সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

কেন এই পুনরুদয়?

কেন এই পুনরুদয়?

কেন এই পুনরুদয়?

প্রায় চল্লিশ বছর আগে মনে হয়েছিল যেন, পৃথিবীর বৃহৎ এলাকা থেকে ম্যালেরিয়া, পীতজ্বর এবং ডেঙ্গু জ্বরের মতো পোকামাকড় বাহিত সাধারণ রোগব্যাধিকে প্রায় নির্মূল করা গেছে। কিন্তু, এরপর অপ্রত্যাশিত কিছু ঘটেছিল—পোকামাকড় বাহিত রোগব্যাধি পুনরায় দেখা দিতে শুরু করে।

কেন? একটা কারণ হল যে, কিছু পোকামাকড় এবং এদের দ্বারা বাহিত জীবাণু, এদেরকে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য যে-কীটনাশক এবং ওষুধ ব্যবহার করা হয়, সেগুলোর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে তুলেছে। অভিযোজনের এই স্বাভাবিক প্রক্রিয়া উন্নতিতে সহায়তা করেছে আর সেটা শুধু অতিরিক্ত কীটনাশক ব্যবহারের কারণেই নয় কিন্তু সেইসঙ্গে ওষুধের অপব্যহারের ফলেও হয়েছে। মশা (ইংরেজি) বইটি বলে যে, “অত্যন্ত দরিদ্র পরিবারগুলোতে লোকেরা যে-ওষুধ পেয়ে থাকে, সেটা থেকে তারা শুধুমাত্র তাদের রোগের লক্ষণগুলো থেকে মুক্তি পাওয়ার মতো সামান্য পরিমাণ ব্যবহার করে এবং এরপর বাকিটুকু পরবর্তী অসুস্থতার জন্য মজুত করে রাখে।” এইরকম অসম্পূর্ণ আরোগ্যের মধ্যে শক্তিশালী জীবাণু একজন ব্যক্তির শরীরে ওষুধ-প্রতিরোধী বংশধরের এক নতুন প্রজন্ম উৎপন্ন করার জন্য বেঁচে থাকতে পারে।

জলবায়ুর পরিবর্তন

পোকামাকড় বাহিত রোগ্যব্যাধি পুনরুদয় হওয়ার মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল পরিবর্তন—প্রকৃতিতে এবং সমাজে। প্রাসঙ্গিক একটা উদাহরণ হল, বিশ্বব্যাপী জলবায়ুর পরিবর্তন। কিছু বিজ্ঞানী মনে করে যে, বর্তমানের ঠাণ্ডা জলবায়ুর অঞ্চলগুলোতে রোগবহনকারী পোকামাকড়ের পরিধি বৃদ্ধি পাওয়ার পিছনে রয়েছে বিশ্বব্যাপী উষ্ণতর পরিবেশ। কিছু প্রমাণ পাওয়া গিয়েছে যে, ইতিমধ্যেই হয়তো তা হয়েছে। হারভার্ড মেডিক্যাল স্কুলের, সেন্টার ফর হেলথ্‌ আ্যন্ড দ্যা গ্লোবাল এনভাইরোনমেন্ট এর ডা. পল এপস্টাইন বলেন: “পোকামাকড় এবং পোকামাকড় বাহিত রোগব্যাধি (যেগুলোর অন্তর্ভুক্ত ম্যালেরিয়া এবং ডেঙ্গু জ্বর) উভয়ই বর্তমানে আফ্রিকা, এশিয়া এবং ল্যাটিন আমেরিকার উচ্চভূমিতেও রয়েছে বলে রিপোর্ট করা হয়েছে।” কস্টা রিকায় ডেঙ্গু জ্বর পার্বত্য অঞ্চলগুলোকেও ছাড়িয়ে গেছে, যেখানে এর আগে পর্যন্ত এটা প্রশান্ত মহাসাগরীয় উপকূলে সীমাবদ্ধ ছিল আর তা এখন পুরো দেশে ছড়িয়ে পড়েছে।

কিন্তু, উষ্ণ আবহাওয়া আরও বেশি কিছু করতে পারে। কিছু কিছু এলাকায় এটা নদীকে জলভর্তি ডোবাতে পরিণত করেছে আবার অন্য জায়গায় এটা এত বৃষ্টি এবং বন্যা ঘটিয়েছে, যা জলাবদ্ধতার সৃষ্টি করেছে। উভয় ক্ষেত্রেই বদ্ধ জল মশার বংশবিস্তারের জন্য একেবারে উপযুক্ত জায়গা। গরম আবহাওয়া মশার বংশবিস্তারের চক্রকেও সংক্ষিপ্ত করে দেয়, এদের পুনরুৎপাদনের মাত্রাকে বৃদ্ধি করে এবং এটা সেই ঋতুর স্থায়িত্ব বাড়িয়ে দেয়, যে-সময় চারিদিকে প্রচুর মশা থাকে। উষ্ণ আবহাওয়ায় মশারা আরও বেশি সক্রিয় থাকে। গরম তাপমাত্রা এমনকি মশার অন্ত্রেও পৌঁছাতে পারে এবং রোগ-উৎপাদক জীবাণুর পুনরুৎপাদনের মাত্রা বৃদ্ধি করে আর এভাবে এক কামড়েই সংক্রামক রোগ হওয়ার সম্ভাবনাকে বাড়িয়ে তোলে। কিন্তু, অন্যান্য বিবেচ্য বিষয়ও রয়েছে।

রোগব্যাধি নিয়ে এক পর্যবেক্ষণ

মানবসমাজে পরিবর্তনও পোকামাকড় বাহিত রোগব্যাধির ক্ষেত্রে অবদান রাখতে পারে। কীভাবে হতে পারে, তা বুঝতে হলে পোকামাকড়ের ভূমিকা সম্বন্ধে আমাদের আরও বিস্তারিতভাবে পরীক্ষা করা দরকার। অনেক রোগব্যাধিতেই, রোগ সংক্রমণের ধারায় বিভিন্ন কারণের মধ্যে একটা মাত্র কারণ হতে পারে পোকামাকড়। একটা পশু বা পাখি এর শরীরের মধ্যে পোকামাকড় বহন করে বা এর রক্তপ্রবাহে জীবাণু ধারণ করে একটা রোগের পোষক হিসেবে কাজ করতে পারে। পোষকরা যদি এভাবে বেঁচে থাকে, তা হলে এরাও হয়তো রোগের এক আধার হয়ে উঠতে পারে।

লাইম রোগের কথা বিবেচনা করুন, যা ১৯৭৫ সালে শনাক্তিকৃত হয় এবং যুক্তরাষ্ট্রের কানেকটিকাটের লাইম শহরের নাম অনুসারে নাম দেওয়া হয়, যেখানে এটা প্রথম দেখা যায়। যে-রোগজীবাণুর কারণে লাইম রোগ হয়, তা হয়তো শত শত বছর আগে ধেড়ে ইঁদুর বা ইউরোপ থেকে আসা জাহাজের পশুধন থেকে উত্তর আমেরিকায় এসেছে। ছোট্ট আইজোডেস এঁটেল পোকা সংক্রামিত কোনো পশুর শরীর থেকে রক্ত খাওয়ার পর, ব্যাকটেরিয়া এঁটেল পোকার অন্ত্রে এর বাকি সমস্ত জীবনে রয়ে যায়। এঁটেল পোকা যখন অন্য কোনো পশু বা পাখি অথবা মানুষকে কামড়ায়, তখন এটা শিকারগ্রস্তের রক্তপ্রবাহে ব্যাকটেরিয়া প্রেরণ করতে পারে।

উত্তরপূর্ব যুক্তরাষ্ট্রে লাইম রোগ হল স্থানীয় রোগ—এই রোগ দীর্ঘ সময় ধরে সেখানে রয়েছে। লাইম রোগের প্রধান স্থানীয় আধার হল সাদা পায়ের নেংটি ইঁদুর। নেংটি ইঁদুর এঁটেল পোকার পোষক হিসেবেও কাজ করে, বিশেষ করে এঁটেল পোকারা যখন এদের বেড়ে ওঠার পর্যায়ে থাকে। প্রাপ্তবয়স্ক এঁটেল পোকারা হরিণের মধ্যে এদের বাসা বাঁধতে পছন্দ করে, যেখান থেকে তারা খাবার এবং সঙ্গী খুঁজে পায়। একবার রক্ত খেয়ে ঢোল হওয়ার পর, প্রাপ্তবয়স্ক স্ত্রী এঁটেল পোকা ডিম পাড়ার জন্য মাটিতে নেমে আসে, যেখান থেকে শূককীট পুনরায় চক্র শুরুর জন্য খুব শীঘ্রই বের হয়ে আসে।

পারিপার্শ্বিক পরিস্থিতির পরিবর্তন

মানুষের মধ্যে জীবাণু কোনো রোগ না ছড়িয়েই পশুপাখি এবং পোকামাকড়ের সঙ্গে বহু বছর ধরে একত্রে থাকতে পারে। কিন্তু, পারিপার্শ্বিক পরিস্থিতির পরিবর্তন স্থানীয় কোনো রোগকে মহামারীতে, যে-রোগ একটা সমাজের বহু লোককে আক্রান্ত করে, সেটাতে পরিণত করতে পারে। লাইম রোগের বেলায় কোন পরিবর্তন হয়েছিল?

অতীতে, শিকারি পশুরা হরিণদের সংখ্যা কমিয়ে দিয়ে ডিয়ার এঁটেল পোকা এবং মানুষদের মধ্যে সম্পর্ক সীমাবদ্ধ করে দিতে সাহায্য করেছিল। প্রথম দিকের ইউরোপীয় বসবাসকারীরা যখন বনজঙ্গল পরিষ্কার করে খামার করেছিল, তখন হরিণ প্রজাতি আরও কমে যায় এবং হরিণ শিকারিরাও দূরে চলে যায়। কিন্তু, ১৮০০ সালের মাঝামাঝি সময়ে কৃষিকর্ম যখন পশ্চিম দিকে চলে যায়, তখন অনেক খামার পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে থাকে এবং আবারও বনজঙ্গল বৃদ্ধি পায় এবং ভূমি ছেয়ে যায়। হরিণরা ফিরে আসে কিন্তু এদের স্বাভাবিক শিকারিরা ফিরে আসে না। এভাবে হরিণ প্রজাতি আগের অবস্থায় ফিরে আসে এবং দ্রুত বৃদ্ধি পায় আর একইভাবে এঁটেল পোকারাও বৃদ্ধি পায়।

কিছু কাল পরে, লাইম রোগের জীবাণু দেখা দেয় এবং মানুষের জন্য হুমকিস্বরূপ হয়ে ওঠার আগে পর্যন্ত দশকের পর দশক ধরে বসবাস করতে শুরু করে। কিন্তু, বনের ধারে যখন শহরতলি গড়ে উঠতে শুরু করে, তখন ছেলেমেয়ে এবং প্রাপ্তবয়স্করা অধিক সংখ্যায় এঁটেল পোকার রাজ্যে প্রবেশ করতে শুরু করে। এঁটেল পোকারা মানুষের কাছে আসতে শুরু করে আর এভাবে মানুষের লাইম রোগ হয়।

এক অস্থির জগতে রোগব্যাধি

পূর্বের ধারাবাহিক বিবরণটি, রোগব্যাধি কীভাবে বৃদ্ধি পেতে এবং ছড়াতে পারে, সেটার অনেক উপায়ের মধ্যে মাত্র একটা উপায় এবং মানুষের কার্যক্রম কীভাবে রোগব্যাধি পুনরায় দেখা দেওয়ার ক্ষেত্রে প্রভাব ফেলে, সেটার মাত্র একটা উদাহরণ সম্বন্ধে তুলে ধরে। পরিবেশ উন্নয়নের বিশেষজ্ঞ ইউজিন লিনডেন তার স্বাভাবিক দৃষ্টিতে ভবিষ্যৎ (ইংরেজি) বইয়ে লেখেন, “মানুষের হস্তক্ষেপের কারণেই নতুন করে বৃদ্ধি পাওয়া প্রায় সমস্ত রোগ প্রত্যাবর্তন করেছে।” কিছু অন্যান্য উদাহরণ হল: আধুনিক ভ্রমণের জনপ্রিয়তা এবং বৃদ্ধি জীবাণু ও এদের বাহককে সারা বিশ্বে ছড়িয়ে দিতে পারে। ছোট বড় উভয় প্রাণীর স্বাভাবিক আবাসের ক্ষতিসাধন জীবজগতের জন্য হুমকিস্বরূপ। “বাতাস এবং জলের ওপর দূষণের প্রভাব,” লিনডেন বলেন, “পশুপাখি ও সেইসঙ্গে মানুষের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল করে দিচ্ছে।” তিনি ডা. এপস্টাইনের বিবৃতি উদ্ধৃত করেন, “মূলত বাস্তুসংস্থানের ওপর মানুষের অবৈধ হস্তক্ষেপ পৃথিবীর রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতাকে দুর্বল করে দিয়েছে, পরিস্থিতিকে এমন পর্যায়ে নিয়ে গেছে, যা জীবাণুর জন্য উপযোগী।”

রাজনৈতিক অস্থিরতা যুদ্ধের দিকে পরিচালিত করে, যা বাস্তুতন্ত্রকে ক্ষতিগ্রস্ত করে এবং সেই সমস্ত অবকাঠামোগুলোকে ধ্বংস করে দেয়, যেগুলো স্বাস্থ্যসেবা জোগায় এবং খাবারদাবার বিতরণে সহায়তা করে। এ ছাড়া, আ্যমেরিকান মিউজিয়াম অফ ন্যাচারাল হিস্টোরি-র বাইয়োবুলেটিন উল্লেখ করে: “যে-শরণার্থীরা অপুষ্টিতে ভোগে এবং দুর্বল, তাদেরকে প্রায়ই সেই সমস্ত শিবিরগুলোতে যেতে বাধ্য করা হয়, যেখানকার জনগণের ভিড় এবং অস্বাস্থ্যকর অবস্থা লোকেদের সংক্রমণের দিকে নিয়ে যায়।”

অর্থনৈতিক অস্থিরতা লোকেদের মূলত জনবহুল শহরে গিয়ে বসবাস করতে বাধ্য করে, আর তা জাতীয় সীমারেখার বাইরে ও ভিতরে উভয় ক্ষেত্রেই। বাইয়োবুলেটিন ব্যাখ্যা করে, “জীবাণু জনবহুল জায়গাগুলোতে বৃদ্ধি পায়।” শহরে জনসংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ার ফলে “প্রায়ই প্রয়োজনীয় জনস্বাস্থ্য কার্যক্রমগুলো যেমন মৌলিক শিক্ষা, পুষ্টি এবং টিকাদান কার্যক্রমগুলো একই হারে বৃদ্ধি করা যায়নি।” অতিরিক্ত জনসংখ্যা জল, পয়ঃনিষ্কাশন, আবর্জনা দূরীকরণ পদ্ধতির ওপরও অতিরিক্ত চাপ নিয়ে এসেছে, স্বাস্থ্যবিধান এবং ব্যক্তিগত স্বাস্থ্যবিধিকে কঠিন করে তুলেছে, আবার একইসঙ্গে এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে, যা পোকামাকড় এবং অন্যান্য রোগ বহনকারীদের উন্নতিতে সহায়তা করেছে। তাই বলে, পরিস্থিতি আশাহীন নয়, যা পরের প্রবন্ধটি দেখাবে। (g০৩ ৫/২২)

[১১ পৃষ্ঠার ব্লার্ব]

“মানুষের হস্তক্ষেপের কারণেই নতুন করে বৃদ্ধি পাওয়া প্রায় সমস্ত রোগ প্রত্যাবর্তন করেছে”

[৭ পৃষ্ঠার বাক্স/চিত্র]

পশ্চিম নীলনদের ভাইরাস যুক্তরাষ্ট্রেও আক্রমণ করেছে

পশ্চিম নীলনদের ভাইরাস, যা মূলত মশার মাধ্যমে মানুষের শরীরের সংক্রামিত হয়, ১৯৩৭ সালে প্রথমে শুধু উগান্ডাতে ছিল এবং পরবর্তী সময়ে মধ্যপ্রাচ্য, এশিয়া, প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপপুঞ্জ এবং ইউরোপেও দেখা যায়। ১৯৯৯ সালের আগে পর্যন্ত এই ভাইরাস পশ্চিম গোলার্ধে খুঁজে পাওয়া যায়নি। কিন্তু, তখন থেকে যুক্তরাষ্ট্রে ৩,০০০ জনেরও বেশি সংক্রামিত হয়েছে এবং ২০০ জনেরও বেশি লোক মারা গেছে বলে রিপোর্ট করা হয়েছে।

বেশির ভাগ সংক্রামিত লোকেরা সংক্রমণ সম্বন্ধে কখনও অবগত নয় যদিও কারও কারও মধ্যে ইনফ্লুয়েঞ্জার মতো লক্ষণগুলো দেখা যায়। কিন্তু, অল্পসংখ্যক ব্যক্তির মধ্যে গুরুতর অসুস্থতা দেখা যায়, যেগুলোর মধ্যে মস্তিষ্ক প্রদাহ এবং স্পাইনাল মেনিনজাইটিসও রয়েছে। পশ্চিম নীলনদের ভাইরাসের জন্য এখন পর্যন্ত সেখানে কোনো প্রতিরোধক টিকা বা নির্দিষ্ট কোনো চিকিৎসা ব্যবস্থা নেই। ইউ.এস. সেন্টারস ফর ডিজিস কন্ট্রোল আ্যন্ড প্রিভেনশন সাবধান করে যে, সংক্রামিত দাতার কাছ থেকে নিয়ে অঙ্গপ্রত্যঙ্গ স্থানান্তর বা রক্ত সঞ্চালনের মাধ্যমেও পশ্চিম নীলনদের ভাইরাসে আক্রান্ত হতে পারে। ২০০২ সালে রয়টারের সংবাদ বিভাগ রিপোর্ট করে, “বর্তমানে পশ্চিম নীলনদের ভাইরাসের জন্য রক্ত পরীক্ষা করার কোনো উপায় নেই।”

[সৌজন্যে]

CDC/James D. Gathany

[৮, ৯ পৃষ্ঠার বাক্স/চিত্র]

আপনি কীভাবে নিজেকে রক্ষা করতে পারেন? কিছু পরামর্শ

সচেতন থাক! পত্রিকা, স্বাস্থ্যবান থাকার জন্য পরামর্শ পেতে সাড়া বিশ্বের পোকামাকড় উপদ্রুত এবং রোগব্যাধিতে জর্জরিত এলাকার অধিবাসীদের সঙ্গে কথা বলেছে। আপনি হয়তো তাদের পরামর্শ থেকে আপনার এলাকার জন্য উপকারী কিছু পেতে পারেন।

পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা—আপনার প্রতিরক্ষার সবচেয়ে প্রথম বিষয়

আপনার বাড়িঘর পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখুন

“খাবার রাখার পাত্রগুলো ঢেকে রাখুন। পরিবেশন করার আগে পর্যন্ত রান্না করা খাবার ঢেকে রাখুন। পাত্র থেকে পড়ে যাওয়া খাবার সঙ্গে সঙ্গে পরিষ্কার করুন। পাত্রগুলো সারারাত ধরে আধোয়া অবস্থায় রাখবেন না বা খাবারের আবর্জনা সকালে ফেলবেন বলে বাড়ির বাইরে রাখবেন না। সেটা ঢেকে রাখুন বা মাটি চাপা দিয়ে রাখুন যেহেতু পোকামাকড় এবং ইঁদুর রাতের বেলা খাবারের খোঁজে বের হয়ে আসে। এ ছাড়া, মাটির মেঝের ওপর সিমেন্টের পাতলা প্রলেপ দেওয়া ঘরবাড়ি পরিষ্কার এবং পোকামাকড় মুক্ত রাখা সহজ করে দেয়।”—আফ্রিকা।

“ফলমূল বা যে-বিষয়গুলো পোকামাকড়কে আকৃষ্ট করে, সেগুলো বাড়ি থেকে দূরে মজুত করে রাখুন। খামারের পশুপাখি—ছাগল, শূকর, মুরগি—বাড়ির বাইরে রাখুন। বাড়ির বাইরের শৌচাগার ঢেকে রাখুন। পশুপাখির মলমূত্র সঙ্গে সঙ্গে মাটি চাপ দিন বা চুন দিয়ে ঢেকে রাখুন, যাতে মশামাছি না আসে। এমনকি প্রতিবেশীরা যদি এই বিষয়গুলো না-ও করে থাকে, তবুও আপনি হয়তো পোকামাকড়গুলোকে এক নিয়ন্ত্রণের পর্যায়ে রাখতে ও সেইসঙ্গে উত্তম উদাহরণ স্থাপন করতে পারবেন।”—দক্ষিণ আমেরিকা।

[চিত্র]

খাবারদাবার বা আবর্জনা ঢেকে না রাখার মানে হল আপনি পোকামাকড়কে আপনার সঙ্গে খেতে আমন্ত্রণ জানাচ্ছেন

ব্যক্তিগত স্বাস্থ্যবিধি

“সাবান খুব বেশি দামি নয়, তাই সবসময় হাত এবং কাপড়চোপড় বিশেষ করে লোকেদের অথবা পশুপাখিদের সংস্পর্শে যাওয়ার পর ধুয়ে নিন। মৃত পশুপাখি স্পর্শ করা এড়িয়ে চলুন। হাত দিয়ে আপনার মুখ, নাক এবং চোখ স্পর্শ করা এড়িয়ে চলুন। প্রতিদিন কাপড়চোপড় ধোয়া উচিত, এমনকি সেটা যদি দেখতে পরিষ্কারও লাগে। কিন্তু, কিছু কিছু সুবাসিত দ্রব্য পোকামাকড়কে আকৃষ্ট করে, তাই সুবাসযুক্ত সাবান ও স্বাস্থ্যকর দ্রব্যসামগ্রী এড়িয়ে চলুন।”—আফ্রিকা।

প্রতিরোধক উপায়গুলো

মশার বংশবিস্তারের জায়গাগুলোকে নির্মূল করুন

জলের ট্যাঙ্ক এবং কাপড় কাচার পাত্রগুলো ঢেকে রাখুন। সমস্ত খোলা পাত্র যেগুলোতে জল জমে থাকে, সেগুলো নির্মূল করুন। পাত্রে রাখা গাছপালার মধ্যে জল জমে থাকতে দেবেন না। চার দিনের বেশি জমে থাকা যেকোনো জলে মশা বংশবিস্তার করতে পারে।—দক্ষিণপূর্ব এশিয়া।

পোকামাকড়ের সংস্পর্শে যাওয়া কমিয়ে দিন

পোকামাকড়ের সুবিধাজনক খাবার সময় এবং জায়গা পরিহার করুন। গ্রীষ্মমণ্ডলীয় অঞ্চলগুলোতে খুব তাড়াতাড়ি সূর্যাস্ত হয়, তাই দৈনন্দিন অনেক কাজকর্ম রাতের বেলায় করা হয়, যখন অনেক পোকামাকড় আরও সক্রিয় থাকে। যখন পোকামাকড় বাহিত রোগব্যাধির প্রকোপ থাকে, তখন বাইরে বসা এবং ঘুমানো ঝুঁকি আরও বাড়িয়ে দেয়।—আফ্রিকা।

[চিত্র]

মশা রয়েছে এমন দেশগুলোতে ঘরের বাইরে ঘুমানো ঠিক যেন আপনি মশাগুলোকে আপনাকে কামড়ানোর জন্য আমন্ত্রণ জানাচ্ছেন

শরীর ঢাকা থাকে এমন কাপড়চোপড় পড়ুন, বিশেষ করে যখন বনজঙ্গলে যান। আপনার কাপড়চোপড় এবং ত্বকের মধ্যে পোকামাকড় বিতাড়ক দ্রব্যাদি দিন, সবসময় লেবেলের গায়ে লেখা নির্দেশনা অনুসরণ করুন। বাইরে সময় কাটানোর পর আপনার ও আপনার ছেলেমেয়ের সঙ্গে কোনো এঁটেল পোকা আছে কি না, পরীক্ষা করুন। আপনার পোষা পশুপাখি সুস্থ এবং পোকামাকড় মুক্ত রাখুন।—উত্তর আমেরিকা।

খামারের পশুপাখির সংস্পর্শে যাওয়া কমিয়ে দিন কারণ পোকামাকড় এদের দেহ থেকে মানুষের শরীরে রোগব্যাধি ছড়াতে পারে।—মধ্য এশিয়া।

পরিবারের সমস্ত সদস্যদের জন্য মশারি—কীটনাশক দেওয়া থাকলে আরও ভাল হয়—ব্যবহার করুন। জানালার ওপর আবরণ ব্যবহার করুন এবং সেই আবরণ সবসময় ভালভাবে মেরামত করে রাখুন। ছাদ বা চালের খোলা প্রান্তভাগ ভাল করে বন্ধ করে রাখুন, যেখান দিয়ে পোকামাকড় সহজেই ঢুকতে পারে। এই ধরনের প্রতিরোধক বস্তুর জন্য কিছু টাকাপয়সা খরচ হয় কিন্তু আপনাকে যদি আপনার সন্তানকে হাসপাতালে নিয়ে যেতে হয় বা উপার্জনক্ষম ব্যক্তি এতটাই অসুস্থ হয়ে যান যে, কাজ করতে পারেন না, তখন আপনাকে আরও বেশি টাকাপয়সা খোয়াতে হবে।—আফ্রিকা।

[চিত্র]

পোকামাকড়কে আমাদের ঘরের অতিথি হতে দেওয়া উচিত নয়। সেগুলোকে দূর করুন!

পোকামাকড় লুকিয়ে থাকতে পারে, এমন জায়গাগুলো আপনার বাড়ি থেকে নির্মূল করুন। দেওয়াল এবং সিলিংয়ের ওপর প্লাস্টার করুন এবং ফাটল ও গর্তের মধ্যে কিছু দিয়ে প্রলেপ দিন। খড় দিয়ে তৈরি ঘরের চালার ভিতরের দিক পোকামাকড় অভেদ্য কাপড় দিয়ে আটকে দিন। যেখানে পোকামাকড় লুকিয়ে থাকে এমন বিশৃঙ্খল অবস্থা—যেমন কাগজপত্র বা কাপড়চোপড় অথবা দেওয়ালের মধ্যে লাগানো ছবির স্তূপ—দূর করুন।—দক্ষিণ আমেরিকা।

কিছু লোক পোকামাকড় এবং ইঁদুরকে ঘরের অতিথি বলে মনে করে। কিন্তু, তারা তা নয়! সেগুলোকে বাইরেই থাকতে দিন। পোকামাকড় বিতারক দ্রব্যাদি এবং কীটনাশক ব্যবহার করুন কিন্তু সেটা শুধু নির্দেশনা অনুযায়ী। মাছি ধরার ফাঁদ এবং ফ্লায়ওয়েটারস ব্যবহার করুন। উদ্ভাবনী শক্তিসম্পন্ন হোন: একজন মহিলা কাপড় দিয়ে নল তৈরি করে সেটাতে বালি ভরেন এবং এরপর সেটা দরজার নিচে যে ফাঁকা জায়গা আছে সেখানে রাখেন, যাতে পোকামাকড় ঢুকতে না পারে।—আফ্রিকা।

[চিত্র]

কীটনাশক দেওয়া মশারি, ওষুধ এবং হাসপাতালের বিল থেকেও সস্তা

প্রতিরোধক ওষুধ

সঠিক পুষ্টি লাভ করে, বিশ্রাম নিয়ে এবং ব্যায়াম করে আপনার প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে তুলুন। চাপ কমান।—আফ্রিকা।

ভ্রমণকারী: আগে থেকেই সর্বশেষ ঝুঁকি সম্বন্ধে তথ্য জানুন। গণস্বাস্থ্য বিভাগ এবং সরকারি ইন্টারনেট থেকে তথ্য পাওয়া যায়। ভ্রমণ করার আগে আপনি যে-এলাকায় যাচ্ছেন, সেখানকার জন্য উপযুক্ত প্রতিরোধক চিকিৎসা করান।

আপনি যদি অসুস্থ বোধ করেন

দ্রুত চিকিৎসা করুন

শুরুতেই রোগনির্ণয় করলে বেশির ভাগ রোগব্যাধি সারিয়ে তোলা সহজ।

ভুল রোগনির্ণয় করা থেকে সাবধান

এমন ডাক্তারদের কাছে যান, যারা ভেক্টর বাহিত রোগব্যাধি সম্বন্ধে এবং যদি গ্রীষ্মণ্ডলীয় এলাকায় থাকেন, তা হলে সেখানকার রোগব্যাধির সঙ্গে পরিচিত। আপনার সমস্ত লক্ষণ ডাক্তারকে খুলে বলুন এবং আপনি কোথায় গিয়েছিলেন এমনকি অতীতে হলেও, সেই সম্বন্ধে বলুন। একমাত্র উপযুক্ত হলে আ্যন্টিবায়োটিক ব্যবহার করুন এবং চিকিৎসাপ্রণালীর কোর্স শেষ করুন।

[চিত্র]

পোকামাকড় বাহিত রোগব্যাধি অন্যান্য অসুস্থতাকে অনুকরণ করতে পারে। আপনার ডাক্তারকে সমস্ত কিছু খুলে বলুন

[সৌজন্যে]

ভূগোলক: Mountain High Maps® Copyright © ১৯৯৭ Digital Wisdom, Inc.

[১০ পৃষ্ঠার বাক্স/চিত্র]

পোকামাকড় কি এইচআইভি ছড়াতে পারে?

এক দশকেরও বেশি সময় ধরে তদন্ত এবং গবেষণা করার পরে পতঙ্গবিদ এবং চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা কোনো প্রমাণ পাননি যে, মশা অথবা অন্যান্য পোকামাকড় এইচআইভি অর্থাৎ এইডসের ভাইরাস ছড়ায়।

উদাহরণস্বরূপ মশার ক্ষেত্রে পোকামাকড়ের মুখের অংশ শুধু একটা উন্মুক্ত সিরিঞ্জের মতো নয়, যেটার দ্বারা পুনরায় রক্ত সঞ্চারিত করা যায়। পরিবর্তে মশা একটা পথ দিয়ে রক্ত নেয় আর আরেকটা পথ দিয়ে লালা নিঃসরণ করে। তাই, জাম্বিয়ার মঙ্গু শহরের জেলা স্বাস্থ্য পরিচালনা দলের একজন এইচআইভি বিশেষজ্ঞ থমাস ডামাসো ব্যাখ্যা করেন, মশার পরিপাক পদ্ধতি রক্তকে বিশ্লিষ্ট করে এবং ভাইরাসকে ধ্বংস করে দেয়। এইচআইভি পোকামাকড়ের মলমূত্রে পাওয়া যায় না। আর ম্যালেরিয়ার পরজীবীর বৈসাদৃশ্যে এইচআইভি মশার লালাগ্রন্থিতে প্রবেশ করে না।

এইচআইভিতে আক্রান্ত হতে হলে একজন ব্যক্তিকে অসংখ্য সংক্রামিত উপসর্গের সংস্পর্শে আসতে হবে। রক্ত খাওয়ার সময় কোনো মশাকে যদি বাধা দেওয়া হয় এবং সেটা যদি সরাসরি আরেকজন শিকারের কাছে উড়ে যায়, তা হলে এর মুখে যে-পরিমাণ রক্তই থাকুক না কেন, তা ক্ষতি করার পক্ষে খুবই সামান্য। বিশেষজ্ঞদের মতে, এমনকি এইচআইভি রক্তে পরিপূর্ণ কোনো মশাকে উন্মুক্ত কোনো ক্ষতের মধ্যে মারলেও সেটা এইচআইভি সংক্রমণ করবে না।

[সৌজন্যে]

CDC/James D. Gathany

[৭ পৃষ্ঠার চিত্রগুলো]

ডিয়ার এঁটেল পোকা (ডান দিকে বড় করে দেখানো) মানুষের মধ্যে লাইম রোগ ছড়ায়

বাম দিক থেকে ডান দিকে: প্রাপ্তবয়স্ক স্ত্রী, প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষ এবং অপূর্ণদেহ কীট, সবগুলো প্রকৃত আকারে দেখানো হয়েছে

[সৌজন্যে]

সমস্ত এঁটেল পোকা: CDC

[১০, ১১ পৃষ্ঠার চিত্রগুলো]

বন্যা, অস্বাস্থ্যকর অবস্থা এবং অন্য দেশে গিয়ে মানুষের বসবাস পোকামাকড় বাহিত রোগব্যাধি ছড়াতে সহায়তা করে

[১১ পৃষ্ঠার চিত্র]

FOTO UNACIONES (from U.S. Army)