সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

কেন অশ্লীল বিষয়গুলো এতটা ছড়িয়ে পড়েছে?

কেন অশ্লীল বিষয়গুলো এতটা ছড়িয়ে পড়েছে?

কেন অশ্লীল বিষয়গুলো এতটা ছড়িয়ে পড়েছে?

যৌনবাসনা জাগিয়ে তোলার উদ্দেশ্যে তৈরি যৌনকামনা উদ্দীপক বিষয়বস্তু হাজার হাজার বছর ধরেই ছিল। কিন্তু, ইতিহাসের বেশির ভাগ সময়ই অশ্লীল বিষয়গুলো উৎপাদন করা বেশ কঠিন ছিল আর তাই তা মূলত ধনী ও শাসকগোষ্ঠীর মধ্যেই প্রাপ্তিসাধ্য ছিল। মুদ্রণ সুযোগসুবিধার প্রসার ও আলোকচিত্রবিদ্যা এবং চলচ্চিত্রের উদ্ভাবন সেই বিষয়ে পরিবর্তন এনেছে। অশ্লীল বিষয়গুলো নাগালের মধ্যে চলে আসে ও সাধারণ লোকেদের জন্য প্রাপ্তিসাধ্য হয়ে ওঠে।

ভিডিওক্যাসেট রেকর্ডারের বৃদ্ধি এই ঝোঁককে দ্রুতগতিতে বাড়িয়ে দিয়েছে। সিনেমার রিল ও পুরনো আলোকচিত্রগুলোর পরিবর্তে, ভিডিওক্যাসেটগুলো সংরক্ষণ, কপি ও বিতরণ করা বেশ সহজ ছিল। এ ছাড়া, সেগুলো একান্তে ঘরে বসে দেখারও সুযোগ করে দেয়। সম্প্রতি, কেবেল টেলিভিশন ও ইন্টারনেটের ব্যাপক বৃদ্ধি অশ্লীল বিষয়গুলোকে আরও বেশি প্রাপ্তিসাধ্য করে তুলেছে। যে-গ্রাহক ভয় পান যে, তার প্রতিবেশী তাকে কোনো ভিডিও দোকানের প্রাপ্তবয়স্কদের বিভাগে দেখে ফেললে কী মনে করবে, তিনি এখন “ঘরে বসেই তার কেবেল টেলিভিশনের শুধু একটা সুইচ টিপে তা কিনতে পারেন বা সরাসরি ইন্টারনেটে তা দেখতে পারেন,” প্রচারমাধ্যম বিশ্লেষক ডেনিস ম্যাকআলপাইন বলেন। ম্যাকআলপাইনের কথা অনুসারে, এই ধরনের কার্যক্রমগুলো সহজে পাওয়া যায় বলেই এগুলো “অনেক বেশি গ্রহণযোগ্য” হয়ে উঠেছে।

অশ্লীল বিষয়গুলো সাধারণ হয়ে ওঠে

অশ্লীল বিষয়গুলো সম্বন্ধে অনেকের মিশ্র দৃষ্টিভঙ্গি রয়েছে কারণ এটা এখন সাধারণ বিষয় হয়ে উঠেছে। “আমাদের সংস্কৃতির ওপর সমস্ত অপেরা, ব্যালে নৃত্য, থিয়েটার, সংগীত এবং চারুকলা সবকিছু মিলিয়ে যতখানি প্রভাব ফেলে সেগুলোর চেয়েও এটা আরও বেশি প্রভাব ফেলেছে,” লেখিকা জারম্যান গ্রির বলেন। অশ্লীল বিষয়গুলোর প্রতি আধুনিক মনোভাব প্রতিফলিত হয় অনেক বিখ্যাত ব্যক্তিদের ফ্যাশনে, যাদের সাজপোশাক ‘পতিতাদের মতো,’ মিউজিক ভিডিওগুলোতে, যেখানে অবাধে যৌন চিত্রগুলোকে তুলে ধরা হচ্ছে এবং প্রচারমাধ্যমগুলোতে যেখানে “অশ্লীল সৌন্দর্যবোধ সম্পন্ন” বিষয়গুলো গ্রহণ করা হচ্ছে। ম্যাকআলপাইন উপসংহারে বলেন: “সমাজকে যা-ই দেওয়া হচ্ছে এটা সবই নির্দ্বিধায় গ্রহণ করে নিচ্ছে। . . . সেই বিষয়টাই এই ধারণার উদ্ভব করতে সাহায্য করছে যে, সমস্তকিছুই ভাল।” ফলে, “লোকেরা কোনো কিছু দেখে চমকে ওঠে না বলেই মনে হয়,” গ্রন্থকার আন্দ্রিয়া ডরকিন দুঃখ করে বলেন। “তারা খুব কমই এগুলো নিয়ে মাথা ঘামায়।”

অশ্লীল বিষয়গুলোর অন্তর্নিহিত কারণগুলো

গ্রন্থকার ডরকিনের মন্তব্যের সঙ্গে মিল রেখে অবসরপ্রাপ্ত এফবিআই প্রতিনিধি রজের ইয়াং উল্লেখ করেন যে, অনেক লোক “অশ্লীল বিষয়গুলোর যে-গুরুতর পরিণতিগুলো রয়েছে ও এর ফলে যে-সমস্যাগুলোর উদ্ভব হয়, তা বুঝতেই চায় না।” কেউ কেউ সেই লোকেদের দ্বারা প্রভাবিত হয়, যারা অশ্লীল বিষয়গুলোকে সমর্থন করে এবং দাবি করে যে, অশ্লীল ছবিগুলো লোকেদের ওপর আদৌ কোনো নেতিবাচক প্রভাব ফেলে কি না, সেই সম্বন্ধে কোনো প্রমাণই নেই। “অশ্লীল বিষয়গুলো নিছক কল্পনা ছাড়া আর কিছু নয়,” গ্রন্থকার এফ. এম. ক্রিসটেনসেন লেখেন, “এমন এক তথ্য যেটাকে মেনে নেওয়া এর বিরোধীদের পক্ষে কঠিন বলে মনে হয়।” কিন্তু কল্পনার যদি কোনো প্রভাবই না থাকে, তা হলে বিজ্ঞাপন জগতের ভিত্তি কীসের ওপর রয়েছে? যদি লোকেদের ওপর সেগুলো কোনো স্থায়ী প্রভাব না-ই ফেলে, তা হলে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান কেন ব্যবসায়িক বিজ্ঞাপন, ভিডিও ও ছাপানো বিজ্ঞাপনগুলো তৈরি করার পিছনে লক্ষ লক্ষ ডলার ব্যয় করছে?

মূল কথা হচ্ছে, সমস্ত সফল বিজ্ঞাপনের মতো অশ্লীল বিষয়গুলোর প্রধান উদ্দেশ্য হল, এমন ব্যক্তিদের মধ্যে যৌনবাসনা জাগিয়ে তোলা, যাদের মধ্যে আগে তা একেবারেই ছিল না। “অশ্লীলতার ভিত্তি মুনাফা অর্জন ছাড়া আর কিছুই নয়,” গবেষক স্টিভেন হিল ও গবেষিকা নিনা সিলভার লেখেন। “আর এই উন্মাদনাগ্রস্ত বাজারে যেকোনো কিছুকেই স্বীয় স্বার্থসাধনের এবং মুনাফার সম্পদ বলে বিবেচনা করা হয়, বিশেষ করে নারীদেহ এবং মানুষের যৌনসম্পর্ক।” অশ্লীল বিষয়গুলোকে গ্রির অত্যন্ত আসক্তিপূর্ণ ফাস্টফুডের সঙ্গে তুলনা করেন, যাতে কোনো পুষ্টি নেই, কেবল স্বাদ বাড়ানোর উপাদান ও রাসায়নিক পদার্থ যুক্ত থাকে। তিনি বলেন, “কমার্শিয়াল ফাস্টসেক্স হল নকল যৌনতা . . . খাবারের বিজ্ঞাপনগুলো পুষ্টিহীন খাবার বিক্রি করে আর যৌন বিজ্ঞাপনগুলো কাল্পনিক যৌনতা বিক্রি করে।”

কিছু ডাক্তার দাবি করে যে, অশ্লীল বিষয়গুলো এমন এক আসক্তিকে প্রজ্বলিত করতে পারে, যা কাটিয়ে ওঠা মাদকাসক্তির চেয়েও কঠিন। মাদকাসক্তদের আসক্তি দূর করার জন্য চিকিৎসা সাধারণত দেহ থেকে সেই বিষাক্ত পদার্থ সরিয়ে ফেলার দ্বারা শুরু হয়। কিন্তু, পেনসিলভানিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ড. ম্যারি আ্যন ল্যাডেন ব্যাখ্যা করেন, অশ্লীল বিষয়গুলোর প্রতি আসক্তি “মনের মধ্যে ছবি এঁকে ফেলে, যা ব্যবহারকারীর মনে স্থায়ীভাবে গেঁথে যায় এবং মস্তিষ্ক রসায়নবিদ্যার অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে ওঠে।” সেইজন্য ব্যক্তিবিশেষেরা বিগত বছরগুলোতে দেখা অশ্লীল ছবিগুলোকে স্পষ্টভাবে স্মরণে আনতে পারে। তিনি উপসংহারে বলেন: “এটা হল প্রথম আসক্তিকর বস্তু, যা দূর করার মতো কোনো আশা নেই।” কিন্তু এর মানে কি এই যে, অশ্লীল বিষয়গুলোর প্রভাব থেকে মুক্ত হওয়া একেবারেই অসম্ভব? আর অশ্লীল বিষয়গুলো নির্দিষ্টভাবে কী ধরনের ক্ষতি করে থাকে? (g০৩ ৭/২২)

[৫ পৃষ্ঠার বাক্স]

ইন্টারনেটে অশ্লীল বিষয়গুলো সংক্রান্ত বিভিন্ন তথ্য

◼ ইন্টারনেটে প্রায় ৭৫ শতাংশ অশ্লীল বিষয়ের উৎপত্তি যুক্তরাষ্ট্রে। প্রায় ১৫ শতাংশের উৎপত্তি ইউরোপে।

◼ হিসেব করে দেখা গেছে যে, এক সপ্তাহে প্রায় সাত কোটি লোক অশ্লীল বিষয়গুলোর সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত ওয়েব সাইটগুলো খোলে। এই ব্যবহারকারীদের মধ্যে প্রায় দুকোটি লোকই কানাডা ও যুক্তরাষ্ট্রের।

◼ একটি গবেষণা দেখায় যে, সম্প্রতি এক মাস সময়ে, ইউরোপের মধ্যে সবচেয়ে বেশি জার্মানিতে ইন্টারনেটে অশ্লীল বিষয়গুলো দেখার দর্শকরা রয়েছে, এরপর রয়েছে গ্রেট ব্রিটেন, ফ্রান্স, ইতালি এবং স্পেন।

◼ জার্মানিতে ইন্টারনেটে অশ্লীল বিষয়গুলো ব্যবহারকারীরা, অশ্লীল সাইটগুলো দেখার জন্য প্রতি মাসে গড়ে ৭০ মিনিট ব্যয় করে।

◼ ইউরোপে ইন্টারনেটে অশ্লীল বিষয়গুলোর দর্শকদের মধ্যে, ৫০ বছর বয়সের ঊর্ধ্বে ব্যক্তিরা বেশির ভাগ সময় প্রাপ্তবয়স্কদের ওয়েব সাইটগুলোতে ব্যয় করে থাকে।

◼ একটি উৎস অনুসারে, ৭০ শতাংশ ইন্টারনেটে অশ্লীল বিষয়গুলোতে ব্যস্ততা দিনের বেলায় দেখা যায়।

◼ কেউ কেউ অনুমান করে যে, ১,০০,০০০ ইন্টারনেট সাইটে বাচ্চাদের নিয়ে অশ্লীল বিষয়গুলোর ওপর বিষয়বস্তু রয়েছে।

◼ ইন্টারনেটের প্রায় ৮০ শতাংশ বাচ্চাদের নিয়ে বাণিজ্যিক অশ্লীল বিষয়গুলোর উৎপত্তি জাপানে।

[৪ পৃষ্ঠার চিত্র]

অশ্লীল বিষয়গুলো খুব সহজসাধ্য হয়ে উঠেছে