর পর
এক অদ্বিতীয় পুনর্মিলন ৩০ বছর পর
উনিশশ সাতষট্টি সালে দুজন যুবকের অপ্রত্যাশিতভাবে দেখা হয়ে যায়। তাদের দুজনকে যুক্তরাষ্ট্রের মিশিগান টেকনিক্যাল ইউনিভারসিটিতে রুমমেট হিসেবে নিয়োগ করা হয়েছিল। ওহাইওর লিমা থেকে আসা ডেনিস শিট্সের বয়স তখন ১৮ বছর ও তিনি বনবিদ্যার প্রথম বর্ষের ছাত্র ছিলেন। কুড়ি বছর বয়সী মার্ক রুজ নিউ ইয়র্কের বাফেলো থেকে এসেছিলেন। তিনি সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র ছিলেন।
সেই সময় তাদের বন্ধুত্ব হয়তো সংক্ষিপ্ত ও অস্থায়ী বলে মনে হয়েছিল। দুজনের মধ্যে কেউই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা চালিয়ে যাননি; যে যার মতো নিজের পথে চলে গিয়েছিলেন। ত্রিশ বছরেরও বেশি সময় কেটে গেছে। এরপর, একদিন ডমিনিকান রিপাবলিকে আরেকবার এই দুজন ব্যক্তি মুখোমুখি হন। হঠাৎ করেই এই আশ্চর্যজনক পুনর্মিলন ঘটে। কিন্তু, এর সঙ্গে আরেকটা বিষয়ও জড়িত ছিল। সেটা কী? উত্তর খুঁজে পাওয়ার জন্য, আসুন আমরা তাদের জীবনের আলাদা আলাদা সূত্রগুলোকে দেখি।
ডেনিস যুদ্ধে যান
ডেনিস তার কলেজের প্রথম বর্ষের পর বাড়ি ফিরে আসেন। এরপর ১৯৬৭ সালে তাকে যুক্তরাষ্ট্রের সেনাবাহিনীতে ভরতি করা হয় এবং ১৯৬৮ সালের জুন মাসে ভিয়েতনামে পাঠানো হয়। সেখানে তিনি স্বচক্ষে যুদ্ধের ভয়াবহতা দেখেন। ১৯৬৯ সালে তার দায়িত্বভার শেষ হয়ে যাওয়ার পর, তিনি যুক্তরাষ্ট্রে ফিরে যান এবং শেষে ওহাইওর একটা বড় কোম্পানিতে চাকরি পান। কিন্তু, তিনি তাতে সন্তুষ্ট ছিলেন না।
“ছেলেবেলা থেকেই আমার স্বপ্ন ছিল আলাস্কায় গিয়ে সেখানেই স্থায়ীভাবে বাস করা,” ডেনিস বলেন। তাই ১৯৭১ সালে তিনি ও তার হাইস্কুল জীবনের এক বন্ধু সেই স্বপ্ন বাস্তবায়িত করার জন্য যাত্রা শুরু করেন। কিন্তু, সেখানে স্থায়ীভাবে বাস করার বদলে তিনি একটার পর একটা অল্প বেতনের চাকরি করেন। কিছু সময়ের জন্য তিনি এমনকি তাঁবুতে বাস করেন এবং অগ্নি নিয়ন্ত্রণের কাজ করেন। তিনি লম্বা দাড়ি ও চুল রাখতে থাকেন এবং মারিজুয়ানা সেবন করতে শুরু করেন।
১৯৭২ সালে ডেনিস লুইজিয়ানার নিউ অরলিয়ানসে মার্ডি গ্রাস উদ্যাপনের জন্য আ্যংকরেজ ছেড়ে চলে যান। এরপর তিনি আরকানসাসের জঙ্গলে একটা ছোট্ট কুটির নির্মাণ করেন। সেখানে তিনি ঘরবাড়ি নির্মাণের ও ঢালাইয়ের কাজ করতেন। ১৯৭৩ সালের জুন মাসে জীবনের কোনো উদ্দেশ্য খুঁজে পান কি না, তা দেখার জন্য ডেনিস পথ-চলতি গাড়িতে পুরো দেশ বিনা ভাড়ায় ভ্রমণ করেন।
যুদ্ধবিরোধী আন্দোলনে মার্ক
ডেনিস বিশ্ববিদ্যালয় ছেড়ে চলে যাবার পরেও মার্ক কয়েকটা সেমিস্টার পর্যন্ত সেখানে ছিলেন কিন্তু এরপর সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন যে, তিনি আর ওই ব্যবস্থার অংশ হবেন না, যা যুদ্ধকে সমর্থন করে। তাই তিনি বাফেলোতে ফিরে যান, যেখানে একটা ইস্পাত কারখানায় একজন ফোরম্যান হিসেবে কিছুদিন কাজ করেন। কিন্তু, যুদ্ধের কারণে অসন্তুষ্ট হয়ে তিনি তার চাকরি ছেড়ে দেন, একটা মোটরসাইকেল কিনেন এবং ক্যালিফোর্নিয়ার সান ফ্রান্সিসকো শহর জুড়ে ভ্রমণ করতে থাকেন। যদিও তারা দুজনে জানত না কিন্তু কিছু সময়ের জন্য ডেনিস ও মার্ক তখন সান ফ্রান্সিসকোতেই ছিল।
ডেনিসের মতো মার্কও লম্বা চুল ও দাড়ি রাখেন এবং মারিজুয়ানা সেবন করতে শুরু করেন। কিন্তু মার্ক যুদ্ধবিরোধী আন্দোলনে পুরোপুরি জড়িয়ে পড়েছিলেন, প্রতিবাদ সভা ও
মিছিলে যোগ দিচ্ছিলেন। এফবিআই এর লোকেরা তাকে জোর করে সামরিক বাহিনীতে বহাল করার জন্য খুঁজছিল, তাই কয়েক বছর গোয়েন্দাদের এড়িয়ে চলার জন্য তিনি ছদ্ম নাম ধারণ করেন। তিনি সান ফ্রান্সিসকোতে হিপ্পিদের মতো জীবনযাপন করতেন। সেখানে ১৯৭০ সালে যিহোবার সাক্ষিদের দুজন তার দরজায় আসে।মার্ক ব্যাখ্যা করেন: “তারা নিশ্চয়ই ভেবেছিল যে, আমি কিছুটা আগ্রহ দেখিয়েছি আর তাই তারা আবার ফিরে এসেছিল। আমি ঘরে ছিলাম না কিন্তু তারা একটা সবুজ রঙের বাইবেল ও তিনটি বই রেখে গিয়েছিল।” কিন্তু মার্ক যেহেতু রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে অত্যধিক জড়িত ছিলেন, তাই ওই বইগুলো পড়ার জন্য তার সময় ছিল না। এ ছাড়াও, এফবিআই তার ওপর কড়া নজর রাখছিল। তাই আরেকটা নাম নিয়ে তিনি ওয়াশিংটন ডি.সি.-তে চলে যান। সেখানে তার বান্ধবী ক্যাথি ইয়্যানিকিভিসও তার সঙ্গে মিলিত হন, যার সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ে তার পরিচয় হয়েছিল।
শেষ পর্যন্ত ১৯৭১ সালে, এফবিআই মার্ককে ধরে ফেলে। ওয়াশিংটন ডি.সি. থেকে নিউ ইয়র্কের বিমানে করে দুজন এফবিআই এর লোক তার রক্ষীরূপে সঙ্গে গিয়েছিল এবং নিশ্চিতভাবে তাকে কানাডার টরেন্টোতেই নিয়ে যায়। স্পষ্টতই, এফবিআই তাকে দেশের আইনশৃঙ্খলার জন্য বিপদজনক বলে মনে করেনি; তারা শুধু চেয়েছিল যে তিনি যেন দেশ ছেড়ে চলে যান। এর পরের বছর ক্যাথি ও তিনি বিয়ে করেন এবং তারা কানাডার ব্রিটিশ কলম্বিয়ার গাবরিয়োলা দ্বীপে চলে যায়। তারা আসলে সমাজ থেকে পালিয়ে যেতে চেয়েছিল কিন্তু অনুভব করেছিল যে, জীবনের নিশ্চয়ই আরও অনেক অর্থ আছে।
তারা সাক্ষি হয়
আপনার নিশ্চয় মনে আছে যে, ডেনিস জীবনের উদ্দেশ্য খোঁজার জন্য পুরো দেশে ঘুরছিলেন। এই যাত্রায় তিনি মনটানায় গিয়েছিলেন, যেখানে তিনি শিনুকের বাইরে একটা চাকরি পেয়েছিলেন, যা ছিল ফসল কাটার সময় একজন কৃষককে সাহায্য করা। ওই ব্যক্তির স্ত্রী ও মেয়ে যিহোবার সাক্ষি ছিল। ডেনিসকে একটা সচেতন থাক! পত্রিকা পড়ার জন্য দেওয়া হয়েছিল। খুব অল্প সময়ের মধ্যেই তিনি নিশ্চিত হয়ে গিয়েছিলেন যে, সাক্ষিরা সত্য ধর্ম পালন করে।
তার সঙ্গে একটা বাইবেল নিয়ে ডেনিস খামার ছেড়ে চলে যান এবং মনটানার কালিসপেলে আসেন। সেখানে তিনি যিহোবার সাক্ষিদের সভায় প্রথমবারের মতো যোগ দিয়েছিলেন। সেই সভাতে তিনি বাইবেল অধ্যয়নের জন্য অনুরোধ জানান। এর অল্প কিছুদিন পরেই তিনি তার চুল কাটান এবং দাড়ি কামিয়ে ফেলেন। ১৯৭৪ সালের জানুয়ারি মাসে তিনি প্রথমবারের মতো প্রচারে বের হন ও ১৯৭৪ সালের ৩রা মার্চ মনটানার পলসন শহরে একটা জলাশয়ে বাপ্তিস্ম নেন।
এরই মধ্যে গাবরিয়োলা দ্বীপে বসবাসরত মার্ক ও ক্যাথি সিদ্ধান্ত নেয় যে, যেহেতু তাদের হাতে সময় আছে তাই তারা বাইবেল পরীক্ষা করবে। তারা কিং জেমস ভারসন পড়তে শুরু করেছিল কিন্তু লক্ষ করে যে, পুরনো ইংরেজি ভাষা বোঝা বেশ কঠিন। তখন মার্কের মনে পড়ে যে, সাক্ষিরা তাকে কয়েক বছর আগে যে-বাইবেল ও বইগুলো দিয়েছিল সেগুলো এখনও তার কাছে আছে। যে সত্য অনন্ত জীবনে লইয়া যায় এবং বাইবেল কি সত্যিই ঈশ্বরের বাক্য? (ইংরেজি) বইগুলোর সাহায্যে তারা বাইবেল পড়ে। মার্ক ও ক্যাথি যা শিখেছিল, তা তাদের ওপর গভীর ছাপ ফেলেছিল।
মার্ক ব্যাখ্যা করেন: “আমার মধ্যে বিশেষ করে সেই বিষয়টা ছাপ ফেলেছিল যে, সত্য বইটি কিছু খ্রিস্টানের বিষয়ে বলে যারা যেকোনো পরিস্থিতিই আসুক না কেন, কখনও যুদ্ধে যাবে না। আমি বুঝতে পেরেছিলাম যে, ওই ব্যক্তিরাই সত্য খ্রিস্টধর্ম পালন করছে।” এর কিছু পরেই মার্ক ও ক্যাথি, ক্যাথির পরিবারের সঙ্গে মিলিত হওয়ার জন্য মিশিগানের হোটোনে ফিরে আসে—যদিও গ্রেপ্তার হওয়ার ঝুঁকি তাদের ছিল। সেখানে তখনও হিপ্পিদের মতো চেহারা নিয়ে তারা সাক্ষিদের সভায় যোগ দেয়। তারা বাইবেল অধ্যয়ন করতে রাজি হয় এবং মিশিগানে থাকার মাসটিতে তারা অধ্যয়ন করত।
গাবরিয়োলা দ্বীপে ফিরে আসার পর তারা ব্রিটিশ কলম্বিয়ার নানাইমোর রাস্তায় একজন সাক্ষি বোনের দেখা পায় এবং বলে যে, তারা বাইবেল অধ্যয়ন করতে চায়। ঠিক সেদিনই একটা গাড়ি ভরতি করে ফেরি পার হয়ে সাক্ষিদের দল তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে আসে এবং বাইবেল অধ্যয়ন শুরু হয়। তিন মাস পর, মার্ক ও ক্যাথি প্রচার কাজ শুরু করে। এর তিন মাস পর ১৯৭৪ সালের ১০ই মার্চ দুজনেই বাপ্তিস্ম নেয়। ডেনিস বাপ্তিস্ম নেওয়ার এক সপ্তাহ পর!
ডেনিস পূর্ণ-সময়ের পরিচর্যায়
ডেনিস ১৯৭৪ সালের সেপ্টেম্বর মাসে একজন অগ্রগামী বা পূর্ণ-সময়ের পরিচারক হয়েছিলেন। তিনি বলেন: “আমি অগ্রগামীর কাজ করে আনন্দিত ছিলাম কিন্তু আমার পরিচর্যাকে আরও বাড়াতে চেয়েছিলাম; তাই ১৯৭৫ সালের জুলাই মাসে আমি নিউ ইয়র্কের ব্রুকলিনে যিহোবার সাক্ষিদের বিশ্ব প্রধান কার্যালয়ে কাজ করার জন্য আবেদন জানিয়েছিলাম। সেই বছর ডিসেম্বর মাসে আমাকে সেখানে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল।”
ডেনিসকে সবচেয়ে প্রথমে যে-কার্যভার দেওয়া হয়েছিল তা ছিল, পূর্বের টাওয়ারস্ হোটেলকে প্রধান কার্যালয়ের কর্মীদের জন্য বাসভবনে পরিণত করা। তিনি সেখানে টাইল ক্রু-র তত্ত্বাবধায়ক
হিসেবে বেশ কিছু বছর কাজ করেছিলেন। এরপর বিয়ে করার আকাঙ্ক্ষায় তিনি ক্যালিফোর্নিয়াতে চলে গিয়েছিলেন। ১৯৮৪ সালে ক্যাথিড্রাল সিটি মণ্ডলীতে একজন প্রাচীন হিসেবে সেবা করার সময় তিনি ক্যাথি এন্স নামে একজন অগ্রগামীকে বিয়ে করেন।ডেনিস ও ক্যাথি ঈশ্বরের রাজ্যের কাজকে তাদের জীবনে প্রথম স্থানে রাখার জন্য তাদের জীবনকে সাদাসিধে রাখার জন্য দৃঢ়সংকল্প ছিল। তাই, ডেনিস দক্ষিণ ক্যালিফোর্নিয়া নির্মাণ বাণিজ্যে প্রায়ই প্রচুর টাকা কামানোর বিভিন্ন সুযোগ ছেড়ে দিয়েছিল। ১৯৮৮ সালে তিনি এবং ক্যাথি যিহোবার সাক্ষিদের আন্তর্জাতিক নির্মাণ কাজে সাহায্য করার জন্য আবেদন করেছিল। সেই বছর ডিসেম্বর মাসে তারা আর্জেন্টিনার বুয়েন্স আয়ার্সে শাখা নির্মাণ প্রকল্পে কাজ করার কার্যভার পেয়েছিল।
১৯৮৯ সালে, ডেনিস ও ক্যাথিকে যিহোবার সাক্ষিদের নির্মাণ কাজে আরও স্থায়ীভাবে কাজ করার জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। পূর্ণ-সময়ের পরিচর্যার এই বিশেষ ক্ষেত্রে তারা সুরিনাম ও কলম্বিয়ায় দুবার কাজ করেছে। তারা ইকুয়েডর ও মেক্সিকোর শাখা নির্মাণ প্রকল্পে ও সেইসঙ্গে ডমিনিকান রিপাবলিকে একই প্রকল্পে কাজ করেছিল।
মার্ক পূর্ণ-সময় পরিচর্যায়
১৯৭৬ সালে মার্ক ও সেইসঙ্গে আরও হাজার হাজার আমেরিকার যুবক যারা সেনবাহিনীতে ভরতি হওয়া থেকে বাঁচার জন্য কানাডায় চলে এসেছিল, যুক্তরাষ্ট্রের সরকার তাদের রাজক্ষমা অনুমোদন করেছিল। তিনি ও তার স্ত্রী ক্যাথিও পরিচর্যায় বেশি সময় দেওয়ার জন্য তাদের জীবনকে সাদাসিধে রাখতে চেয়েছিল। তাই মার্ক সমীক্ষক হিসেবে কাজ করেছিলেন এবং তিনি ও ক্যাথি তাদের বাপ্তিস্মের আগে যত ঋণ করেছিলেন ধীরে ধীরে সব পরিশোধ করতে থাকেন।
১৯৭৮ সালে কানাডার সাক্ষিরা যখন ওন্টারিওর টরেন্টোর কাছে একটা নতুন শাখা অফিস বানানোর পরিকল্পনা করছিল, তখন মার্ক ও ক্যাথি সেই কাজে অংশ নেওয়ার জন্য প্রস্তুত ছিল। যেহেতু মার্কের সমীক্ষকের কাজে অভিজ্ঞতা ছিল, তাই তাকে নির্মাণ কাজে যোগ দেওয়ার জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। ১৯৮১ সালের জুন মাসে এটা সম্পূর্ণ না হওয়া পর্যন্ত তারা জর্জটাউন প্রকল্পে কাজ করেছিল। পরে তারা আবার ব্রিটিশ কলম্বিয়ায় ফিরে গিয়েছিল এবং পরের চার বছর সেখানে যিহোবার সাক্ষিদের একটা এসেম্বলি হল নির্মাণে সাহায্য করেছিল। যখন এটা সম্পূর্ণ হয় তখন তাদের কানাডা শাখা অফিসে সম্প্রসারণের কাজে অংশ নেওয়ার জন্য আবার আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল।
১৯৮৬ সালে জর্জটাউনে কয়েক মাস থাকার পর, মার্ক ও ক্যাথিকে কানাডা শাখা অফিসের নিয়মিত সদস্য হিসেবে থাকার জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়। তখন থেকে তারা সেখানকার সদস্য হিসেবে সেবা করছে এবং অন্যান্য অনেক দেশে নির্মাণ কাজে অংশ নেওয়ার জন্য আরও সুযোগে অংশগ্রহণ করেছে। সমীক্ষার কাজে মার্কের অভিজ্ঞতার কারণে তাকে শাখার বিল্ডিংগুলো এবং দক্ষিণ ও মধ্য আমেরিকা এবং ক্যারিবিয়ান দ্বীপপুঞ্জের যিহোবার সাক্ষিদের এসেম্বলি হলগুলোতে সমীক্ষার কাজে ব্যবহার করতে শুরু করা হয়।
বেশ কয়েক বছর ধরে তিনি ও ক্যাথি ভেনিজুয়েলা, নিকারাগুয়া, হাইতি, গায়ানা, বারবাডোস, বাহামাস, ডমিনিকা, যুক্তরাষ্ট্র (ফ্লোরিডা) এবং ডমিনিকান রিপাবলিকে সেবা করেছেন। এই বিশেষ ধরনের পূর্ণ-সময়ের পরিচর্যা মার্ককে আরেকবার ডেনিসের সঙ্গে যোগাযোগ করার পথ খুলে দিয়েছিল।
ডমিনিকান রিপাবলিকে পুনর্মিলন
মার্ক ও ডেনিস অজান্তেই ডমিনিকান রিপাবলিকে একই প্রকল্পে কাজ করছিল। একদিন সানটো ডোমিঙ্গোতে যিহোবার সাক্ষিদের শাখা অফিসের বিল্ডিংয়ে তাদের দুজনের দেখা হয়। আপনি নিশ্চয়ই কল্পনা করতে পারবেন যে, তারা আবার একে অপরকে দেখতে পেয়ে কতটা আনন্দিত হয়েছিল। শত হলেও, তাদের দুজনের বয়সই ৩৩ বছর বেড়ে গেছে এবং তাদের দুজনেরই বলার জন্য অনেক কথা জমে আছে। অত্যন্ত উৎফুল্ল
হয়ে তারা দুজনেই একে অন্যকে অনেক কথা বলেছিল, যা আপনি ওপরেই পড়েছেন। কিন্তু তাদের কাছে যেটি সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য ছিল ও সেইসঙ্গে অন্যান্য সকলের সঙ্গে তারা যে-অভিজ্ঞতাগুলো বন্টন করেছিল তা হল, তাদের দুজনের জীবনেই বেশ কয়েকটা একইরকম অভিজ্ঞতা হয়েছিল।দুজনেই হিপ্পিদের জীবন বেছে নিয়েছিল এবং জীবনের উদ্বেগগুলো সহ আধুনিক বস্তুবাদী জীবনযাপন থেকে মুক্তি পাওয়ার উদ্দেশ্যে দূরবর্তী এলাকাগুলোতে চলে গিয়েছিল। ডেনিস বিয়ে করেছিলেন ক্যাথি নামের এক মেয়েকে; আর মার্ক যাকে বিয়ে করেছিলেন তার নামও ছিল ক্যাথি। দুজনেই যিহোবার সাক্ষিদের প্রথম সভায় যোগ দিয়ে বাইবেল অধ্যয়ন করতে রাজি হয়েছিল। দুজনেই ১৯৭৪ সালের মার্চ মাসে বাপ্তিস্ম নিয়েছিল। দুজনেই যিহোবার সাক্ষিদের শাখা পরিবারের সদস্য হয়েছিল—ডেনিস যুক্তরাষ্ট্রে আর মার্ক কানাডায়। দুজনেই আধ্যাত্মিক লক্ষ্যগুলোকে অনুধাবন করার জন্য জীবনকে সাদাসিধে রাখার জন্য প্রচেষ্টা করেছিল। (মথি ৬:২২) দুজনেই আন্তর্জাতিক নির্মাণ কাজে অংশ নিয়েছিল এবং বিভিন্ন দেশ থেকে কার্যভার লাভ করেছিল। ডমিনিকান রিপাবলিকে অপ্রত্যাশিতভাবে তাদের দেখা হয়ে যাওয়ার আগে পর্যন্ত তারা কেউই আগের কোনো বন্ধুদের দেখা পায়নি, যারা বাইবেলের সত্যকে গ্রহণ করেছিল।
মার্ক ও ডেনিস কি এই উল্লেখযোগ্য অপ্রত্যাশিত ঘটনাগুলোকে ভাগ্য বলে মেনে নেয়? না। তারা স্বীকার করে যেমন বাইবেল বলে, “[আমাদের] সকলের প্রতি কাল ও দৈব ঘটে”—মাঝে মাঝে অত্যন্ত আশ্চর্যজনকভাবে। (উপদেশক ৯:১১) কিন্তু, তারা এও স্বীকার করে যে, অন্য আরেকটা বিষয় তাদের পুনর্মিলনে ভূমিকা রেখেছিল: জীবনের উদ্দেশ্য খোঁজার জন্য পরস্পরের অনুসন্ধান এবং যিহোবা ঈশ্বরের প্রতি তাদের ভালবাসা।
ডেনিস ও মার্কের জীবন বৃত্তান্ত এও তুলে ধরে যে, সমস্ত সৎহৃদয়ের লোক যারা বাইবেলের সত্য শিখতে চায়, তাদের সকলের মধ্যে একইরকম কিছু বিষয় রয়েছে। ডেনিস মন্তব্য করে: “আমি ও মার্ক যে-অভিজ্ঞতা লাভ করেছি তা দেখায় যে, যিহোবা মানুষের পরিস্থিতি সম্বন্ধে অবগত এবং যখন তাদের হৃদয় সঠিক বিষয়ের প্রতি নিরূপিত হয়, তখন তিনি তাঁর কাছে তাদের আকর্ষণ করেন।”—২ বংশাবলি ১৬:৯; যোহন ৬:৪৪; প্রেরিত ১৩:৪৮.
মার্ক আরও বলেন: “আমাদের অভিজ্ঞতা আমাদের উপলব্ধি করতে শিখিয়েছে যে, যখন একজন ব্যক্তি যিহোবার মানগুলোর সঙ্গে মানিয়ে নেয়, তাঁর কাছে নিজের জীবন উৎসর্গ করে এবং নিজেকে বিলিয়ে দেয়, তখন যিহোবা তাঁর লোকেদের উপকারের জন্য সত্য উপাসনাকে এগিয়ে নিয়ে যেতে সেই ব্যক্তির মেধা ও ক্ষমতাকে ব্যবহার করতে পারেন।”—ইফিষীয় ৪:৮.
এই অভিজ্ঞতা এও দেখায় যে, যিহোবা ঈশ্বর তাঁর লোকেদের সর্বান্তঃকরণ সেবাকে আশীর্বাদ করেন। ডেনিস ও মার্ক দুজনেই নিজেদের আশীর্বাদপ্রাপ্ত বলে মনে করে। ডেনিস বলে: “বিশেষ পূর্ণ-সময়ের পরিচর্যায় রাজ্যের কাজ করা এক বিশেষ সুযোগ। এটা আমাদের সারা পৃথিবীর খ্রিস্টান ভাইবোনদের সঙ্গে কাজ করার সময় উৎসাহ আদানপ্রদান উপভোগ করার সুযোগ দিয়েছে।”
মার্ক আরও বলেন: “যারা রাজ্যকে প্রথম স্থানে রাখে তাদের যিহোবা অবশ্যই আশীর্বাদ করেন। কানাডা শাখা পরিবারের সদস্য হিসেবে সেবা করাকে ও আন্তর্জাতিক নির্মাণ কাজে অংশ নিতে পারাকে আমি এক বিশেষ আশীর্বাদ হিসেবে দেখি।”
এক অদ্বিতীয় পুনর্মিলন নয় কি? হ্যাঁ, কারণ মার্ক বলেন: “একে অন্যের সঙ্গে দেখা হওয়াটা কেন আমাদের দুজনের কাছেই এত রোমাঞ্চকর ছিল তার প্রকৃত কারণ হল, আমরা দুজনেই অদ্বিতীয় ঈশ্বর যিহোবাকে জানতে, ভালবাসতে ও সেবা করতে শিখেছি।” (g০২ ১০/২২)
[১৭ পৃষ্ঠার চিত্র]
ডেনিস, ১৯৬৬ সালে
[১৭ পৃষ্ঠার চিত্র]
মার্ক, ১৯৬৪ সালে
[১৯ পৃষ্ঠার চিত্র]
দক্ষিণ ডাকোটায় ডেনিস, ১৯৭৪ সালে
[১৯ পৃষ্ঠার চিত্র]
মার্ক ওন্টারিওতে, ১৯৭১ সালে
[২০ পৃষ্ঠার চিত্র]
সস্ত্রীক ডেনিস ও মার্ক, ২০০১ সালে তাদের অপ্রত্যাশিত পুনর্মিলনের অল্পদিন পরে