সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

টম্যাটো বিবিধ ব্যবহারোপযোগী এক “সবজি”

টম্যাটো বিবিধ ব্যবহারোপযোগী এক “সবজি”

টম্যাটো বিবিধ ব্যবহারোপযোগী এক “সবজি”

ব্রিটেনের সচেতন থাক! লেখক কর্তৃক

“টম্যাটো ছাড়া আমি কীভাবে রান্না করব!” ইতালির গৃহবধূ চিৎকার করে বলে ওঠেন। সারা পৃথিবীর অগণিত পাচক-পাচিকাও একই অনুভূতি প্রকাশ করে থাকে। সত্যিই, টম্যাটো অনেক সংস্কৃতির রান্নার এক অপরিহার্য উপাদান। ঘরের চারপাশে বাগান করা ব্যক্তিরা অন্য যেকোনো শস্যের চেয়ে এটার চাষ বেশি করে থাকে। কিন্তু এটা কি ফল না সবজি?

উদ্ভিদবিজ্ঞানের মতে, টম্যাটো হচ্ছে একটা ফল কারণ এতে বেরি বহনকারী বীজ রয়েছে। তবে, অধিকাংশ লোক এটাকে একটা সবজি বলে ভেবে থাকে, যেহেতু এটাকে সাধারণত খাদ্যের প্রধান ব্যাঞ্জনের সঙ্গে খাওয়া হয়ে থাকে। এই সুস্বাদু খাদ্যবস্তুর এক আকর্ষণীয় অতীত রয়েছে।

আগ্রহজনক ইতিহাস

মেক্সিকোতে এজটেক জাতির লোকেরা খাদ্যের জন্য টম্যাটো চাষ করেছিল। ফেরত যাওয়া স্প্যানিশ বিজয়ীরা ষোড়শ শতাব্দীর প্রথম দিকে এটাকে স্পেনে নিয়ে যায় এবং নাওয়াটল ভাষায় টমাটল বলে ডাকা শব্দটিকে টমাটে নাম দেয়। শীঘ্রই ইতালি, উত্তর আফ্রিকা এবং মধ্যপ্রাচ্যের স্প্যানিশ লোকেদের সমাজ এই নতুন মুখরোচক খাদ্যবস্তুকে বেশ পছন্দ করেছিল।

সেই শতাব্দীর শেষের দিকে টম্যাটো উত্তর ইউরোপে পৌঁছে গিয়েছিল। প্রথম প্রথম এটাকে বিষাক্ত বলে মনে করা হতো আর তাই বাগানের সৌন্দর্যবৃদ্ধির গাছ হিসেবে চাষ করা হতো। যদিও টম্যাটো হচ্ছে নাইটশেড (বৈঁচি-জাতীয় বিষাক্ত ফলোৎপাদক বিভিন্ন বুনো গাছড়া) প্রজাতির, যার পাতাগুলো তীব্র গন্ধযুক্ত এবং কাণ্ড বিষাক্ত কিন্তু এর ফল পুরোপুরিভাবে খাওয়ার যোগ্য।

ইউরোপে যে-টম্যাটোগুলো প্রথম আনা হয়েছিল, সেগুলো সম্ভবত হলুদ রঙের ছিল কারণ ইতালির লোকেরা এটাকে পোমোডোরো (সোনালী আপেল) নামে ডাকত। ইংরেজরা এটাকে বলত টমাটে আর পরে টম্যাটো নামে ডাকত, তবে “লাভ আ্যপেল” নামটিও জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিল। ইউরোপ থেকে টম্যাটো আটলান্টিক মহাসাগরের ওপারে উত্তর আমেরিকায় পৌঁছে গিয়েছিল, যেখানে শেষ পর্যন্ত এটা উনবিংশ শতাব্দীতে এক অপরিহার্য খাদ্যবস্তু হয়ে উঠেছিল।

উল্লেখযোগ্য বৈচিত্র্য ও জনপ্রিয়তা

টম্যাটোর রং কী তা জিজ্ঞেস করুন আর খুব সম্ভবত এর উত্তর হবে “লাল।” কিন্তু আপনি কি জানেন যে, টম্যাটো বিভিন্ন রঙের পাওয়া যেতে পারে, যেমন হলুদ, কমলা, গোলাপি, বেগুনি, বাদামি, সাদা বা সবুজ এবং কিছু কিছু এমনকি ডোরা দাগযুক্ত? সব টম্যাটোর আকার যে গোল তা নয়। কিছু কিছু চ্যাপটা বা ডিম্বাকার অথবা নাশপাতির আকারের হয়ে থাকে। সেগুলো মটর দানার মতো ছোট কিংবা মানুষের মুষ্টির মতো বড়ও হতে পারে।

এই জনপ্রিয় খাদ্যবস্তুকে সুদূর উত্তরে আইসল্যান্ড থেকে শুরু করে সুদূর দক্ষিণে নিউজিল্যান্ড পর্যন্ত চাষ করা হয়। যুক্তরাষ্ট্র এবং দক্ষিণ ইউরোপীয় দেশগুলো হচ্ছে টম্যাটোর প্রধান উৎপাদনকারী দেশ। ঠাণ্ডা জলবায়ুর দেশগুলো গ্রিনহাউস (বৃক্ষাদির চাষের জন্য কাচের ঘরবিশেষ) উৎপাদনের ওপর নির্ভর করে আর অনুর্বর অঞ্চলগুলো হাইড্রোপনিক প্রক্রিয়ার সাহায্যে চাষ করে, যেটা হচ্ছে মাটি ছাড়া এক পুষ্টিদায়ক দ্রবণে চাষ করা।

টম্যাটো সেই ব্যক্তিদের জন্য এক প্রিয় উপাদান, যারা শখ করে বাগান করে থাকে। এটা চাষ করা সহজ আর অল্প কয়েকটা গাছ থেকেই একটা ছোট পরিবারকে খাওয়ানোর মতো যথেষ্ট টম্যাটো পাওয়া যায়। জায়গা অল্প হলে টম্যাটো লাগানোর জন্য অন্যান্য জায়গাগুলোর খোঁজ করুন, যেমন বিশেষ করে উঠানে ও জানালার ধারে বসানো সরু বাক্সগুলোতে।

সাহায্যকারী পরামর্শ ও স্বাস্থ্য সংক্রান্ত কিছু তথ্য

ঠাণ্ডা তাপমাত্রা টম্যাটোর সুবাসকে নষ্ট করে দেয়, তাই সেগুলোকে রেফ্রিজারেটারে রাখবেন না। টম্যাটোকে তাড়াতাড়ি পাকানোর জন্য আপনি সেগুলোকে রোদ আসে এমন জানালার ধারে রাখতে পারেন অথবা একটা গামলার মধ্যে একটা পাকা টম্যাটো বা কলার সঙ্গে কিংবা ব্রাউন পেপারের তৈরি একটা ব্যাগের মধ্যে অল্প কিছুদিনের জন্য ঘরের তাপমাত্রায় রাখতে পারেন।

টম্যাটো আপনার স্বাস্থ্যের জন্য ভাল। এগুলোতে ভিটামিন এ, সি এবং ই ও সেইসঙ্গে পটাশিয়াম, ক্যালসিয়াম ও খনিজ লবণ রয়েছে। গবেষণাকারীরা আবিষ্কার করে চলেছে যে, এগুলো এক শক্তিশালী জারক প্রতিরোধী উপাদান লাইকোপেনের এক শ্রেষ্ঠ উৎস, যা নির্দিষ্ট ধরনের অসুস্থতা যেমন ক্যান্সার ও হৃদরোগের ঝুঁকিকে কমায় বলে মনে করা হয়। টম্যাটোতে ৯৩ থেকে ৯৫ শতাংশ জল রয়েছে আর ওজন সচেতন ব্যক্তিরা জেনে খুশি হবে যে, এতে অত্যন্ত কম পরিমাণ ক্যালরি রয়েছে।

স্বাদের দিক দিয়েও বিবিধ ব্যবহারোপযোগী

আপনি যখন টম্যাটো কেনেন, তখন আপনি কোন ধরনের টম্যাটো বাছাই করবেন? পরিচিত টকটকে লাল রঙের টম্যাটো সালাদ, সুপ ও সসের জন্য উপযুক্ত। লালচে, কমলা বা হলুদ চেরি জাতীয় গুটিগুটি টম্যাটো খুবই মিষ্টি কারণ সেগুলোতে প্রচুর পরিমাণ চিনি রয়েছে আর সেগুলো কাঁচা খেতেই সুস্বাদু। আপনি যদি পিৎজা বা পাস্তা রান্না করেন, তা হলে ডিম্বাকার টম্যাটোর প্রচুর মাংসল অংশটা নেওয়া হয়তো উপযুক্ত হবে। বড় বিফস্টেক টম্যাটো—এই নাম দেওয়ার কারণ এগুলোর শক্ত গরুর মাংস জাতীয় অংশ—পুর তৈরি করার বা সেঁকার জন্য আদর্শ। সবুজ টম্যাটো, মাঝে মধ্যে যেগুলোতে ডোরা ডোরা দাগ থাকে, সেগুলো খাবারের সঙ্গে খেতে সুস্বাদু লাগে। সত্যিই, টমোটো বিভিন্ন সুস্বাদু সবজি, ডিম, পাস্তা, মাংস ও মাছের তরকারিতে এক বৈশিষ্ট্যপূর্ণ সুবাস ও রং যুক্ত করে। আপনি যদি টাটকা টম্যাটো না-ও পান কোনো সন্দেহ নেই যে, আপনার স্থানীয় দোকানে টিনজাত টম্যাটোর তৈরি বিভিন্ন খাবার নিশ্চয়ই পাবেন।

প্রত্যেক পাচক-পাচিকার টম্যাটো দিয়ে তার নিজস্ব রন্ধনপ্রণালী রয়েছে কিন্তু এখানে কয়েকটা দেওয়া হল, যা হয়তো আপনি তৈরি করে দেখতে চাইবেন।

১. ফালি করে কাটা টম্যাটো, মটজেরেলা পনির ও আ্যভোকাডো মিশিয়ে তাড়াতাড়ি করে এক রঙিন ক্ষুধাবর্ধক তৈরি করুন। অলিভ অয়েল ও গোল মরিচের তৈরি সস ছিটিয়ে দিন ও তুলসি পাতা ছড়িয়ে পরিবেশন করুন।

২. টুকরো করে কাটা টম্যাটো, শসা ও ফেটা পনিরের সঙ্গে পাকা কালো জলপাই ও ফালি করে কাটা লাল পিঁয়াজ মিশিয়ে গ্রিক সালাদ তৈরি করুন। লবণ ও মরিচের গুঁড়ো মেশান এবং অলিভ অয়েল ও লেবুর রস ছিটিয়ে পরিবেশন করুন।

৩. টাটকা টম্যাটো, পিঁয়াজ, কাঁচা লঙ্কা ও ধনে পাতা কেটে, তাতে একটু লেবুর রস দিয়ে মেক্সিকান সালসা তৈরি করুন।

৪. এক টিন পরিমাণ কুচানো টম্যাটো একটা কড়াইতে ছাড়ুন, এক চিমটে চিনি (বা কেচাপ), সামান্য অলিভ অয়েল, রসুন কুচি, কিছু পাতা যেমন তুলসি, তেজপাতা বা অরিগানো এবং একটু মরিচ ও লবণের গুঁড়ো দিয়ে পাস্তার জন্য এক সাধারণ অথচ সুস্বাদু টমেটো সস তৈরি করুন। মিশ্রণটাকে একটু সিদ্ধ করুন ও এরপর যতক্ষণ না ঘন সস তৈরি হয়ে ওঠে, ততক্ষণ পর্যন্ত ২০ মিনিট ফুটতে দিন। এরপর এটাকে আপনার রান্না করা এবং জল ক্রমান্বয়ে শুকিয়ে আসা পাস্তার ওপর ছড়িয়ে দিন।

বিবিধ ব্যবহারোপযোগী টম্যাটো হচ্ছে বিভিন্ন রকমের চমৎকার খাদ্যের মধ্যে শুধুমাত্র একটা উদাহরণ, যেটাকে আমাদের ব্যবহারের জন্য সৃষ্টি করা হয়েছে।