সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

আবাসন সংকটের কারণ কী?

আবাসন সংকটের কারণ কী?

আবাসন সংকটের কারণ কী?

আফ্রিকার এক বড় শহরের প্রত্যন্ত অঞ্চলে ৩৬ বছর বয়সি জোজেফিন তার ৬ থেকে ১১ বছর বয়সি তিন ছেলেকে নিয়ে বাস করেন। জীবিকার্জনের তাগিদে তিনি প্লাস্টিকের খালি পাত্র সংগ্রহ করে কাছের এক পুনর্প্রক্রিয়াজাতকরণ কারখানায় বিক্রি করেন। এই হাড়ভাঙা খাটুনি করে তিনি দিনে দুই মার্কিন ডলারেরও কম অর্থ আয় করেন। সেই শহরে, এই পরিমাণ অর্থ দিয়ে তার পরিবারের ভরণপোষণ ও বাচ্চাদের স্কুলের খরচ মেটানো খুবই কঠিন।

জোজেফিন দিনের শেষে সেখানে ফেরেন, যেটাকে তিনি বাড়ি বলতে বাধ্য হন। তার বাড়ির দেয়ালগুলো রোদে শুকানো মাটির ইট ও কাদামাটি এবং পাতলা ডালপালা দিয়ে তৈরি। আলগা, মরচে-ধরা লোহার পাত ও সেইসঙ্গে টিন ও প্লাস্টিকের পাতগুলো ছাদ হিসেবে কাজ করে। ছোট ছোট পাথর, কাঠ এবং পুরোনো ধাতব টুকরোগুলো গাদা করে ওপরে চাপা দিয়ে রাখা আছে, যাতে প্রবল বাতাসের সময় সেগুলো ছাদকে ধরে রাখতে পারে। তার ঘরের “দরজা” ও “জানালা” হচ্ছে ছেঁড়া চটের বস্তা, যেগুলো বৈরি আবহাওয়ার মধ্যে প্রকৃতপক্ষে কোনো সুরক্ষাই জোগায় না আর চোরের কথা তো বলাই বাহুল্য।

এমনকি এই অতি সাদামাটা বাড়িটাও আসলে তার নিজের নয়। জোজেফিন ও তার বাচ্চারা সবসময় এখান থেকে উচ্ছেদ হওয়ার ভয় নিয়ে জীবনযাপন করে। তাদের ছোট্ট বাড়িটা যেখানে অবস্থিত সেই জায়গাটা কাছেই একটা রাস্তা বড় করার জন্য ব্যবহৃত হবে। দুঃখের সঙ্গে বলতে হয় যে, আজকে বিশ্বজুড়ে অনেক জায়গাতেই একইরকম অবস্থা বিদ্যমান।

এক বিষাক্ত বাড়ি

“নিম্নমানের গৃহে,” আন্তর্জাতিক আবাসন সহযোগিতা কার্যক্রমের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা রবিন শেল বলেন, “ছেলেমেয়েরা তাদের ঘরের কারণে লজ্জা পায়, . . . পরিবারের সদস্যরা সবসময় অসুস্থ থাকে এবং . . . তারা জানে না যে, কখন একজন সরকারি কর্মকর্তা বা বাড়িওয়ালা আসবে এবং [তাদের বাড়িঘর] উচ্ছেদ করবে।”

এইরকম অবস্থায় বাস করার কারণে বাবামারা তাদের সন্তানদের স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তার ব্যাপারে ক্রমাগত দুশ্চিন্তা করে থাকে। তাদের পরিস্থিতিকে উন্নত করার জন্য সমর্থ হওয়ার পরিবর্তে, তারা প্রায়ই তাদের অধিকাংশ সময় ও শক্তি সন্তানদের মৌলিক চাহিদাগুলো, যেমন খাদ্য, বিশ্রাম এবং বাসস্থান জোগানোর জন্য সংগ্রাম করার পিছনে ব্যয় করে থাকে।

দূর থেকে দেখে একজনের পক্ষে এইরকম উপসংহারে আসা হয়তো সহজ হবে যে, দরিদ্ররা যদি আরেকটু উদ্যোগ দেখাত, তা হলে তারা তাদের নিজেদের পরিস্থিতির প্রতিকার করতে পারত। কিন্তু, লোকেদের কেবল তাদের নিজ চেষ্টায় সফল হতে বলা কোনো উত্তর নয়। আবাসন সংকটের পিছনে বড় বড় কারণ জড়িত, যেগুলো যেকোনো ব্যক্তির নিয়ন্ত্রণের বাইরে। গবেষকরা জনসংখ্যা বিস্ফোরণ, দ্রুত নগরায়ন, প্রাকৃতিক দুর্যোগ, রাজনৈতিক উত্থান এবং স্থায়ী দরিদ্রতাকে মূল অপরাধী হিসেবে উল্লেখ করে। একটা মুষ্টিবদ্ধ হাতের পাঁচটা আঙুলের মতো এই কারণগুলো বিশ্বের অনেক দরিদ্র লোকের জীবনে চাপ সৃষ্টি করে চলছে।

জনসংখ্যার চাপ

সামগ্রিকভাবে অনুমান করে দেখা গিয়েছে যে, প্রতি বছর বিশ্বে অতিরিক্ত ৬ কোটি ৮০ লক্ষ থেকে ৮ কোটি লোকের জন্য ঘরের প্রয়োজন। রাষ্ট্রসংঘের জনসংখ্যা তহবিল অনুসারে, ২০০১ সালে বিশ্বের জনসংখ্যা ৬১০ কোটি ছাড়িয়ে গিয়েছে আর ২০৫০ সালের মধ্যে তা ৭৯০ থেকে ১,০৯০ কোটির মধ্যে পৌঁছাবে বলে আশা করা হচ্ছে। এর চেয়েও চিন্তার বিষয়টা হচ্ছে, সেই বৃদ্ধির ৯৮ শতাংশ আগামী দুই দশকের মধ্যে উন্নয়নশীল দেশগুলোতে ঘটবে বলে পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে। সেই অনুমানগুলো আবাসন ব্যবস্থার ক্ষেত্রে এক দুর্দান্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতা নিয়ে আসে। তা সত্ত্বেও, সেই প্রতিদ্বন্দ্বিতা এই তথ্যের দ্বারা আরও জটিল হয়ে ওঠে যে, অধিকাংশ দেশে দ্রুতগতিতে বৃদ্ধিপ্রাপ্ত অঞ্চলগুলো ইতিমধ্যেই ঘন জনবসতিপূর্ণ শহরে পরিণত হয়েছে।

কঠোর নগরায়ন

বড় বড় শহরকে—যেমন নিউ ইয়র্ক, লন্ডন এবং টোকিওকে—প্রায়ই একটা দেশের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির অতি গুরুত্বপূর্ণ প্রতীক হিসেবে দেখা হয়ে থাকে। ফলস্বরূপ, গ্রাম থেকে হাজার হাজার লোক প্রতি বছর মূলত শিক্ষা ও চাকরি পাওয়ার আশায় ‘শহুরে সবুজ চারণভূমিতে’ এসে জড়ো হয়।

উদাহরণস্বরূপ, চিনের অর্থনীতি অতি দ্রুত সম্প্রসারিত হচ্ছে। ফলে, একটা রিপোর্ট অনুমান করে যে, আগামী কয়েক দশকের মধ্যে কেবলমাত্র বড় বড় শহুরে এলাকায় ২০ কোটিরও বেশি নতুন আবাসন এলাকার প্রয়োজন হবে। এই সংখ্যাটা বর্তমানে পুরো যুক্তরাষ্ট্রে যতগুলো আবাসন এলাকা রয়েছে সেটার মোট সংখ্যার প্রায় দ্বিগুণ। কোন আবাসন কার্যক্রম এইরকম দাবি মেটাতে পারবে বলে মনে হয়?

বিশ্বব্যাঙ্ক অনুসারে, “উন্নয়নশীল দেশগুলোর শহরে শহরে প্রতি বছর, প্রায় ১ কোটি ২০ লক্ষ থেকে ১ কোটি ৫০ লক্ষ নতুন পরিবার যুক্ত হচ্ছে আর তাদের জন্য সমপরিমাণ বাসস্থানের প্রয়োজন হচ্ছে।” যেহেতু পাওয়ার মতো যথেষ্ট আবাসন ব্যবস্থা নেই, তাই এই শহুরে দরিদ্র লোকেরা যেখানে পারে সেখানেই আশ্রয় খুঁজতে বাধ্য হয়, প্রায়ই এমন জায়গাগুলো যেগুলো কেউই থাকার জন্য বেছে নেবে না।

প্রাকৃতিক এবং রাজনৈতিক দুর্যোগ

দরিদ্রতা অনেককে বন্যা, ভূমিধস এবং ভূমিকম্পের আশঙ্কাপূর্ণ জায়গাগুলোতে থাকতে বাধ্য করেছে। উদাহরণস্বরূপ, অনুমান করে দেখা গিয়েছে যে, ভেনেজুয়েলার কারাকাসে পাঁচ লক্ষেরও বেশি লোক “খাড়া ঢালের অননুমোদিত জায়গাগুলোতে স্থায়ীভাবে বাস করে, যেগুলো সবসময় ভূমিধসের দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়।” এ ছাড়া, ১৯৮৪ সালে ভারতের ভূপালে সংঘঠিত শিল্পকারখানার দুর্ঘটনার কথা মনে করে দেখুন, যেখানে কয়েক হাজার লোক নিহত হয় এবং আরও বহু সংখ্যক লোক আহত হয়। কেন এত এত লোককে প্রাণ হারাতে হল? এর মূল কারণটা ছিল কারখানার সীমানার পাঁচ মিটারের মধ্যে এক বস্তি এলাকা গড়ে উঠেছিল।

গৃহযুদ্ধগুলোর মতো রাজনৈতিক দুর্যোগও আবাসন সমস্যার জন্য ক্রমবর্ধমানভাবে দায়ী। ২০০২ সালে মানবাধিকারের এক দলের দ্বারা প্রকাশিত একটা রিপোর্ট ইঙ্গিত করেছিল যে, ১৯৮৪ থেকে ১৯৯৯ সালের মধ্যে সংঘটিত গৃহযুদ্ধের কারণে প্রায় ১৫ লক্ষ লোক, মূলত গ্রামবাসীরা, দক্ষিণপূর্ব তুরস্ক ছেড়ে চলে যেতে বাধ্য হয়েছে। তাদের মধ্যে অনেকে যেখানে পারে সেখানেই আশ্রয় খুঁজে নিতে বাধ্য হয়েছে, তারা প্রায়ই আত্মীয়স্বজন ও প্রতিবেশীদের সঙ্গে অস্থায়ী আবাসে, ভাড়া বাড়িতে, খামারে বা নির্মাণস্থলে গাদাগাদি করে বাস করে। রিপোর্ট করা হয়েছে যে, কয়েকটা পরিবার আস্তাবলের মধ্যে বাস করে, যেখানে এক রুমে ১৩ বা তারও বেশি লোক থাকে, সকলে একটা টয়লেট এবং উঠানে শুধু একটা কল ব্যবহার করে। “আমরা এই ধরনের জীবন থেকে বেরিয়ে আসতে চাই,” একজন শরণার্থী বলেছিলেন। “আমরা পশুদের জন্য তৈরি একটা জায়গায় বাস করছি।”

অর্থনৈতিক অচলাবস্থা

সবশেষে, আবাসন এবং দরিদ্রতার অর্থনীতির মধ্যে সম্পর্ককে কোনোভাবেই বাদ দেওয়া যায় না। আগে উল্লেখিত বিশ্বব্যাঙ্কের রিপোর্ট অনুসারে, উন্নয়নশীল দেশগুলোতে শুধুমাত্র ১৯৮৮ সালেই ৩৩ কোটি শহুরে অধিবাসী দরিদ্র বলে কথিত আছে আর তা এমন এক অবস্থা, যা পরবর্তী বছরগুলোতে তেমন একটা পরিবর্তিত হবে না বলেই আশা করা হচ্ছিল। যেখানে লোকেরা এত দরিদ্র যে তারা খাদ্য ও বস্ত্রের মতো মৌলিক চাহিদাগুলোকে জোগাতে পারে না, সেখানে কীভাবে তারা এক যথোপযুক্ত ঘর ভাড়া কিংবা তৈরি করতে পারবে?

উচ্চ হারে সুদ এবং মুদ্রাস্ফীতির জন্য ব্যাঙ্ক থেকে নেওয়া ঋণ পরিশোধ করা অনেক পরিবারের জন্য ধরাছোঁয়ার বাইরে আর জল, বিদ্যুৎ ও গ্যাসের আকাশছোঁয়া দাম লোকেদের অবস্থার উন্নতি করাকে কঠিন করে তোলে। কিছু কিছু দেশে ২০ শতাংশের মতো বেকারত্বের উচ্চ হার মৌলিক চাহিদাগুলো মেটানোকে অসম্ভব করে তোলে।

এগুলো এবং অন্য কারণগুলো পৃথিবীর প্রতিটা কোণে কোটি কোটি লোককে নিম্নমানের আবাসনে বাস করতে বাধ্য করেছে। লোকেরা পুরোনো বাস, শিপিং কনটেইনারে এবং কার্ডবোর্ডের বাক্সে থাকে। তারা সিঁড়ির নীচে, প্লাস্টিক বিছিয়ে এবং ব্যবহৃত আসবাবপত্রের টুকরো অংশে বাস করে। এমনকি শিল্প কারখানার পরিত্যক্ত জায়গাগুলোও কারো কারো জন্য বসতি হয়ে উঠেছে।

কী করা হচ্ছে?

এই সংকট নিরসনের জন্য অনেক চিন্তিত ব্যক্তি, সংগঠন এবং সরকারের দ্বারা ইতিমধ্যেই বাস্তব পদক্ষেপগুলো নেওয়া হয়েছে। জাপানে সামর্থ্যযোগ্য ঘর তৈরির জন্য বেশ কয়েকটা সংস্থা প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। দক্ষিণ আফ্রিকায় ১৯৯৪ সালে প্রতিষ্ঠিত একটা আবাসন কার্যক্রম চার রুম বিশিষ্ট দশ লক্ষেরও বেশি ঘর নির্মাণ করেছে। কেনিয়াতে বড় এক আবাসন কর্মপন্থার লক্ষ্য হচ্ছে শহুরে এলাকাগুলোতে ১,৫০,০০০ আবাসন এলাকা এবং গ্রামাঞ্চলগুলোতে এর দ্বিগুণ পরিমাণ নির্মাণ করা। মাদাগাস্কারের মতো অন্য দেশগুলোও তাদের প্রচেষ্টাকে এমন নির্মাণ পদ্ধতি বের করার জন্য ব্যবহার করেছে, যার ফলে কম ব্যয়ে আবাসনের ব্যবস্থা করতে পারবে।

ইউএন-হ্যাবিটেট এর মতো আন্তর্জাতিক সংগঠনগুলো প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে এটা দেখানোর জন্য যে, “ব্যাপক হারে শহুরে অবস্থা বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে উৎপন্ন সমস্যাগুলোকে দমন ও অপেক্ষাকৃতভাবে সমাধান” করার জন্য বিশ্বে অঙ্গীকার গ্রহণ করা হয়েছে। মুনাফাহীন ও বেসরকারি সংগঠনগুলোও সাহায্য করার চেষ্টা করছে। একটা মুনাফাহীন সংগঠন বিভিন্ন দেশে তাদের নিম্নমানের আবাসনকে উন্নত করতে ১,৫০,০০০রেরও বেশি পরিবারকে সাহায্য করেছে। এটা অনুমান করে যে, ২০০৫ সালের মধ্যে দশ লক্ষ লোককে সাধারণ, যথোপযুক্ত ও সামর্থ্যযোগ্য গৃহ খুঁজে পেতে সাহায্য করা হবে।

এই সংগঠনগুলোর মধ্যে বেশ কয়েকটা যারা নিম্নমানের আবাসনে বাস করে তাদের পরিস্থিতিকে সর্বোত্তমভাবে কাজে লাগাতে বা আরও উন্নতি করতে সাহায্য করার জন্য দ্রুত প্রাপ্তিসাধ্য, ব্যবহারিক তথ্য জুগিয়েছে। নিশ্চিতভাবেই আপনি যদি দেখেন যে, আপনার সাহায্যের প্রয়োজন আছে, তা হলে আপনি এই ব্যবস্থাগুলোর পূর্ণ উপকারিতা গ্রহণ করতে পারেন। এ ছাড়া, সাহায্য পাওয়ার জন্য এমন অনেক মৌলিক বিষয়ও রয়েছে যা আপনি করতে পারেন।—৭ পৃষ্ঠায় “আপনার ঘর ও আপনার স্বাস্থ্য” নামক বাক্সটা দেখুন।

আপনি আপনার ব্যক্তিগত পরিস্থিতি উন্নত করতে পারেন বা না পারেন, যে-কারণগুলো বিশ্বব্যাপী এই সংকটকে দৃঢ়মুষ্টিতে আবদ্ধ করে রেখেছে, একজন ব্যক্তি বা কোনো সংগঠন সেগুলোকে আলগা করতে পারবে, এমন আশা খুব সামান্যই রয়েছে। অর্থনৈতিক উন্নতি ও মানবীয় সাহায্যের এই জরুরি ও ক্রমবর্ধমান দাবি মেটাতে গিয়ে আন্তর্জাতিক সমাজ দিন দিন কেবল পিছিয়েই যাচ্ছে। প্রতি বছর লক্ষ লক্ষ শিশু এই ক্রমবর্ধমান দরিদ্রতার মধ্যে জন্মগ্রহণ করে। এক স্থায়ী সমাধানের কি কোনো প্রকৃত আশা রয়েছে?

[৭ পৃষ্ঠার বাক্স]

আপনার ঘর ও আপনার স্বাস্থ্য

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) অনুসারে, সাধারণভাবে ভাল স্বাস্থ্য উন্নীত করার জন্য একটা ঘরে অন্তত নিম্নলিখিত বিষয়গুলো থাকা উচিত:

◼ বৃষ্টি প্রতিরোধ করার জন্য ভাল ছাদ।

◼ প্রতিকূল আবহাওয়া ও পশুপাখি থেকে সুরক্ষার জন্য সুদৃঢ় দেয়াল ও দরজা।

◼ দরজা ও জানালায় তারের জাল দিয়ে তৈরি পর্দা, যাতে পোকামাকড় বিশেষভাবে মশা থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।

◼ গরমের সময় দেয়ালকে সরাসরি সূর্যের তাপ থেকে রক্ষা করার জন্য চারপাশে সানশেড।

[৮ পৃষ্ঠার বাক্স/চিত্রগুলো]

আফ্রিকার ঐতিহ্যগত গ্রাম্য ঘরবাড়ি

অনেক বছর ধরে আফ্রিকার ঐতিহ্যগত ঘরবাড়িগুলো ভূখণ্ডে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে। সেগুলো বিভিন্ন আকার ও আকৃতির। কেনিয়ার কিকুইয়ু এবং লুয়োর মতো কিছু সমাজ বৃত্তাকার দেয়াল ও খড় দিয়ে ছাওয়া মোচাকৃতি ছাদ অধিকতর পছন্দ করেছিল। কেনিয়া ও তানজানিয়ার মাসাই উপজাতি ও অন্যেরা কিছুটা আয়তাকার ঘরবাড়ি তৈরি করেছিল। পূর্ব আফ্রিকার উপকূলবর্তী এলাকাগুলোতে কিছু কিছু ঘরে খড়ের তৈরি এমন ছাদ ছিল, যা ভূমিকে স্পর্শ করে ও দেখতে মৌচাকের মতো।

এই ধরনের কাঠামোতে ব্যবহৃত অধিকাংশ নির্মাণ সামগ্রী যেহেতু সহজেই পাওয়া যেত, তাই আবাসন সমস্যা তেমন প্রকট ছিল না। সাধারণভাবে মাটি ও জল মিশিয়ে কাদামাটি পাওয়া যেত। কাছেপিঠের অনেক বন জঙ্গল থেকে সহজেই অনেক কাঠ, ঘাস, নল খাগড়া এবং বাঁশ পাতা পাওয়া যেত। তাই, একটা পরিবার যত ধনী বা দরিদ্রই হোক না কেন, তাদের নিজস্ব ঘর থাকা সাধারণত তাদের নাগালের মধ্যেই ছিল।

অবশ্যই, এই ধরনের ঘরগুলোর কিছু অসুবিধাও ছিল। যেহেতু অধিকাংশ ছাদ দাহ্য বস্তু দিয়ে তৈরি ছিল, তাই সেখানে অগ্নিকাণ্ড ঘটার ঝুঁকি ছিল। এ ছাড়া, মাটির দেয়ালের মধ্যে সাধারণভাবে একটা ছিদ্র করে চোর সহজেই ঘরে ঢুকতে পারত। তাই, অবাক হওয়ার কিছু নেই যে, আজকে অনেক এলাকায় আফ্রিকার ঐতিহ্যগত বাড়িগুলোর জায়গায় ধীরে ধীরে আরও অধিক স্থায়ী নির্মাণপদ্ধতি এসেছে।

[সৌজন্যে]

উৎস: আফ্রিকার ঐতিহ্যগত স্থাপত্যশিল্প

কুঁড়েঘর: Courtesy Bomas of Kenya Ltd - A Cultural, Conference, and Entertainment Center

[৫ পৃষ্ঠার চিত্র]

ইউরোপ

[সৌজন্যে]

© Tim Dirven/Panos Pictures

[৬ পৃষ্ঠার চিত্র]

আফ্রিকা

[৬ পৃষ্ঠার চিত্র]

দক্ষিণ আমেরিকা

[৭ পৃষ্ঠার চিত্র]

দক্ষিণ আমেরিকা

[৭ পৃষ্ঠার চিত্র]

এশিয়া

[৬ পৃষ্ঠার চিত্র সৌজন্যে]

© Teun Voeten/Panos Pictures; J.R. Ripper/BrazilPhotos

[৭ পৃষ্ঠার চিত্র সৌজন্যে]

JORGE UZON/AFP/Getty Images; © Frits Meyst/Panos Pictures