সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

বিয়ার সোনালী পানীয়র গল্প

বিয়ার সোনালী পানীয়র গল্প

বিয়ার সোনালী পানীয়র গল্প

চেক প্রজাতন্ত্রের সচেতন থাক! লেখক কর্তৃক

প্রচণ্ড তৃষ্ণার্ত একজন ব্যক্তির স্বপ্ন প্রায়ই কী হয়ে থাকে? অনেক দেশে, একজন শ্রমিক বা ব্যবসায়ী যে-ই হোন না কেন, তিনি হয়তো তার প্রিয় এক গ্লাস সোনালী পানীয়র কথাই ভাবতে পারেন। তিনি হয়তো উপচে পড়া, ফেনিয়ে ওঠা বুদ্‌বুদ ও সুস্বাদু তেতো স্বাদের কথা কল্পনা করতে পারেন। এরপর তিনি হয়তো মনে মনে বলবেন, ‘এক গ্লাস ঠাণ্ডা বিয়ারের জন্য আমি অনেক খরচ করতেও রাজি!’

বিয়ার বলতে গেলে প্রায় মানবজাতির ইতিহাসের মতোই পুরনো। হাজার হাজার বছর ধরে বিয়ার এর জনপ্রিয়তাকে ধরে রেখেছে আর অনেক এলাকায় এটা স্থানীয় সংস্কৃতির এক অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে উঠেছে। দুঃখজনক যে, বিশেষভাবে ইউরোপের কয়েকটা দেশে বিয়ার সেই লোকেদের জন্য সমস্যার এক উৎস হয়ে উঠেছে, যারা অতিরিক্ত পরিমাণে এটা গ্রহণ করে থাকে। কিন্তু, পরিমিত মাত্রায় গ্রহণ করলে এর অদ্বিতীয় গুণাগুণ ও সৌরভ এটা পান করাকে উপভোগ্যময় করে তোলে। আসুন আমরা এই জনপ্রিয় পানীয়র ইতিহাসটা একটু পরীক্ষা করে দেখি।

এর ইতিহাস কতটা পুরনো?

মেসোপটেমিয়ার প্রাচীন সুমেরীয় অঞ্চলে প্রাপ্ত কীলকাকার ফলকগুলো থেকে যেমন ইঙ্গিত পাওয়া যায় যে, সেখানে এমনকি সা.কা.পূ. তৃতীয় সহস্রাব্দে বিয়ার পাওয়া যেত। এ ছাড়া, সেই একই সময়কালে এই পানীয়টা বাবিলীয় এবং মিশরীয়দের টেবিলে পরিবেশন করা হতো। বাবিলে, যেখানে ১৯ রকমের বিয়ার পাওয়া যেত, সেখানে বিয়ার চোলাইকরণকে এমনকি হামুরাবি নীতিমালার অন্তর্ভুক্ত আইনগুলোর দ্বারা নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছিল। উদাহরণস্বরূপ, এই নিয়মগুলো বিয়ারের মূল্যকে নির্ধারণ করেছিল আর সেগুলো কোনোভাবে লঙ্ঘন করার শাস্তি ছিল মৃত্যুদণ্ড। প্রাচীন মিশরে, চোলাইকরণ ব্যাপকভাবে প্রচলিত ছিল আর বিয়ার ছিল এক অতি প্রিয় পানীয়। সেখানকার প্রত্নতাত্ত্বিক খননগুলো বিয়ার চোলাই করার সবচেয়ে পুরনো লিখিত প্রস্তুত প্রণালী প্রকাশ করেছিল।

চোলাইকরণের প্রযুক্তিবিদ্যা শেষ পর্যন্ত ইউরোপে ছড়িয়ে পড়েছিল। সাধারণ কালের শুরুতে কয়েক জন রোমীয় ইতিহাসবেত্তা উল্লেখ করেছিল যে, কেল্ট, জার্মান ও অন্যান্য উপজাতি বিয়ার খেতে পছন্দ করত। স্ক্যান্ডিনেভিয়ার জলদুস্যরা মনে করত যে এমনকি ভালহালাতে—নরডিক পৌরাণিক কাহিনী অনুসারে, মৃত্যুর পর সাহসী যোদ্ধারা যে-হলে যেত—সেখানে পুরুষদের কাপগুলোতে বিয়ার উপচে পড়ত।

ইউরোপে মধ্যযুগে বিয়ারের চোলাইকরণ সন্ন্যাসীদের মঠগুলোতে করা হতো। ইউরোপীয় সন্ন্যাসীরা সংরক্ষণ করার জন্য হপ লতার শুকনো ফল ব্যবহার করে প্রক্রিয়ার প্রযুক্তিকে উন্নত করেছিল। ঊনবিংশ শতাব্দীর শিল্পায়ন চোলাইকরণ প্রক্রিয়ায় যন্ত্রীকরণের সূত্রপাত করেছিল আর তা এই জনপ্রিয় পানীয়র ইতিহাসে এক মাইলফলক প্রমাণিত হয়েছে। এরপর, অতি গুরুত্বপূর্ণ কিছু বৈজ্ঞানিক আবিষ্কার করা হয়েছিল।

ফরাসি রসায়নবিদ ও জীবাণুবিজ্ঞানী লুই পাস্তুর আবিষ্কার করেছিলেন যে, ইস্ট জীবিত জীবাণুর সমন্বয়ে গঠিত ছিল, যা বিয়ারকে গাঁজাতে সাহায্য করত। এই আবিষ্কার চিনিকে আ্যলকোহলে রূপান্তর করাকে আরও সূক্ষ্মভাবে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব করেছিল। ডেনমার্কের উদ্ভিদবিজ্ঞানী ইমিল ক্রিসটিয়েন হ্যানসেন চোলাইকরণের ইতিহাসে সর্বমহান ব্যক্তিদের মধ্যে একজন হয়ে উঠেছিলেন। তিনি জীবনভর বিভিন্ন প্রজাতির ইস্ট নিয়ে গবেষণা ও শ্রেণীবিন্যাস করেছিলেন। অন্যান্য বিষয়গুলোর মধ্যে তার গবেষণার অন্তর্ভুক্ত ছিল চোলাইকারীদের ব্যবহৃত ইস্টের আসল প্রজাতিকে উদ্ভূত করা। এভাবে হ্যানসেন আক্ষরিকভাবে চোলাইকরণের ইতিহাসে আমুল পরিবর্তন ঘটিয়েছিলেন।

কিন্তু চোলাইকরণ কি আসলেই এতটা কঠিন? এটা হয়তো অবিশ্বাস্য মনে হতে পারে কিন্তু আসলেই তা বেশ কঠিন। আসুন আমরা সংক্ষেপে অতি সুস্বাদু এক গ্লাস বিয়ারের পিছনের রহস্যটা বিবেচনা করি।

আপনার গ্লাসে পৌঁছানোর আগে

শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে চোলাইকরণ প্রযুক্তিতে বিরাট পরিবর্তন ঘটেছে আর এমনকি আজও একেক চোলাইখানায় একেকরকমভাবে চোলাই করা হয়ে থাকে। কিন্তু, সাধারণত প্রায় সব বিয়ারেই চারটে প্রধান উপাদান থাকে: যব, হপ, জল এবং ইস্ট। চোলাইকরণের পুরো প্রক্রিয়াকে চারটে ধাপে ভাগ করা যেতে পারে: শস্যের মণ্ড তৈরি করা, যবসুরা প্রস্তুতিকরণ, গাঁজন প্রক্রিয়া এবং পরিপুষ্ট অবস্থায় পৌঁছানো।

শস্যের মণ্ড তৈরি করা। এই ধাপে যবকে বাছা হয়, মাপা হয় এবং অন্যান্য অপ্রয়োজনীয় বস্তু থেকে পরিষ্কার করা হয়। এরপর, এগুলোকে জলে ভিজিয়ে রাখা হয়—যব অঙ্কুরিত হওয়ার জন্য যা আবশ্যক। প্রায় ১৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় পাঁচ থেকে সাত দিনের মধ্যে অঙ্কুরোদ্‌গম ঘটে থাকে। এই প্রক্রিয়ায় প্রাপ্ত সর্বশেষ উৎপাদিত বস্তু হচ্ছে সবুজ মণ্ড, যেটাকে শুষ্ক করার জন্য বিশেষ চুল্লিতে নিয়ে যাওয়া হয়। অঙ্কুরোদ্‌গম থামানোর জন্য সবুজ মণ্ডের আর্দ্রতা ২ থেকে ৫ শতাংশের মধ্যে কমিয়ে আনা হয়। শুষ্ক প্রক্রিয়ার পর, অঙ্কুরগুলোকে মণ্ড থেকে সরিয়ে নেওয়া হয় আর এরপর মণ্ডকে চূর্ণ করা হয়। এখন এটা পরবর্তী পদক্ষেপের জন্য তৈরি।

যবসুরা প্রস্তুতিকরণ। মিশ্রণ উৎপন্ন করার জন্য চূর্ণ করা মণ্ডকে জলের সঙ্গে মেশানো হয় ও এরপর এটাকে ধীরে ধীরে গরম করা হয়। নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় এনজাইমগুলো শ্বেতসারগুলোকে সরল চিনিতে (মনোস্যাকারাইড) রূপান্তরিত করতে শুরু করে। এই ধাপটা চার ঘন্টারও বেশি স্থায়ী হয় এবং যবসুরা উৎপন্ন করে, যা পরে ভেজাল দ্রব্যগুলোকে সরিয়ে ফেলার জন্য বিশোধন করা হয়। এরপর আসে ফুটানোর প্রক্রিয়া, যা এনজাইমের কাজগুলোকে বন্ধ করে দেয়। ফুটানোর সময় বিশিষ্ট তেতো স্বাদ আনার জন্য যবসুরার মধ্যে হপ যুক্ত করা হয়। প্রায় দুই ঘন্টা ফুটানোর পর, যবসুরাকে ঠাণ্ডা করে প্রয়োজনীয় তাপমাত্রায় নিয়ে আসা হয়।

গাঁজন। চোলাইকরণ পদ্ধতিতে খুব সম্ভবত এটাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ধাপ। যবসুরাতে বিদ্যমান সরল চিনিগুলো ইস্টের দ্বারা আ্যলকোহল ও কার্বন ডাই অক্সাইডে পরিণত হয়। খুব বেশি হলে এক সপ্তাহ সময় লাগে এবং প্রক্রিয়ার তাপমাত্রা, উৎপাদিত বিয়ারের প্রকারের—এইল বা লাগারের—ওপর নির্ভর করে। অপরিণত বিয়ার এরপর পরিপুষ্ট অবস্থায় নিয়ে যাওয়ার জন্য মদ্যভাণ্ডারের বড় আধার বা পাত্রে স্থানান্তরিত করা হয়।

পরিপুষ্ট অবস্থা। এই ধাপে বিয়ার এর বিশিষ্ট স্বাদ ও সৌরভ লাভ করে; প্রাকৃতিকভাবে উৎপাদিত কার্বন ডাই অক্সাইডও বিয়ারে বুদ্‌বুদ এনে দেয়। বিয়ারের ধরনের ওপর নির্ভর করে তিন সপ্তাহ থেকে কয়েক মাস সময়ের মধ্যে বিয়ার পরিপুষ্ট অবস্থায় পৌঁছায়। শেষ পর্যন্ত, সম্পূর্ণ প্রস্তুত বিয়ার পিপা বা বোতলের মধ্যে ভরা হয় এবং এর চূড়ান্ত গন্তব্যে পাঠানোর জন্য তৈরি করা হয়—হতে পারে অবশেষে আপনার টেবিলে পৌঁছে যায়! কিন্তু আপনি কোন ধরনের বিয়ারের স্বাদ নিতে চান?

এই পানীয়র নানা প্রকার

আসলে, বিয়ারের স্বাদ একটা থেকে অন্যটা বেশ আলাদা হতে পারে। আপনি এমন বিয়ার উপভোগ করতে পারেন যেটা হালকা বা গাঢ়, মিষ্টি বা তেতো ও সেইসঙ্গে যব বা গম থেকে তৈরি। বিয়ারের স্বাদ অনেক বিষয়ের ওপর নির্ভর করে, যেগুলোর অন্তর্ভুক্ত কোন ধরনের জল ব্যবহার করা হয়েছে, মণ্ডের ধরন, ব্যবহৃত প্রযুক্তি এবং প্রক্রিয়ায় ব্যবহৃত ইস্ট।

সবচেয়ে বিখ্যাত বিয়ারগুলোর মধ্যে একটা হল পিল্সনার (বা পিলস্‌), এক ঐতিহ্যগত হালকা রঙের লাগার বিয়ার। এই ধরনের বিয়ার সারা পৃথিবীতে শত শত চোলাইখানায় উৎপাদিত হয়। কিন্তু, খাঁটি পিল্সনার কেবলমাত্র চেক প্রজাতন্ত্রে অবস্থিত প্লিজেন বা পিলজেন শহরে চোলাই করা হয়। এটা উৎপাদনের গুপ্ত বিষয়টা শুধুমাত্র প্রযুক্তিবিদ্যায় নয় কিন্তু ব্যবহৃত কাঁচামালের ওপরও নির্ভর করে—মৃদু জল, উচ্চমানসম্পন্ন মণ্ড এবং চোলাই করার জন্য সঠিক ধরনের ইস্ট।—এই প্রবন্ধের সঙ্গে যুক্ত বাক্সটা দেখুন।

আরেকটা চমৎকার ধরনের বিয়ার হচ্ছে গম থেকে প্রস্তুতকৃত ভাইস বিয়ার, যা বিশেষভাবে জার্মানিতে জনপ্রিয়। ব্রিটেনে বিশিষ্ট বিয়ার হচ্ছে পোর্টার এবং স্টাউট। পোর্টার হচ্ছে কড়া, ঊর্ধ্ব গাঁজন প্রক্রিয়ায় তৈরি বিয়ার, যেটা ঝলসানো মণ্ড থেকে তৈরি হয় আর তা এই পানীয়কে এক গাঢ়, কড়া রং এনে দেয়। পোর্টার বিয়ার প্রথমে অষ্টাদশ শতাব্দীতে লন্ডনে চোলাই করা হয়। এটাকে মূলত কঠোর পরিশ্রমী শ্রমিকদের যেমন কুলি মুটেদের জন্য “পুষ্টিবিধানকারী” পানীয় হিসেবে ব্যবহার করতে তৈরি করা হয়েছিল। স্টাউট, খুবই গাঢ় ও কড়া বিয়ার—গিনিস পরিবারের দ্বারা আয়ার্ল্যান্ড এবং বিশ্বে বিখ্যাত হয়েছিল—যা ঐতিহ্যগত পোর্টার বিয়ার থেকে আলাদা। আপনি হয় ইংলিশ মিষ্টি স্টাউট বিয়ার, যেটাতে সাধারণত ল্যাকটোজ (দুগ্ধজাত চিনি) থাকে বা আইরিশ অল্প মিষ্টি স্টাউট বিয়ার, যেটাতে তেতো এবং উচ্চতর আ্যলকোহল রয়েছে, তার স্বাদ নিয়ে দেখতে পারেন।

বিয়ার খেতে পছন্দ করে এমন অনেকের জন্য আরেকটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে এটা কীভাবে পান করা হয়, এটা কোনো বোতল বা ক্যান থেকে আসে নাকি পিপা থেকে নেওয়া হয়। আমেরিকার অধিবাসীরা খুব ঠাণ্ডা বিয়ার খেতে পছন্দ করে। অন্যেরা সাধারণ তাপমাত্রায় বা কিছুটা ঠাণ্ডা এবং পানশালা ভাণ্ডারের পিপা থেকে সরাসরি পরিবেশিত হয় এমন বিয়ার খেতে পছন্দ করে।

সত্যিই, বিয়ার হল এমন এক পানীয় যেটার নানা প্রকার রয়েছে। পরিমিত মাত্রায় পান করার দ্বারা আপনি হয়তো স্বাস্থ্যের কিছু উপকার লাভ করতে পারবেন। বস্তুত, এতে বিভিন্ন ধরনের গুরুত্বপূর্ণ ভিটামিন ও খনিজ রয়েছে যেমন রিবোফ্লেভিন, ফলিক আ্যসিড, ক্রোমিয়াম এবং জিঙ্ক। কিছু কর্তৃপক্ষের মতানুসারে, পরিমিত মাত্রায় বিয়ার খাওয়া হৃদরোগ ও ত্বকের সমস্যা দূর করতে পারে। যে-ব্র্যান্ড ও প্রকারের বিয়ারগুলো পাওয়া যায়, সেখান থেকে আপনি যদি ভালটা বাছাই করেন আর ভারসাম্যতা বজায় রেখে গ্রহণ করেন, তা হলে আপনি হয়তো এই সুস্বাদু ও সতেজতাদায়ক পানীয় উপভোগ করতে পারবেন। তাই, পরের বার আপনি যখন ফেনিয়ে ওঠা বুদ্‌বুদের মুকুটসহ এই সোনালী পানীয়র গ্লাসের সামনে বসবেন, তখন এর আকর্ষণীয় ইতিহাসটা স্মরণ করুন! (g০৪ ৭/৮)

[২৫ পৃষ্ঠার বাক্স/চিত্র]

প্রধান অভিনেতারা

অতীতে, এক বৃহৎ সংখ্যক পেশাদার ব্যক্তিরা বিয়ার উৎপাদনে জড়িত হয়েছিল। এখানে কয়েকটা দেওয়া হল।

◼ মণ্ড প্রস্তুতকারী—চোলাইকরণ নাটকের প্রথম অভিনেতা। তাকে যব বা গম থেকে মণ্ড উৎপাদন করার কার্যভার দেওয়া হয়েছিল। তিনি শস্যের অঙ্কুরোদ্‌গম এবং সবুজ মণ্ড শুষ্ক করার প্রক্রিয়া তত্ত্বাবধান করতেন। তার ওপর এক গুরু দায়িত্ব ছিল কারণ উৎপাদিত বিয়ারের স্বাদ বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই মণ্ডের গুণগত মানের ওপর নির্ভর করে।

◼ চোলাইকারী (ওপরে দেখানো হয়েছে)—এই ব্যক্তির ওপর ফুটানোর দায়িত্ব। প্রথমত, তিনি চূর্ণীকৃত মণ্ডকে জলের সঙ্গে মেশাতেন ও এরপর ফুটানোর সময় তিনি হপ যুক্ত করতেন। তার কাজের সর্বশেষ উৎপাদিত বস্তু ছিল যবসুরা।

◼ মদ্যভাণ্ডারের কর্তা—একজন অভিজ্ঞ বিশেষজ্ঞ, যিনি গামলার মধ্যে বিয়ারের গাঁজন প্রক্রিয়া এবং লাগারিং মদ্যভাণ্ডারে এর পরিপুষ্ট অবস্থাকে তত্ত্বাবধান করতেন। এরপর তিনি পরিণত বিয়ারকে ছোট ছোট পাত্রে স্থানান্তরিত করতেন।

[সৌজন্যে]

S laskavým svolením Pivovarského muzea v Plzni

[২৬ পৃষ্ঠার বাক্স/চিত্রগুলো]

পিল্সনার—সর্বাধিক অনুকরণকৃত সেই আসলটি

এটা শুরু হয়েছিল ১২৯৫ সালে। বহিমিয়ার রাজা ওয়েনসেস্‌লস ২য়, প্লিজেন শহর প্রতিষ্ঠা করেছিলেন এবং এর অল্প কিছু পরেই তিনি প্লিজেনের ২৬০ জন নাগরিককে বিয়ার চোলাই করার অনুমতি দিয়েছিলেন। প্রথমে, নাগরিকরা তাদের ঘরে অল্প পরিমাণে বিয়ার চোলাই করত কিন্তু পরে তারা সমবায় সংঘ গঠন করেছিল এবং চোলাইখানা স্থাপন করেছিল। কিন্তু, একসময় বহিমিয়ার অর্থনীতি ও সংস্কৃতির অবনতি হয়েছিল এবং তা চোলাই করার কাজকে প্রভাবিত করেছিল। অনুমোদিত প্রযুক্তিবিদ্যাকে তুচ্ছ করে এবং তাদের নিজস্ব প্রস্তুতপ্রণালী প্রয়োগ করে চোলাইকারীরা প্রায়ই বিস্বাদ পানীয় উৎপাদন করত, যেটাকে বিয়ার বলার অযোগ্য ছিল।

সেই সময় ইউরোপে দুই ধরনের বিয়ার উৎপাদিত হতো। ঊর্ধ্ব গাঁজানো বিয়ার বিশেষ করে বহিমিয়ায় চোলাই করা হয়েছিল আর নিম্ন গাঁজানো বিয়ার, যা মূলত বেভেরিয়ায় জনপ্রিয় ছিল, সেটা আরও উচ্চ গুণগত মানসম্পন্ন ছিল। বেভেরিয়ার লাগার ও প্লিজেন বিয়ারের মধ্যে আকাশ-পাতাল তফাৎ ছিল।

১৮৩৯ সালে এক গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন এসেছিল। প্লিজেনের প্রায় ২০০ জন নাগরিক সেই পরিস্থিতি সম্বন্ধে কিছু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। তারা বারজিস চোলাইখানা স্থাপন করেছিল, যেখানে কেবলমাত্র নিম্ন গাঁজন বা বেভেরিয়ান ধাঁচের বিয়ার চোলাই করা হতো। বিখ্যাত চোলাইকারী ইয়োজেফ গ্রলকে বেভেরিয়া থেকে ডেকে পাঠানো হয়েছিল। তিনি সঙ্গে সঙ্গে এক আদর্শ বেভেরিয়ান বিয়ার উৎপন্ন করতে শুরু করেছিলেন। ফলাফল একেবারে ভিন্ন হয়েছিল—তিনি যতটা আশা করেছিলেন, তার চেয়ে হাজার গুণ উন্নত মানের হয়েছিল। গ্রলের অভিজ্ঞতা ও সেইসঙ্গে স্থানীয় চমৎকার কাঁচামাল এমন এক বিয়ার উৎপন্ন করতে সাহায্য করেছিল, যা রাতারাতি বিশ্বে খ্যাতি অর্জন করেছিল। কেন? এর অদ্বিতীয় স্বাদ, রং এবং সৌরভের কারণে। কিন্তু, প্লিজেনের বিয়ারের সুখ্যাতির সঙ্গে সঙ্গে কিছু অপূর্ণতাও ছিল। অনেক চোলাইকারীরা এই উন্নতি থেকে মুনাফা লাভের আশায় তাদের উৎপাদিত বস্তুকে পিল্সনার বলতে শুরু করেছিল। এভাবে পিল্সনার শুধুমাত্র বিখ্যাতই হয়ে ওঠেনি কিন্তু সেইসঙ্গে সোনালী পানীয়র ক্ষেত্রে এটা সর্বাধিক অনুকরণকৃতও হয়েছিল।

[চিত্রগুলো]

ইয়োজেফ গ্রল

প্লিজেন চোলাইখানার জলস্তম্ভ

[সৌজন্যে]

S laskavým svolením Pivovarského muzea v Plzni

[২৪ পৃষ্ঠার মানচিত্র]

(পুরোপুরি ফরম্যাট করা টেক্সটের জন্য এই প্রকাশনা দেখুন)

প্লিজেন

[২৪, ২৫ পৃষ্ঠার বাক্স/চিত্রগুলো]

মিশরীয় পুতুল, যা রুটি ও বিয়ারের প্রস্তুতপ্রণালীকে বর্ণনা করছে

[সৌজন্যে]

Su concessione del Ministero per i Beni e le Attivita Culturali - Museo Egizio - Torino

[২৭ পৃষ্ঠার চিত্রগুলো]

হপ, মণ্ড ও চোলাইখানা