সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

আপনার সন্তানকে শিশুশিক্ষা দেওয়ার গুরুত্ব

আপনার সন্তানকে শিশুশিক্ষা দেওয়ার গুরুত্ব

আপনার সন্তানকে শিশুশিক্ষা দেওয়ার গুরুত্ব

শৈশবকালে একজন ব্যক্তি যা শেখেন এবং যা শেখেন না, তা তার ভবিষ্যৎ ক্ষমতার ওপর প্রভাব ফেলতে পারে। তা হলে, ভারসাম্যপূর্ণ এবং সফল প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তি হিসেবে গড়ে ওঠার জন্য বাবামার কাছ থেকে সন্তানদের কীসের প্রয়োজন? সাম্প্রতিক দশকে করা গবেষণার ওপর ভিত্তি করে কেউ কেউ কোন উপসংহারে পৌঁছেছে, তা বিবেচনা করুন।

স্নায়ুসন্নিধির ভূমিকা

মস্তিষ্ক-কল্পনা প্রযুক্তিবিদ্যার অগ্রগতির বদৌলতে বিজ্ঞানীরা আগের চেয়ে আরও বেশি করে মস্তিষ্কের বিকাশ নিয়ে অত্যন্ত বিস্তারিতভাবে গবেষণা করতে পারছে। এই ধরনের গবেষণা ইঙ্গিত দেয় যে, শৈশবের প্রারম্ভিক বছরগুলো মস্তিষ্কের ক্রিয়ার বিকাশের জন্য সবচেয়ে কঠিন সময়, যা তথ্য আদান-প্রদান করা, স্বাভাবিকভাবে আবেগ প্রকাশ করা এবং ভাষার ক্ষেত্রে দক্ষ হওয়ার জন্য প্রয়োজন। “মস্তিষ্কের সংযোগগুলো প্রারম্ভিক বছরগুলোতে অত্যন্ত দ্রুত গতিতে সংযুক্ত হয়, যখন মস্তিষ্কের গঠন বংশানুগতির তথ্য এবং পারিপার্শ্বিক উদ্দীপকের ক্ষণে-ক্ষণে মিশ্রক্রিয়ার মাধ্যমে গঠিত হয়,” ন্যাশন পত্রিকা রিপোর্ট করে।

বিজ্ঞানীরা মনে করে যে, স্নায়ুসন্নিধি (সিন্যাপসি) নামে পরিচিত এই সংযোগগুলোর মধ্যে বেশির ভাগই জীবনের প্রথম কয়েক বছরে গঠিত হয়। শিশুবিকাশ বিষয়ক বিশেষজ্ঞ ডাক্তার বেরি ব্রেজিলটনের মতানুসারে, সেই সময়ই “বুদ্ধিমত্তা, আত্মপরিচয়, নির্ভরতা এবং শেখার প্রেরণা অর্জন করার ক্ষেত্রে একটা শিশুর সম্ভাব্য ভবিষ্যৎ গড়ে ওঠে।”

প্রথম কয়েক বছরের মধ্যেই শিশুর মস্তিষ্কের আকৃতি, গঠন এবং ক্রিয়া নাটকীয়ভাবে গড়ে ওঠে। যে-পরিবেশের মধ্যে এইরকম প্রচুর উদ্দীপক রয়েছে এবং শেখার অভিজ্ঞতা লাভ করা যায়, সেখানে স্নায়ুসন্নিধির সংযোগগুলো বহুগুণ হয় এবং মস্তিষ্কে স্নায়ুপথে ব্যাপক নেটওয়ার্কের সৃষ্টি করে। এই পথগুলোর কারণেই চিন্তাভাবনা করা, শেখা এবং যুক্তি করা সম্ভব হয়।

একটা শিশুর মস্তিষ্ক যত বেশি উদ্দীপক গ্রহণ করে, স্নায়ুকোষ তত বেশি সাড়া দেয় এবং সেগুলোর মধ্যে আরও বেশি সংযোগ স্থাপিত হয়। আগ্রহজনক যে, এই উদ্দীপনা কেবল বুদ্ধিমত্তা নয় আর তা কেবল বাস্তব ঘটনা, ব্যক্তিত্ব অথবা ভাষার মাধ্যমেই প্রকাশিত হয় না। বিজ্ঞানীরা দেখেছে যে, আবেগগত উদ্দীপকেরও প্রয়োজন রয়েছে। গবেষণা দেখায় যে, যে-শিশুদের জড়িয়ে ধরা ও স্পর্শ করা হয় না এবং যাদের সঙ্গে খেলাধুলা করা হয় না অথবা উদ্দীপিত করা হয় না, তাদের ক্ষেত্রে এই ধরনের স্নায়ুসন্নিধির সংযোগগুলো তুলনামূলকভাবে কম পরিমাণে গঠিত হবে।

শিশুশিক্ষা এবং সম্ভাবনা

অবশেষে, একটা শিশু যখন বড় হতে থাকে, তখন এক প্রকার কাটছাট করা হয়। শরীর সেই স্নায়ুসন্নিধির পথগুলোকে বাতিল করে দেয় বলে মনে করা হয়, যেগুলো অপ্রয়োজনীয়। এটা একটা শিশুর সম্ভাবনার ওপর গভীর প্রভাব ফেলতে পারে। “একটা শিশু যদি সঠিক বয়সে সঠিক উদ্দীপক না পায়,” মস্তিষ্ক গবেষক ম্যাক্স সিনাডার বলেন, “তা হলে স্নায়ু সংক্রান্ত গতিপথ সঠিকভাবে বিকশিত হবে না।” ড. জে ফ্রেজার মাস্টার্ডের মতানুসারে, এর ফলে আইকিউ এবং মৌখিক ও গাণিতিক দক্ষতা কম হতে পারে, প্রাপ্তবয়স্ক হলে শারীরিক সমস্যা দেখা দিতে পারে আর এমনকি আচরণে সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে।

তাই দেখা যায় যে, শিশু অবস্থায় একজন ব্যক্তির যে-অভিজ্ঞতা হয়েছে, তা তার প্রাপ্তবয়স্ক জীবনে নির্দিষ্ট প্রভাব ফেলতে পারে। ব্যক্তি শক্তসমর্থ অথবা দুর্বল, বিমূর্ত বিষয়গুলো সম্বন্ধে চিন্তা করতে শিখেছেন অথবা এই ক্ষমতার অভাব রয়েছে এবং সহানুভূতিশীল অথবা সহানুভূতিহীন যা-ই হোন না কেন, তিনি তার শৈশবের অভিজ্ঞতাগুলোর দ্বারা প্রভাবিত হতে পারেন। তাই, বাবামার ভূমিকা বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। একজন শিশুরোগ চিকিৎসক বলেন, “শৈশবের অভিজ্ঞতার সবচেয়ে কঠিন দিকগুলোর একটা হল সংবেদনশীল বাবামা।”

এটা শুনতে হয়তো অনেক স্বাভাবিক শোনায়। আপনার সন্তানদের শিশুশিক্ষা দিন এবং তাদের যত্ন নিন আর তা হলে তারা সমৃদ্ধি লাভ করবে। দুঃখের বিষয় হল, কীভাবে সন্তানদের সঠিকভাবে যত্ন নিতে হয়, তা বোঝা যে সবসময় সহজ নয়, সেটা বাবামারা জানে। বাবামাদের পক্ষে কার্যকারীভাবে যত্ন নেওয়া সবসময় স্বজ্ঞাত নয়।

একটা গবেষণা অনুযায়ী, সমীক্ষার শতকরা ২৫ ভাগ বাবামা জানে না যে, তাদের সন্তানদের যেভাবে তারা যত্ন নিয়েছে তা তাদের বুদ্ধিমত্তা, আস্থা এবং শেখার প্রতি ভালবাসাকে বাড়িয়েছে অথবা ব্যাহত করেছে। এটা এই প্রশ্নগুলোর উত্থাপন করে: আপনার সন্তানের সম্ভাবনাকে বিকশিত করার সর্বোত্তম উপায়টা কী? আর আপনি কীভাবে সঠিক পরিবেশ জোগাতে পারেন? আসুন আমরা তা দেখি।

[৬ পৃষ্ঠার চিত্র]

যে-শিশুকে উদ্দীপিত করা হয় না, সে হয়তো অন্যদের মতো বিকশিত হতে পারে না