বিশ্ব নিরীক্ষা
বিশ্ব নিরীক্ষা
বিক্রির জন্য ধর্মোপদেশ
“ধর্মোপদেশ তৈরি করার কঠোর প্রচেষ্টায় রত অত্যন্ত পরিশ্রমী যাজকরা, তাদের প্রার্থনার উত্তর পেয়েছে: চার্চ অফ ইংল্যান্ড এর একজন গির্জার উপদেষ্টার দ্বারা এক নতুন ওয়েবসাইট চালু হয়েছে, যা সব উপলক্ষের জন্য ধর্মোপদেশ উপস্থাপন করছে,” লন্ডনের দ্যা ডেইলি টেলিগ্রাফ রিপোর্ট করে। এই ওয়েবসাইটের লেখক বব অস্টিন বলেন: “আজকাল প্রচারকরা দিন দিন খুবই ব্যস্ত হয়ে পড়ছে এবং ধর্মোপদেশগুলোর অগ্রাধিকার যেন একেবারে কমেই গেছে।” তিনি “নির্ভরযোগ্য, তৈরি করা ধর্মোপদেশ” জোগানোর দাবি করেন, যেগুলো হচ্ছে “চিন্তা-উদ্রেগকারী, অনুপ্রেরণাদায়ক ও শিক্ষামূলক।” সম্প্রতি, এই ওয়েবসাইট “৫০টারও বেশি ‘পুলপিটে পরীক্ষিত’ ধর্মোপদেশ তালিকাবদ্ধ করে, যেগুলো বাইবেলের বিভিন্ন পদ ও বিষয়বস্তুর ওপর আলোচনা করে” কিন্তু এগুলো অতিরঞ্জিত বা শাস্ত্রীয় বির্তকমূলক মতবাদগুলোর ওপর আলোচনা এড়িয়ে চলে, খবরের কাগজ ব্যাখ্যা করে। “মণ্ডলীর বোধগম্য ১০ থেকে ১২ মিনিটের এক” লম্বা ধর্মোপদেশ হিসেবে এগুলো বর্ণিত, যেগুলোর প্রতিটার দাম হচ্ছে ১৩ মার্কিন ডলার। (g০৪ ৬/৮)
নিকোটিনের প্রতি আসক্তি—আরও দ্রুত
“সিগারেটে প্রথম টান দেওয়াই কমবয়সী কিশোর-কিশোরীকে এর প্রতি আসক্ত করতে যথেষ্ট হতে পারে,” কানাডার ন্যাশনাল পোস্ট খবরের কাগজ রিপোর্ট করে। “এই লক্ষণীয় অনুসন্ধানটি নিকোটিনের প্রতি আসক্তি সম্বন্ধে সেই প্রচলিত দৃষ্টিভঙ্গির বিপরীত যে, আসক্তি ক্রমান্বয়ে হয়ে থাকে, যা কেবলমাত্র বহু বছর ঘনঘন ধূমপান করার কারণে হয়ে থাকে।” প্রায় ছয় বছর ধরে ১,২০০ জন কিশোর-কিশোরীর ওপর করা এক সমীক্ষায় গবেষকরা জানতে পেরেছে যে, “শারীরিক আসক্তি বন্ধুবান্ধবদের চাপের চেয়েও অনেক বেশি শক্তিশালী, এমনকি তাদের ক্ষেত্রেও যারা ন-মাসে ছ-মাসে একবার ধূমপান করেছিল,” খবরের কাগজ বলে। সেই সমীক্ষা অনুযায়ী, “তামাক সেবনকারী অনেক অল্পবয়সীর মধ্যে নিকোটিনের ওপর নির্ভরশীল হওয়ার লক্ষণগুলো, তারা যখন প্রথমবার ধূমপান করছে ও প্রতিদিন ধূমপান করতে শুরু করেছে সেই মাঝামাঝি সময়ে দেখা যায়।” গবেষকরা বলে যে, ধূমপানবিরোধী অভিযানগুলো যেন চালানো হয়, শুধুমাত্র ধূমপান করার চাপকে প্রতিরোধ করতে অল্পবয়সীদের সাহায্য করার জন্যই হয় কিন্তু সেইসঙ্গে তাদেরও সাহায্য করার জন্য, যারা নিকোটিনের ওপর নির্ভরশীলতাকে কাটিয়ে ওঠার জন্য ধূমপান করে আসছে। (g০৪ ৫/২২)
রাস্তায় বসবাসকারী কিশোর-কিশোরীদের সংখ্যা বৃদ্ধি
“মাদ্রিদের রাস্তায় বসবাসকারী কিশোর-কিশোরীদের সংখ্যা ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পেয়ে চলেছে,” স্প্যানিশের এক দৈনিক খবরের কাগজ এল পাইস এর ইংরেজি সংস্করণ রিপোর্ট করে। বিশ্ববিদ্যালয়ের এক গবেষণা অনুযায়ী, “মাদ্রিদের ৫,০০০ গৃহহীন লোকের মধ্যে প্রায় ১,২৫০ জনের বয়স ছিল ২০-র নিচে, যখন তারা ঘর ছাড়া হয়।” গবেষণা প্রকাশ করেছিল যে, “অধিকাংশ গৃহহীন কিশোর-কিশোরীই বিভক্ত পরিবারগুলো থেকে এসেছে এবং স্পষ্টতই জীবনে তারা মানসিক আঘাত পেয়েছে।” বস্তুত, “প্রতি তিন জন কিশোর-কিশোরীর মধ্যে দুজনই মদ্যপায়ী নতুবা মাদক সেবনকারীদের সন্তান এবং একই সংখ্যক কিশোর-কিশোরী ঘরে নিপীড়নের শিকার হয়েছে।” এই রিপোর্টের একজন সম্পাদক, ম্যানুয়েল মুনয়োস বলেছিলেন যে, “ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলের সংস্কৃতিতে আদর্শ পরম্পরাগত পারিবারিক বন্ধনগুলো লুপ্ত হতে শুরু করেছে।” (g০৪ ৫/৮)
“গোলগালদের” জন্য এক সৈকত
মেক্সিকোতে একটা হোটেল এমন লোকেদের জন্য একটা জায়গা আলাদা করে রেখেছে, যারা সেই সৈকতে যেতে লজ্জা পায়, যেখানে রোগাপাতলা লোকেদের ভিড় রয়েছে, এল একোনোমিসটা খবরের কাগজ রিপোর্ট করে। ক্যানকুনের সৈকতে অবস্থিত এক হোটেল এই স্লোগানটি বেছে নিয়েছে, “মোটা হোন ও হাসিখুশি থাকুন।” এই হোটেলের লক্ষ্য হচ্ছে “এমন ব্যক্তিদের আকর্ষণ করা, যারা অতিরিক্ত মোটা হওয়ায় তাদের সাঁতারের পোশাক পরে সৈকতে যেতে ভয় পায়।” রিপোর্ট এভাবে বলে, হোটেলের কর্মীরা যাদের মধ্যে মোটা পাতলা সব ধরনের লোক রয়েছে, তারা ছুটি কাটাতে আসা মোটাসোটা লোকেদের হেয় না করার জন্য প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত, “যেহেতু এই লোকেরা ইতিমধ্যেই তাদের দৈনন্দিন জীবনে প্রচণ্ডভাবে অবজ্ঞাত হয়েছে।” (g০৪ ৫/৮)
সাবধান, বাচ্চারা আত্মহত্যা করছে
“আত্মহত্যা করার চেষ্টা করে বা আত্মহত্যা করছে, এমন বাচ্চাদের মধ্যে শতকরা ৮০ জন বেশ কয়েক দিন বা মাস আগেই, মৌখিক বা লিখিতভাবে তা জানিয়ে দেয়,” মেক্সিকো সিটির মিলেনিও খবরের কাগজ রিপোর্ট করে। যে-প্রধান কারণগুলোর জন্য নাবালক বাচ্চারা বেঁচে থাকার আকাঙ্ক্ষা হারিয়ে ফেলে সেগুলো হল খারাপ ব্যবহার (শারীরিক, মানসিক বা মৌখিক), যৌন নিপীড়ন, পরিবারের বিভাজন ও স্কুল সংক্রান্ত সমস্যাগুলো। মেক্সিকান ইন্সটিটিউট অফ সোশ্যাল সিকিউরেটি-র একজন মনোবিজ্ঞান বিশেষজ্ঞ হোসে লুইস ব্যাসকেসের কথা অনুযায়ী, টেলিভিশন ও চলচিত্র, ভিডিও গেমস ও বইপত্রে মৃত্যু এত সাধারণ বিষয় হয়ে উঠেছে যে, বাচ্চারা জীবনের মূল্য সম্বন্ধে এক ভুল ধারণা গড়ে তুলেছে। তিনি আরও বলেন যে, আট থেকে দশ বছর বয়সী প্রতি ১০০ জন বাচ্চার মধ্যে ১৫ জন আত্মহত্যা করার চিন্তা পোষণ করে এবং তাদের মধ্যে শতকরা ৫ জন তা করায় সফল হয়েছে। খবরের কাগজ অনুরোধ জানায় যে, বাচ্চারা যখন আত্মহত্যা করার বিষয়টা উল্লেখ করে, তখন সেটাকে কেবলমাত্র হুমকি বা মনোযোগ আকর্ষণ করার চেষ্টা ভেবে অগ্রাহ্য করার পরিবর্তে সাবধান হোন। এটা আরও বলে: “বাবামায়েদের উচিত তাদের বাচ্চাদের জন্য সময় দেওয়া ও তাদের সঙ্গে খেলাধুলা করা, কখনও ভাববিনিময় করা বন্ধ করবেন না এবং সবসময় তাদের প্রতি ভালবাসা দেখান।” (g০৪ ৫/২২)
গরুদের মূল্য কি মানুষের চেয়েও বেশি?
বিশ্বে ধনী ও দরিদ্রদের মধ্যে ব্যবধান দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। গত ২০ বছরেরও বেশি সময় ধরে, অতি দরিদ্র দেশগুলো (৭০ কোটি অধিবাসী) বিশ্বের বাণিজ্যে যতটা অবদান রাখে তা ১ শতাংশ থেকে ০.৬ শতাংশে নেমে গেছে। “বর্তমানে, আফ্রিকার কালো চামড়ার জনসংখ্যার অধিকাংশই গত এক প্রজন্মের চেয়ে আরও বেশি গরিব,” শ্যাল্যাজঁ পত্রিকায় ফরাসি অর্থনীতিবিদ ফিলিপ ইয়ুরগেনসেন লেখেন। উদাহরণস্বরূপ, ইথিওপিয়াতে ৬ কোটি ৭০ লক্ষ লোক, লুক্সেমবুর্গের ৪,০০,০০০ বাসিন্দার এক-তৃতীয়াংশ ধনসম্পদের ওপর জীবনযাপন করে। ইয়ুরগেনসেন লক্ষ করেছেন যে, ইউরোপের কৃষকদের সরকারের কাছ থেকে প্রত্যেকটা গরুর জন্য প্রতিদিন ১৫০ টাকা করে পাওয়ার অধিকার রয়েছে, অথচ প্রায় ২৫০ কোটি লোক প্রতিদিন এর চেয়েও অল্প টাকায় জীবনযাপন করে। তাই, বিশ্বের অনেক জায়গায়, “একজন গরিব ব্যক্তির মূল্য একটা গরুর চেয়েও কম,” ইয়ুরগেনসেন বলেন। (g০৪ ৬/৮)
মাতাল বাচ্চারা
ব্রিটেনে, ৫০টা হাসপাতালের দুর্ঘটনা ও জরুরি বিভাগগুলোতে করা একটা সমীক্ষা দেখায় যে, “প্রচুর মদ খাওয়ার কারণে ছোট বাচ্চাদের এমনকি ছয় বছর বয়সের বাচ্চাদের হাসপাতালে ভরতি করা হচ্ছে,” লন্ডনের দ্যা ডেইলি টেলিগ্রাফ রিপোর্ট করে। একটা হাসপাতালের ডাক্তার ও নার্সরা রিপোর্ট করেছে যে, গ্রীষ্মের ছুটির সময়ে এক সপ্তাহে ১০০ জনের মতো বাচ্চাকে মাতাল হওয়ার কারণে চিকিৎসা করা হয়েছে। “শতকরা ৭০ জনেরও বেশি কর্মচারী মনে করে যে, মদের অপব্যবহারের কারণে হাসপাতালে ভরতি হওয়ার বাচ্চাদের বয়স দিন দিন কমছে” খবরের কাগজ বলে। এ ছাড়া, সাম্প্রতিক এক সরকারি রিপোর্ট দেখায় যে, ব্রিটেনে মদ সংক্রান্ত কারণে হওয়া মৃত্যুগুলো গত ২০ বছরে তিনগুণ বেড়ে গেছে। (g০৪ ৬/৮)
বিশ্ব জুড়ে স্বাস্থ্য সংক্রান্ত এক বিপদ
বিশ্ব “সবচেয়ে বড় স্বাস্থ্য সংক্রান্ত বিপদগুলোর একটার” দিকে এগিয়ে যাচ্ছে, যে-বিপদ আগে কখনও ঘটেনি আর সেটা হল ডায়াবিটিসের এক বিরাট বৃদ্ধির সংকেত, ইন্টারন্যাশনাল ডায়াবিটিস ফেডারেশন (আইডিএফ) এর সভাপতি, ব্রিটেনের অধ্যাপক স্যার জর্জ এলবার্টি সাবধান করেছেন। আইডিএফ এর পরিসংখ্যান অনুযায়ী, বিশ্বে ৩০ কোটিরও বেশি লোকের শর্করা বিপাক করার ক্ষমতা দুর্বল হয়ে পড়েছে, প্রায় যে-কারণে ডায়াবিটিস হয়, ব্রিটেনের গার্ডিয়ান খবরের কাগজ রিপোর্ট করে। টাইপ ২ ডায়াবিটিস, যা একসময় মূলত বয়স্কদের হতো, তা এখন ব্রিটেনের অল্পবয়সীদের স্বাস্থ্যকে আক্রান্ত করছে, কারণ তারা আজেবাজে খাবার খায় এবং ব্যায়াম না করার ফলে অতিরিক্ত মোটা হয়ে গেছে। “সবচেয়ে দুঃখজনক বিষয়টা হল, এটার [ডায়াবিটিস ও তার পরিণতিগুলোর] বেশিটাই জীবনধারণে রদবদল আনার দ্বারা রোধ করা যায়,” এলবার্টি বলেন। এ ছাড়া, উন্নয়নশীল দেশগুলোতেও ডায়াবিটিস বৃদ্ধি পেতে পারে, যখন তারা “সমৃদ্ধশালী দেশগুলোর অস্বাস্থ্যকর খাবারদাবার ও শহুরে জীবনযাপনকে” গ্রহণ করে, গার্ডিয়ান মন্তব্য করে। (g০৪ ৬/২২)