সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

প্রত্যেকের একটা বাড়ি প্রয়োজন

প্রত্যেকের একটা বাড়ি প্রয়োজন

প্রত্যেকের একটা বাড়ি প্রয়োজন

“প্রত্যেকের নিজের ও তার পরিবারের স্বাস্থ্য এবং মঙ্গলের জন্য পর্যাপ্ত জীবনযাত্রার মান অনুযায়ী বাস করার অধিকার রয়েছে, যেগুলোর অন্তর্ভুক্ত . . . বাসস্থান।”—বিশ্বজনীন মানবাধিকার ঘোষণাপত্র, ধারা ২৫.

এক বিরাট সংখ্যক অভিবাসী খামারকর্মী ধীরে ধীরে এমন এক এলাকায় স্থায়ীভাবে বসবাস করতে শুরু করেছে, যেটাকে তারা এখন তাদের বাড়ি বলে। শত শত পরিবার শহরের ঠিক বাইরেই কম ভাড়ার ভ্রাম্যমান ঘরবাড়ির এলাকায় থাকে, যেগুলোকে বলা হয় পারকিয়াডোরেস। এখানে পয়ঃনিষ্কাশন, বিশুদ্ধ জল সরবরাহ এবং আবর্জনা নিষ্কাশনের মতো মৌলিক সুবিধাগুলো বলতে গেলে নেই বা থাকলেও একেবারেই অনুন্নত। একজন সংবাদদাতা এই বসতিকে “খুবই নিম্নমানের এক স্থান” হিসেবে বর্ণনা করেছিলেন, “যেখানে [খামারকর্মীদের] থাকার সামর্থ্য রয়েছে।”

তিন বছর আগে, যখন কর্মকর্তারা কয়েকটা বসতিস্থান বন্ধ করে দিতে শুরু করেছিল, তখন কয়েকটা পরিবার তাদের ভ্রাম্যমান ঘরবাড়িগুলো বিক্রি করে দিয়ে শহরের কেন্দ্রে ইতিমধ্যেই ঘনবসতিপূর্ণ ঘর, আ্যপার্টমেন্ট বা গ্যারেজগুলোতে চলে গিয়েছে। অন্যেরা তাদের তল্পিতল্পা গুটিয়ে এমন এক জায়গার সন্ধানে সেখান থেকে চলে গিয়েছে, যেখানে তারা প্রতি বার শস্য সংগ্রহের পর ফিরে আসতে পারবে—এমন কোনো জায়গায় যেটাকে তারা বাড়ি বলতে পারবে।

আপনি কি এতক্ষণ মধ্য বা দক্ষিণ আমেরিকার কিছু জায়গার কথা কল্পনা করছেন? তা হলে আরেকবার ভেবে দেখুন। আপনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ক্যালিফোর্নিয়ার ম্যাকা শহরে এই ভ্রাম্যমান ঘরবাড়ির এলাকা দেখতে পাবেন, যেটা সমৃদ্ধ শহর পাম স্প্রিংসের পশ্চিমে গাড়িতে করে এক ঘন্টার কম সময়ের পথ। যদিও কথিত আছে যে, যুক্তরাষ্ট্রে সবচেয়ে বেশি লোকের নিজস্ব বাড়ি রয়েছে এবং ২০০২ সালে মধ্যবিত্ত পরিবারের আয় ছিল ৪২,০০০ মার্কিন ডলার কিন্তু আনুমানিক হিসেব দেখায় যে, আমেরিকার ৫০ লক্ষেরও বেশি পরিবার এখনও অপর্যাপ্ত গৃহে বসবাস করে।

উন্নয়নশীল দেশগুলোতে পরিস্থিতি আরও বেশি গুরুতর। রাজনৈতিক, সামাজিক এবং ধর্মীয় নানা উদ্যোগ থাকা সত্ত্বেও, বিশ্বব্যাপী আবাসন সংকট ক্রমান্বয়ে চরম আকার ধারণ করছে।

বিশ্বব্যাপী সংকট

হিসেব করে দেখা গিয়েছে যে, বিশ্বব্যাপী একশো কোটিরও বেশি লোক বস্তিতে বাস করে। ব্রাজিলে নগরায়নের বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করছে যে, সেই দেশে ক্রমবর্ধমান ফাভেলাস বা বস্তিগুলো শীঘ্রই “তারা যে-শহরগুলোতে প্রথমে স্থায়ীভাবে থাকতে শুরু করেছিল সেগুলোর চেয়ে আরও বড় এবং আরও জনবহুল হয়ে উঠবে।” নাইজেরিয়ায় অনেক শহর রয়েছে, যেখানে ৮০ শতাংশেরও বেশি জনসংখ্যা বস্তিতে এবং অননুমোদিত জায়গায় বাস করে। ২০০৩ সালে, রাষ্ট্রসংঘের মহাসচিব কোফি আনান বলেন, “কোনো গুরুতর পদক্ষেপ যদি না নেওয়া হয়, তা হলে আগামী ৩০ বছরের মধ্যে পৃথিবীব্যাপী বস্তিতে বাসকারী জনসংখ্যা প্রায় ২০০ কোটিতে গিয়ে পৌঁছাবে বলে অনুমান করা হচ্ছে।”

কিন্তু, এইরকম প্রতিকূল পরিসংখ্যানগুলো বিশ্বের দরিদ্রদের ওপর নিম্নমানের জীবনযাপনের অবস্থা ব্যক্তিগতভাবে যে-ধ্বংসাত্মক ক্ষতিগুলো নিয়ে আসে সেগুলোকে প্রকাশ করে না। রাষ্ট্রসংঘের হিসেব অনুসারে, উন্নয়নশীল দেশগুলোতে অর্ধেকেরও বেশি লোক মৌলিক স্বাস্থ্যবিধান থেকে বঞ্চিত, এক-তৃতীয়াংশ লোক বিশুদ্ধ জল পায় না, এক চতুর্থাংশ লোকের পর্যাপ্ত গৃহের অভাব রয়েছে এবং এক-পঞ্চমাংশ আধুনিক স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত। উন্নত দেশগুলোর অধিকাংশ লোক এমনকি তাদের পোষা প্রাণীদেরকে পর্যন্ত এইরকম অবস্থায় থাকতে দেবে না।

এক বিশ্বজনীন অধিকার

উপযুক্ত বাসস্থান মানুষের এক মৌলিক চাহিদা হিসেবে সাধারণভাবেই গৃহীত হয়ে এসেছে। ১৯৪৮ সালে, রাষ্ট্রসংঘের দ্বারা গৃহীত বিশ্বজনীন মানবাধিকার ঘোষণাপত্র ঘোষণা করেছিল যে, প্রত্যেকের এক সন্তোষজনক বাসস্থানসহ এক পর্যাপ্ত মানের জীবনযাপন করার অধিকার রয়েছে। বাস্তবিকই, প্রত্যেকের জন্য একটা যথোপযুক্ত বাড়ির প্রয়োজন।

অতি সাম্প্রতিক সময়ে, ১৯৯৬ সালে বেশ কিছু সংখ্যক দেশ সেই বিষয়কে গ্রহণ করে নিয়েছিল, যা রাষ্ট্রসংঘের বসতি আলোচ্য সূচি হিসেবে পরিচিত হয়ে উঠেছিল। এই প্রমাণপত্র সকলের জন্য পর্যাপ্ত বাসস্থান সরবরাহ করতে নির্দিষ্ট কিছু অঙ্গীকারের বিষয় তুলে ধরে। এরপর, ২০০২ সালের ১লা জানুয়ারিতে রাষ্ট্রসংঘ এই আলোচ্য সূচিকে পুরোদস্তুর রাষ্ট্রসংঘের কার্যক্রমের আওতাভুক্ত করার দ্বারা এই অঙ্গীকারকে আরও জোরালো করে তুলেছিল।

এটা অত্যন্ত অসামঞ্জস্যপূর্ণ যে, কিছু কিছু ধনী দেশ চাঁদে বসতি গড়ার ও মঙ্গল গ্রহে যাওয়ার জন্য বার বার আবেদন করতে শুরু করেছে অথচ তাদের দেশের দরিদ্র নাগরিকদের এমনকি পৃথিবীতেই একটা যথোপযুক্ত স্থানে বসবাস করার সামর্থ্য নেই। আবাসন সংকট আপনাকে কীভাবে প্রভাবিত করে? এমন কোনো আশা কি সত্যিই রয়েছে যে, একদিন সকলের নিজ নিজ আরামদায়ক বাড়ি থাকবে?

[৪ পৃষ্ঠার ব্লার্ব]

কিছু কিছু দেশ যেখানে চাঁদে বসতি গড়ার জন্য পরীক্ষানিরীক্ষা করছে, সেখানে তাদের নাগরিকদের মধ্যে অনেকের পৃথিবীতে বসবাস করার জন্য একটা যথোপযুক্ত স্থানের অভাব রয়েছে

[২, ৩ পৃষ্ঠার চিত্র]

এশিয়ার এক শরণার্থী পরিবার।

একটা শহরে ৩,৫০০টা পরিবার অস্থায়ী তাঁবুতে বাস করছে, যাদের জল ও স্বাস্থ্যবিধানের চরম প্রয়োজন রয়েছে

[সৌজন্যে]

© Tim Dirven/Panos Pictures

[৪ পৃষ্ঠার চিত্র]

উত্তর আমেরিকা