সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

আপনি কাকে বিশ্বাস করবেন?

আপনি কাকে বিশ্বাস করবেন?

আপনি কাকে বিশ্বাস করবেন?

“কেননা প্রত্যেক গৃহ কাহারও দ্বারা সংস্থাপিত হয়, কিন্তু যিনি সকলই সংস্থাপন করিয়াছেন, তিনি ঈশ্বর।”—ইব্রীয় ৩:৪.

আপনি কি এই বাইবেল লেখকের যুক্তির সঙ্গে একমত? এই পদের কথাগুলো যখন লেখা হয়েছিল, তখন থেকে প্রায় ২,০০০ বছর ধরে মানবজাতি বৈজ্ঞানিক দিক দিয়ে বিভিন্নভাবে উন্নতি করেছে। তবে, এখনও কি কেউ এভাবে চিন্তা করে যে, প্রকৃতিতে বিদ্যমান নকশা একজনকে বিশ্বাস করতে বাধ্য করে যে, একজন নকশাবিদ অর্থাৎ একজন সৃষ্টিকর্তা ঈশ্বর আছেন?

এমনকি শিল্পোন্নত দেশগুলোতেও, অনেক লোক এই প্রশ্নের উত্তরে হ্যাঁ বলবে। উদাহরণস্বরূপ, যুক্তরাষ্ট্রে ২০০৫ সালে নিউজউইক পত্রিকার দ্বারা পরিচালিত একটা সমীক্ষা থেকে জানা যায়, ৮০ শতাংশ লোক “বিশ্বাস করে যে, ঈশ্বর এই নিখিলবিশ্বকে সৃষ্টি করেছেন।” এই বিশ্বাসের কারণ কি এই যে, লোকেরা অশিক্ষিত? বিজ্ঞানীরা কি ঈশ্বরে বিশ্বাস করে? প্রকৃতি (ইংরেজি) নামে বিজ্ঞান বিষয়ক এক পত্রিকা ১৯৯৭ সালে রিপোর্ট করেছিল যে, সমীক্ষাকৃত প্রায় ৪০ শতাংশ জীববিজ্ঞানী, পদার্থবিজ্ঞানী এবং গণিতবিদ এমন এক ঈশ্বরে বিশ্বাস করে, যাঁর কেবল যে অস্তিত্ব রয়েছে তা-ই নয় কিন্তু সেইসঙ্গে তিনি প্রার্থনা শোনেন এবং উত্তরও দেন।

কিন্তু, অন্যান্য বিজ্ঞানী এই ব্যাপারে জোরালোভাবে দ্বিমত পোষণ করে থাকে। নোবেল পুরস্কারপ্রাপ্ত বিজ্ঞানী ড. হারবার্ট এ. হপ্টম্যান, সম্প্রতি বিজ্ঞান বিষয়ক এক আলোচনা সভায় বলেছিলেন যে, অতিপ্রাকৃত শক্তির ওপর, বিশেষ করে ঈশ্বরের ওপর বিশ্বাস করা প্রকৃত বিজ্ঞানের সঙ্গে সামঞ্জস্য রাখে না। “এই ধরনের বিশ্বাস,” তিনি বলেছিলেন, “মানবজাতির মঙ্গলের জন্য ক্ষতিকর।” এমনকি যে-বিজ্ঞানীরা ঈশ্বরে বিশ্বাস করে, তারাও এই বিষয়টা শিক্ষা দিতে ইতস্তত করে যে, উদ্ভিদ ও প্রাণীদের মধ্যে বিদ্যমান নকশার জন্য একজন নকশাবিদের প্রয়োজন। কেন? একটা কারণ শনাক্ত করে স্মিথসোনিয়ান ইনস্টিটিউটের একজন জীবাশ্মবিদ ডগলাস এইচ. এরউইন বলেন: “বিজ্ঞানের নীতিগুলোর মধ্যে একটা হচ্ছে, বিজ্ঞান কোনোরকম অলৌকিক কাজকে মেনে নেয় না।”

আপনার কী চিন্তা ও বিশ্বাস করা উচিত, তা আপনাকে বলে দেওয়ার জন্য আপনি হয়তো অন্যদের বলতে পারেন। কিংবা আপনি হয়তো নিজে কিছু প্রমাণ অনুসন্ধান করতে ও একটা সিদ্ধান্তে আসতে চাইবেন। আপনি যখন পরবর্তী পৃষ্ঠাগুলোতে উপস্থাপিত সাম্প্রতিককালের বৈজ্ঞানিক আবিষ্কারগুলো সম্বন্ধে পড়েন, তখন নিজেকে জিজ্ঞেস করুন, ‘একজন সৃষ্টিকর্তা আছেন, এই উপসংহারে আসা কি যুক্তিসংগত?’ (g ৯/০৬)

[৩ পৃষ্ঠার ব্লার্ব]

নিজে প্রমাণ অনুসন্ধান করুন

[৩ পৃষ্ঠার বাক্স]

যিহোবার সাক্ষিরা কি সৃষ্টিবাদী?

যিহোবার সাক্ষিরা বাইবেলের আদিপুস্তক বইয়ে লিপিবদ্ধ সৃষ্টির বিবরণে বিশ্বাস করে। কিন্তু সৃষ্টিবাদী বলতে আপনি যা বোঝেন, যিহোবার সাক্ষিরা তা নয়। কেন? প্রথমত, অনেক সৃষ্টিবাদী ব্যক্তি বিশ্বাস করে যে, নিখিলবিশ্ব ও পৃথিবী এবং এখানে বিদ্যমান সমস্ত সজীব বস্তুকে প্রায় ১০,০০০ বছর আগে ২৪ ঘন্টা বিশিষ্ট ছয় দিনে সৃষ্টি করা হয়েছিল। কিন্তু, বাইবেল তা শিক্ষা দেয় না। * এ ছাড়া, সৃষ্টিবাদীরা এমন অনেক মতবাদকে গ্রহণ করে নিয়েছে, যেগুলোকে বাইবেল সমর্থন করে না। যিহোবার সাক্ষিদের ধর্মীয় শিক্ষার ভিত্তি একমাত্র ঈশ্বরের বাক্য।

অধিকন্তু, কিছু জায়গায় “সৃষ্টিবাদী” শব্দটি মৌলবাদী দলগুলোকে বোঝাতে পারে, যে-দলগুলো সক্রিয়ভাবে রাজনীতিতে অংশ নিয়ে থাকে। এই দলগুলো রাজনীতিবিদ, বিচারক ও শিক্ষকদের সেই আইন ও শিক্ষাগুলোকে গ্রহণ করতে চাপ দিয়ে থাকে, যেগুলো সৃষ্টিবাদীদের ধর্মীয় নীতিগুলোর সঙ্গে সংগতিপূর্ণ।

যিহোবার সাক্ষিরা রাজনীতির দিক দিয়ে নিরপেক্ষ। তারা আইন প্রণয়ন ও বলবৎ করার ক্ষেত্রে সরকারের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করে থাকে। (রোমীয় ১৩:১-৭) কিন্তু, তারা যিশুর এই কথাগুলোও অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে নেয় যে, তারা “জগতের নয়।” (যোহন ১৭:১৪-১৬) জনসাধারণ্যে পরিচর্যায়, তারা লোকেদের ঈশ্বরের মান অনুযায়ী জীবনযাপন করার উপকারগুলো শেখানোর প্রস্তাব দেয়। কিন্তু, তারা মৌলবাদী দলগুলোর দেওয়ানি আইন, যে-আইন অন্যদেরকে বাইবেলের মানগুলোকে গ্রহণ করে নিতে বাধ্য করবে, তা প্রতিষ্ঠা করার প্রচেষ্টাকে সমর্থন করার দ্বারা তাদের খ্রিস্টীয় নিরপেক্ষতাকে লঙ্ঘন করে না।—যোহন ১৮:৩৬.

[পাদটীকা]

^ দয়া করে এই সংখ্যার ১৮ পৃষ্ঠায় “বাইবেলের দৃষ্টিভঙ্গি: বিজ্ঞান কি আদিপুস্তকের বিবরণের সঙ্গে পরস্পরবিরোধী?”প্রবন্ধটি দেখুন।