সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

শ্বেতি রোগ কী?

শ্বেতি রোগ কী?

শ্বেতি রোগ কী?

দক্ষিণ আফ্রিকার সচেতন থাক! লেখক কর্তৃক

▪ মাঝে মধ্যে সিবংগিলি তার ত্বক নিয়ে মজা করেন। হাসিমুখে তিনি বলেন, “আমি জন্মেছি কালো হয়ে, পরে শ্বেতাঙ্গ হয়েছি আর এখন আমি কী, তা নিজেও জানি না।” তার শ্বেতি রোগ হয়েছে।

শ্বেতি রোগ যেটাকে লিউকোডারম্যাও বলা হয়, তা ত্বকের রঞ্জক-উৎপাদনকারী কোষগুলো মারা যাওয়ার কারণে হয়ে থাকে। এর ফলে চামড়ায় সাদা সাদা দাগ ও ছাপ ছাপ দেখা যায়। কিছু রোগীর ক্ষেত্রে শুধুমাত্র একটা দাগ হওয়ার পরে আর বাড়ে না। কিন্তু, অন্যদের বেলায় এটা দ্রুত শরীরের বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে পড়ে। আবার কারও কারও ক্ষেত্রে অনেক বছর ধরে শ্বেতি রোগটা ধীরে ধীরে ছড়াতে থাকে। শ্বেতি রোগটা বেদনাদায়ক বা সংক্রামক কোনোটাই নয়।

সিবংগিলির মতো সবার ক্ষেত্রেই শ্বেতি রোগ এতটা চোখে না-ও পড়তে পারে, কারণ কালো চামড়ার লোকেদের মধ্যে এটা বেশি বোঝা যায়। কিন্তু এমন অনেক লোক রয়েছে, যারা কম বা বেশি নানাভাবে আক্রান্ত হয়। পরিসংখ্যান দেখায় যে, মোট জনসংখ্যার শতকরা ১ থেকে ২ ভাগ লোক এই রোগে আক্রান্ত। শ্বেতি রোগ সব জাতির লোকেদের আর নারী-পুরুষ সকলকে সমানভাবে আক্রান্ত করে। এর কারণ এখনও অজানা রয়ে গেছে।

শ্বেতি রোগের যদিও নিশ্চিত কোনো আরোগ্য নেই কিন্তু এর সঙ্গে মোকাবিলা করার অনেক উপায় রয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, ফর্সা রোগীদের ত্বকে এই রোগটা তখনই বেশি স্পষ্টভাবে বোঝা যায়, যখন তাদের সুস্থ ত্বক রোদে পুড়ে কালো হয়। তাই, রোদে বের হওয়া এড়িয়ে চললে এই অবস্থা এতটা স্পষ্ট হয় না। কালো চামড়ার লোকেদের ক্ষেত্রে, বিশেষ ধরনের প্রসাধন সামগ্রী চামড়ার রংয়ের পার্থক্যকে ঢেকে দিতে পারে। কিছু রোগী রিপিগমেন্টেশন পদ্ধতি প্রয়োগ করার প্রতি ভাল সাড়া দিয়েছে। এই চিকিৎসায় বেশ কয়েক মাস ওষুধ খেতে ও সেইসঙ্গে বিশেষ ধরনের অতিবেগুনি রশ্মিবিশিষ্ট সরঞ্জাম ব্যবহার করতে হয়। কিছু কিছু ক্ষেত্রে এই চিকিৎসা পদ্ধতি আক্রান্ত চামড়ার কিছু অংশের স্বাভাবিক বর্ণ ফিরিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছে। অন্যান্য রোগীরা ডিপিগমেন্টেশন পদ্ধতি বেছে নেয়। এই চিকিৎসার লক্ষ্য হচ্ছে ওষুধের দ্বারা অবশিষ্ট রঞ্জক পদার্থ উৎপাদনকারী কোষগুলোকে ধ্বংস করে দেওয়ার দ্বারা ত্বকের বর্ণে ভারসাম্য বজায় রাখা।

শ্বেতি রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিরা মানসিক যন্ত্রণা ভোগ করতে পারে, বিশেষ করে যখন এটা মুখমণ্ডলে ছড়িয়ে পড়ে। সিবংগিলি বলেন, ‘কিছুদিন আগে, দুটো বাচ্চা আমার দিকে তাকিয়ে ভয় পেয়ে চিৎকার করে দৌড়ে পালিয়েছিল। অন্যেরা আমার সঙ্গে কথা বলতে দ্বিধাবোধ করে, তারা মনে করে যে, আমার রোগটা হয়তো সংক্রামক বা আমার ওপর হয়তো কোনো অভিশাপ আছে। একটা বিষয় যা আমি অন্যদের বলতে চাইব তা হল, তারা যেন এই ধরনের লোকেদের দেখে ভয় না পায়। তারা স্পর্শ করার বা বাতাসের মাধ্যমে শ্বেতি রোগের দ্বারা আক্রান্ত হবে না।’

সিবংগিলি তার এই অবস্থাকে তাকে বাইবেল শিক্ষাদানের কাজ থেকে নিবৃত্ত করার সুযোগ দেন না, যে-কাজটিকে একজন যিহোবার সাক্ষি হিসেবে তিনি খুবই পছন্দ করেন। এই কাজের অন্তর্ভুক্ত ঘরে ঘরে লোকেদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করা ও তাদের সঙ্গে সামনাসামনি কথা বলা। তিনি বলেন: “আমি আমার চেহারাকে মেনে নিয়েছি। আমি বর্তমানে যেমন আছি, এই চেহারা নিয়ে খুব স্বস্তিবোধ করি আর সেই সময়ের জন্য সানন্দে অপেক্ষা করে আছি, যখন যিহোবা ঈশ্বরের দ্বারা প্রতিজ্ঞাত পার্থিব পরমদেশে আমি আমার জন্মগত রংটা পুরোপুরি ফিরে পাব।”—প্রকাশিত বাক্য ২১:৩-৫.

[২২ পৃষ্ঠার চিত্র]

১৯৬৭ সালে রোগে আক্রান্ত হওয়ার আগে