সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

পিলগ্রিম এবং পিউরিটান—তারা কারা ছিল?

পিলগ্রিম এবং পিউরিটান—তারা কারা ছিল?

পিলগ্রিম এবং পিউরিটান—তারা কারা ছিল?

উত্তর আমেরিকার ম্যাসাচুসিটসের প্লীমাউথ শহরের সমুদ্রসৈকতে একটা বড় গ্রানাইট পাথর রয়েছে, যেটার ওপরে ১৬২০ সংখ্যাটা খোদাই করা আছে। এটাকে বলা হয় প্লীমাউথ শিলা আর অধিকাংশই বিশ্বাস করে যে, এটা সেই স্থানের কাছেই রয়েছে, যেখানে প্রায় ৪০০ বছর আগে, ইউরোপীয়দের একটা দল এসেছিল। আপনি হয়তো তাদেরকে পিলগ্রিম বা পিলগ্রিম ফাদার হিসেবে জানেন।

অনেকে অতিথিপরায়ণ পিলগ্রিমদের কাহিনীগুলো জানে, যারা ফসল সংগ্রহের পর বিরাট ভোজে তাদের আমেরিকার আদিবাসী বন্ধুদের আমন্ত্রণ জানাত। কিন্তু, পিলগ্রিমরা কারা ছিল এবং কেন তারা উত্তর আমেরিকায় চলে এসেছিল? এই প্রশ্নগুলোর উত্তর পাওয়ার জন্য আসুন আমরা প্রথমে ইংরেজ রাজা হেনরি ৮ম এর আমলে ফিরে যাই।

ইংল্যান্ডে বিভিন্ন ধর্মীয় আন্দোলন

পিলগ্রিমরা আমেরিকার দিকে যাত্রা করার ১০০ বছরেরও কম সময় আগে ইংল্যান্ড ছিল এক রোমান ক্যাথলিক দেশ আর রাজা হেনরি ৮ম পোপের কাছ থেকে “বিশ্বাসের রক্ষক” এই উপাধি লাভ করেছিলেন। কিন্তু, পোপ ক্লেমেন্ট ৭ম যখন আরাগনের ক্যাথরিনের সঙ্গে হেনরির বিয়েটা আইনত বাতিল বলে ঘোষণা করতে অস্বীকার করেছিলেন, তখন সম্পর্কে ফাটল ধরেছিল। ক্যাথরিন ছিলেন রাজার ছয় স্ত্রীর মধ্যে প্রথম স্ত্রী।

হেনরি যখন তার পারিবারিক সমস্যাগুলো নিয়ে চিন্তিত, সেই সময়ে ইউরোপের অধিকাংশ জায়গায় প্রটেস্টান্ট সংস্কারসাধন, রোমান ক্যাথলিক গির্জায় আন্দোলন সৃষ্টির কারণ হয়ে উঠছিল। গির্জা তাকে যে-মর্যাদা দিয়েছিল তা হারাতে না চাওয়ায়, হেনরি প্রথমে সংস্কারকদের ইংল্যান্ড থেকে দূরে রাখেন। এরপর তিনি কিন্তু নিজেই তার মত পালটান। যেহেতু ক্যাথলিক গির্জা তার বিয়েটা বাতিল বলে ঘোষণা করেনি, তাই বস্তুত হেনরিই গির্জাকে বাতিল বলে ঘোষণা করেন। ১৫৩৪ সালে তিনি ইংরেজ ক্যাথলিকদের ওপর পোপের কর্তৃত্বকে পুরোপুরি নাকচ করে দেন এবং নিজেকেই চার্চ অভ্‌ ইংল্যান্ডের সর্বময় কর্তা বলে ঘোষণা করেন। শীঘ্রই তিনি মঠগুলো এবং এগুলোর বিশাল সম্পত্তি বিক্রি করে দেন। ১৫৪৭ সালে হেনরি মারা যাওয়ার পর, ইংল্যান্ড এক প্রটেস্টান্ট দেশ হয়ে ওঠে।

হেনরির ছেলে এডওআর্ড ৬ষ্ঠ, রোমের সঙ্গে কোনো মিটমাট করেননি। ১৫৫৩ সালে এডওআর্ডের মৃত্যুর পর, আরাগনের ক্যাথরিনের গর্ভজাত হেনরির রোমান ক্যাথলিক ধর্মাবলম্বী মেয়ে মেরি রানি হন এবং সেই দেশকে পোপের কর্তৃত্বের বশীভূত করানোর চেষ্টা করেন। তিনি অনেক প্রটেস্টান্টকে জোর করে নির্বাসনে পাঠান এবং ৩০০রও বেশি লোককে দণ্ডে ঝুলিয়ে পুড়িয়ে হত্যা করেন আর এর ফলে তিনি রক্তপিপাসু মেরি নামে পরিচিত হয়ে ওঠেন। কিন্তু, পরিবর্তনের জন্য আন্দোলনের যে-ঢেউ উঠেছিল, তিনি তা থামাতে পারেননি। ১৫৫৮ সালে মেরি মারা যান এবং তার উত্তরসূরি ও সৎবোন এলিজাবেথ ১ম এটা নিশ্চিত করেন যে, ইংরেজদের ধর্মীয় জীবনে যেন পোপের কোনো প্রভাব না থাকে।

তবে, কিছু প্রটেস্টান্ট মনে করেছিল যে, চার্চ অভ্‌ রোম থেকে শুধু পৃথক হয়ে যাওয়াই যথেষ্ট নয়—রোমান ক্যাথলিকদের সমস্ত রীতিনীতি দূর করে দিতে হবে। তারা গির্জার উপাসনাকে শুদ্ধ করতে চেয়েছিল, তাই তারা পিউরিটান বা বিশুদ্ধতার সমর্থক নামে পরিচিত হয়ে উঠেছিল। কিছু পিউরিটান বিশপপদের প্রয়োজন বোধ করেনি এবং বুঝেছিল যে, প্রত্যেকটা মণ্ডলীর দেশের গির্জা থেকে পৃথক হয়ে নিজেরই শাসন করা উচিত। তাদের নাম দেওয়া হয়েছিল বিচ্ছিন্নতাবাদী (সেপারেটিস্ট)।

যে-পিউরিটানরা গির্জার বিরুদ্ধে সমালোচনা করছিল, তারা এলিজাবেথের রাজত্বকালে পরিচিতি লাভ করে। কিছু পাদরির আনুষ্ঠানিক পোশাক না পরা রানিকে বিরক্ত করে আর তাই ১৫৬৪ সালে তিনি ক্যান্‌টারবেরির আর্চবিশপকে আদেশ দেন যেন তিনি পাদরিদের পোশাক কেমন হবে, সেই বিষয়ে বিধিনিষেধ আরোপ করেন। ক্যাথলিক যাজকদের ধাঁচে পাদরিদের আনুষ্ঠানিক পোশাক পরার রীতি ফিরে আসছে দেখে পিউরিটানরা তা মেনে চলতে অস্বীকার করে। বিশপ ও আর্চবিশপদের পুরোনো যাজকতন্ত্র নিয়ে আরও তর্কবিতর্কের ঝড় ওঠে। এলিজাবেথ বিশপদেরকে তাদের পদে অব্যাহত রাখেন এবং তিনি দাবি করেন যে, তারা যেন গির্জার প্রধান হিসেবে রানির প্রতি তাদের আনুগত্য দেখানোর জন্য শপথ নেয়।

বিচ্ছিন্নতাবাদী থেকে পিলগ্রিম

১৬০৩ সালে জেমস ১ম, এলিজাবেথের উত্তরসূরি হন এবং তার বশ্যতা স্বীকার করার জন্য তিনি বিচ্ছিন্নতাবাদীদের ওপর প্রচণ্ড চাপ সৃষ্টি করেন। ১৬০৮ সালে স্ক্রুবি শহরের বিচ্ছিন্নতাবাদীদের একটা মণ্ডলী হল্যান্ডে প্রদত্ত স্বাধীনতা লাভ করার জন্য সেখানে পালিয়ে যায়। কিন্তু, পরবর্তী সময়ে ওলন্দাজদের অন্য ধর্মের রীতিনীতি ও লম্পটতাকে প্রশয় দেওয়া বিচ্ছিন্নতাবাদীদের এতটা অস্বস্তিতে ফেলে, যতটা তারা ইংল্যান্ডেও বোধ করেনি। তারা ইউরোপ ত্যাগ করার এবং উত্তর আমেরিকায় এক নতুন জীবন শুরু করার সিদ্ধান্ত নেয়। তাদের বিশ্বাসের কারণে বিচ্ছিন্নতাবাদী এই দলের নিজ দেশ ছেড়ে দূর দেশে চলে যাওয়ার ইচ্ছুক মনোভাব, শেষ পর্যন্ত তাদেরকে পিলগ্রিম বা তীর্থযাত্রী নামে পরিচিত করে তোলে।

পিলগ্রিমরা যাদের মধ্যে অনেক বিচ্ছিন্নতাবাদী ছিল, তারা ভার্জিনিয়ার ব্রিটিশ উপনিবেশে স্থায়ীভাবে বাস করার অনুমতি পায় এবং ১৬২০ সালের সেপ্টেম্বর মাসে মেফ্লাওয়ার নামে একটা জাহাজে চড়ে উত্তর আমেরিকার উদ্দেশে রওনা দেয়। ছোট-বড় মিলিয়ে প্রায় ১০০ জন লোক ভার্জিনিয়ার উত্তরে অনেক দূরে কেপ কোডে পৌঁছানোর আগে, উত্তর আটলান্টিক মহাসাগরে দুমাস ঝড়ো আবহাওয়ার মধ্যে কাটিয়েছিল। সেখানে তারা মেফ্লাওয়ার চুক্তিটি লিখেছিল, যে-চুক্তিটি একটা সমাজ প্রতিষ্ঠা করার ও এর আইনগুলো মেনে চলার ব্যাপারে তাদের ইচ্ছা সম্বন্ধে উল্লেখ করে। তারা ১৬২০ সালের ২১শে ডিসেম্বর, কাছাকাছি প্লীমাউথ শহরে স্থায়ীভাবে বসবাস করতে শুরু করে।

আমেরিকায় জীবন শুরু করা

শরণার্থীরা শীতের জন্য কোনো প্রস্তুতি ছাড়াই উত্তর আমেরিকায় উপস্থিত হয়েছিল। কয়েক মাসের মধ্যে দলের অর্ধেক লোক মারা যায়। কিন্তু, বসন্তকাল আসায় তারা কিছুটা স্বস্তি পেয়েছিল। রক্ষাপ্রাপ্তরা পর্যাপ্ত গৃহ নির্মাণ করেছিল এবং আমেরিকার আদিবাসীদের কাছ থেকে স্থানীয় খাদ্যশস্য উৎপাদন করতে শিখেছিল। ১৬২১ সালের শরৎকালের মধ্যে, পিলগ্রিমরা এতটা উন্নতি করে ফেলেছিল যে, তারা ঈশ্বরের আশীর্বাদ পাওয়ার কারণে তাঁকে ধন্যবাদ দেওয়ার জন্য সময় আলাদা করে রেখেছিল। সেই ঘটনার পর থেকে ধন্যবাদদান দিবসের (নভেম্বর মাসের চতুর্থ বৃহস্পতিবার) উদ্ভব হয়েছিল, যা এখন যুক্তরাষ্ট্র ও অন্যান্য জায়গাতে উদ্‌যাপিত হয়ে থাকে। এখানে আরও অনেক অভিবাসী এসেছিল, তাই ১৫ বছরেরও কম সময়ের মধ্যে প্লীমাউথের জনসংখ্যা ২,০০০ ছাড়িয়ে গিয়েছিল।

এর মধ্যে ইংল্যান্ডের কয়েক জন পিউরিটান, বিচ্ছিন্নতাবাদীদের মতো ঠিক করেছিল যে, আটলান্টিকের ওপারে তারাও তাদের “প্রতিজ্ঞাত দেশ” খুঁজে নেবে। ১৬৩০ সালে, তাদের একটা দল প্লীমাউথের উত্তরে একটা জায়গায় পৌঁছেছিল এবং ম্যাসাচুসিটস্‌ বে উপনিবেশ স্থাপন করেছিল। ১৬৪০ সালের মধ্যে, প্রায় ২০,০০০ ইংরেজ অভিবাসী নিউ ইংল্যান্ডে বসবাস করছিল। ১৬৯১ সালে, ম্যাসাচুসিটস্‌ বে উপনিবেশ যখন প্লীমাউথ উপনিবেশ দখল করে নিয়েছিল, তখন বিচ্ছিন্নতাবাদী পিলগ্রিমরা আর পৃথক থাকেনি। বোস্টন সেই অঞ্চলের ধর্মীয় কেন্দ্রস্থল হয়ে উঠেছিল, কারণ পিউরিটানরা তখন নিউ ইংল্যান্ডের ধর্মীয় জীবনের ওপর প্রভাব বিস্তার করেছিল। তারা কীভাবে তাদের উপাসনা করে গিয়েছিল?

পিউরিটানদের উপাসনা

আমেরিকায় পিউরিটানরা প্রথমে তাদের সভাস্থল কাঠ দিয়ে নির্মাণ করেছিল, যেখানে তারা রবিবার সকালে মিলিত হতো। ভাল আবহাওয়ায় বাড়ির ভিতরের অবস্থা সহ্য করার মতো ছিল কিন্তু শীতের সময় সভা করা এমনকি কঠিনমনা পিউরিটানদের ধৈর্যকেও পরীক্ষায় ফেলত। সভাস্থলগুলোকে গরম রাখার কোনো ব্যবস্থা ছিল না আর শীতে জমে যাওয়া বিশ্বস্ত সদস্যরা শীঘ্রই কাঁপতে শুরু করত। প্রচারকরা প্রায়ই দস্তানা পরত, যাতে হাত নড়াচড়া করার সময় বাড়ির ভিতরের ঠাণ্ডা বাতাসে তাদের হাত জমে না যায়।

পিউরিটানরা, ফরাসি প্রটেস্টান্ট সংস্কারক জন কেলভিনের শিক্ষাগুলোকে তাদের বিশ্বাসের ভিত্তি করে। তারা নিয়তিবাদের মতবাদকে গ্রহণ করে এবং বিশ্বাস করে যে, ঈশ্বর আগে থেকেই নির্ধারণ করে রেখেছেন, কাদেরকে তিনি রক্ষা করবেন ও কাদেরকে তিনি অনন্ত নরকাগ্নিতে শাস্তি দেবেন। লোকেরা যা-ই করুক না কেন, তারা ঈশ্বরের সামনে তাদের অবস্থানকে পালটাতে পারবে না। একজন ব্যক্তি জানতেন না যে, তার মৃত্যু হলে তিনি স্বর্গের সুখ উপভোগ করবেন নাকি চিরকাল এক শিখার মতো নরকে জ্বলতে থাকবেন।

কিছু সময় পর পিউরিটান পরিচারকরা অনুতাপ করার বিষয় প্রচার করতে শুরু করেছিল। তারা সাবধান করেছিল যে, যদিও ঈশ্বর করুণাময় কিন্তু যারা তাঁর আইনগুলোর অবাধ্য হয়, তারা সোজা নরকে যাবে। লোকেদেরকে নিয়মের বাধ্য করার জন্য এই প্রচারকরা অগ্নিময় জ্বলন্ত নরকের শিক্ষাকে ছড়িয়ে দিয়েছিল। জনাথন এডওআর্ডস নামে অষ্টাদশ শতাব্দীর একজন প্রচারক “এক রাগান্বিত ঈশ্বরের হাতে পাপীরা” বিষয়টার ওপর একবার বক্তৃতা দিয়েছিলেন। নরক সম্বন্ধে তার বর্ণনা এত ভয়ংকর ছিল যে, যারা সেই বক্তৃতা শুনেছিল, সেই ভীত মণ্ডলীর কাছে গিয়ে অন্য পাদরিদের আবেগগত সাহায্য প্রদান করতে হয়েছিল।

ম্যাসাচুসিটসের বাইরের যে-সুসমাচার প্রচারকরা এখানে এসে প্রচার করেছিল, তারা ঝুঁকির মুখেই তা করেছিল। মেরি ডাইয়ার নামে এক কোয়েকার প্রচারিকাকে কর্তৃপক্ষ তিন বার নির্বাসিত করেছিল; কিন্তু প্রতি বার তিনি ফিরে এসেছিলেন এবং তার মতামতগুলো জোরের সঙ্গে ঘোষণা করেছিলেন। কর্তৃপক্ষ ১৬৬০ সালের ১লা জুন বোস্টনে তাকে ফাঁসি দিয়েছিল। পিউরিটান নেতারা যে-উদ্যোগ নিয়ে বিরোধীদের মোকাবিলা করেছিল, স্পষ্টতই ফিলিপ র্‌যাটক্লিফ তা ভুলে গিয়েছিলেন। সরকারের বিরুদ্ধে ও শালেমের গির্জার বিরুদ্ধে তার বক্তৃতাগুলোর কারণে পিউরিটানরা তাকে চাবুকাঘাত ও জরিমানা করেছিল। এরপর, তিনি যাতে আবারও ভুলে না যান, সেইজন্য তাকে নির্বাসনে পাঠানোর আগে তারা তার কান কেটে ফেলেছিল। পিউরিটানদের নির্যাতন, লোকেদেরকে ম্যাসাচুসিটস্‌ ছেড়ে চলে যেতে বাধ্য করেছিল এবং অন্যান্য উপনিবেশ গড়ে তুলতে পরিচালিত করেছিল।

উদ্ধত মনোভাব দৌরাত্ম্যের সূত্রপাত করে

নিজেদেরকে ঈশ্বরের দ্বারা “নির্বাচিত” ব্যক্তি হিসেবে বিবেচনা করে অনেক পিউরিটান, স্থানীয় আদিবাসীদের তুচ্ছ বলে মনে করত, যারা বেআইনিভাবে জায়গা দখল করে আছে। পিউরিটানদের এই মনোভাব বিরক্তির সৃষ্টি করেছিল, যার ফলে কিছু স্থানীয় আদিবাসী পিউরিটানদের আক্রমণ করতে শুরু করেছিল। তাই, পিউরিটান নেতারা বিশ্রামবারসহ আরও কিছু আইনকে শিথিল করেছিল, ফলে উপাসনার উদ্দেশ্যে যাওয়ার পথে পুরুষরা বন্দুক বহন করার অনুমতি পেয়েছিল। এরপর, ১৬৭৫ সালে পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়ে যায়।

ওয়ামপানোয়াগ আমেরিকান আদিবাসীদের মেটাকমেট, যিনি রাজা ফিলিপ নামেও পরিচিত, তিনি তার লোকেদের অঞ্চলগুলো হারাতে দেখে পিউরিটান উপনিবেশগুলোতে হানা দিতে শুরু করেছিলেন, ঘরবাড়ি পুড়িয়ে ফেলেছিলেন এবং তাদের হত্যা করেছিলেন। পিউরিটানরা প্রতিশোধ নিয়েছিল এবং মাসের পর মাস ধরে লড়াই চলেছিল। ১৬৭৬ সালের আগস্ট মাসে পিউরিটানরা রোড দ্বীপ থেকে ফিলিপকে ধরেছিল। তারা তার শিরশ্ছেদ করেছিল এবং তার শরীরকে কেটে চার টুকরো করেছিল। এভাবে রাজা ফিলিপের যুদ্ধ শেষ হয়েছিল এবং নিউ ইংল্যান্ডের স্থানীয় আদিবাসীদের স্বাধীন জীবনের সেখানেই সমাপ্তি ঘটেছিল।

অষ্টাদশ শতাব্দীতে পিউরিটানরা এক নতুন উপায়ে তাদের উদ্যোগকে প্রকাশ করেছিল। ম্যাসাচুসিটসের কিছু পরিচারক ইংরেজ শাসনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়েছিল এবং স্বাধীনতার আকাঙ্ক্ষা জাগিয়ে তুলতে সাহায্য করেছিল। তারা তাদের বিপ্লবের আলোচনায় রাজনীতি ও ধর্মকে মিশিয়ে ফেলেছিল।

পিউরিটানরা প্রায়ই কর্মঠ, সাহসী এবং তাদের ধর্মের প্রতি একনিষ্ঠ ছিল। লোকেরা এখনও “পিউরিটানদের চরিত্র” এবং “পিউরিটানদের সততা” সম্বন্ধে কথা বলে থাকে। কিন্তু, কেবল আন্তরিকতাই একজনকে ভুল শিক্ষাগুলো থেকে শুদ্ধ করতে পারে না। রাজনীতি ও ধর্মকে মিশিয়ে ফেলার বিষয়টা যিশু খ্রিস্ট এড়িয়ে চলেছিলেন। (যোহন ৬:১৫; ১৮:৩৬) আর নিষ্ঠুরতা হচ্ছে এই অতি গুরুত্বপূর্ণ সত্যের বিপরীত: “যে প্রেম করে না, সে ঈশ্বরকে জানে না, কারণ ঈশ্বর প্রেম।”—১ যোহন ৪:৮.

আপনার ধর্ম কি নরকাগ্নি, নিয়তিবাদ বা অন্যান্য অশাস্ত্রীয় মতবাদ সম্বন্ধে শিক্ষা দেয়? আপনার ধর্মের নেতারা কি রাজনৈতিক অভিযানগুলোতে জড়িত হয়? আন্তরিকতার সঙ্গে ঈশ্বরের বাক্য বাইবেল অধ্যয়ন করা আপনাকে “শুচি ও বিমল ধর্ম্ম” বা উপাসনা খুঁজে পেতে সাহায্য করবে, যা সত্যিই বিশুদ্ধ এবং ঈশ্বরের কাছে গ্রহণযোগ্য।—যাকোব ১:২৭. (g ২/০৬)

[২৯ পৃষ্ঠার বাক্স/চিত্র]

পিউরিটানরা ও নরকাগ্নি

নরকাগ্নির বিষয় প্রচার করার দ্বারা পিউরিটানরা ঈশ্বরের বাক্যের বিরোধিতা করেছিল। বাইবেল শিক্ষা দেয় যে, মৃতেরা কিছুই জানে না, তারা কষ্ট বা আনন্দ কিছুই অনুভব করতে পারে না। (উপদেশক ৯:৫, ১০) এ ছাড়া, সত্য ঈশ্বরের ‘মনে’ যাতনা দেওয়ার ধারণাটি কখনোই “উদয় হয় নাই।” (যিরমিয় ১৯:৫; ১ যোহন ৪:৮) তিনি লোকেদের তাদের জীবনকে শুধরাতে অনুরোধ জানান এবং তিনি অনুতাপহীন অন্যায়কারীদের সঙ্গে সমবেদনাপূর্ণ ব্যবহার করেন। (যিহিষ্কেল ৩৩:১১) এই শাস্ত্রীয় সত্যগুলোর বিপরীতে, পিউরিটান প্রচারকরা প্রায়ই ঈশ্বরকে একজন নিষ্ঠুর ও প্রতিহিংসাপরায়ণ ব্যক্তি হিসেবে তুলে ধরত। এ ছাড়া, তারা জীবনকে খুব নির্দয়ভাবে দেখত, যেমন বিরোধীদের চুপ করানোর জন্য তারা জোর খাটাত।

[২৬ পৃষ্ঠার চিত্র]

পিলগ্রিমরা ১৬২০ সালে উত্তর আমেরিকায় পৌঁছায়

[সৌজন্যে]

Harper’s Encyclopædia of United States History

[২৮ পৃষ্ঠার চিত্র]

১৬২১ সালে প্রথম ধন্যবাদদান দিবস উদ্‌যাপন করা হচ্ছে

[২৮ পৃষ্ঠার চিত্র]

ম্যাসাচুসিটসে পিউরিটানদের সভাস্থল

[২৮ পৃষ্ঠার চিত্র]

জন কেলভিন

[২৮ পৃষ্ঠার চিত্র]

জনাথন এডওআর্ডস

[২৯ পৃষ্ঠার চিত্র]

গির্জায় যাওয়ার পথে সশস্ত্র পিউরিটান দম্পতি

[২৭ পৃষ্ঠার চিত্র সৌজন্যে]

Library of Congress, Prints & Photographs Division

[২৮ পৃষ্ঠার চিত্র সৌজন্যে]

ওপরে বাঁ দিকে: Snark/Art Resource, NY; ওপরে ডান দিকে: Harper’s Encyclopædia of United States History; জন কেলভিন: Portrait in Paul Henry’s Life of Calvin, from the book The History of Protestantism (Vol. II); জনাথন এডওআর্ডস: Dictionary of American Portraits/Dover

[২৯ পৃষ্ঠার চিত্র সৌজন্যে]

ছবিগুলো: North Wind Picture Archives