বিশ্ব নিরীক্ষা
বিশ্ব নিরীক্ষা
বিশ্বের প্রিয় পশু
“কুকুর হয়তো মানুষের সবচেয়ে ভাল বন্ধু কিন্তু বিশ্বের সবচেয়ে প্রিয় পশু হচ্ছে বাঘ,” লন্ডনের দি ইনডিপেনডেন্ট খবরের কাগজ বলে। দশটা প্রাণীর ওপর আলাদা আলাদাভাবে কয়েকটা ধারাবাহিক তথ্যচিত্র দেখানোর পর, ৭৩টা দেশ থেকে ৫২,০০০রেরও বেশি লোক বাঘকে কুকুরের চেয়ে মাত্র ১৭ ভোটে এগিয়ে রেখেছে। তৃতীয় স্থানে ছিল ডলফিন, এরপর যথাক্রমে ঘোড়া, সিংহ, সাপ, হাতি, শিম্পাঞ্জি, ওরাং ওটাং এবং তিমি। পশু বিশেষজ্ঞ ড. ক্যান্ডি ডিসা ব্যাখ্যা করেছিলেন যে, মানুষকে “বাঘের সঙ্গে তুলনা করা যায়, কারণ এটা বাহ্যিকভাবে বেশ হিংস্র ও প্রভাবশালী কিন্তু ভিতর ভিতর খুবই মহানুভব এবং বিচক্ষণ। অন্যদিকে, কুকুর এমন এক প্রাণী, যে আনুগত্য ও সম্মান দেখিয়ে চলে এবং মানুষকে বন্ধুত্ব দেখাতে পরিচালিত করে, যা মানব স্বভাবের এক যোগাযোগ রক্ষাকারী বৈশিষ্ট্য।” বন্যপ্রাণী সংরক্ষকরা বাঘের বিজয়কে স্বাগত জানিয়েছে। প্রকৃতির জন্য বিশ্ব তহবিল এর ক্যালাম রেংকিন বলেছিলেন: “লোকেরা যদি বাঘকে তাদের প্রিয় পশু হিসেবে ভোট দিয়ে থাকে, তা হলে এর অর্থ হচ্ছে তারা এর গুরুত্বকে এবং আশা করা যায় যে, এদের টিকে থাকাকে নিশ্চিত করার প্রয়োজনীয়তাকে স্বীকার করে।” অনুমান করা হয় যে, বনাঞ্চলে মাত্র ৫,০০০ বাঘ রয়েছে। (g০৫ ১২/২২)
মুখের জীবাণু ও স্বাস্থ্য
“মুখ হচ্ছে এক জটিল বাস্তব্যতন্ত্র,” সায়েন্স পত্রিকা বলে। “বিগত ৪০ বছরেরও বেশি সময় ধরে মুখ সংক্রান্ত জীববিজ্ঞানীরা দাঁত, মাঢ়ী এবং জিহ্বার আশপাশ দিয়ে ব্যাপকভাবে বেড়ে ওঠা জীবাণুগুলোকে পরীক্ষা করে আসছে।” সম্প্রতি জীববিজ্ঞানীরা জানতে পেরেছে যে, সাধারণত মুখে প্রাপ্ত ব্যাকটিরিয়া শরীরের অন্যান্য অংশে চলে যেতে ও সমস্যা তৈরি করতে পারে। মুখের একটা ব্যাকটিরিয়া যে হার্টের সমস্যা ঘটিয়ে থাকে, তা আগেই আবিষ্কার করা হয়েছে আর গবেষণা ইঙ্গিত করে যে, আরেক ধরনের ব্যাকটিরিয়া শিশুর অকালজন্মের কারণ হতে পারে। অবশ্য, ক্ষতিকর ব্যাকটিরিয়াগুলো বেশির ভাগ ক্ষতিই সরাসরি করে থাকে। যদি সেগুলো অত্যধিক পরিমাণে বৃদ্ধি পায় এবং মুখের উপকারজনক ব্যাকটিরিয়াকে গ্রাস করে, তা হলে এর ফলে দাঁত ক্ষয় হয়, মাঢ়ী দিয়ে রক্ত পড়ে ও মুখ থেকে দুর্গন্ধ বের হয়। “৬৫ বছরের বেশি বয়সি ১০ জনের মধ্যে তিন জন তাদের সব দাঁত হারিয়ে ফেলেছে,” সেই রিপোর্ট বলে। “যুক্তরাষ্ট্রে, সমস্ত প্রাপ্তবয়স্কের মধ্যে অর্ধেকেরই হয় মাঢ়ীর রোগ রয়েছে নতুবা দাঁত ক্ষয় হচ্ছে।” এই ব্যাকটিরিয়াগুলো নিয়ে গবেষণা করার দ্বারা গবেষকরা এই বিষয়টা শিখতে পারবে বলে আশা করে যে, কীভাবে সেই “মাউথওয়াশগুলো” তৈরি করা যায়, “যেগুলো উপকারজনক ও ক্ষতিকর ব্যাকটিরিয়াগুলোকে একসঙ্গে ধ্বংস না করে শুধুমাত্র মুখের ক্ষতিকর জীবাণুগুলোকে দমন করে।” (g০৫ ১২/২২)
ঘুমের অভ্যাস
“বিশ্বব্যাপী ঘুমের অভ্যাস সংক্রান্ত একটা সমীক্ষায় জানা গিয়েছে যে, এশিয়ার লোকেরা, আমেরিকা ও ইউরোপের অধিকাংশ লোকের চেয়ে দেরিতে ঘুমাতে যায় এবং আগে ঘুম থেকে ওঠে,” আলজাজিরা সংবাদ চ্যানেল জানায়। ২৮টা দেশের ১৪,০০০রেরও বেশি লোককে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল যে, তারা সাধারণত কখন ঘুমাতে যায় ও কখন ঘুম থেকে ওঠে। পোর্তুগালে ৪ জনের মধ্যে ৩ জন মধ্যরাতের পর বিছানায় যায়। এশিয়ার অধিবাসীরা সবচেয়ে প্রথমে ঘুম থেকে ওঠে, এর মধ্যে ইন্দোনেশিয়া হচ্ছে প্রথম, “যেখানে ৯১% লোক বলেছিল যে, তারা সকাল ৭টার মধ্যে ঘুম থেকে উঠে যায়।” জাপানিরা সবচেয়ে কম ঘুমায়। ৪০ শতাংশেরও বেশি লোক প্রতি রাতে ছয় ঘন্টা বা তারও কম সময় ঘুমায়। তালিকার একেবারে অন্য প্রান্তে রয়েছে অস্ট্রেলিয়ার অধিবাসীরা। রাত ১০টার আগে ঘুমাতে যায় এমন ব্যক্তিদের মধ্যে অস্ট্রেলিয়ার অধিবাসীদের শতকরা হারই কেবল সবচেয়ে বেশি নয় কিন্তু সেইসঙ্গে সেই সমীক্ষায় অংশগ্রহণকারী অস্ট্রেলিয়ার এক তৃতীয়াংশ অধিবাসী বলেছিল যে, তারা প্রতি রাতে গড়ে নয় ঘন্টারও বেশি ঘুমায়। (g০৫ ১২/২২)
বাচ্চাদের জন্য “ক্যাঙ্গারু কেয়ার”
“যে-শিশুরা ক্যাঙ্গারু কেয়ার (যত্ন) লাভ করে, তারা বেশি সময় ধরে ঘুমায়, তাদের শ্বসনপ্রণালী উন্নত হয় এবং তাদের দ্রুত ওজন বাড়ে,” জাপানের ডেইলি ইয়োমিউরি খবরের কাগজ বলে। “ক্যাঙ্গারু কেয়ার” কী? এর অর্থ হচ্ছে, মারা অথবা বাবারা বিছানায় শুয়ে প্রতিদিন এক থেকে দুঘন্টা তাদের শিশুকে খালি বুকের ওপর নিয়ে ঘুম পাড়ায়। টোকিও মেট্রোপলিটন বোকুতো হাসপাতালের নবজাত শিশু বিভাগের প্রধান তোয়োকো ওয়াতানাবে বলেছিলেন: “কলম্বিয়ায় ইনকিউবেটরের ঘাটতি হওয়ায় জরুরি মুহূর্তে এই ক্যাঙ্গারু কেয়ারের সূত্রপাত হয়েছিল। ইউনিসেফ লক্ষ করেছিল যে, অকালজাত শিশু মৃত্যুর হার হ্রাস পেয়েছিল ও হাসপাতালে থাকার সময়কাল কমে গিয়েছিল।” সেই খবরের কাগজ বলে, এখন “উন্নত দেশগুলোতে অকালজাত ও সাধারণ সময়কালের মধ্যে জন্ম নেওয়া শিশুদের জন্য এই ধারণাটা জনপ্রিয় হয়ে উঠছে।” ত্বকের সংস্পর্শ বাবামাকে তাদের শিশুদের সঙ্গে এক বন্ধন গড়ে তুলতে সাহায্য করে এবং এর সঙ্গে আরও অনেক উপকার রয়েছে। অধিকন্তু, এর জন্য কোনো অর্থ খরচ ও কোনো বিশেষ যন্ত্রেরও প্রয়োজন হয় না। (g০৫ ১২/২২)
তরুণ-তরুণীরা ও মোবাইল ফোন
“ব্রিটেনের তরুণ-তরুণীরা মোবাইল ফোন ছাড়া তাদের জীবনযাত্রা নিয়ন্ত্রণ করাকে অসম্ভব বলে মনে করে,” লন্ডনের ডেইলি টেলিগ্রাফ রিপোর্ট করে। গবেষকরা ১৫-২৪ বছর বয়সি এক দল তরুণ-তরুণীর কাছ থেকে দুসপ্তাহের জন্য তাদের মোবাইল ফোন নিয়ে নিয়েছিল। “এটা ছিল এক অদ্ভুত অভিজ্ঞতা,” সেই রিপোর্টটা বলে। “তরুণ-তরুণীদের এক নতুন ধরনের অভিজ্ঞতা লাভ করতে বাধ্য করা হয়েছিল: যেমন তাদের নিজেদের বাবামার সঙ্গে কথা বলা, তাদের বন্ধুদের বাড়ির সদর দরজায় কড়া নাড়া এবং তাদের বন্ধুদের বাবামার সঙ্গে দেখা করা।” ইংল্যান্ডের ল্যাংকেস্টার বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মাইকেল হিউম তরুণ-তরুণীদের সেল ফোনের মাধ্যমে বলা স্বাভাবিক কথাবার্তাকে “নিজেদের আশ্বস্ত ও ব্যক্তিগত শনাক্তিকরণ প্রতিষ্ঠা করার এক উপায়” হিসেবে বর্ণনা করেছিলেন। এক কিশোরী তার ফোন ছাড়া “উত্তেজিত ও চাপ” বোধ করেছিল, সেই খবরের কাগজ রিপোর্ট করে এবং অন্য আরেকজন বিচ্ছিন্ন বোধ করেছিল আর “[তার] বন্ধুদের সঙ্গে যখন ইচ্ছা তখন কথা বলতে পারার” পরিবর্তে “লোকেদের সঙ্গে নির্দিষ্ট সময়ে দেখা করার জন্য আগে থেকে পরিকল্পনা করতে হয়েছিল।” (g০৫ ১১/৮)
“গৃহসজ্জায় সবচেয়ে সুন্দর সামগ্রী”?
“পাশ্চাত্যের যে-পর্যটক ও ব্যবসায়ীরা অবৈধভাবে চিনে গিয়ে বাঘের চামড়া কিনছে, তারা বিশ্বের সবচেয়ে বিপন্ন প্রজাতিগুলোর মধ্যে একটাকে হত্যা করার জন্য দায়ী,” লন্ডনের দ্যা সানডে টেলিগ্রাফ বলে। বন্য বাঘের সংখ্যা একশো বছর আগে যেখানে প্রায় ১,০০,০০০ ছিল, সেখানে বর্তমানে তা হ্রাস পেয়ে ৫,০০০রেরও কম হয়েছে। অধিকাংশই ভারতে বাস করে এবং কিছু দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য দেশে ও সেইসঙ্গে সুদূর প্রাচ্যে বাস করে। লন্ডনের এক দাতব্য প্রতিষ্ঠান, পরিবেশ সংক্রান্ত অনুসন্ধান সংস্থা রিপোর্ট করে যে, ক্রেতারা বাঘের চামড়াকে “গৃহসজ্জার সবচেয়ে সুন্দর সামগ্রী বলে” মনে করে, “কিন্তু এর ফলে তারা বাঘের প্রজাতিকে বিলুপ্ত করে চলেছে। . . . এই পশুগুলো এতটাই বিপন্ন যে, এই প্রজাতিকে টিকিয়ে রাখার জন্য প্রতিটা বাঘই অতীব গুরুত্বপূর্ণ।” ১৯৯৪ সাল থেকে ২০০৩ সালের মধ্যে ৬৮৪টা বাঘের চামড়া বাজেয়াপ্ত করা হয়েছিল কিন্তু সেই সংখ্যাকে চোরাইভাবে রপ্তানি করা সংখ্যার মধ্যে মাত্র এক ক্ষুদ্র অংশ বলে মনে করা হয়। (g০৫ ১১/৮)
হাসির ক্ষমতা
“বিজ্ঞানীরা হিসেব করে বের করেছে যে, মাত্র আধা মিনিট আনন্দের হাসিও ৪৫ মিনিট স্থিরভাবে বিশ্রাম নেওয়ার সমান,” পোলিশ সাপ্তাহিক শিয়াচুকা রিপোর্ট করে। “স্বতঃস্ফূর্তভাবে ফেটে পড়া হাসি তিন মিনিট আ্যরোবিক ব্যায়ামের সমান আর দশ বার স্মিত হাসি দশ মিনিট রোয়িং মেশিনে ব্যায়াম করার সমান।” হাসির অন্যান্য উপকারের মধ্যে রয়েছে, তিন গুণ বেশি বায়ু ফুসফুস টেনে নিয়ে যায় ও সেইসঙ্গে রক্ত সংবহন, হজম, বিপাক, মস্তিষ্কের কার্যকারিতায় উন্নতি হয় ও ক্ষতিকর পদার্থগুলো নির্মূল করে। সেই পত্রিকা ইঙ্গিত করে যে, আপনার মেজাজ ঠিক করার জন্য সকালে সবচেয়ে প্রথমে যে-কাজটা আপনাকে করতে হবে তা হল, প্রথমে আপনার নিজের দিকে তাকিয়ে, আপনার সঙ্গীর দিকে ও বাচ্চাদের দিকে তাকিয়ে হাসা। “নিজে থেকে হাসতে শিখুন,” এটা আরও বলে। “এমনকি কঠিন পরিস্থিতিতেও বিভিন্ন বিষয়ের ভাল দিক খোঁজার চেষ্টা করুন।” (g০৫ ১০/২২)