সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

সত্য ঈশ্বর কি কেবলমাত্র একজন?

সত্য ঈশ্বর কি কেবলমাত্র একজন?

বাইবেলের দৃষ্টিভঙ্গি

সত্য ঈশ্বর কি কেবলমাত্র একজন?

মোলক, অষ্টারোৎ, বাল, দাগোন, মরোদক, দ্যুপিতর (জিউস), মর্কুরিয় (হার্মিস) ও দীয়ানা (আর্টিমিস) হল কয়েক জন দেব-দেবী, যাদের নাম বাইবেলে উল্লেখ করা হয়েছে। (লেবীয় পুস্তক ১৮:২১; বিচারকর্ত্তৃগণের বিবরণ ২:১৩; ১৬:২৩; যিরমিয় ৫০:২; প্রেরিত ১৪:১২; ১৯:২৪) কিন্তু, শাস্ত্রে একমাত্র যিহোবাকেই সর্বশক্তিমান ঈশ্বর হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে। মোশি একটা বিজয় সংগীতে তার লোকেদের এই গান গাইতে পরিচালিত করেছিলেন: “হে সদাপ্রভু [“যিহোবা”, NW], দেবগণের মধ্যে কে তোমার তুল্য?”—যাত্রাপুস্তক ১৫:১১.

স্পষ্টতই, বাইবেল যিহোবাকে অন্য সমস্ত দেবতার ওপরে স্থান দেয়। কিন্তু, এই নিম্নতর দেবতারা কোন ভূমিকা পালন করে? তারা এবং যুগ যুগ ধরে উপাসনা করা হচ্ছে এমন আরও অসংখ্য দেবতা কি প্রকৃতই ঈশ্বর, যারা সর্বশক্তিমান ঈশ্বরের সঙ্গে গৌণ অবস্থানে রয়েছে?

কাল্পনিক বিষয়

বাইবেল যিহোবাকে একমাত্র সত্য ঈশ্বর হিসেবে শনাক্ত করে। (গীতসংহিতা ৮৩:১৮, NW; যোহন ১৭:৩) ভাববাদী যিশাইয় ঈশ্বরের নিজের বলা এই কথাগুলো লিপিবদ্ধ করেছিলেন, যখন তিনি বলেছিলেন: “আমার পূর্ব্বে কোন ঈশ্বর নির্ম্মিত হয় নাই, এবং আমার পরেও হইবে না। আমি, আমিই সদাপ্রভু [“যিহোবা”, NW]; আমি ভিন্ন আর ত্রাণকর্ত্তা নাই।”—যিশাইয় ৪৩:১০, ১১.

অন্য সমস্ত দেবতা যিহোবার চেয়ে কেবলমাত্র নিম্নতরই নয় বরং বেশির ভাগ ক্ষেত্রে তাদের কোনো অস্তিত্বই নেই—সুস্পষ্টভাবে মানুষের কাল্পনিক বিষয়। বাইবেল এই সমস্ত দেবতাকে “মনুষ্যের হস্তকৃত . . . দর্শনে, শ্রবণে, ভোজনে ও আঘ্রাণে অসমর্থ” বলে উল্লেখ করে। (দ্বিতীয় বিবরণ ৪:২৮) বাইবেল সহজভাবে শিক্ষা দেয় যে, যিহোবাই হলেন একমাত্র সত্য ঈশ্বর।

তাই, এতে অবাক হওয়ার কিছু নেই যে, শাস্ত্র যিহোবাকে ছাড়া অন্য আর কোনো ঈশ্বরের উপাসনা করার বিরুদ্ধে দৃঢ় সতর্কবাণী দেয়। উদাহরণস্বরূপ, মোশিকে দেওয়া দশ আজ্ঞার প্রথমটিতে প্রাচীন ইস্রায়েল জাতিকে অন্য কোনো দেবতার উপাসনা করতে নিষেধ করা হয়েছিল। (যাত্রাপুস্তক ২০:৩) কেন?

প্রথমত, অস্তিত্বহীন একজন দেবতার প্রতি ভক্তি প্রদান করা হবে সৃষ্টিকর্তার প্রতি এক চরম অমর্যাদাপূর্ণ কাজ। বাইবেল বর্ণনা করে যে, এই ধরনের মিথ্যা দেবতাদের উপাসনাকারীরা “মিথ্যার সহিত ঈশ্বরের সত্য পরিবর্ত্তন করিয়াছে, এবং সৃষ্ট বস্তুর পূজা ও আরাধনা করিয়াছে, সেই সৃষ্টিকর্ত্তার নয়।” (রোমীয় ১:২৫) প্রায়ই এই কল্পিত দেবতাদেরকে প্রকৃতিতে প্রাপ্ত বিভিন্ন উপাদান, যেমন ধাতু অথবা কাঠ দিয়ে তৈরি প্রতিমাগুলোর মাধ্যমে চিত্রিত করা হয়। অনেক দেবতা প্রকৃতির নির্দিষ্ট কিছু বিষয় যেমন বজ্রপাত, সমুদ্র ও বাতাসের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত। তাই নিশ্চিতভাবেই এই ধরনের কল্পিত দেবতাদের প্রতি ভক্তি দেখানো, সর্বশক্তিমান ঈশ্বরের প্রতি চরম অসম্মানজনক এক কাজ।

সৃষ্টিকর্তা এই মিথ্যা দেবতা ও তাদের প্রতিমাগুলো একেবারেই পছন্দ করেন না। কিন্তু, ঈশ্বরের অসন্তোষ বাক্য মূলত সেই লোকেদের প্রতি যারা এই মিথ্যা দেবতাদের নির্মাণ করেছে। তাঁর অনুভূতি এই কথাগুলোর মাধ্যমে জোরালোভাবে প্রকাশ পেয়েছে: “জাতিগণের প্রতিমা সকল রৌপ্য ও সুবর্ণ, সে গুলি মনুষ্যের হস্তের কার্য্য। মুখ থাকিতেও তাহারা কথা কহে না; চক্ষু থাকিতেও দেখিতে পায় না; কর্ণ থাকিতেও শুনিতে পায় না; তাহাদের মুখে শ্বাসমাত্রও নাই। যেমন তাহারা, তেমনি হইবে তাহাদের নির্ম্মাতারা, আর যে কেহ সে গুলিতে নির্ভর করে।”—গীতসংহিতা ১৩৫:১৫-১৮.

যিহোবা ঈশ্বরকে ছাড়া অন্য কোনো দেবতা বা কোনো কিছুর উপাসনা করার বিরুদ্ধে বাইবেলের দৃঢ় সতর্কবাণীর পিছনে আরেকটা কারণ রয়েছে। এই ধরনের উপাসনা আসলে সময় ও প্রচেষ্টার এক বিরাট অপচয়। ভাববাদী যিশাইয় উপযুক্তভাবেই বলেছিলেন: “কে দেবতা নির্ম্মাণ করিয়াছে, বা যাহা উপকারী নয়, এমন প্রতিমা ঢালিয়াছে?” (যিশাইয় ৪৪:১০) বাইবেল আরও বলে যে, “জাতিগণের সমস্ত দেবতা অবস্তুমাত্র।” (গীতসংহিতা ৯৬:৫) মিথ্যা দেবতাদের কোনো অস্তিত্বই নেই আর অস্তিত্বহীন কোনো কিছুর উপাসনা করার মাধ্যমে কিছুই অর্জন করা যায় না।

যিশু, দূতেরা এবং দিয়াবল

শাস্ত্র মাঝে মাঝে বাস্তব ব্যক্তিদেরকে ঈশ্বর হিসেবে উল্লেখ করে। কিন্তু, এক সতর্ক পরীক্ষা স্পষ্টভাবে প্রকাশ করে যে, এই উদাহরণগুলোতে “ঈশ্বর” শব্দটি দিয়ে এই ব্যক্তিদের এমন একজন হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়নি, যাকে একজন ঈশ্বর বলে উপাসনা করা উচিত। এর পরিবর্তে, যে-মূল ভাষায় বাইবেল লেখা হয়েছিল সেখানে “ঈশ্বর” শব্দটি একজন শক্তিশালী ব্যক্তিকে অথবা এমন একজন ব্যক্তিকে বর্ণনা করার জন্যও ব্যবহৃত হয়েছে যিনি ঈশ্বরতুল্য অথবা সর্বশক্তিমান ঈশ্বরের সঙ্গে যার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে।

উদাহরণস্বরূপ, বাইবেলের কিছু পদ যিশু খ্রিস্টকে একজন ঈশ্বর হিসেবে ইঙ্গিত করে। (যিশাইয় ৯:৬, ৭; যোহন ১:১, ১৮) এর অর্থ কি এই যে, যিশুকে উপাসনা করতে হবে? যিশু নিজে বলেছিলেন: “তোমার ঈশ্বর প্রভুকেই [“যিহোবাকেই,” NW] প্রণাম করিবে, কেবল তাঁহারই আরাধনা করিবে।” (লূক ৪:৮) স্পষ্টতই, যদিও যিশু একজন শক্তিশালী ও ঈশ্বরতুল্য ব্যক্তি কিন্তু তাই বলে বাইবেল তাঁকে এমন একজন ব্যক্তি হিসেবে তুলে ধরে না, যাঁর উপাসনা করতে হবে।

দূতদেরও “ঈশ্বর” হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। (গীতসংহিতা ৮:৫; ইব্রীয় ২:৭) তা সত্ত্বেও, শাস্ত্রের কোথাও মানুষকে দূতদের প্রতি ভক্তি দেখানোর জন্য উৎসাহিত করা হয়নি। বস্তুত, একবার একটা ঘটনায় বৃদ্ধ প্রেরিত যোহন একজন দূতের উপস্থিতিতে এতটাই বিস্ময়াভিভূত হয়ে পড়েছিলেন যে, তিনি সেই দূতকে ভজনা বা উপাসনা করার জন্য প্রণিপাত করেছিলেন। কিন্তু, সেই দূত উত্তর দিয়েছিলেন: “দেখিও, এমন কর্ম্ম করিও না; . . . ঈশ্বরেরই ভজনা কর।”—প্রকাশিত বাক্য ১৯:১০.

প্রেরিত পৌল, দিয়াবলকে “এই যুগের দেব” বলে বর্ণনা করেছিলেন। (২ করিন্থীয় ৪:৪) “এ জগতের অধিপতি” হিসেবে দিয়াবল অসংখ্য মিথ্যা দেবতার উপাসনা করার জন্য ইন্ধন জুগিয়েছে। (যোহন ১২:৩১) তাই, মানুষের তৈরি দেবতাদের উদ্দেশে করা সমস্ত ধরনের উপাসনার মাধ্যমে মূলত শয়তানকেই উপাসনা করা হয়। কিন্তু, শয়তান এমন কোনো ঈশ্বর নয় যে আমাদের উপাসনা পাওয়ার যোগ্য। সে হল এক স্বনিযুক্ত শাসক অর্থাৎ এক দখলকারী। শেষ পর্যন্ত, তাকেসহ সব ধরনের মিথ্যা উপাসনা দূর করা হবে। যখন তা ঘটবে, তখন সমস্ত মানবজাতি—হ্যাঁ, সমস্ত সৃষ্টি—অনন্তকাল ধরে একমাত্র সত্য ও জীবন্ত ঈশ্বর হিসেবে যিহোবাকেই স্বীকার করবে।—যিরমিয় ১০:১০. (g ২/০৬)

আপনি কি ভেবে দেখেছেন?

◼ প্রতিমাপূজা সম্বন্ধে বাইবেল কী শিক্ষা দেয়?—গীতসংহিতা ১৩৫:১৫-১৮.

◼ যিশু এবং দূতদের কি ঈশ্বর হিসেবে উপাসনা পাওয়া উচিত?—লূক ৪:৮, NW.

◼ একমাত্র সত্য ঈশ্বর কে?—যোহন ১৭:৩.

[১৪, ১৫ পৃষ্ঠার চিত্রগুলো]

বাম দিক থেকে ডান দিকের মূর্তিগুলো: মরিয়ম, ইতালি; মায়া গোত্রের ভুট্টা দেবতা, মেক্সিকো ও মধ্য আমেরিকা; অষ্টারোৎ, কনান; জাদুবিদ্যার সঙ্গে জড়িত মূর্তি, সিয়েরা লিয়ন; বুদ্ধ, জাপান; চিকোমেকোয়াটল, আ্যজটেক, মেক্সিকো; হোরাস বাজপাখি, মিশর; জিউস, গ্রিস

[সৌজন্যে]

ভুট্টা দেবতা, হোরাস বাজপাখি এবং জিউস: Photograph taken by courtesy of the British Museum