সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

একশো কোটি লোককে খাদ্য জোগানোর চেষ্টা করা

একশো কোটি লোককে খাদ্য জোগানোর চেষ্টা করা

একশো কোটি লোককে খাদ্য জোগানোর চেষ্টা করা

প্রতিদিন, একশো কোটি লোক তাদের ক্ষুধা মেটানোর জন্য যথেষ্ট খাবার পায় না। কিন্তু, রাষ্ট্রসংঘের কথা অনুসারে, এই ভয়াবহ পরিস্থিতি থাকার কথা নয়।

“আপনারা বলেছেন যে, আপনাদের সর্বাধিক অগ্রাধিকারের বিষয় হচ্ছে চরম দরিদ্রতাকে নির্মূল করা।” রাষ্ট্রসংঘের মহাসচিব কফি আনান, ২০০০ সালের ৮ই সেপ্টেম্বর, পৃথিবীর সবচেয়ে প্রভাবশালী নারী-পুরুষদের এক সম্মেলনে এই মন্তব্যটি করেছিলেন। তারা রাষ্ট্রসংঘ সহস্রাব্দ শীর্ষ-বৈঠক এর জন্য মিলিত হয়েছিল, যে-সময়ে এই নেতাদের বেশ কয়েক জন বিশ্বের দরিদ্র লোকেদের সমস্যাগুলো সম্বন্ধে খোলাখুলি মন্তব্য করেছিল। ব্রাজিলের ভাইস প্রেসিডেন্ট বলেছিলেন, “চরম দরিদ্রতা হচ্ছে মানবজাতির জন্য এক প্রকাশ্য অপমান।” গ্রেট ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী এমনকি কয়েক ধাপ এগিয়ে গিয়েছিলেন যখন তিনি বলেছিলেন: “উন্নত বিশ্বের পক্ষ থেকে আফ্রিকায় ব্যর্থতার এক বেদনাদায়ক রেকর্ড রয়েছে, যা আমাদের সভ্যতাকে হতবিহ্বল ও লজ্জিত করে।”

এই দুজন বক্তা স্পষ্ট করেছিলেন যে, ক্ষুধার্ত মানুষদের খাদ্য জোগানোর জন্য জাতিগুলো যা করতে পারত, তা করতে ব্যর্থ হওয়ার দ্বারা তারা নিজেরাই লজ্জার কারণ হয়েছে। পৃথিবীতে সকলের জীবনযাত্রার মান উন্নত করার বিষয়ে তাদের ইচ্ছার প্রমাণ হিসেবে, সেই শীর্ষ-বৈঠকে যোগদানকারীরা আটটা ভাগে বিভক্ত এক সংকল্প গ্রহণ করার প্রতিজ্ঞা করেছিল, যেখানে এই বিষয়গুলো অন্তর্ভুক্ত ছিল: “বর্তমানে একশো কোটিরও বেশি লোক যে-চরম দরিদ্রতার শিকার, সেই শোচনীয় ও অমানুষিক অবস্থার কবল থেকে আমাদের সহমানব, নারী ও শিশুদের মুক্ত করার জন্য আমরা সর্বাত্মক প্রচেষ্টা করব। . . . আমাদের আরও সংকল্প এই: ২০১৫ সালের মধ্যে, বিশ্বে যে-লোকেদের দৈনিক আয় এক ডলারেরও কম, তাদের অনুপাত ৫০ শতাংশ কমিয়ে আনা এবং যারা ক্ষুধার যন্ত্রণা ভোগ করে তাদের অনুপাত ৫০ শতাংশ হ্রাস করা।”

২০০০ সালের সেপ্টেম্বর মাস থেকে সেই মহৎ লক্ষ্যের ক্ষেত্রে কোন অগ্রগতি হয়েছে?

কথার চেয়ে কাজ আরও বেশি কার্যকর

২০০৩ সালে গ্লোবাল গভর্ন্যান্স ইনিশিয়েটিভ অভ্‌ দ্যা ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম, রাষ্ট্রসংঘের সহস্রাব্দ ঘোষণায় উল্লেখিত লক্ষ্যগুলোকে বাস্তবায়িত করার জন্য কী করা হয়েছে, তা খতিয়ে দেখতে শুরু করেছে। ২০০৪ সালের ১৫ই জানুয়ারিতে প্রকাশিত রিপোর্ট জানায়: “অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সমস্ত লক্ষ্যের ক্ষেত্রে, জগৎ প্রয়োজনীয় প্রচেষ্টা করতে একেবারেই ব্যর্থ হচ্ছে।” ক্ষুধা সম্বন্ধে সেই রিপোর্টটি জানায়: “বিশ্বে খাদ্যের প্রচণ্ড অভাব থাকার বিষয়টা সমস্যা নয়, কারণ প্রত্যেকের জন্য যথেষ্ট খাদ্য রয়েছে। কিন্তু সমস্যাটা হচ্ছে যে, যাদের টাকাপয়সার অভাব রয়েছে, তারা খাবার ও যথেষ্ট পুষ্টি লাভ করে না।”

দরিদ্রতার সামগ্রিক সমস্যা সম্বন্ধে রিপোর্টটি বলে: “প্রতিজ্ঞা পূরণে ঘাটতির দায় এখন মূলত সরকারগুলোরই, তা সে ধনী বা দরিদ্র যা-ই হোক না কেন। কিন্তু ধনীদের দ্বারা তৈরি বিশ্ব অর্থনৈতিক ব্যবস্থা দরিদ্র লোকেদের কোনো উপকারই করে না। ধনী দেশগুলো বড় বড় অনেক প্রতিজ্ঞা করা সত্ত্বেও, সেই ব্যবস্থাকে পালটাতে অথবা দরিদ্রদের উন্নয়নে সাহায্য করতে লক্ষণীয় উন্নতি করার ব্যাপারে কোনো আগ্রহই দেখায় না।” এই নিন্দার মুখে, রাজনীতিবিদরা কাজ করার চেয়ে তর্কবিতর্ক চালিয়ে যায় আর সরকারগুলো স্বীয় স্বার্থে কৌশলে বিষয়গুলোকে পরিচালনা করে চলে। আর বিশ্বের দরিদ্র লোকেদের পেট খালিই থেকে যায়।

ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের ছাপানো “প্রবল আকাঙ্ক্ষা থেকে মহৎ কিছু অর্জন করা” শিরোনামের একটা পুস্তিকা সাবধান করে যে, “যতক্ষণ না আন্তর্জাতিক লেনদেন কর্মপন্থাগুলো পরিবর্তিত হয়, জাতীয় কর্মপন্থাগুলো ক্ষুধা দূর করার ওপর মনোযোগ কেন্দ্রীভূত করে এবং সফল স্থানীয় প্রচেষ্টাগুলো বৃদ্ধি পায়, ততক্ষণ পর্যন্ত জনসংখ্যার এক বিরাট অংশ ক্রমশ ক্ষুধা ভোগ করে যাবে।” অধিকন্তু, কাকে উত্তম কর্মপন্থাগুলো তৈরি করতে এবং আরও “সফল স্থানীয় প্রচেষ্টাগুলো” করতে হবে? সেই সরকারগুলোকেই, যারা ২০০০ সালে প্রকাশ্যে সব মানুষের পরিস্থিতিকে উন্নত করার জন্য তাদের দৃঢ়সংকল্পের কথা ঘোষণা করেছিল।

একটা অপূর্ণ প্রতিজ্ঞা হয়তো হতাশার দিকে পরিচালিত করতে পারে; অন্যদিকে একাধিক অপূর্ণ প্রতিজ্ঞা অনির্ভরযোগ্যতার দিকে পরিচালিত করতে পারে। দরিদ্র লোকেদের যত্ন নেওয়ার বিষয়ে তাদের প্রতিজ্ঞা পূর্ণ না করার দ্বারা বিশ্বের সরকারগুলো আস্থাহীনতা অর্জন করেছে। ক্যারিবিয়ান সাগরের এক দরিদ্র দেশে বসবাসকারী পাঁচ সন্তানের একজন মা তার পরিবারের জন্য দিনে একবার খাবার জোগাতে পারেন। তিনি বলেন: “আমরা খেতে পাচ্ছি কি না, আমি কেবল সেই বিষয়েই চিন্তা করি। কে ক্ষমতায় রয়েছে তাতে কিছু যায় আসে না। ক্ষমতাসীন ব্যক্তিদের কাছ থেকে আমরা কখনোই কিছু পাইনি।”

বাইবেল লেখক যিরমিয় বলেছিলেন: “হে সদাপ্রভু আমি জানি, মনুষ্যের পথ তাহার বশে নয়, মনুষ্য চলিতে চলিতে আপন পাদবিক্ষেপ স্থির করিতে পারে না।” (যিরমিয় ১০:২৩) দরিদ্র লোকেদের সমস্যাগুলোকে সমাধান করার ব্যাপারে মনুষ্য সরকারগুলোর ব্যর্থতা বাইবেলের এই সত্যকে নিশ্চিত করে।

কিন্তু, এমন একজন শাসক রয়েছেন, যাঁর মানুষের সমস্যাগুলোকে সমাধান করার প্রয়োজনীয় শক্তি ও ইচ্ছা দুটোই রয়েছে আর বাইবেল তাঁকে শনাক্ত করে। সেই শাসক যখন দায়িত্ব গ্রহণ করবেন, তখন কেউই আর কখনো ক্ষুধার যন্ত্রণা ভোগ করবে না।

আশার এক ভিত্তি

“আশা নিয়ে সকলেই তোমার দিকে তাকিয়ে থাকে; ঠিক সময়ে তুমি তাদের খাবার দিয়ে থাক।” (গীতসংহিতা ১৪৫:১৫, বাংলা কমন ল্যাঙ্গুয়েজ ভারসন) এই ব্যক্তিটি কে যিনি মানুষের খাদ্যের প্রয়োজনের প্রতি মনোযোগ দেন? আমাদের সৃষ্টিকর্তা যিহোবা ঈশ্বর। যদিও মানবজাতি হাজার হাজার বছর ধরে দুর্ভিক্ষ ও অন্যান্য সমস্যা ভোগ করেছে কিন্তু যিহোবা সবসময়ই লোকেদের প্রতি আগ্রহ দেখিয়েছেন। তিনি মনুষ্য সরকারগুলোর ব্যর্থতা দেখেছেন আর তাঁর নির্ভুল বাক্য বাইবেল দেখায় যে, তিনি শীঘ্রই সেগুলোর জায়গায় তাঁর নিজ সরকার স্থাপন করবেন।

যিহোবা বলেন: “আমিই আমার রাজাকে স্থাপন করিয়াছি আমার পবিত্র সিয়োন-পর্ব্বতে।” (গীতসংহিতা ২:৬) নিখিলবিশ্বের সর্বোচ্চ কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে এই ঘোষণাটি আশার কারণ জোগায়। যদিও মনুষ্য শাসকরা প্রায়ই তাদের প্রজাদের সাহায্য করতে ব্যর্থ হয়েছে কিন্তু ঈশ্বরের নিযুক্ত রাজা যিশু খ্রিস্ট অনেক উপকার নিয়ে আসবেন, যা পৃথিবীর দরিদ্র লোকেরা কখনোই দেখেনি।

এই রাজার মাধ্যমে, যিহোবা সমস্ত ক্ষুধার্ত লোককে খাদ্য জোগাবেন। “সদাপ্রভু . . . সর্ব্বজাতির নিমিত্ত উত্তম খাদ্য দ্রব্যের . . . এক ভোজ প্রস্তুত করিবেন,” যিশাইয় ২৫:৬ পদ বলে। খ্রিস্টের দ্বারা শাসিত ঈশ্বরের রাজ্যের অধীনে, লোকেদের কখনো স্বাস্থ্যকর খাদ্যের অভাব হবে না, তা তারা যেখানেই বাস করুক না কেন। যিহোবা সম্বন্ধে বাইবেল বলে: “তুমিই আপন হস্ত মুক্ত করিয়া থাক, সমুদয় প্রাণীর বাঞ্ছা পূর্ণ করিয়া থাক।”—গীতসংহিতা ১৪৫:১৬. (g০৫ ৭/২২)

[১৩ পৃষ্ঠার ব্লার্ব]

“উন্নত বিশ্বের পক্ষ থেকে আফ্রিকায় ব্যর্থতার এক বেদনাদায়ক রেকর্ড রয়েছে, যা আমাদের সভ্যতাকে হতবিহ্বল ও লজ্জিত করে।”—ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী টোনি ব্লেয়ার

[১২ পৃষ্ঠার চিত্র]

ইথিওপিয়া: এই দেশে প্রায় ১ কোটি ৩০ লক্ষ লোক সাহায্যপ্রাপ্ত খাদ্যের ওপর নির্ভর করে। ওপরে দেখানো শিশুটি তাদের একজন

[১২ পৃষ্ঠার চিত্র]

ভারত: এই ছাত্র-ছাত্রীরা স্কুলে খাবার পায়

[১২ পৃষ্ঠার চিত্র সৌজন্যে]

ওপরে: © Sven Torfinn/Panos Pictures; নীচে: © Sean Sprague/Panos Pictures