সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

বাইবেল কি নারীদের প্রতি বৈষম্য দেখায়?

বাইবেল কি নারীদের প্রতি বৈষম্য দেখায়?

বাইবেলের দৃষ্টিভঙ্গি

বাইবেল কি নারীদের প্রতি বৈষম্য দেখায়?

তৃতীয় শতাব্দীর একজন ঈশ্বরতত্ত্ববিদ টারটুলিয়ান একবার নারীদের “দিয়াবলের প্রবেশপথ” বলে বর্ণনা করেছিলেন। অন্যেরা, নারীদেরকে পুরুষদের চেয়ে কম গুরুত্বপূর্ণ বলে তুলে ধরার জন্য বাইবেলকে ব্যবহার করেছে। ফলে অনেকেই মনে করে যে, বাইবেল নারীদের প্রতি বৈষম্য দেখায়।

উনবিংশ শতাব্দীর যুক্তরাষ্ট্রে নারীর অধিকারের একজন অগ্রদূত এলিজাবেথ ক্যাডি স্ট্যানটন মনে করেছিলেন যে, “নারীর স্বাধীনতা লাভের পথে বাইবেল এবং গির্জা সবচেয়ে বড় অন্তরায় হয়ে এসেছে।” বাইবেলের প্রথম পাঁচটি বই সম্বন্ধে স্ট্যানটন একবার বলেছিলেন: “আমি অন্য আর কোনো বই সম্বন্ধে জানি না, যেখানে এতটা পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে নারীকে বশীভূত হওয়ার বিষয়ে শিক্ষা দেওয়া হয়েছে ও তার মর্যাদাহানি করা হয়েছে।”

যদিও আজকে কিছুজনের এই ধরনের চরম দৃষ্টিভঙ্গি রয়েছে কিন্তু এখনও অনেকে মনে করে যে, বাইবেলের কিছু অংশ নারীদের প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণ দেখানোকে সমর্থন করে। এই ধরনের উপসংহার কি ন্যায্য?

ইব্রীয় শাস্ত্রে নারীদের যেভাবে দেখা হয়

“স্বামীর প্রতি তোমার বাসনা থাকিবে; ও সে তোমার উপরে কর্ত্তৃত্ব করিবে।” (আদিপুস্তক ৩:১৬) সমালোচকরা এটাকে হবার প্রতি ঈশ্বরের বিচার হিসেবে এবং নারীর ওপর পুরুষের কর্তৃত্ব করার ঐশিক অনুমোদন হিসেবে উল্লেখ করে থাকে। কিন্তু, ঈশ্বরের উদ্দেশ্য সম্বন্ধে এক ঘোষণার পরিবর্তে, এটা হচ্ছে পাপ ও ঈশ্বরের সার্বভৌমত্বকে প্রত্যাখ্যান করার দুঃখজনক পরিণতি সম্বন্ধে এক সঠিক বিবৃতি। নারীদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার হচ্ছে মানুষের অসিদ্ধতার প্রত্যক্ষ ফল, এটা ঈশ্বরের ইচ্ছা নয়। অনেক সংস্কৃতিতে স্বামীরা তাদের স্ত্রীদের ওপর প্রায়ই অত্যন্ত রূঢ়ভাবে কর্তৃত্ব করে এসেছে। কিন্তু এটা ঈশ্বরের উদ্দেশ্য ছিল না।

আদম ও হবা উভয়কেই ঈশ্বরের প্রতিমূর্তিতে সৃষ্টি করা হয়েছিল। অধিকন্তু, প্রজাবন্ত হওয়া এবং পৃথিবী পরিপূর্ণ ও বশীভূত করার জন্য তারা ঈশ্বরের কাছ থেকে একই আদেশ পেয়েছিল। তাদের একসঙ্গে একটা দল হিসেবে কাজ করার কথা ছিল। (আদিপুস্তক ১:২৭, ২৮) স্পষ্টতই, সেই সময়ে অন্যের ওপর নিষ্ঠুরভাবে কর্তৃত্ব করা হতো না। আদিপুস্তক ১:৩১ পদ বলে: “ঈশ্বর আপনার নির্ম্মিত বস্তু সকলের প্রতি দৃষ্টি করিলেন, আর দেখ, সে সকলই অতি উত্তম।”

কিছু কিছু ক্ষেত্রে, বাইবেলের বিবরণগুলো কোনো একটা বিষয়ের ওপর ঈশ্বরের দৃষ্টিভঙ্গি সম্বন্ধে কোনোরকম ইঙ্গিত দেয় না। সেগুলো হয়তো কেবলই ঐতিহাসিক বিবরণ। লোট যে তার মেয়েদের সদোমের লোকেদের কাছে সমর্পণ করতে চেয়েছিলেন, সেই ঘটনা নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য কি না বা ঈশ্বর সেটাকে নিন্দা করেছিলেন কি না, বাইবেল সেই বিষয়ে কোনোরকম মন্তব্য করে না। *আদিপুস্তক ১৯:৬-৮.

প্রকৃতপক্ষে, ঈশ্বর সমস্ত ধরনের শোষণ ও দুর্ব্যবহারকে ঘৃণা করেন। (যাত্রাপুস্তক ২২:২২; দ্বিতীয় বিবরণ ২৭:১৯; যিশাইয় ১০:১, ২) মোশির ব্যবস্থায় ধর্ষণ ও বেশ্যাবৃত্তিকে নিন্দা করা হয়েছে। (লেবীয়. ১৯:২৯; দ্বিতীয় বিবরণ ২২:২৩-২৯) ব্যভিচার করা নিষিদ্ধ ছিল আর উভয় পক্ষের জন্য এর শাস্তি ছিল মৃত্যু। (লেবীয় পুস্তক ২০:১০) নারীদের প্রতি বৈষম্য না দেখিয়ে বরং ব্যবস্থা তাদেরকে উচ্চীকৃত করেছিল এবং চারপাশের জাতিগুলোর মধ্যে অবাধে যে-শোষণ পরিব্যাপ্ত ছিল, তার হাত থেকে সেই ব্যবস্থা তাদেরকে রক্ষা করেছিল। একজন গুণবতী যিহুদি স্ত্রীকে উচ্চ সম্মান দেওয়া হতো এবং প্রত্যেককে মূল্যবান বলে মনে করা হতো। (হিতোপদেশ ৩১:১০, ২৮-৩০) নারীদের প্রতি সম্মান দেখানো সম্বন্ধে ঈশ্বরের নিয়মগুলো মেনে চলতে ইস্রায়েলীয়দের ব্যর্থতা ছিল তাদের দোষ আর সেটা ঈশ্বরের ইচ্ছা ছিল না। (দ্বিতীয় বিবরণ ৩২:৫) অবশেষে, ঈশ্বর তাদের চরম অবাধ্যতার জন্য সামগ্রিকভাবে সেই জাতির বিচার করেছিলেন ও তাদের শাস্তি দিয়েছিলেন।

বশীভূত হওয়া কি বৈষম্যমূলক?

যেকোনো সংঘই একমাত্র তখনই ভালভাবে কাজ করতে পারে, যখন সেখানে নিয়মশৃঙ্খলা থাকে। এর জন্য কর্তৃপক্ষের পরিচালনা থাকা দরকার। এর বিকল্প হচ্ছে বিশৃঙ্খলা। “ঈশ্বর গোলযোগের ঈশ্বর নহেন, কিন্তু শান্তির।”—১ করিন্থীয় ১৪:৩৩.

প্রেরিত পৌল পরিবারের মস্তক ব্যবস্থা সম্বন্ধে বর্ণনা করেন: “প্রত্যেক পুরুষের মস্তকস্বরূপ খ্রীষ্ট, এবং স্ত্রীর মস্তকস্বরূপ পুরুষ, আর খ্রীষ্টের মস্তকস্বরূপ ঈশ্বর।” (১ করিন্থীয় ১১:৩) ঈশ্বর ব্যতীত প্রত্যেক ব্যক্তি একজন ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের বশ্যতা স্বীকার করেন। যিশুর একজন মস্তক আছে এর মানে কি এই যে, তাঁর প্রতি বৈষম্য দেখানো? অবশ্যই নয়! তাই, মণ্ডলীতে এবং পরিবারে নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য পুরুষদের শাস্ত্রীয়ভাবে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে বলে এর মানে এই নয় যে, নারীদের প্রতি বৈষম্য দেখানো হয়েছে। পরিবার এবং মণ্ডলী উভয়ের উন্নতির জন্য, নারী ও পুরুষদের প্রেম ও সম্মানের সঙ্গে তাদের নিজ নিজ ভূমিকা পালন করা প্রয়োজন।—ইফিষীয় ৫:২১-২৫, ২৮, ২৯, ৩৩.

যিশু সবসময়ই নারীদের সঙ্গে সম্মানের সঙ্গে ব্যবহার করতেন। তিনি ফরীশীদের শেখানো বৈষম্যমূলক পরম্পরাগত বিধি ও নিয়মাবলিকে মেনে চলা প্রত্যাখ্যান করেছিলেন। তিনি ন-যিহুদি নারীদের সঙ্গে কথা বলেছিলেন। (মথি ১৫:২২-২৮; যোহন ৪:৭-৯) তিনি নারীদের শিক্ষা দিয়েছিলেন। (লূক ১০:৩৮-৪২) তিনি নারীদের পরিত্যক্ত হওয়া থেকে সুরক্ষা করেছিলেন। (মার্ক ১০:১১, ১২) সম্ভবত তাঁর সময়ে সবচেয়ে বৈপ্লবিক পদক্ষেপটা ছিল যে, যিশু নারীদেরকে তাঁর ঘনিষ্ঠ বন্ধুদের মতো করে দেখতেন। (লূক ৮:১-৩) ঈশ্বরের সমস্ত গুণের নিখুঁত মূর্ত প্রতীক হিসেবে, যিশু দেখিয়েছিলেন যে, নারী-পুরুষ উভয়ই ঈশ্বরের চোখে সমান মূল্যবান। বস্তুতপক্ষে, প্রাথমিক খ্রিস্টানদের মাঝে, পুরুষ এবং নারী উভয়ই পবিত্র আত্মার দান পেয়েছিল। (প্রেরিত ২:১-৪, ১৭, ১৮) খ্রিস্টের সঙ্গে রাজা ও যাজক হিসেবে সেবা করার প্রত্যাশা রয়েছে এমন অভিষিক্তরা স্বর্গীয় জীবনে পুনরুত্থিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তাদের মধ্যে কোনোরকম লিঙ্গভেদ থাকবে না। (গালাতীয় ৩:২৮) বাইবেলের গ্রন্থকার যিহোবা নারীদের প্রতি বৈষম্য দেখান না। (g০৫ ১১/৮)

[পাদটীকা]

^ ২০০৫ সালের ১লা ফেব্রুয়ারি প্রহরীদুর্গ পত্রিকার ২৫-৬ পৃষ্ঠা দেখুন।

[১৮ পৃষ্ঠার চিত্র]

যিশু তাঁর সমসাময়িক অনেকের বিপরীতে, নারীদের সঙ্গে সম্মানপূর্বক ব্যবহার করেছিলেন