সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

সন্তানদের প্রতি প্রয়োজনীয় মনোযোগ দেওয়া

সন্তানদের প্রতি প্রয়োজনীয় মনোযোগ দেওয়া

বাইবেলের দৃষ্টিভঙ্গি

সন্তানদের প্রতি প্রয়োজনীয় মনোযোগ দেওয়া

ঈশ্বরের পুত্রের কি বাচ্চাদের সঙ্গে কাটানোর মতো সময় ছিল? তাঁর কয়েক জন শিষ্য তা মনে করেনি। একবার তারা ছোট বাচ্চাদের যিশুর কাছে যেতে না দেওয়ার চেষ্টা করেছিল। তিনি এই বলে প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছিলেন: “শিশুদিগকে আমার নিকটে আসিতে দেও, বারণ করিও না।” এরপর তিনি প্রেমের সঙ্গে একদল বাচ্চাকে তাঁর কাছে আসতে দিয়েছিলেন ও তাদের সঙ্গে কথা বলেছিলেন। (মার্ক ১০:১৩-১৬) এভাবে যিশু দেখিয়েছিলেন যে, তিনি বাচ্চাদের প্রতি মনোযোগ দিতে ইচ্ছুক ছিলেন। আজকে বাবামায়েরা কীভাবে তাঁর উদাহরণ অনুসরণ করতে পারে? তাদের সন্তানদের সঠিকভাবে প্রশিক্ষণ দিয়ে ও তাদের সঙ্গে সময় কাটিয়ে।

নিঃসন্দেহে, দায়িত্বশীল বাবামায়েরা তাদের সন্তানদের মঙ্গলের জন্য প্রাণপণ চেষ্টা করে ও তাদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করা এড়িয়ে চলে। এমনকি এটা বলা যেতে পারে যে, বাবামাদের তাদের সন্তানদের প্রতি সম্মান ও বিবেচনা দেখানোটাই “স্বাভাবিক।” কিন্তু, বাইবেল সাবধান করে যে আমাদের দিনে অনেকে “স্নেহরহিত” হবে। (২ তীমথিয় ৩:১-৩) আর যারা তাদের সন্তানদের প্রতি প্রেমময় আগ্রহ দেখায়, তারা দায়িত্বশীল বাবামা হওয়ার জন্য সবসময় কিছু না কিছু শিখতে পারে। তাই নীচে দেওয়া বাইবেলের নীতিগুলো সেই বাবামাদের জন্য উত্তম অনুস্মারক, যারা তাদের সন্তানদের মঙ্গল চায়।

ক্রুদ্ধ না করে প্রশিক্ষণ দেওয়া

ড. রবার্ট কোল্‌স নামে একজন সুপরিচিত শিক্ষক ও গবেষণাকারী মনোরোগ চিকিৎসক একবার বলেছিলেন: “বাচ্চাদের মধ্যে এক বিকাশমান নৈতিক বোধ রয়েছে। আমি মনে করি এটা ঈশ্বরদত্ত অর্থাৎ নৈতিক নির্দেশনার জন্য এক আকুল আকাঙ্ক্ষা রয়েছে।” নৈতিক নির্দেশনার জন্য এই ক্ষুধা ও পিপাসা কে মেটাতে পারে?

ইফিষীয় ৬:৪ পদে, শাস্ত্র পরামর্শ দেয়: “পিতারা, তোমরা আপন আপন সন্তানদিগকে ক্রুদ্ধ করিও না, বরং প্রভুর [“যিহোবার,” NW] শাসনে ও চেতনা প্রদানে তাহাদিগকে মানুষ করিয়া তুল।” আপনি কি লক্ষ করেছেন যে, শাস্ত্র বিশেষ করে বাবাকে তার সন্তানদের মধ্যে ঈশ্বরের প্রতি প্রেম ও ঐশিক মানগুলোর প্রতি এক গভীর উপলব্ধিবোধ গেঁথে দেওয়ার দায়িত্ব দিয়েছে? ইফিষীয় ৬ অধ্যায় ১ পদে প্রেরিত পৌল বাবামা উভয়ের কথা উল্লেখ করেছিলেন যখন তিনি সন্তানদের ‘পিতামাতার আজ্ঞাবহ হইতে’ বলেছিলেন। *

তবে, বাবার অবর্তমানে মাকে এই দায়িত্ব নিতে হবে। অনেক একক মায়েরা যিহোবা ঈশ্বরের শাসনে ও চেতনা প্রদানে তাদের সন্তানদের সফলভাবে মানুষ করেছে। কিন্তু, মা যদি বিয়ে করেন, তা হলে খ্রিস্টান স্বামীর নেতৃত্ব নেওয়া উচিত। আর মায়েদের তাদের সন্তানদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার ও শাসন করার এই নেতৃত্বকে স্বেচ্ছায় মেনে নেওয়া উচিত।

আপনি কীভাবে আপনার সন্তানদের “ক্রুদ্ধ” না করে শাসন করেন বা প্রশিক্ষণ দেন? এর জন্য কোনো গোপন সূত্র নেই কারণ প্রতিটা বাচ্চা আলাদা। কিন্তু বাবামাদের তাদের শাসন করার পদ্ধতি সম্বন্ধে অবশ্যই ভালভাবে বিবেচনা করতে হবে, সবসময় সন্তানদের ভালবাসা ও সম্মান দেখাতে হবে। আগ্রহের বিষয় হল যে, আপনার সন্তানকে ক্রুদ্ধ না করার বিষয়টা কলসীয় ৩:২১ পদে আবারও বলা হয়েছে। সেখানে বাবাদের আবারও পরামর্শ দেওয়া হয়েছে: “তোমরা আপন আপন সন্তানদিগকে ক্রুদ্ধ করিও না, পাছে তাহাদের মনোভঙ্গ হয়।”

কিছু বাবামা তাদের সন্তানদের সঙ্গে চ্যাঁচামেচি করে। এটা তাদের বাচ্চাদের যে ক্রুদ্ধ করে, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। কিন্তু বাইবেল পরামর্শ দেয়: “সব রকমের তিক্ততা, রোষ, ক্রোধ, চেঁচামেচি, নিন্দা . . . তোমাদের থেকে দূরে রাখ।” (ইফিষীয় ৪:৩১, বাংলা ইজি-টু-রিড ভারসন) বাইবেল এও বলে যে ‘যুদ্ধ করা প্রভুর দাসের উপযুক্ত নহে; কিন্তু সকলের প্রতি কোমল হওয়া উচিত।’—২ তীমথিয় ২:২৪, ২৫.

তাদের সময় দিন

সন্তানদের প্রতি যে-মনোযোগ আপনার দেওয়া দরকার তা দেওয়ার অর্থ, আপনি আপনার সন্তানদের মঙ্গলের জন্য ভোগবিলাস ও ব্যক্তিগত সুবিধাগুলোকে ত্যাগ করতেও ইচ্ছুক। বাইবেল বলে: “এই যে সকল কথা আমি অদ্য তোমাকে আজ্ঞা করি, তাহা তোমার হৃদয়ে থাকুক। আর তোমরা প্রত্যেকে আপন আপন সন্তানগণকে এ সকল যত্নপূর্ব্বক শিক্ষা দিবে, এবং গৃহে বসিবার কিম্বা পথে চলিবার সময়ে এবং শয়ন কিম্বা গাত্রোত্থান কালে ঐ সমস্তের কথোপকথন করিবে।”—দ্বিতীয় বিবরণ ৬:৬, ৭.

আজকে আর্থিক প্রয়োজনগুলো মেটানোর জন্য ব্যয় করা অতিরিক্ত সময় ও প্রচেষ্টা, খুব অল্প সংখ্যক বাবামাকে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত তাদের সন্তানদের সঙ্গে থাকার সুযোগ দেয়। তবুও, দ্বিতীয় বিবরণ জোর দিয়ে বলে যে বাবামায়েদের তাদের সন্তানদের সঙ্গে কাটানোর জন্য সময় বের করে নিতে হবে। তা করার জন্য সুসংগঠিত হওয়ার ও সেইসঙ্গে ত্যাগস্বীকার করার দরকার রয়েছে। কিন্তু, সন্তানদের এই ধরনের মনোযোগের প্রয়োজন রয়েছে।

১২,০০০-রেরও বেশি কিশোর-কিশোরীর ওপর করা গবেষণার ফলাফল বিবেচনা করুন। গবেষকেরা এই সিদ্ধান্তে পৌঁছেছে: “বাবা অথবা মায়ের সঙ্গে দৃঢ় মানসিক যোগাযোগ হল এক কিশোর বা কিশোরীর স্বাস্থ্যের সবচেয়ে ভাল নিশ্চয়তা এবং ঝুঁকিপূর্ণ আচরণের বিরুদ্ধে সবচেয়ে শক্তিশালী সুরক্ষা।” হ্যাঁ, সন্তানেরা তাদের বাবামায়ের মনোযোগ পেতে আকুলভাবে আকাঙ্ক্ষী। একজন মা একবার তার বাচ্চাদের জিজ্ঞেস করেছিলেন, “তোমরা যদি যা চাও তা-ই পেতে, তা হলে তোমরা সবচেয়ে বেশি কী পেতে চাইতে?” চার জনই বলেছিল, “মা ও বাবার সঙ্গে আরও বেশি সময়।”

অতএব একজন দায়িত্বশীল বাবা অথবা মা হওয়ার অর্থ হল, আপনি নিশ্চিত হন যে আপনার সন্তানদের চাহিদাগুলো পূরণ করা হয়েছে, যার অন্তর্ভুক্ত তাদের আধ্যাত্মিক শিক্ষা ও বাবামায়েদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ বন্ধুত্বের চাহিদাগুলো পূরণ করা। এর অর্থ সন্তানদের যোগ্য, সম্মানপূর্ণ ও সৎ প্রাপ্তবয়স্ক হয়ে উঠতে সাহায্য করা, যারা তাদের সহমানবদের সঙ্গে সদয় ব্যবহার করে ও তাদের সৃষ্টিকর্তার গৌরব নিয়ে আসে। (১ শমূয়েল ২:২৬) হ্যাঁ, বাবামায়েরা যখন সন্তানদের ঈশ্বরীয় পথে প্রশিক্ষণ দেয় ও শাসন করে, তখন তারা দায়িত্বশীল হয়।

[পাদটীকা]

^ এখানে পৌল গ্রিক শব্দ গনেফ্‌স থেকে নেওয়া গনেফসিন ব্যবহার করেছিলেন, যার মানে “পিতামাতা।” কিন্তু ৪ পদে তিনি গ্রিক শব্দ পেটিরেস ব্যবহার করেছিলেন যার মানে “পিতারা।”

[১৩ পৃষ্ঠার চিত্র]

চ্যাঁচামেচি করা একটা সন্তানকে কষ্ট দিতে পারে

[১৩ পৃষ্ঠার চিত্র]

আপনার সন্তানদের সঙ্গে সময় কাটান