সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

কুসংস্কারের মূল

কুসংস্কারের মূল

কুসংস্কারের মূল

কুসংস্কারের বেশ কয়েকটা কারণ থাকতে পারে। তা সত্ত্বেও, দুটো সু-প্রমাণিত কারণ হল, (১) দোষ চাপানোর জন্য কাউকে খোঁজার আকাঙ্ক্ষা এবং (২) অবিচারের ইতিহাসের কারণে বিরক্তি।

ঠিক আগের প্রবন্ধে যেমন উল্লেখ করা হয়েছিল, যখন বিপর্যয় দেখা দেয়, তখন লোকেরা প্রায়ই দোষ চাপানোর জন্য কাউকে খুঁজতে থাকে। বিশিষ্ট ব্যক্তিরা যখন সংখ্যালঘু দলগুলোর বিরুদ্ধে বার বার অভিযোগ তোলে, তখন সেটাকে গ্রহণ করা হয় এবং এক কুসংস্কারের জন্ম নেয়। উল্লেখ করার মতো এক সাধারণ উদাহরণ হল, পশ্চিমা দেশগুলোতে অর্থনৈতিক মন্দার সময়, অভিবাসী কর্মীদের প্রায়ই বেকারত্বের জন্য দোষ দেওয়া হয়—যদিও তারা সচরাচর এমন কাজগুলো করে, যা বেশির ভাগ স্থানীয় লোকেরা করতে রাজি নয়।

কিন্তু, সমস্ত কুসংস্কার দোষ চাপানোর জন্য কাউকে খোঁজার মাধ্যমে উদ্ভব হয় না। ইতিহাসও এর ভিত্তি হতে পারে। “এটা খুব বেশি বাড়িয়ে বলা হবে না যে, দাসব্যাবসা কালো চামড়ার লোকেদের জন্য জাতিবিদ্বেষ এবং সাংস্কৃতিক অবজ্ঞার বৌদ্ধিক কাঠামো গড়ে তুলেছে,” জাতিবিদ্বেষের বিরুদ্ধে ইউনেস্কো (ইংরেজি) রিপোর্ট উল্লেখ করে। দাস ব্যবসায়ীরা এই দাবি করার মাধ্যমে তাদের অপমানজনক মানুষ বেচা-কেনার ন্যায্যতা প্রতিপাদন করার চেষ্টা করেছিল যে, আফ্রিকার লোকেরা নিচুস্তরের ছিল। এই ভিত্তিহীন কুসংস্কার, যা পরে অন্যান্য ঔপনিবেশিক লোকেদেরও অন্তর্ভুক্ত করার জন্য প্রসারিত হয়েছিল, তা এখনও বিদ্যমান রয়েছে।

পৃথিবীর সমস্ত জায়গায় অত্যাচার এবং অবিচারের অনুরূপ ইতিহাস কুসংস্কারকে টিকিয়ে রেখেছে। আয়ারল্যান্ডে ক্যাথলিক এবং প্রটেস্টান্টদের মধ্যে শত্রুতা ষোড়শ শতাব্দীতে উদ্ভব হয়েছিল, যখন ইংল্যান্ডের শাসকরা ক্যাথলিকদের তাড়না এবং নির্বাসিত করেছিল। ধর্মযুদ্ধের সময়ে তথাকথিত খ্রিস্টানদের দ্বারা সংঘটিত বর্বরতা এখনও মধ্যপ্রাচ্যের মুসলিমদের মধ্যে প্রতিকূল অনুভূতি জাগিয়ে তোলে। বলকান অঞ্চলের সার্বীয় এবং ক্রোয়েশীয়র শত্রুতা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় বেসামরিক হত্যাকাণ্ড দ্বারা বৃদ্ধি পেয়েছিল। এই উদাহরণগুলো যেমন দেখায়, দুই দলের মধ্যে শত্রুতার ইতিহাস কুসংস্কারকে পুনরায় জাগিয়ে তুলতে পারে।

অজ্ঞতার বৃদ্ধি

একটা শিশুর হৃদয়ে কুসংস্কার থাকে না। এর বৈসাদৃশ্যে, গবেষকরা বলে যে, একটা শিশু প্রায়ই ভিন্ন জাতির কোনো শিশুর সঙ্গে স্বচ্ছন্দে খেলাধুলা করে থাকে। কিন্তু, ১০ অথবা ১১ বছর বয়সে সে হয়তো আরেকটা উপজাতি, বর্ণ অথবা ধর্মীয় লোকেদের প্রত্যাখ্যান করে। তার বর্ধনশীল বছরগুলোতে সে এমন দৃষ্টিভঙ্গিগুলো অর্জন করে, যা হয়তো জীবনভর থেকে যায়।

কীভাবে এই ধারণাগুলো শেখা হয়? একটা শিশু নেতিবাচক মনোভাবগুলো—বলা অথবা না বলা উভয়ই—গ্রহণ করে প্রথম তার বাবামা এবং এরপর তার বন্ধুবান্ধব ও শিক্ষকদের কাছ থেকে। এরপর প্রতিবেশী, সংবাদপত্র, রেডিও অথবা টেলিভিশন হয়তো তাকে আরও প্রভাবিত করে। যদিও সে হয়তো যে-দলকে অপছন্দ করে, সেটা সম্বন্ধে সামান্য জানে অথবা কিছুই জানে না কিন্তু সময়ের প্রবাহে বড় হতে হতে সে এই উপসংহারে এসে থাকে যে, তারা নিচুস্তরের এবং নির্ভরযোগ্য নয়। সে এমনকি তাদের ঘৃণা করতে পারে।

ভ্রমণ এবং বাণিজ্যের বৃদ্ধির কারণে অনেক দেশে বিভিন্ন সংস্কৃতির এবং সাম্প্রদায়িক দলগুলোর মধ্যে সংযোগ বৃদ্ধি পেয়েছে। তা সত্ত্বেও, যে-ব্যক্তি বদ্ধমূল কুসংস্কার গড়ে তুলেছেন, তা সাধারণত তার পূর্বের ধারণার সঙ্গে সংযুক্ত। তিনি হয়তো হাজার হাজার অথবা এমনকি লক্ষ লক্ষ লোক সম্বন্ধে বাঁধাধরা ধারণা করতে পারেন এমন মনে করে যে, এদের সকলেরই কোনো নির্দিষ্ট খারাপ গুণাবলি রয়েছে। যেকোনো নেতিবাচক অভিজ্ঞতা, এমনকি সেটাতে সেই দলের কেবল একজন ব্যক্তি জড়িত থাকলেও, তা তার কুসংস্কারকে পুনরুজ্জীবিত করতে সহায়তা করে। অন্যদিকে, ইতিবাচক অভিজ্ঞতাগুলোকে সাধারণত নিয়মের ব্যক্তিক্রম বলে উপেক্ষা করা হয়।

মুক্ত হওয়া

যদিও বেশির ভাগ লোক মূলত কুসংস্কারকে নিন্দা করে কিন্তু খুব কম লোকই এর প্রভাব থেকে বেরিয়ে আসে। বস্তুত, গভীরভাবে কুসংস্কারাচ্ছন্ন অনেকে দাবি করবে যে তারা তা নয়। অন্যেরা বলে যে, এটা কোনো বিষয়ই নয় বিশেষভাবে লোকেরা যদি তাদের কুসংস্কার নিজেদের মধ্যে রেখে দেয়। কিন্তু, কুসংস্কার সত্যিই একটা বিষয় কারণ এটা লোকেদের কষ্ট দেয় এবং তাদের বিভক্ত করে দেয়। কুসংস্কার যদি হয় অবজ্ঞাত শিশু, তা হলে ঘৃণা হল প্রায়ই এই শিশুর সন্তান। গ্রন্থকার চার্লস কেলেব কোল্টন (১৭৮০?-১৮৩২) উল্লেখ করেন: “আমরা কিছু লোককে ঘৃণা করি কারণ আমরা তাদের জানি না; আর আমরা তাদের জানব না কারণ আমরা তাদের ঘৃণা করি।” তা সত্ত্বেও, কুসংস্কার যদি শেখা যায়, তা হলে সেটাকে ভোলাও যাবে। কীভাবে? (g০৪ ৯/৮)

[৭ পৃষ্ঠার বাক্স]

ধর্ম—সহিষ্ণু অথবা কুসংস্কারের উদ্দীপক?

গর্ডন ডাব্‌লিউ. আলপর্ট তার কুসংস্কারের প্রকৃতি (ইংরেজি) বইয়ে বলেন যে, “গড়ে, গির্জার সদস্যরা ন-সদস্যদের চেয়ে বেশি কুসংস্কারাচ্ছন্ন বলে মনে হয়।” এটা আশ্চর্যের কিছু নয় কারণ ধর্ম প্রায়ই স্বস্তির পরিবর্তে কুসংস্কারের কারণ হয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে পাদরিরা যিহুদি-বিদ্বেষ মনোভাবকে উসকে দিয়েছে। খ্রিস্টধর্মের ইতিহাস (ইংরেজি) অনুসারে, হিটলার একবার মন্তব্য করেছিলেন: “যিহুদিদের বিষয়ে আমি কেবল সেই একই নীতি চালিয়ে যাচ্ছি, যা ক্যাথলিক গির্জা ১৫০০ বছর ধরে পোষণ করেছে।”

বলকানের অঞ্চলগুলোতে বর্বরতার সময় অর্থোডক্স এবং ক্যাথলিক শিক্ষাগুলো, অন্য ধর্মের বলে দাবি করে এমন প্রতিবেশীদের প্রতি সহিষ্ণুতা এবং সম্মান গড়ে তুলতে অক্ষম ছিল বলে মনে হয়।

একইভাবে, রুয়ান্ডাতে গির্জার সদস্যরা সহবিশ্বাসীদের হত্যা করেছিল। ন্যাশনাল ক্যাথলিক রিপোর্টার উল্লেখ করেছিল যে, সেখানে যে-যুদ্ধ হয়েছিল তা ছিল “এক বাস্তব এবং প্রকৃত গণহত্যা, যার জন্য দুঃখজনক হলেও সত্যি যে, এমনকি ক্যাথলিকরা দায়ী।”

স্বয়ং ক্যাথলিক গির্জা এর অসহিষ্ণুতার নথির বিষয়ে স্বীকার করেছে। ২০০০ সালে পোপ জন পল ২য় রোমে জনসমক্ষের এক ম্যাসে “অতীতের বিচ্যুতিগুলোর” জন্য ক্ষমা চেয়েছিলেন। সেই ধর্মীয় অনুষ্ঠানে “যিহুদি, মহিলা, স্বজাতি, অভিবাসী, দরিদ্র এবং অজাতদের প্রতি ধর্মীয় অসহিষ্ণুতা এবং অবিচারের” কথা নির্দিষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছিল।

[৬ পৃষ্ঠার চিত্র]

ওপরে: শরণার্থী শিবির, বসনিয়া এবং হার্জিগোভিনা, অক্টোবর ২০, ১৯৯৫

বসনিয়ার দুজন সার্বীয় শরণার্থী গৃহযুদ্ধ শেষ হওয়ার জন্য অপেক্ষা করছে

[সৌজন্যে]

Photo by Scott Peterson/Liaison

[৭ পৃষ্ঠার চিত্র]

ঘৃণা করতে শেখানো

একটা শিশু তার বাবামা, টেলিভিশন এবং অন্য কোথাও থেকে নেতিবাচক মনোভাব গ্রহণ করতে পারে