সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

“যেন নকশা করা”?

“যেন নকশা করা”?

“যেন নকশা করা”?

আপনি কি কখনো দূরবিন দিয়ে রাতের আকাশ দেখেছেন? যারা দেখেছে তাদের অনেকে আপনাকে বলতে পারবে যে, তারা এখনও সেই সময়ের কথা মনে করতে পারে, যখন প্রথম বার তারা শনিগ্রহ দেখেছিল। এটা যেন এক বিস্ময়কর দৃশ্য। এক অন্ধকার অন্তহীন কালো আকাশে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা অসংখ্য তারার মধ্যে সুন্দর সমতল বলয়গুলো দ্বারা পরিবেষ্টিত এক উজ্জ্বল খ-গোলক রয়েছে!

এই বলয়গুলো কী? ১৬১০ সালে, জ্যোতির্বিজ্ঞানী গ্যালিলিও যখন তার নিজের তৈরি দূরবিন দিয়ে প্রথম বার শনিগ্রহ দেখেছিলেন, তখন সেই দৃশ্য এতই অস্পষ্ট ছিল যে, শনিগ্রহকে এমন একটা গ্রহের মতো দেখিয়েছিল যেটার কান—মধ্যকার গোলকের দুপাশে দুটো ছোট গোলক ঝুলে—রয়েছে। বছরের পর বছর ধরে দূরবিনগুলো উন্নত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে, জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা বলয়গুলোকে আরও স্পষ্টভাবে দেখতে পেয়েছিল কিন্তু তবুও তারা তখন এই বলয়গুলোর গঠন নিয়ে তর্কবিতর্ক করেছিল। অনেকে দাবি করেছিল যে, এই বলয়গুলো হল কঠিন, শক্ত চাকতি। ১৮৯৫ সাল পর্যন্ত জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের কাছে দৃঢ় প্রমাণ ছিল না যে, এই বলয়গুলো ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র পাথর ও তুষারকণা দিয়ে গঠিত।

দ্যা ফার প্ল্যানেটস বইটি জানায়: “শনিগ্রহের বলয়গুলো, অগণিত তুষারকণা দিয়ে গঠিত সরু সরু ফিতের এক গুচ্ছ, যেটাকে সৌরজগতের প্রধান বিস্ময়কর বিষয়গুলোর পর্যায়ে রাখা হয়। উজ্জ্বল জ্যোতির্বলয়টা বিরাটাকার, যেটার ভিতরের প্রান্ত যা গ্রহটার আবহাওয়ার স্তর থেকে একটু উর্ধ্বে অবস্থিত, সেটার থেকে বাইরের প্রান্তের দূরত্ব হচ্ছে ৪,০০,০০০ কিলোমিটার আর সেই বাইরের প্রান্তটা খুবই অস্পষ্ট দেখা যায়। এ ছাড়া, জ্যোতির্বলয়টা আশ্চর্যজনকভাবে খুবই সরু, গড়ে ৩০ মিটারের চেয়েও কম।” ২০০৪ সালের জুন মাসে, যখন কাসিনি-হাইগিন্স মহাকাশযান শনিগ্রহে পৌঁছায় এবং সেখান থেকে তথ্য ও ছবিগুলো পাঠায়, তখন বিজ্ঞানীরা এই শত শত বলয়ের জটিলতা সম্বন্ধে আগের চেয়ে আরও বেশি কিছু শিখতে শুরু করে।

স্মিথসোনিয়ান পত্রিকায় একটা প্রবন্ধ সম্প্রতি বলেছিল: “শনিগ্রহটা দেখতে এমন লাগে যেন নকশা করা হয়েছে—গণিতের মতো একেবারে নিখুঁত।” আমরা লেখকের অনুভূতির সঙ্গে একমত কিন্তু আমরা “যেন” শব্দটিকে অন্তর্ভুক্ত করার বিষয়ে কেবল বিস্ময়বোধ করতে পারি। প্রকৃতপক্ষে, এই সুন্দর জ্যোতিষ্কটি হল অন্যান্য অসংখ্য জ্যোতিষ্কমণ্ডলের মধ্যে একটা, যা হাজার হাজার বছর আগে লিখিত এই অনুপ্রাণিত বর্ণনার সঙ্গে মিলে যায়: “আকাশমণ্ডল ঈশ্বরের গৌরব বর্ণনা করে, বিতান তাঁহার হস্তকৃত কর্ম্ম জ্ঞাপন করে।”—গীতসংহিতা ১৯:১.

[৩১ পৃষ্ঠার চিত্র সৌজন্যে]

পটভূমি: NASA, ESA and E. Karkoschka (University of Arizona); অভ্যন্তরীণ ছবিগুলো: NASA and The Hubble Heritage Team (STScl/AURA)