সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

“টেমস নদী” ইংল্যান্ডের অদ্বিতীয় ঐতিহ্য

“টেমস নদী” ইংল্যান্ডের অদ্বিতীয় ঐতিহ্য

“টেমস নদী” ইংল্যান্ডের অদ্বিতীয় ঐতিহ্য

ব্রিটেনের সচেতন থাক! লেখক কর্তৃক

টেমস নদীর উৎপত্তি হয়েছে দক্ষিণ-মধ্য ইংল্যান্ডের অপূর্ব কটস্‌ওল্ড গিরিশ্রেণীর চারটে জলপ্রবাহ থেকে। এটা যখন পূর্বদিকে ৩৫০ কিলোমিটার পথ এঁকেবেঁকে বয়ে যায়, তখন এর সঙ্গে আরও অন্যান্য নদী এসে মিলিত হয় ও শেষ পর্যন্ত এটা প্রায় ২৯ কিলোমিটার প্রশস্ত মোহনার মধ্যে দিয়ে উত্তর সাগরে গিয়ে পড়ে। এই ছোট নদীটা ইংরেজদের ইতিহাসকে যেভাবে প্রভাবিত করেছে, তা এক আকর্ষণীয় কাহিনী।

জুলিয়াস সিজার সা.কা.পূ. প্রায় ৫৫ সালে, ইংল্যান্ডে রোমীয়দের প্রথম আক্রমণে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। পরের বছর তিনি যখন ফিরে এসেছিলেন, তখন তার অগ্রগতি একটা নদীর দ্বারা বাধাপ্রাপ্ত হয়েছিল, তিনি যেটার নাম দিয়েছিলেন টেমেসিস বা টেমস নদী। শেষ পর্যন্ত রোমীয় সম্রাট ক্লডিয়াস ৯০ বছর পর সেই দেশ অধিকার করেছিলেন।

সেই সময় টেমস নদীর দুধারেই জলাভূমি ছিল কিন্তু এর মোহনা থেকে প্রায় ৫০ কিলোমিটার দূরে যে-পর্যন্ত সাগরের জল এসে পৌঁছাত, সেখানে রোমীয় সৈন্যবাহিনী পরে একটা কাঠের সেতু নির্মাণ করেছিল। সেখানে, নদীর উত্তর তীরে তারা একটা বন্দর তৈরি করেছিল, যেটাকে তারা লনডিনিয়াম নাম দিয়েছিল। *

পরবর্তী চারশো বছর ধরে রোমীয়রা ইউরোপের অন্যান্য দেশের সঙ্গে বাণিজ্য বিস্তার করেছিল এবং ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চল থেকে বিলাসদ্রব্য, এমনকি লেবানন থেকে কাঠ আমদানি করেছিল। এ ছাড়া, টেমস নদী দিয়েই তারা দেশের মধ্যভাগ থেকে লন্ডনে মালপত্র নিয়ে আসত, ফলে লন্ডন শহর, যেখান থেকে প্রধান সড়কগুলো বিভিন্ন দিকে চলে গিয়েছে সেটা শীঘ্রই এক গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্য কেন্দ্র হয়ে উঠেছিল।

উইলিয়ম দ্য কনকারারের প্রভাব

রোমীয় সাম্রাজ্যের পতনের পর, রোমীয় সৈন্যবাহিনী সা.কা. ৪১০ সালে ব্রিটেন ছেড়ে চলে গিয়েছিল, লন্ডন পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে ছিল আর টেমস নদীর ওপর দিয়ে ব্যাবসাবাণিজ্য স্বাভাবিকভাবেই হ্রাস পেয়েছিল। একাদশ শতাব্দীতে উইলিয়ম দ্য কনকারার নরমানডি থেকে এসে কিংস্টনকে দখল না করা পর্যন্ত, আ্যংলো-স্যাক্সন (উত্তর-পশ্চিম ইউরোপ থেকে আগত যেসব নৃগোষ্ঠী ইংল্যান্ডে বসতি স্থাপন করে) রাজারা সেখানে রাজত্ব করছিল—লন্ডন থেকে ১৯ কিলোমিটার দূরে নদীর উৎসমুখে জায়গাটা অবস্থিত, যেখানে টেমস নদী হেঁটেই পার হওয়া যেত। ১০৬৬ সালে ওয়েস্টমিনস্টারে তার রাজ্যাভিষেকের পর উইলিয়াম কর্তৃত্ব করার ও বণিক সমাজকে প্রসারিত করার এবং সেইসঙ্গে বন্দরে প্রবেশকে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য রোমীয় নগর প্রাচীরের মধ্যেই লন্ডন-টাওয়ার নির্মাণ করেছিলেন। আবারও বাণিজ্যের প্রসার ঘটেছিল আর লন্ডনের জনসংখ্যা বেড়ে প্রায় ৩০,০০০ হয়েছিল।

এ ছাড়া, উইলিয়ম দ্য কনকারার লন্ডন থেকে প্রায় ৩৫ কিলোমিটার পশ্চিমে, ভূগর্ভস্থ দৃশ্যমান চুনাপাথরের শিলাস্তরের ওপর একটা দুর্গও নির্মাণ করেছিলেন, যেটা বর্তমানে উইন্ডসর নামে পরিচিত। এটা স্যাক্সনদের এক রাজকীয় বাসভবনের জায়গায় নির্মিত হয়েছিল আর এখান থেকে টেমস নদীর অপর পারের এক অপূর্ব দৃশ্য দেখা যায়। অনেক কিছু যুক্ত ও পরিবর্তন করে এই উইন্ডসর রাজপ্রাসাদটা নির্মিত হয় এবং এটা আজ পর্যন্ত ব্রিটেনে সবচেয়ে জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে রয়েছে।

১২০৯ সালে ৩০ বছর ব্যাপী এক প্রকল্প—লন্ডনে টেমস নদীর ওপর পাথরের তৈরি এক সেতু—শেষ হয়েছিল, যেটা ইউরোপে এই ধরনের সেতুগুলোর মধ্যে সবচেয়ে প্রথম নির্মিত সেতু। এই অসাধারণ কাঠামো, যেটার ওপর দোকানপাট, ঘরবাড়ি ও এমনকি একটা গির্জাও ছিল, সেটাতে দুটো টানাসেতু ছিল আর প্রতিরক্ষার জন্য এর দক্ষিণ পারে অর্থাৎ সাউথওয়ার্কে একটা টাওয়ার ছিল।

ইংল্যান্ডের রাজা জন (১১৬৭-১২১৬) ১২১৫ সালে উইন্ডসরের কাছে টেমস নদীর তীরে রানিমেডে তার বিখ্যাত ম্যাগনাকার্টা দলিলে মোহর লাগিয়েছিলেন। এই দলিলের দ্বারা তিনি শুধুমাত্র ইংরেজদের নাগরিকত্ব সম্বন্ধীয় স্বাধীনতাই নয় কিন্তু সেইসঙ্গে নির্দিষ্টভাবে লন্ডন শহরের এবং এর বন্দর ও ব্যবসায়ীদের স্বাধীনতাও প্রদান করতে বাধ্য হয়েছিলেন।

টেমস নদী সমৃদ্ধি নিয়ে আসে

পরের শতাব্দীগুলোতে, টেমস নদীর ওপর বাণিজ্যের প্রসার ঘটেছিল। বৃদ্ধিরত বাণিজ্যের ফলে একসময়, নদীর দুপাশে বিদ্যমান ব্যবস্থাগুলো অপর্যাপ্ত হয়ে পড়েছিল। দুশো বছর আগে, টেমস নদীর নোঙ্গর করার জায়গায় মাত্র ৬০০টা জাহাজের নোঙ্গর বাঁধা যেত কিন্তু মাঝেমধ্যে বন্দরে ১,৭৭৫টার মতো জাহাজ এদের মালপত্র খালি করার জন্য অপেক্ষা করে থাকত। এই ঘিঞ্জি অবস্থা সৃষ্টি হওয়ার ফলে, ছিঁচকে চুরির ঘটনা এক গুরুতর সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছিল। ছিঁচকে চোররা লুট করার জন্য রাতের বেলা নোঙ্গর করার জায়গা থেকে দড়ি কেটে জাহাজগুলো খুলে ফেলত এবং যে-লোকেদের ছোট ছোট নৌকা ছিল তারা তাদের জীবিকার্জনের জন্য চুরি করা মালপত্র টেমস নদীর ধারে অবস্থিত অন্যান্য অঞ্চলে পৌঁছে দিত। এই সমস্যার সঙ্গে মোকাবিলা করার জন্য লন্ডনে বিশ্বের প্রথম নদী পথে পুলিশ বাহিনী মোতায়ন করা হয়েছিল। এটা এখনও চালু রয়েছে।

তবে, বন্দরের ব্যবস্থাগুলোর ওপর যে-চাপ সৃষ্টি হয়েছিল, সেটা কমানোর জন্য আরও কিছু পদক্ষেপ নেওয়ার প্রয়োজন ছিল। তাই, উনবিংশ শতাব্দী জুড়ে ব্রিটিশ আইনসভা বিশ্বের সর্ববৃহৎ পরিবেষ্টিত পোতাশ্রয় নির্মাণ করতে রাজি হয়েছিল, যেটা নদীর দুধারের নিচু স্থলভূমি খুঁড়ে তৈরি করা যেত। সারি কমার্শিয়াল ডকস্‌, লন্ডন ডক এবং ওয়েস্ট আ্যন্ড ইস্ট ইন্ডিয়া ডকগুলোর নির্মাণ ১৮০০ সালের প্রথম দিকে শেষ হয়েছিল, এরপর ১৮৫৫ সালে রয়াল ভিক্টোরিয়া ডক এবং ১৮৮০ সালে এর পাশাপাশি রয়াল আ্যলবার্ট ডক নির্মিত হয়েছিল।

দুজন প্রকৌশলী—বাবা ও ছেলে—মার্ক আই. এবং ইজ্যামবার্ড কে. ব্রুয়েনেল, ১৮৪০ সালে বিশ্বের প্রথম জলের নীচের সুড়ঙ্গপথ নির্মাণ করার দ্বারা টেমস নদীর দুই তীরকে সংযুক্ত করেছিল। এটা ৪৫৯ মিটার দীর্ঘ এবং এখনও গ্রেটার লন্ডনের (লন্ডন ও আশেপাশের শহরাঞ্চল নিয়ে গঠিত প্রশাসনিক অঞ্চল) ভূগর্ভস্থ রেল ব্যবস্থার পারস্পরিক যোগাযোগের অংশ হিসেবে ব্যবহৃত হয়। ১৮৯৪ সালে, আধুনিক পর্যটন কেন্দ্র টাওয়ার-ব্রিজের নির্মাণ সমাপ্ত হয়েছিল। টানাসেতুর দুই অংশ ৭৬ মিটার ফাঁক হয়ে জায়গা করে দেয়, যাতে দুটো টাওয়ারের মধ্যে দিয়ে বড় বড় জাহাজ যেতে পারে। আর আপনি যদি প্রায় ৩০০টা সিঁড়ি বেয়ে উঠতে পারেন, তা হলে আপনি ততখানি উঁচুতে পায়চারি করা যায় এমন একটা রাস্তায় উঠবেন, যেখান থেকে নদীর দুপাশের অপূর্ব দৃশ্য দেখতে পাওয়া যায়।

বিংশ শতাব্দীর মধ্যে লন্ডনের পোতাশ্রয়টা, শহরে ব্যাবসাবাণিজ্যের মালপত্র সরবরাহের জন্য ক্রমবর্ধমান সংখ্যক বাষ্পচালিত জাহাজগুলোকে নোঙর বাঁধার জায়গা দিতে সুসজ্জিত ছিল। শেষ পোতাশ্রয়, যেটার নাম রাজা জর্জ ৫ম এর নামানুসারে রাখা হয়েছিল, সেটার নির্মাণ কাজ ১৯২১ সালে শেষ হওয়ার সময়ের মধ্যে লন্ডন “বিশ্বে সর্ববৃহৎ ও সবচেয়ে ধনী বন্দর ব্যবস্থা” হয়ে উঠেছিল।

নদীতে প্রাসাদের, রাজা-রানিদের যাওয়া-আসার এবং জমকালো প্রদর্শনীর ব্যবস্থা রয়েছে

লন্ডনের উন্নতির সময়গুলোতে, এর রাস্তাগুলো নিম্নমানের ও কাঁচাই রয়ে গিয়েছিল, বিশেষ করে শীতের সময় এগুলোর ওপর দিয়ে চলাচল করা খুবই কঠিন ছিল। তাই, চলাচলের দ্রুত ও উপযুক্ত পথ ছিল টেমস নদী, যা অনেক বছর ধরে ব্যস্ততম এক জলপথ হয়ে উঠেছিল। টেমস নদীর মাঝিদের নদীর ঘাটের ধাপ ও সিঁড়িগুলোতে বসে “ওরস্‌!” (দাঁড়গুলো) বলে চিৎকার করতে দেখার দৃশ্য খুবই সাধারণ ছিল, যাতে তারা যাত্রীদের নদীর এপার থেকে ওপারে পৌঁছে দিতে অথবা ফ্লিট ও ওয়েলব্রুক নদীর মতো এঁকেবেঁকে বয়ে চলা উপনদীগুলোর ধারে নিয়ে যেতে পারে। বর্তমানে, ফ্লিট ও ওয়েলব্রুক নদী লন্ডনের সেই রাস্তাগুলোর নীচে চাপা পড়েছে, যে-রাস্তাগুলোর নাম এই নদীগুলোর নামেই বিদ্যমান।

একসময় লন্ডনকে দেখতে অনেকটা ভেনিস নগরীর মতো লাগত, যেখানকার জাঁকালো প্রাসাদগুলোর ছাদ থেকে নেমে আসা সিঁড়ি সোজা নদীর তীরে নিয়ে যেত। রাজকীয় পরিবারগুলোর জন্য টেমস নদীর তীরে বাস করা একটা ফ্যাশন হয়ে উঠেছিল, যেমন গ্রিনউইচ, হোয়াইটহল এবং ওয়েস্টমিনস্টার প্রাসাদ দেখে তা বোঝা যায়। একইভাবে, হ্যাম্পটন কোর্ট ইংল্যান্ডের রাজা-রানিদের বাসভবন হয়ে উঠেছিল এবং নদীর উৎসমুখের কাছে উইন্ডসর প্রাসাদ এখনও এক রাজকীয় বাসভবন হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে।

১৭১৭ সালে, জর্জ ফ্রেডরিখ্‌ হ্যানডেল জলের ওপর এক রাজকীয় বনভোজন উপলক্ষ্যে রাজা জর্জ ১ম-কে খুশি করার জন্য “জল সংগীত” রচনা করেছিলেন। রাজার বজরাগুলোর সঙ্গে ‘এত নৌকা’ ছিল যে, ‘পুরো নদীটাই যেন ঢাকা পড়ে গিয়েছিল,’ সেই সময়কার একটি খবরের কাগজ রিপোর্ট করে। যে-নৌকায় চড়ে রাজা যেতেন সেটার পাশের বজরায় ৫০ জন বাদক থাকত এবং তারা সকলে যখন ওয়েস্টমিনস্টার থেকে চেলসিয়ায় আট কিলোমিটার দূরে নদীর উৎসমুখে যেত, তখন তারা হ্যানডেলের রচিত সংগীতকে তিন বার বাজাত।

যে-নদী আনন্দ ও বিনোদনের সুযোগ করে দেয়

১৭৪০ এর দশকে ওয়েস্টমিনস্টার সেতু নির্মিত হওয়ার আগে পর্যন্ত, পায়ে হেঁটে টেমস নদী পার হওয়ার একমাত্র উপায় ছিল লন্ডন সেতু, যেটাকে পরবর্তী সময়ে পুনর্গঠন করা এবং শেষ পর্যন্ত ১৮২০-র দশকে পালটানো হয়েছিল। পাথরের তৈরি লন্ডন সেতুর ১৯টা ধনুকাকৃতি কাঠামোকে ধরে রাখার জন্য যে-সেতুস্তম্ভগুলো ছিল, সেগুলো নদীর স্রোতে প্রচুর বাধা সৃষ্টি করেছিল। এর ফলে, সেতুর অস্তিত্বের জন্য প্রায় ৬০০ বছর বা এইরকম সময়ের মধ্যে টেমস নদী কমপক্ষে আট বার বরফ হয়ে গিয়েছিল। যখন এইরকম ঘটেছিল, তখন বরফের ওপর বিরাট “তুষার মেলার” আয়োজন করা হয়েছিল, যেখানে অনেক খেলাধুলা অনুষ্ঠিত হতো। ষাঁড় ঝলসানো হতো এবং রাজা-রানিদের সেখানে বসে ভোজন করতে দেখা যেত। “টেমস থেকে কেনা” এই ধরনের লেবেল লাগানো বই ও খেলনাগুলো কেনার জন্য হিড়িক পড়ে যেত। খবরের কাগজ ও এমনকি প্রভুর প্রার্থনার কপিগুলো সেই ছাপানোর যন্ত্রগুলোতে ছাপানো হতো, যেগুলোকে বরফ হয়ে যাওয়া নদীর ওপর খাড়া করে স্থাপন করা হতো!

বর্তমানে, অক্সফোর্ড ও ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে এক প্রতিযোগিতা, বিশ্ববিদ্যালয় নৌকা বাইচ অনুষ্ঠিত হয়, যেটা বসন্তকালের এক বার্ষিক অনুষ্ঠান হয়ে উঠেছে। পাটনি ও মর্টলেকের মধ্যে অবস্থিত টেমস নদীর তীরগুলোতে জনতা, প্রতিযোগী দল যাদের প্রতিটা নৌকায় আট জন করে মাঝি থাকে ও যারা ২০ মিনিটেরও কম সময়ের মধ্যে সাত কিলোমিটার দূরত্ব অতিক্রম করে, তারা হাততালি দিয়ে উৎসাহ দেওয়ার জন্য জড়ো হয়। প্রথম নৌকা বাইচ অনুষ্ঠিত হয়েছিল ১৮২৯ সালে, নদীর উৎসমুখের কাছাকাছি হেনলি শহরে। নৌকা বাইচ অনুষ্ঠানের স্থানটা পরিবর্তন হয়ে যখন সেটা নদীর উৎসমুখের আরও কাছাকাছি অনুষ্ঠিত হতে শুরু করে, তখন হেনলি শহরে অন্য আরেকটা রাজকীয় নৌকা বাইচ অনুষ্ঠিত হয় এবং ইউরোপে এই ধরনের নৌকা বাইচ অনুষ্ঠানগুলোর মধ্যে এটা ছিল সবচেয়ে পুরনো ও সবচেয়ে আলাদা। এটা বিশ্বের সবচেয়ে দক্ষ পুরুষ-মহিলা মাঝিদের প্রায় ১,৬০০ মিটার দূরত্ব পর্যন্ত নৌকা চালানোর এই অনুষ্ঠানের প্রতি আকৃষ্ট করে থাকে। গ্রীষ্মকালে অনুষ্ঠিত এই নৌকা বাইচ এখন এক জনপ্রিয় সামাজিক অনুষ্ঠানে পরিণত হয়েছে।

ব্রিটেনের একজন গাইড বলেন যে, টেমস নদী “বৈচিত্র্যপূর্ণ আনন্দের সুযোগ করে দেয়, যখন এটা ইংল্যান্ডের পল্লিঅঞ্চলের ছোট ছোট পাহাড়, বন, তৃণভূমি, সম্ভ্রান্ত বাসভবন, সুন্দর গ্রাম ও ছোট ছোট শহরের মধ্যে দিয়ে বয়ে চলে। . . . নদীর ধার দিয়ে দীর্ঘ পথ জুড়ে কোনো পাকা রাস্তা নেই কিন্তু সাধারণত কাঁচা রাস্তা রয়েছে। ফলে, একজন মোটর-যাত্রী হয়তো শহরের মধ্যে নদীর ধার দিয়ে গাড়ি চালিয়ে মুগ্ধ হতে পারেন কিন্তু টেমস নদীর অব্যক্ত সৌন্দর্যকে একমাত্র নৌকায় চড়ে বা নদীর ধারে পায়ে হেঁটেই পুরোপুরি উপভোগ করা যেতে পারে।”

আপনি কি একবার ইংল্যান্ড পরিদর্শন করার পরিকল্পনা করছেন? তা হলে, টেমস নদীর ধারে ঘুরে বেড়ানোর এবং এর কিছু ইতিহাস সম্বন্ধে জানার জন্য সময় আলাদা করে রাখুন। এই নদীর উৎসের গ্রাম্য সৌন্দর্য থেকে শুরু করে ব্যস্ত মোহনা পর্যন্ত অনেক কিছু দেখার, করার ও শেখার আছে! “টেমস নদী” আপনাকে হতাশ করবে না।

[পাদটীকা]

^ যদিও লন্ডন নামটা ল্যাটিন শব্দ লনডিনিয়াম থেকে এসেছে কিন্তু উভয় শব্দই হয়তো কেল্‌ট ভাষার শব্দ লিন এবং ডেন থেকে নেওয়া হয়েছে, যেগুলো মিলিয়ে বললে অর্থ হয়, “হ্রদের তীরে শহর [বা দুর্গ]।”

[২৫ পৃষ্ঠার বাক্স]

সাহিত্য ও টেমস নদী

ইংরেজ ঔপন্যাসিক জেরম কে. জেরম তার থ্রি মেন ইন আ বোট বইয়ে টেমস নদীর শান্ত পরিবেশের কথা বর্ণনা করেছেন। এখানে তিন বন্ধুর তাদের কুকুর নিয়ে টেমস নদীর ওপর দিয়ে কিংস্টন থেকে অক্সফোর্ড পর্যন্ত নৌকা চালিয়ে ছুটি কাটানোর বর্ণনা রয়েছে। ১৮৮৯ সালে লিখিত ও ব্যাপকভাবে অনুবাদিত এই বইটি এখনও এক জনপ্রিয় “খামখেয়ালি হাস্যকৌতুক সাহিত্য” হিসেবে প্রচলিত রয়েছে।

দ্যা উইন্ড ইন দ্যা উইলোস হচ্ছে আরেকটা সুপরিচিত গল্প, যা ছোট-বড় সকলেই পছন্দ করে। কেনেথ গ্র্যাহেম, যিনি টেমস নদীর তীরে একটা শহর পাংবার্নে বাস করতেন, তিনি ১৯০৮ সালে এটি লেখা শেষ করেছিলেন আর এটি নদীতে বা নদীর তীরে বসবাসকারী প্রাণীদের নিয়ে এক উদ্ভট গল্প।

[২৫ পৃষ্ঠার বাক্স/চিত্র]

রাজা বনাম টেমস নদী

রাজা জেমস্‌ ১ম যিনি সপ্তদশ শতাব্দীর প্রথম দিকে শাসন করেছিলেন, তিনি একবার কর্পোরেশন অভ্‌ লন্ডন থেকে ২০,০০০ পাউন্ড দাবি করেছিলেন। লন্ডন শহরের মেয়র যখন তা দিতে অস্বীকার করেছিলেন, তখন রাজা এই বলে ভয় দেখিয়েছিলেন: “আমি আপনাকে ও আপনার শহরকে চিরতরে শেষ করে দেব। আমি আমার আইন আদালত, এমনকি আমার প্রাসাদকে এবং আমার আইনসভাকে উইনচেস্টার নতুবা অক্সফোর্ডে স্থানান্তরিত করব এবং ওয়েস্টমিনস্টারকে জনশূন্য করে ফেলব; আর তা হলে আপনার কী হবে, একটু ভেবে দেখুন!” এই কথা শুনে মেয়র উত্তর দিয়েছিলেন: “লন্ডনের বণিকদের জন্য সবসময় একটা সান্ত্বনা থাকবেই: হে মহামহিম রাজা, আপনি আপনার সঙ্গে টেমস নদীকে নিয়ে যেতে পারবেন না।” (g ২/০৬)

[সৌজন্যে]

From the book Ridpath’s History of the World (Vol. VI)

[২২ পৃষ্ঠার মানচিত্রগুলো]

(পুরোপুরি ফরম্যাট করা টেক্সটের জন্য এই প্রকাশনা দেখুন)

ইংল্যান্ড

লন্ডন

টেমস নদী

[সৌজন্যে]

মানচিত্র: Mountain High Maps® Copyright © ১৯৯৭ Digital Wisdom, Inc.

[২২, ২৩ পৃষ্ঠার চিত্র]

লন্ডনের ওয়েস্টমিনস্টারে বিগ বেন এবং আইনসভা

[২৩ পৃষ্ঠার চিত্র]

১৭৫৬ সালে পাথরের তৈরি লন্ডন সেতু

[সৌজন্যে]

প্রাচীন ও আধুনিক লন্ডন (ইংরেজি) বই থেকে: A Narrative of Its History, Its People, and Its Places (Vol. II)

[২৪ পৃষ্ঠার চিত্র]

১৮০৩ সালের এই খোদাই করা চিত্রটিতে টেমস নদী এবং বন্দরে শত শত জাহাজকে নোঙ্গর বাঁধা অবস্থায় দেখানো হয়েছে

[সৌজন্যে]

Corporation of London, London Metropolitan Archive

[২৪, ২৫ পৃষ্ঠার চিত্র]

১৬৮৩ সালের তুষার মেলার এক খোদাই করা চিত্র

[সৌজন্যে]

প্রাচীন ও আধুনিক লন্ডন বই থেকে: A Narrative of Its History, Its People, and Its Places (Vol. III)