সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

জ্যোতিষিবিদ্যা কি আপনার ভবিষ্যৎ বলতে পারে?

জ্যোতিষিবিদ্যা কি আপনার ভবিষ্যৎ বলতে পারে?

বাইবেলের দৃষ্টিভঙ্গি

জ্যোতিষিবিদ্যা কি আপনার ভবিষ্যৎ বলতে পারে?

কীভাবে আপনি আপনার জীবনকে উন্নত করতে এবং ভালবাসা ও টাকাপয়সার পিছনে ছুটে সাফল্য লাভ করতে পারেন? অনেক লোক উত্তরের জন্য জ্যোতিষিবিদ্যার ওপর নির্ভর করে। লক্ষ লক্ষ লোক তাদের ভবিষ্যৎকে উন্নত করার আশায় প্রতিদিন খবরের কাগজে কোষ্ঠী দেখে। এমনকি বিশ্বের নেতারা পর্যন্ত তাদের সিদ্ধান্তগুলো নেওয়ার ব্যাপারে নক্ষত্র দেখার জন্য পরিচিত।

জ্যোতিষিবিদ্যা কি নির্ভরযোগ্য? জ্যোতিষীরা ভবিষ্যদ্বাণীগুলো কীভাবে করে থাকে? খ্রিস্টানদের কি গ্রহ-নক্ষত্র দেখে নির্ধারণ করা উচিত যে, তারা কীভাবে জীবনযাপন করবে?

জ্যোতিষিবিদ্যা কী?

দ্যা ওয়ার্ল্ড বুক এনসাইক্লোপিডিয়া অনুযায়ী, জ্যোতিষিবিদ্যার “ভিত্তি হল এই বিশ্বাস যে, গ্রহ-নক্ষত্র সেই নকশাগুলো গঠন করে, যেগুলো একজন ব্যক্তির চরিত্র বা ভবিষ্যৎ সম্বন্ধে জানাতে পারে।” জ্যোতিষীরা দাবি করে যে, গ্রহগুলোর নিখুঁত অবস্থান এবং একজন ব্যক্তির জন্মের সময়ে রাশিচক্রের রাশিগুলো তার জীবনধারার ওপর প্রভাব ফেলতে পারে। * এক নির্দিষ্ট মুহূর্তে এই গ্রহ-নক্ষত্রের অবস্থান বিচারকেই বলা হয় কোষ্ঠী।

জ্যোতিষিবিদ্যার ওপর বিশ্বাস হল অতি প্রাচীন বিশ্বাস। প্রায় চার হাজার বছর আগে, বাবিলীয়রা সূর্য, চন্দ্র এবং স্পষ্টভাবে দৃশ্যমান পাঁচটা গ্রহের অবস্থান অনুযায়ী ভবিষ্যৎ বলা শুরু করেছিল। তারা দাবি করত যে, এই সূর্য, চন্দ্র, নক্ষত্র নির্দিষ্ট ধরনের শক্তি প্রয়োগ করেছিল, যা মানুষের আচারব্যবহারের ওপর প্রভাব ফেলেছিল। পরে তারা তাদের ভবিষ্যদ্বাণীগুলোতে রাশিচক্রের রাশিগুলোকে অন্তর্ভুক্ত করেছিল।

ব্যর্থতার এক দীর্ঘ ইতিহাস

বাইবেল বাবিল ও জ্যোতিষিবিদ্যার মধ্যে থাকা সম্পর্কের ওপর আলোকপাত করে এবং বেশ কয়েক বার এটি বাবিলীয় জ্যোতিষীদের বিষয়ে উল্লেখ করে। (দানিয়েল ৪:৭; ৫:৭, ১১) ভাববাদী দানিয়েলের সময়ে জ্যোতিষিবিদ্যা কল্‌দিয়ায় (বাবিলে) এত ব্যাপকভাবে প্রচলিত ছিল যে, “কল্‌দিয়” শব্দটি ব্যবহার করা মূলত জ্যোতিষীদের বিষয় উল্লেখ করার সমরূপ ছিল।

বাবিলে দানিয়েল কেবল জ্যোতিষিবিদ্যার প্রভাবই নয় কিন্তু সেইসঙ্গে এই শহরের পতন সম্বন্ধে করা জ্যোতিষীদের ভবিষ্যদ্বাণীর ব্যর্থতারও প্রত্যক্ষদর্শী হয়েছিলেন। (দানিয়েল ২:২৭) দুই শতাব্দী আগে ভাববাদী যিশাইয় সঠিকভাবে কী ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন, তা লক্ষ করুন। “জ্যোতিষীরা, নক্ষত্রদর্শীরা, মাসদৈবজ্ঞেরা উঠিয়া দাঁড়াউক, তোমার প্রতি যাহা যাহা ঘটিবে, তাহা হইতে তোমাকে নিস্তার করুক” যিশাইয় তাচ্ছিল্যভাবে লিখেছিলেন। “তাহারা . . . আপন আপন প্রাণ উদ্ধার করিতে পারিবে না।”—যিশাইয় ৪৭:১৩, ১৪.

স্পষ্টতই, বাবিলীয় জ্যোতিষীরা তাদের শহরের পতন সম্বন্ধে এমনকি কয়েক ঘন্টা আগেও ভবিষ্যদ্বাণী করতে পারেনি। আর ঈশ্বরের নিজ প্রতিকূল বিচার যখন রাজা বেল্‌শৎসরের রাজপ্রাসাদের দেওয়ালে প্রতীয়মান হয়েছিল, তখনও জ্যোতিষীরা রহস্যময় লেখার তাৎপর্য বলতে অসমর্থ বলে প্রমাণিত হয়েছিল।—দানিয়েল ৫:৭, ৮.

আজকেও, জ্যোতিষীরা গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাগুলো সম্বন্ধে ভবিষ্যদ্বাণী করতে কোনোভাবে কার্যকরী বলে প্রমাণিত হয়নি। জ্যোতিষীদের করা নির্দিষ্ট ধরনের ৩,০০০রেরও বেশি ভবিষ্যদ্বাণী পরীক্ষা করার পর, বিজ্ঞান বিষয়ের গবেষক আর. কালভের এবং ফিলিপ আইয়ানা এই উপসংহারে এসেছিল যে, কেবল শতকরা ১০টা ভবিষ্যদ্বাণী সঠিক ছিল। যেকোনো সুবিদিত বিশ্লেষণ বিশেষজ্ঞ এর চেয়েও আরও সঠিকভাবে ভবিষ্যদ্বাণী বলতে পারেন।

বাইবেলের শিক্ষাগুলোর সঙ্গে সংঘাত

তবে, ইব্রীয় ভাববাদীরা জ্যোতিষিবিদ্যাকে শুধু এই জন্যই প্রত্যাখ্যান করেনি কারণ এটা ভবিষ্যৎ সম্বন্ধে সঠিকভাবে ভবিষ্যদ্বাণী করতে ব্যর্থ হয়েছিল। মোশিকে ঈশ্বর যে-ব্যবস্থা দিয়েছিলেন, তা নির্দিষ্টভাবে শুভ বা অশুভ লক্ষণ খোঁজার বিরুদ্ধে ইস্রায়েলীয়দের সাবধান করে দিয়েছিল। “তোমার মধ্যে যেন এমন কোন লোক পাওয়া না যায়, . . . যে মন্ত্র ব্যবহার করে [“ভবিষ্যৎ-কথন বলে,” NW], . . . বা মোহক [“যে লক্ষণ দেখে ভবিষ্যতের কথা বলে,” NW]” ব্যবস্থা উল্লেখ করেছিল। “সদাপ্রভু এই সকল কার্য্যকারীকে ঘৃণা করেন।”—দ্বিতীয় বিবরণ ১৮:১০-১২.

যদিও এই শাস্ত্রপদে জ্যোতিষিবিদ্যা শব্দটি সরাসরি উল্লেখ করা নেই কিন্তু এই কাজটা স্পষ্টতই নিষেধাজ্ঞার অন্তর্ভুক্ত ছিল। এনসাইক্লোপিডিয়া ব্রিটানিকা মন্তব্য করে যে, জ্যোতিষিবিদ্যা হল ‘এমন এক ধরনের ভবিষ্যৎ-কথন, যেটাতে স্থির নক্ষত্র, সূর্য, চন্দ্র ও গ্রহাদি পর্যবেক্ষণ ও তাৎপর্য ব্যাখ্যা করার মাধ্যমে প্রাকৃতিক ও মানব ঘটিত ঘটনাগুলো সম্বন্ধে ভবিষ্যদ্বাণী করা অন্তর্ভুক্ত।’ সমস্ত প্রকারের ভবিষ্যৎ-কথন—সেটা হয় নক্ষত্র অথবা অন্যান্য বস্তুর ওপর ভিত্তি করেই হোক—ঈশ্বরের নির্দেশাবলিকে লঙ্ঘন করে। কেন? যুক্তিযুক্ত কারণ রয়েছে।

আমাদের সাফল্য বা ব্যর্থতার জন্য নক্ষত্রগুলোকে দায়ী করার পরিবর্তে, বাইবেল স্পষ্টভাবে বলে যে, “মনুষ্য যাহা কিছু বুনে তাহাই কাটিবে।” (গালাতীয় ৬:৭) ঈশ্বর আমাদের প্রত্যেককে আমাদের কাজের জন্য দায়ী করেন, কারণ আমরা নৈতিক দিক দিয়ে স্বাধীনভাবে কাজ করার অধিকারপ্রাপ্ত ব্যক্তি। (দ্বিতীয় বিবরণ ৩০:১৯, ২০; রোমীয় ১৪:১২) এটা ঠিক যে, আমরা হয়তো দুর্ঘটনার শিকার হতে পারি বা রোগে ভুগতে পারি কারণ এই বিষয়গুলো আমাদের নিয়ন্ত্রণের বাইরে। কিন্তু শাস্ত্র ব্যাখ্যা করে যে, এই ধরনের দুর্দশার কারণ হল “কাল ও দৈব,” আমাদের কোষ্ঠী নয়।—উপদেশক ৯:১১.

মানব সম্পর্ক সম্বন্ধে বাইবেল আমাদের করুণার চিত্ত, মধুর ভাব, নম্রতা, মৃদুতা, সহিষ্ণুতা ও প্রেমের মতো গুণগুলো পরিধান করতে পরামর্শ দেয়। (কলষীয় ৩:১২-১৪) এই গুণগুলো স্থায়ী বন্ধুত্ব গড়ে তোলার এবং বিবাহকে মজবুত করার চাবিকাঠি। একজন বিবাহ সাথি বেছে নেওয়ার ক্ষেত্রে “জ্যোতিষিবিদ্যা সংক্রান্ত সাদৃশ্য” নির্ভরযোগ্য নির্দেশক হতে পারে না। মনোবিজ্ঞানী বারনার্ড সিলভারম্যান প্রায় ৩,৫০০টা দম্পতির জন্মের কোষ্ঠী বিচার করেছিলেন, যাদের মধ্যে শতকরা ১৭টা দম্পতির পরবর্তী সময়ে বিবাহবিচ্ছেদ হয়েছিল। ‘জ্যোতিষিবিদ্যা সংক্রান্ত বিষয়ে সাদৃশ্য’ রয়েছে এমন একজনকে যারা বিয়ে করেছিল, তাদের মধ্যে বিবাহবিচ্ছেদের হার কম ছিল বলে তিনি মনে করেননি।

স্পষ্টতই, জ্যোতিষিবিদ্যা অনির্ভরযোগ্য ও সেইসঙ্গে বিভ্রান্তিকর। এটা আমাদেরকে আমাদের কৃত ভুলগুলোর জন্য নিজেদের দোষ দেওয়ার পরিবর্তে, নক্ষত্রগুলোকে দোষ দিতে পরিচালিত করে। এর চেয়েও বড় কথা ঈশ্বরের বাক্যে এটাকে স্পষ্টভাবে নিন্দা করা হয়েছে।

[পাদটীকা]

^ রাশিচক্রের রাশিগুলো হল ১২টি নক্ষত্র, যেগুলো জ্যোতিষিবিদ্যায় ব্যবহৃত হয়।