সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

শিশুরা সন্ত্রাসের শিকার

শিশুরা সন্ত্রাসের শিকার

শিশুরা সন্ত্রাসের শিকার

সন্ধ্যার সময় আপনি তাদেরকে উগান্ডার উত্তরাঞ্চলের রাস্তাগুলোতে দেখতে পাবেন আর তারা হল, খালি পায়ে হেঁটে আসা হাজার হাজার ছোট ছেলেমেয়ে। রাত নামার আগেই তারা তাদের প্রত্যন্ত গ্রাম ত্যাগ করে এবং দীর্ঘপথ হেঁটে বড় বড় শহর যেমন গুলু, কিট্‌গুম এবং লিরাতে আসে। সেখানে আসামাত্রই তারা বিভিন্ন বিল্ডিং, বাস স্টেশন, পার্ক এবং বিভিন্ন স্থানের খালি জায়গাতে ছড়িয়ে পড়ে। সূর্য ওঠার পর আপনি তাদেরকে আবারও রাস্তায়, নিজ নিজ বাড়ি ফিরে যেতে দেখতে পাবেন। কেন তাদের জীবনযাত্রা এইরকম অস্বাভাবিক?

কিছু লোক তাদেরকে রাতের নিত্যযাত্রী বলে সম্বোধন করে। কিন্তু, এই অল্পবয়সি ছেলেমেয়েরা রাতের বেলা কাজ করার জন্য যায় না। তারা সন্ধ্যা বেলা বাড়ি ত্যাগ করে কারণ ঝোপঝাড়ের মধ্যে যখন আঁধার নেমে আসে, তখন তাদের বাড়ি এক বিপদজনক স্থান হয়ে ওঠে।

প্রায় দুই দশক ধরে গেরিলাবাহিনী প্রত্যন্ত গ্রামগুলোতে হানা দিয়ে ছোট ছেলেমেয়েদের অপহরণ করছে। প্রতি বছর তারা শত শত ছেলেমেয়েকে তাদের বাড়ি থেকে চুরি করে নিয়ে যায় এবং এরপর গহীন জঙ্গলে অদৃশ্য হয়ে যায়। ছোট ছেলেমেয়েদেরকে সাধারণত রাতের বেলা জোর করে তুলে নিয়ে যাওয়া হয় এবং তাদেরকে একটা দল হিসেবে বিদ্রোহীদেরকে দেওয়া হয়, যারা তাদেরকে শিশু সৈনিক ও কুলি হিসেবে কাজ করায় এবং অল্পবয়সি মেয়েদেরকে সৈন্যদের সঙ্গে যৌনসম্পর্ক করার জন্য বাধ্য করা হয়। ফাঁদে আটকা পড়া ছেলেমেয়েরা যদি এগুলো করতে রাজি না হয়, তা হলে বন্দিকর্তারা হয়তো তাদের নাক অথবা ঠোঁট কেটে দেয়। যারা পালানোর চেষ্টা করে ধরা পড়ে, তাদেরকে এত বীভৎসভাবে হত্যা করা হয় যে, তা ভাষায় বর্ণনা করা যায় না।

অন্যান্য অল্পবয়সি ছেলেমেয়েও সন্ত্রাসের শিকার হয়। সিয়েরা লিওনের পঙ্গু কিশোর-কিশোরীরা অনেক ছোট থাকতে লোকেরা বড় বড় ছুরি দিয়ে তাদের হাত ও পা কেটে দিয়েছিল। আফগানিস্তানের ছোট ছেলে ও মেয়েরা প্রজাপতির আকৃতির মাইন দিয়ে খেলা করতে গিয়ে সেই রঙিন “খেলনাগুলো” যখন বিস্ফোরিত হয়, তখন তাদের আঙুল এবং চোখ হারায়।

কিছু অল্পবয়সি ছেলেমেয়ে সন্ত্রাসবাদের আকস্মিক আক্রমণের ফলে ভিন্ন ধরনের পরিণতির মুখোমুখি হয়। উদাহরণস্বরূপ, ১৯৯৫ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ওক্লাহোমা সিটিতে এক সন্ত্রাসী আক্রমণে ১৬৮ জন নিহত ব্যক্তির মধ্যে ১৯ জনই ছিল ছোট ছেলেমেয়ে, যাদের মধ্যে কেউ কেউ ডায়াপার পরিহিত ছিল। মোমবাতির নিবু নিবু অগ্নিশিখার মধ্যে দমকা হাওয়ার আঘাতের মতো, বোমা সেই ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র জীবন এক নিমিষে শেষ করে দিয়েছিল। সন্ত্রাসমূলক কাজ ছোট ছেলেমেয়ে হিসেবে তাদের খেলাধুলা করার এবং হাসিখুশি থাকার ও সেইসঙ্গে তাদের বাবামার কোলে চড়ার অধিকার চুরি করে নিয়েছিল।

এই ঘটনাগুলো সাম্প্রতিক সময়ে ঘটেছে কিন্তু সন্ত্রাসমূলক দৌরাত্ম্য শত শত বছর ধরে মানবজাতিকে জর্জরিত করেছে, যা আমরা দেখতে পাব। (g ৬/০৬)

[৩ পৃষ্ঠার বাক্স]

সন্তানের মৃত্যুর জন্য আগে থেকে প্রস্তুত থাকা

“আজ সকালে আমি যখন আমার এগারো বছর বয়সি ছেলেকে ঘুম থেকে ডেকে তুলি, তখন সে আমাকে জিজ্ঞেস করে, ‘আজকের সন্ত্রাসী আক্রমণ কি ইতিমধ্যেই হয়ে গিয়েছে?’” লেখক ডেভিড গ্রোসম্যান দৌরাত্ম্য সম্বন্ধে এটাই লিখেছিলেন, যা তাদের দেশকে বিপর্যস্ত করছিল। তিনি আরও বলেছিলেন: “আমার ছেলে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে।”

সাম্প্রতিক সময়ে, সন্ত্রাসী আক্রমণে এত বেশি ছোট ছেলেমেয়ে মারা গিয়েছে যে, কিছু বাবামা তাদের ছেলেমেয়েদের দৌরাত্ম্যমূলক মৃত্যুর জন্য আগে থেকে প্রস্তুত থাকে। “এক অল্পবয়সি দম্পতি একবার আমাকে তাদের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সম্বন্ধে যা বলেছিল, তা আমি কখনো ভুলব না,” গ্রোসম্যান লেখেন। “তারা বিয়ে করে তিনটে সন্তান নেবে। দুটো নয় কিন্তু তিনটে। ফলে, একটা সন্তান মারা গেলেও আরও দুটো সন্তান বাকি থাকবে।”

তারা উল্লেখ করেনি যে, যদি দুটো সন্তান—অথবা তিনটে সন্তানই—মারা যায়, তা হলে তারা কী করবে। *

[পাদটীকা]

^ এই বিভাগের উদ্ধৃতিগুলো, ডেভিড গ্রোসম্যানের দ্বারা লিখিত জীবনের এক পথ হিসেবে মৃত্যু (ইংরেজি) বই থেকে নেওয়া হয়েছে।

[৩ পৃষ্ঠার চিত্র সৌজন্যে]

© Sven Torfinn/ Panos Pictures