সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

টায়ার এগুলোর ওপর আপনার জীবন নির্ভর করতে পারে!

টায়ার এগুলোর ওপর আপনার জীবন নির্ভর করতে পারে!

টায়ার এগুলোর ওপর আপনার জীবন নির্ভর করতে পারে!

কল্পনা করুন আপনাকে এমন এক যন্ত্রের ভিতরে বেঁধে রাখা হয়েছে যেটা স্টিল ও কাচ দিয়ে ঢালাই করা এক খাঁচার মতো এবং আপনার পাশে কিছু পাত্রে আ্যসিড ও দাহ্য তরলপদার্থগুলো ভরে রাখা হয়েছে। এখন এই সম্ভাব্য মারাত্মক যন্ত্রটাকে মেঝে থেকে কয়েক সেন্টিমিটার উঁচুতে ঝুলিয়ে, এটার গতি প্রতি সেকেন্ডে প্রায় ৩০ মিটার তরান্বিত করুন। শেষে, আপনার যন্ত্রটাকে একই ধরনের আরও অন্যান্য যন্ত্রের মধ্যে রেখে সেগুলোকে পাশ দিয়ে দ্রুতগতিতে এগিয়ে নিয়ে যান আর সেই জায়গায় আরও কিছু যন্ত্রকে আপনার উলটো দিক থেকে দ্রুতগতিতে নিয়ে আসুন!

প্রতি বার আপনি যখন কোনো যানবাহনে চড়েন ও হাইওয়েতে চালান, আপনি মূলত তা-ই করেন। গাড়ি চালানোর সময় কী আপনাকে নিয়ন্ত্রণ রাখতে ও নিরাপদবোধ করতে সাহায্য করে? বেশির ভাগ ক্ষেত্রে, আপনার গাড়ির টায়ার তা করতে সাহায্য করে।

টায়ারের কাজ কী?

টায়ারগুলো বিভিন্ন ধরনের গুরুত্বপূর্ণ উদ্দেশ্য সাধন করে থাকে। এগুলো কেবলমাত্র আপনার গাড়ির ওজনই বহন করে না কিন্তু সেইসঙ্গে রাস্তায় আসা নানা বাম্প, গর্ত ও এবড়োখেবড়ো জায়গায় গাড়িকে ঝাঁকুনি খাওয়ার হাত থেকে রক্ষা করে। এর চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টা হল, আপনার গাড়ির টায়ার বিভিন্ন ধরনের রাস্তায় গাড়ির গতি বাড়াতে, গাড়ি চালাতে, থামাতে এবং ডাইনে-বাঁয়ে ঘোরানোর সময় গাড়ির স্থিরতাকে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য অতি প্রয়োজনীয় ঘর্ষণ জোগায়। তবে, টায়ারের খুব সামান্য অংশ—প্রায় পোস্টকার্ডের আকারের সমান—এক বার করে রাস্তার সংস্পর্শে থাকে।

টায়ারের গুরুত্বকে বিবেচনা করে, আপনার গাড়ির টায়ার যাতে নিরাপদ ও কার্যকরভাবে কাজ করে, তার জন্য আপনি কী করতে পারেন? আর আপনার গাড়ির জন্য সঠিক টায়ার বাছাই করার সময় আপনি কীভাবে তা করেন? এই প্রশ্নগুলোর উত্তর দেওয়ার আগে, আসুন আমরা টায়ারের ইতিহাসের ওপর একটু নজর দিই।

রবারের প্রাথমিক প্রবর্তকরা

যদিও চাকার ব্যবহার বহু হাজার বছর ধরে চলে আসছে কিন্তু গাড়ির চাকার বাইরের রিমে রবার লাগানোর ধারণাটা তুলনামূলকভাবে নতুন। ১৮০০ দশকের শুরুর দিকে প্রাকৃতিক রবারকে প্রথমে কাঠের বা স্টিলের চাকাগুলোতে লাগানো হতো। কিন্তু সেটা খুব তাড়াতাড়ি ক্ষয়ে যেত, তাই রবার লাগানো চাকার ভবিষ্যৎ অন্ধকার বলে মনে হয়েছিল—এভাবে ততদিন চলতে থাকে যতদিন না মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের, কেনেটিকেটের একজন সংকল্পবদ্ধ আবিষ্কারক চার্লস গুডইয়ার এটার ওপর গবেষণা শুরু করেছিলেন। ১৮৩৯ সালে, গুডইয়ার ভালক্যানাইজেশন নামে পরিচিত এক পদ্ধতির আবিষ্কার করেছিলেন, যেটাতে তাপ ও বল প্রয়োগের মাধ্যমে রবারে সালফার অর্থাৎ গন্ধক মেশানো হয়। এই পদ্ধতি রবারকে খুব সহজে আকার দেওয়ায় সুবিধা করে দিয়েছিল এবং তাড়াতাড়ি ক্ষয়ে না পড়ার ক্ষমতাকে বৃদ্ধি করেছিল। রবারের শক্ত টায়ারগুলো আরও জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিল কিন্তু এগুলো গাড়িকে খুব ঝাঁকুনি দিত।

১৮৪৫ সালে, স্কটল্যান্ডের প্রকৌশলী রবার্ট ডব্লু. থমসন, সরকারের কাছ থেকে নিউমেটিক বা হাওয়া ভরা টায়ার তৈরি করার অধিকার পেয়েছিলেন। কিন্তু, স্কটল্যান্ডের আরেকজন ব্যক্তি জন বয়েড ডানলপ যতদিন পর্যন্ত না তার ছেলের সাইকেল চালানোকে আরও সুবিধাজনক করে তোলার জন্য প্রচেষ্টা চালান, ততদিন পর্যন্ত হাওয়া ভরা টায়ার বাণিজ্যিক হয়ে উঠতে পারেনি। ১৮৮৮ সালে ডানলপ সরকারের কাছ থেকে নতুন টায়ার তৈরি করার অধিকার পেয়েছিলেন এবং তার নিজস্ব কোম্পানি খুলেছিলেন। তা সত্ত্বেও, হাওয়া ভরা টায়ারকে তখনও কিছু বিশেষ ধরনের বাধা অতিক্রম করার ছিল।

১৮৯১ সালের এক দিন, একজন ফরাসি সাইকেল চালকের টায়ার থেকে হাওয়া বেরিয়ে যায়। তিনি তা সারানোর চেষ্টা করেছিলেন কিন্তু পারেননি কারণ টায়ারটা সাইকেলের চাকার সঙ্গে স্থায়ীভাবে বাঁধা ছিল। তিনি আরেকজন ফরাসি ব্যক্তি এডুয়ার মিশলিনের সাহায্য নিয়েছিলেন যিনি ভালক্যানাইজ করা রবারের কাজ করার জন্য পরিচিত ছিলেন। মিশলিন টায়ারটা সারাতে নয় ঘন্টা ব্যয় করেছিলেন। সেই অভিজ্ঞতা তাকে হাওয়া ভরা এমন এক টায়ার তৈরি করার প্রেরণা দিয়েছিল, যেটাকে সারানোর জন্য সহজেই চাকা থেকে খোলা যেতে পারে।

মিশলিনের তৈরি টায়ার এতটা সাফল্য লাভ করেছিল যে, পরের বছর ১০,০০০ জন আনন্দিত সাইকেল চালক সেগুলো ব্যবহার করেছিল। শীঘ্রই, প্যারিসের ঘোড়ার গাড়িগুলোতে হাওয়া ভরা টায়ার লাগানো হয়েছিল, যা তাদের ফরাসি যাত্রীদের বেশ আনন্দ দিয়েছিল। হাওয়া ভরা টায়ার মোটরগাড়িগুলোতেও ব্যবহার করা যেতে পারে, এটা দেখাতে ১৮৯৫ সালে এডুয়ার ও তার ভাই আঁদ্রে সেগুলোকে একটা রেসিং কারে লাগিয়েছিল কিন্তু সেটা সবচেয়ে শেষে পৌঁছেছিল। তা সত্ত্বেও, লোকেরা এই অসাধারণ টায়ারগুলো দেখে এতটাই বিস্মিত হয়েছিল যে, মিশলিন ভাইয়েরা সেগুলোর ভিতরে কী লুকিয়ে রেখেছে, শুধুমাত্র তা দেখার জন্য টায়ারগুলোকে তারা কাটার চেষ্টা করেছিল!

১৯৩০ ও ৪০ এর দশকে রেয়ন, নাইলন ও পলিয়েস্টারের মতো টেকসই নতুন ধরনের কাপড়গুলো, দুর্বল ধরনের সুতি ও প্রাকৃতিক রবারের স্থান নিয়েছিল। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর, এমন এক ধরনের টায়ার তৈরি করার ভিত স্থাপন করা হয়েছিল, যেটাতে সরাসরি চাকার গায়েই এক বায়ুরোধী সিল লাগানো ছিল, যার ফলে ভিতরের টিউবে হাওয়া ভরে রাখার আর প্রয়োজন ছিল না। পরে, আরও কিছু উন্নতি হয়েছিল।

আজকে, একটা টায়ার তৈরি করতে ২০০টারও বেশি কাঁচামাল ব্যবহার করা হয়। আর আধুনিক প্রযুক্তির সাহায্যে কিছু কিছু টায়ার ১,৩০,০০০ কিলোমিটার বা তারও বেশি দূর পর্যন্ত চলতে পারে, যেখানে একটা রেসিং কারে লাগানো অন্যান্য টায়ার ঘন্টায় শত শত কিলোমিটার চলতে পারে। ইতিমধ্যে, টায়ার কেনা সাধারণ খরিদ্দারদের সাধ্যের মধ্যে রয়েছে।

টায়ার বাছাই করা

আপনার যদি একটা গাড়ি থাকে, তা হলে আপনি হয়তো নতুন টায়ার বাছাই করার কঠিন কাজের মুখোমুখি হতে পারেন। কীভাবে আপনি নিশ্চিত হবেন যে, আপনার টায়ারকে কখন পালটাতে হবে? আপনার টায়ারে ক্ষয় বা নষ্ট হওয়ার স্পষ্ট লক্ষণগুলো নিয়মিতভাবে পরীক্ষা করার দ্বারা। * টায়ার নির্মাতারা আপনার টায়ারগুলোর ব্যবহারের সময় কখন শেষ হয়ে আসছে তা ইঙ্গিত করতে এগুলোর মধ্যেই ক্ষয় হওয়ার কিছু চিহ্ন বানিয়ে দেয়, যেগুলোকে প্রায়ই ওয়ের বার বলা হয়। ওয়ের বারগুলো ট্রেড সারফেসে অর্থাৎ গাড়ির টায়ারের খাঁজকাটা পৃষ্ঠ, যা ভূমির স্পর্শে আসে সেটার ওপর আড়াআড়িভাবে রবারের শক্ত ফিতাগুলোর মতো দেখা যায়। এ ছাড়া, ট্রেড সেপারেশন অর্থাৎ খাঁজকাটা পৃষ্ঠ ক্ষয় পাচ্ছে অথবা উঠে আসছে কি না, টায়ারের বিডস যা তারগুলো দিয়ে তৈরি সেগুলো খুলে বেরিয়ে আসছে কি না, টায়ারের সাইডওয়াল অর্থাৎ গাটা ফুলে উঠেছে কি না বা অন্যান্য ধরনের সমস্যাগুলো পরীক্ষা করা ভাল। আপনি যদি এগুলোর কোনো একটা সমস্যা লক্ষ করেন, তা হলে টায়ারকে সারানো বা বদলি না করা পর্যন্ত আপনার গাড়ি চালানো উচিত নয়। আপনার কেনা টায়ার যদি নতুন হয়, তা হলে টায়ার বিক্রেতা হয়তো নষ্ট হওয়া টায়ারকে কম দামে বদলি করে দিতে পারেন, যদি তা গ্যারান্টি পিরিয়েডের মধ্যে থাকে।

একই আ্যক্সেল বা অক্ষদণ্ডে ঘুরতে থাকা টায়ারগুলোকে জোড়া হিসেবে বদলি করা সবচেয়ে ভাল। আপনি যদি শুধু একটা নতুন টায়ার লাগান, তা হলে এটাকে সেই টায়ারের সঙ্গে জোড়া করুন, যেটার খাঁজকাটা পৃষ্ঠটা বেশি ক্ষয়ে যায়নি যাতে ব্রেক করার সময় সমানভাবে ঘর্ষণ হয়।

বিভিন্ন ধরনের, মাপের ও মডেলের টায়ার থেকে একটা টায়ার বাছাই করা বিভ্রান্তি জন্মাতে পারে। কিন্তু, কয়েকটা বিশেষ প্রশ্নের উত্তর পাওয়ার দ্বারা আপনি এই কাজটা আরও বেশি সহজ বলে মনে করবেন। প্রথমে, গাড়ির নির্মাতার সুপারিশগুলোতে চোখ বোলান। আপনার গাড়ির কিছু নির্দিষ্ট দাবি রয়েছে যেগুলো বিবেচনা করার দরকার আছে, যেমন টায়ার ও চাকার মাপ, গ্রাউন্ড ক্লিয়ারেন্স অর্থাৎ গাড়ির নিম্ন ভাগ থেকে ভূমির দূরত্ব এবং গাড়ির ভার বহনের ক্ষমতা। আপনার গাড়ির নকশাটাও হল এক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আধুনিক গাড়িগুলোতে থাকা আ্যন্টিলক ব্রেক, ট্র্যাকশন কন্ট্রোল অর্থাৎ ঘর্ষণ নিয়ন্ত্রণ করার ব্যবস্থা এবং অল হুইল ড্রাইভ সিসটেম এমন টায়ারগুলোতে ব্যবহার করার জন্য তৈরি করা হয়েছে, যেগুলোকে চালানোর কিছু নির্দিষ্ট বৈশিষ্ট্য রয়েছে। আপনার গাড়ির ওনার্স ম্যানুয়েলে সাধারণত টায়ার সম্বন্ধে বিস্তারিত বর্ণনা থাকে।

আরেকটা বিবেচনার বিষয় হল রাস্তার অবস্থা। আপনার গাড়ি কি অধিকাংশ সময়ে কাঁচা রাস্তায় নাকি পাকা রাস্তায়, বৃষ্টিবাহুল নাকি শুষ্ক আবহাওয়ায় চালানো হবে? সম্ভবত, আপনি হয়তো বিভিন্ন অবস্থায় চালাবেন। সেই ক্ষেত্রে, আপনার হয়তো শক্ত-নরম, উঁচুনিচু সব ধরনের জমি ও রাস্তায় অথবা সব ঋতুতে ব্যবহার করার মতো টায়ারের প্রয়োজন।

এ ছাড়া, টায়ার ব্যবহারের মেয়াদ এবং ট্র্যাকশন রেটিং অর্থাৎ টায়ারের উত্তোলন শক্তির হার বিবেচনা করা উচিত। সাধারণত, টায়ারের খাঁজকাটা পৃষ্ঠ যত নরম হবে, টায়ারে তত বেশি ঘর্ষণ অর্থাৎ ট্র্যাকশন হবে কিন্তু তাতে টায়ার খুব শীঘ্রই ক্ষয়ে যাবে। অপরদিকে, টায়ারের খাঁজকাটা পৃষ্ঠ যদি তুলনামূলকভাবে শক্ত পদার্থগুলো দিয়ে তৈরি হয়, তা হলে টায়ারে ঘর্ষণ কম হবে কিন্তু সম্ভবত সেটা বেশি দিন টিকবে। গাড়ির উত্তোলন শক্তির হার সাধারণত টায়ার যেখানে বিক্রি হয় সেখানে পাওয়া যায়। এটা জেনে রাখুন যে, বিভিন্ন নির্মাতার কাছে গাড়ির উত্তোলন শক্তির হার ভিন্ন হবে।

আপনার সন্ধান করার পরিধি কমিয়ে আনার পর, মূল্যই হয়তো আপনার চূড়ান্ত বাছাই নির্ধারণ করবে। সুপরিচিত নির্মাতারা সাধারণত গাড়ির উন্নত গুণগত মানের আশ্বাস এবং ভাল গ্যারান্টি দিয়ে থাকে।

আপনার টায়ারের যত্ন নেওয়া

সঠিকভাবে টায়ারের যত্ন নেওয়ার মধ্যে তিনটে বিষয় অন্তর্ভুক্ত: টায়ারে হাওয়ার চাপকে সঠিক রাখা, নিয়মিতভাবে টায়ারগুলো আবর্তিত করা এবং সেগুলোর ব্যালেন্স ও আ্যলাইনমেন্ট ঠিক রাখা। টায়ারে হাওয়ার চাপকে সঠিক রাখা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। টায়ারে যদি অতিরিক্ত হাওয়া থাকে, তা হলে টায়ারের খাঁজকাটা পৃষ্ঠের মাঝাখানটা সময়ের আগেই ক্ষয় পাবে। অপরদিকে, টায়ারে হাওয়ার চাপ যদি খুবই কম থাকে, তা হলে টায়ারের ধারগুলো খুব বেশি ক্ষয় পাবে আর ফলে গাড়ি বেশি তেল টানবে।

প্রতি মাসে টায়ার থেকে হয়তো আধ কিলো বা একটু বেশি হাওয়ার চাপ কমে যেতে পারে কারণ রবারের মধ্যে দিয়ে হাওয়া একটু একটু করে বের হয়ে যেতে থাকে। তাই, ভেবে নেবেন না যে, টায়ারের আকার দেখে আপনি নির্ধারণ করতে পারবেন যে, আপনার টায়ারে হাওয়ার চাপ সঠিক রয়েছে। রবার নির্মাতা সংঘের বিবৃতি অনুযায়ী, “একটা টায়ার থেকে হাওয়ার চাপ প্রায় অর্ধেকটা কমে গেলেও সেটাকে চেপটা দেখাবে না!” তাই, টায়ারের হাওয়ার চাপ দেখতে প্রেশার গজ অর্থাৎ হাওয়ার চাপ মাপার যন্ত্র ব্যবহার করুন এবং অন্তত মাসে একবার তা দেখুন। বহু গাড়ির চালক সুবিধার জন্য তাদের গ্লাভ বক্সে একটা প্রেশার গজ রাখে। যখনই আপনি গাড়ির সারভিসিং করান, সবসময় আপনার টায়ার পরীক্ষা করুন আর একমাত্র তখনই করুন যখন টায়ারগুলো ঠাণ্ডা অবস্থায় থাকে—আরেক কথায়, যখন সেগুলো কমপক্ষে প্রায় তিন ঘন্টা ধরে চলেনি অথবা যখন গাড়িটাকে ১.৫ কিলোমিটারেরও কম পথ চালানো হয়েছে। সাধারণত, টায়ারের হাওয়ার চাপ সম্বন্ধে বিস্তারিত বর্ণনা ওনার্স ম্যানুয়েলে অথবা চালকের দরজার ধারে একটা লেবেল হিসেবে, তেল ভরার ট্যাংকের ঢাকনায় বা গ্লাভ বক্সে থাকে। আপনি যদি গাড়ি চালানোর সময় ঝাঁকুনি এড়াতে চান, তা হলে টায়ারে হাওয়া ভরার সময় হাওয়ার চাপকে সবচেয়ে উঁচুতে রাখবেন না, যেগুলোর সাইডওয়াল মোল্ড করা থাকে।

টায়ারগুলোকে যদি আপনি নিয়মিতভাবে আবর্তিত করেন, তা হলে এগুলো বেশি দিন চলবে ও সমানভাবে ক্ষয় পাবে। আপনার গাড়ির নির্মাতা যদি অন্য কিছু সুপারিশ না করে থাকেন, তা হলে প্রতি ১০,০০০ থেকে ১৩,০০০ কিলোমিটার পথ চালানোর পর টায়ারগুলো আবর্তিত করানো ভাল। আবর্তিত করার নমুনা সম্বন্ধে দেওয়া পরামর্শের জন্য আবারও আপনার ওনার্স ম্যানুয়েলটা দেখুন।

পরিশেষে, প্রতি বছর অথবা যখনই আপনি আপনার গাড়ির স্টিয়ারিংয়ে কোনো ধরনের অসাধারণ কম্পন বা অন্যান্য সমস্যা লক্ষ করেন, তখন আপনার টায়ারের আ্যলাইনমেন্টটা পরীক্ষা করিয়ে নিন। যদিও আপনার গাড়িতে সাসপেনশন সিস্টেমকে বিভিন্ন ধরনের ভারবহনে, টায়ারগুলোকে আ্যলাইন করার জন্য তৈরি করা হয়েছে কিন্তু সাধারণভাবে ক্ষয় ও বিদীর্ণ হওয়ার জন্য সেগুলো নিয়মিতভাবে পরীক্ষা করা ও পুনরায় আ্যলাইন করার প্রয়োজন রয়েছে। সাসপেনশন ও চাকার আ্যলাইনমেন্ট করার লাইসেন্স রয়েছে এমন একজন দক্ষ মেকানিক আপনার গাড়িকে সঠিক আ্যলাইনমেন্টে রাখতে পারবেন, যার ফলে টায়ার আরও বেশি দিন চলবে ও গাড়িও স্বচ্ছন্দভাবে চালানো যাবে।

“বুদ্ধিমান” টায়ার

কমপিউটারের সাহায্যে কিছু গাড়ি, টায়ারে যখন হাওয়ার চাপ নিরাপদের বাইরে চলে যায় তখন চালককে সংকেত দেয়। কিছু টায়ার হাওয়ার চাপ ছাড়াও, অল্প সময়ের জন্য নিরাপদভাবে চলতে থাকতে পারে আর অন্যগুলো ফুটো হয়ে যাওয়ার পরও নিজে নিজেই ফুটোটা বন্ধ করে নেয়। বাস্তবিকই, প্রকৌশলীরা এমন ধরনের টায়ারগুলো তৈরি করছে যেগুলো সবধরনের পরিস্থিতিতে চালানো যেতে পারে।

আধুনিক গাড়িগুলোকে যতই আধুনিক উপাদান দিয়ে তৈরি করা হচ্ছে, টায়ারের খাঁজকাটা পৃষ্ঠ, সাসপেনশন, স্টিয়ারিং ও ব্রেক লাগানোর সিস্টেমে যত উন্নতি আনা হচ্ছে, ততই টায়ার গাড়িকে শুধু স্বচ্ছন্দভাবেই নয় কিন্তু নিরাপদে চালাতে সক্ষম করছে। (g০৪ ৬/৮)

[পাদটীকা]

^ আপনার টায়ার পরীক্ষা করে দেখার জন্য সাহায্য পেতে, ২৯ পৃষ্ঠার তালিকাটা দেখুন।

[২৯ পৃষ্ঠার তালিকা/চিত্রগুলো]

টায়ারের যত্ন নেওয়ার তালিকা

বাহ্যিক পরীক্ষাগুলো:

❑ টায়ারের সাইডওয়াল অর্থাৎ গাটা কি ফুলে উঠেছে?

❑ টায়ারের খাঁজকাটা পৃষ্ঠে কি তারগুলো দেখা যাচ্ছে?

❑ টায়ারের ট্রেড অর্থাৎ খাঁজকাটা ভাগগুলো কি ঘষে গেছে অথবা টায়ারের ওয়ের বারগুলো কি দেখা যাচ্ছে?

এগুলোও বিবেচনা করুন:

❑ টায়ারে হাওয়ার চাপ সম্বন্ধে গাড়ির নির্মাতার দেওয়া সুপারিশ মতো কি হাওয়া ভরা আছে?

❑ টায়ারগুলো আবর্তন করার সময় কি হয়েছে? (গাড়ি কতদূর চালানোর পর এবং কী নমুনায় টায়ারগুলো আবর্তন করতে হবে, সেই সম্বন্ধে দেওয়া গাড়ির নির্মাতার পরামর্শ কাজে লাগান।)

❑ ঋতুর পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে কি ভিন্ন টায়ার লাগাতে হবে?

[চিত্র]

ওয়ের বার

[২৮ পৃষ্ঠার ডায়াগ্রাম]

(পুরোপুরি ফরম্যাট করা টেক্সটের জন্য এই প্রকাশনা দেখুন)

টায়ারের বিভিন্ন অংশ

ট্রেড ঘর্ষণ জোগায় এবং মোড়ে বাঁক নেওয়ার সময় গাড়িকে আঁকড়ে ধরে রাখে

বেল্টস ট্রেডকে স্থির রাখে ও মজবুত করে

সাইডওয়াল টায়ারের ধারকে খারাপ রাস্তা ও রাস্তার এবড়োখেবড়ো কিনারা থেকে বাঁচায়

বডি প্লাই টায়ারকে মজবুত ও নমনীয় করে

ইনার লাইনার টায়ারের মধ্যে হাওয়াকে আটকে রাখে

বিড চাকার সঙ্গে টায়ারকে ধরে রেখে হাওয়া বেরোতে দেয় না

[২৭ পৃষ্ঠার চিত্রগুলো]

প্রাচীন সময়ের এক সাইকেল ও গাড়ি, দুটোতেই হাওয়া ভরা টায়ার লাগানো রয়েছে; প্রাচীন সময়ের এক টায়ার কারখানায় কর্মীরা

[সৌজন্যে]

The Goodyear Tire & Rubber Company