সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

একজন প্রাণরসায়নবিদের সাক্ষাৎকার

একজন প্রাণরসায়নবিদের সাক্ষাৎকার

একজন প্রাণরসায়নবিদের সাক্ষাৎকার

বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের পেনসিলভানিয়ার লিহাই বিশ্ববিদ্যালয়ে কার্যরত প্রাণরসায়ন বিষয়ের অধ্যাপক মাইকেল জে. বিহি ১৯৯৬ সালে ডারউইনস্‌ ব্ল্যাক বক্স—দ্যা বায়োকেমিক্যাল চ্যালেঞ্জ টু ইভোলুশন নামে তার বইটি প্রকাশ করেছিলেন। ১৯৯৭ সালের ৮ই মে সংখ্যার সচেতন থাক! (ইংরেজি) পত্রিকায় “আমরা কীভাবে এখানে এসেছি? আকস্মিকভাবে নাকি নির্মিত হয়েছি?” শিরোনামের ধারাবাহিক প্রবন্ধগুলো বিহির বইয়ের বিষয় উল্লেখ করেছিল। ডারউইনস্‌ ব্ল্যাক বক্স বইটি প্রকাশিত হওয়ার প্রায় দশ বছর পর, বিবর্তনবাদী বিজ্ঞানীরা বিহি যে-যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেছিলেন, সেগুলো খণ্ডন করার চেষ্টা করেছিল। সমালোচকরা অভিযোগ করে যে, তিনি তার ধর্মীয় বিশ্বাস—তিনি একজন রোমান ক্যাথলিক—দ্বারা তার বৈজ্ঞানিক অভিমতকে ম্লান হতে দিয়েছেন। অন্যেরা দাবি করে যে, তার যুক্তি অবৈজ্ঞানিক। তার ধারণাগুলো কেন এত বিতর্কের সৃষ্টি করেছে, সেই বিষয়ে জানার জন্য সচেতন থাক! অধ্যাপক বিহির সাক্ষাৎকার নিয়েছিল।

সচেতন থাক!: আপনার কেন মনে হয় যে, সজীব বস্তুগুলো এক বুদ্ধিমান ব্যক্তি নকশা করেছেন বলে প্রমাণ দেয়?

অধ্যাপক বিহি: আমরা যখন বিভিন্ন অংশকে জটিল কাজ সম্পাদন করতে দেখি, তখনই এই উপসংহারে আসি যে, এগুলোর নকশা করা হয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, আমরা প্রতিদিন যে-মেশিনগুলো ব্যবহার করি—ঘাসকাটার মেশিন, গাড়ি বা এর চেয়েও সাধারণ জিনিস—সেগুলোর কথাই ধরুন। আমি এক্ষেত্রে ইঁদুর-ধরার কল সম্বন্ধে বলতে চাই। আপনি এই সিদ্ধান্তে আসেন যে, কেউ একজন এটা তৈরি করেছে কারণ আপনি দেখতে পান যে ইঁদুর ধরার কাজ সম্পাদন করতে এই কলের বিভিন্ন অংশ সুবিন্যস্ত রয়েছে।

বিজ্ঞান বর্তমানে জীবনের মৌলিক স্তর আবিষ্কার করার মতো যথেষ্ট অগ্রগতি করেছে। আর আমাদেরকে অবাক করে দেওয়ার মতো বিষয়টা হচ্ছে বিজ্ঞানীরা কার্যরত, জটিল যন্ত্র অর্থাৎ জীবনের আণবিক স্তরটা পর্যন্ত জানতে পেরেছে। উদাহরণস্বরূপ, সজীব কোষগুলোর মধ্যে ছোট ছোট আণবিক “ট্রাক” রয়েছে, যেগুলো কোষের এক পাশ থেকে অন্য পাশে প্রয়োজনীয় সামগ্রী বহন করে থাকে। ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র আণবিক “সাইন পোস্ট” রয়েছে, যেগুলো এই “ট্রাকগুলোকে” বামে না ডানে ঘুরতে হবে সেই সংকেত দেয়। কিছু কিছু কোষে আণবিক “আউটবোর্ড মোটরগুলো” রয়েছে, যেগুলো কোষগুলোকে তরলের মধ্যে দিয়ে সামনের দিকে ঠেলে নিয়ে যায়। যেকোনো অবস্থায়, কেউ যখন এই ধরনের জটিল কার্যকর ব্যবস্থা দেখে, তখন তারা এই সিদ্ধান্তে পৌঁছায় যে, এই সমস্তকিছুর নকশা করা হয়েছে। ডারউইনের বিবর্তনবাদের দাবিগুলো সত্ত্বেও, এই ধরনের জটিল কোষগুলোর আর কোনো ব্যাখ্যা আমাদের কাছে নেই। যেহেতু আমরা সবসময়ই অভিজ্ঞতা লাভ করে এসেছি যে, এই ধরনের ব্যবস্থা নকশা থাকার ইঙ্গিত দেয়, তাই আমাদের এভাবে চিন্তা করা সঠিক যে, এই আণবিক পদ্ধতিগুলোও একজন বুদ্ধিমান ব্যক্তি নকশা করেছিলেন।

সচেতন থাক!: একজন বুদ্ধিমান ব্যক্তি নকশা করেছেন এই সম্বন্ধে আপনার উপসংহার শুনে অধিকাংশ সহকর্মীরা কেন আপনার সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করে বলে আপনি মনে করেন?

অধ্যাপক বিহি: অনেক বিজ্ঞানী আমার উপসংহারের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করে কারণ তারা উপলব্ধি করে যে, একজন বুদ্ধিমান ব্যক্তি নকশা করেছেন এই ধারণাটির মধ্যে বিশেষ করে বৈজ্ঞানিক অর্থ রয়েছে—অর্থাৎ এটি প্রকৃতির চেয়ে ঊর্ধ্বে কোনো বিষয়কে ইঙ্গিত করে বলে মনে হয়। এই উপসংহার অনেক লোককে অস্বস্তিতে ফেলে দেয়। কিন্তু, আমি সবসময় এটাই শিখে এসেছি যে, বিজ্ঞান সাধারণত প্রমাণ অনুসরণ করে থাকে, তা একজনকে যেদিকেই নিয়ে যাক না কেন। আমি মনে করি, কোনো উপসংহার বিজ্ঞানীদের নৈতিক মানের উপযুক্ত নয় বলে শুধুমাত্র এই কারণে যদি কেউ সেই উপসংহার, যেটা কিনা প্রমাণের দ্বারা ইঙ্গিত পাওয়া যায়, সেটাকে গ্রহণ করতে পিছপা হয়, তা হলে তার সাহসের অভাব রয়েছে।

সচেতন থাক!: আপনি কীভাবে সেই ধরনের সমালোচকদের কথায় সাড়া দেবেন, যারা দাবি করে যে, একজন বুদ্ধিমান ব্যক্তি নকশা করেছেন এই ধারণার পিছনে রয়েছে অজ্ঞতা?

অধ্যাপক বিহি: প্রকৃতিতে নকশা বিদ্যমান রয়েছে এই উপসংহারে আসার কারণ অজ্ঞতা নয়। আমরা জানি না বলে যে এই ধারণাটিকে গ্রহণ করছি তা নয়; বরং আমরা জানি বলে তা করছি। ডারউইন যখন ১৫০ বছর আগে দি অরিজিন অভ্‌ স্পিশিজ নামে তার বইটি প্রকাশ করেছিলেন, তখন জীবনকে একটুও জটিল বলে মনে হয়নি। বিজ্ঞানীরা ভেবেছিল যে, কোষ কোনোভাবেই জটিল নয় আর তাই এটা হয়তো নিজে থেকেই সাগরের তলদেশের মাটি থেকে বুদ্‌বুদ আকারে উদ্ভূত হয়। কিন্তু সেই সময়ের পর বিজ্ঞান আবিষ্কার করেছে যে, কোষগুলো আমাদের একবিংশ শতাব্দীর যন্ত্রগুলোর চেয়েও অনেক গুণ বেশি জটিল। সেই জটিল কার্যপদ্ধতি প্রকাশ করে যে, এগুলোকে এভাবে নকশা করার পিছনে এক উদ্দেশ্য রয়েছে।

সচেতন থাক!: বিজ্ঞান কি এমন কোনো প্রমাণ দেখাতে পেরেছে যে, প্রাকৃতিক নির্বাচনের মাধ্যমে হয়তো বিবর্তন সেই জটিল আণবিক যন্ত্রগুলোকে সৃষ্টি করেছে, যেগুলোর বিষয়ে আপনি বলেছেন?

অধ্যাপক বিহি: আপনি যদি বৈজ্ঞানিক বইপত্র ঘেঁটে দেখেন, তা হলে আপনি আবিষ্কার করবেন যে, কেউই গুরুগম্ভীরভাবে এমন কোনো প্রচেষ্টা করেননি—কোনো পরীক্ষামূলক প্রচেষ্টা বা বিস্তারিত বৈজ্ঞানিক ছক—যা ব্যাখ্যা করে যে, কীভাবে এই ধরনের আণবিক যন্ত্রগুলো বিবর্তনের মাধ্যমে গঠিত হতে পারে। এই বিষয়টা সত্য হওয়া সত্ত্বেও, আমার বই প্রকাশিত হওয়ার দশ বছরের মধ্যে ন্যাশনাল আ্যকাডেমি অভ্‌ সায়েন্সেস এবং দি আ্যমেরিকান এসোসিয়েশন ফর দি আ্যডভান্সমেন্ট অভ্‌ সায়েন্স এর মতো বহু বৈজ্ঞানিক সংগঠন, সজীব বস্তু এক বুদ্ধিদীপ্ত নকশার প্রমাণ জোগায় এই ধারণাকে যেকোনোভাবে নিবৃত্ত করার জন্য তাদের সদস্যদের কাছে জরুরিভাবে আপিল করেছে।

সচেতন থাক!: আপনি সেই ব্যক্তিদের কীভাবে উত্তর দেবেন, যারা উদ্ভিদ ও প্রাণীর সেই বৈশিষ্ট্যগুলো সম্বন্ধে উল্লেখ করে, যেগুলোর বিষয়ে তারা দাবি করে যে, সেগুলো অপর্যাপ্তভাবে নকশা করা হয়েছে?

অধ্যাপক বিহি: একটা জীবের মধ্যে নির্দিষ্ট কোনো বৈশিষ্ট্য থাকার কারণটা আমাদের না জানার অর্থ এই নয় যে, সেই বৈশিষ্ট্যের কোনো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেই। উদাহরণস্বরূপ, তথাকথিত লুপ্তপ্রায় অঙ্গগুলো একসময় সেভাবে মনে করা হতো এটা দেখাতে যে, মানবদেহ এবং অন্যান্য জীব অপর্যাপ্তভাবে নকশা করা হয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, একসময় আ্যপেন্ডিক্স এবং টনসিলকে লুপ্তপ্রায় অঙ্গ বলে ধরা হতো এবং নিয়মিতভাবে অপারেশন করে কেটে ফেলা হতো। কিন্তু, পরে আবিষ্কার করা হয়েছিল যে, এই অঙ্গগুলো রোগপ্রতিরোধ ব্যবস্থায় এক ভূমিকা রাখে এবং এগুলোকে এখন আর লুপ্তপ্রায় অঙ্গ হিসেবে বিবেচনা করা হয় না।

মনে রাখার মতো আরেকটা বিষয় হচ্ছে যে, জীববিজ্ঞানে কিছু কিছু বিষয় আকস্মিক ঘটে থাকে। কিন্তু, আমার গাড়িতে একটা ফুটো রয়েছে বলে বা চাকার হাওয়া বেরিয়ে গিয়েছে বলেই এটা বোঝায় না যে, গাড়ি বা চাকাকে নকশা করা হয়নি। অনুরূপভাবে, জীববিজ্ঞানে কিছু কিছু বিষয় আকস্মিকভাবে ঘটে থাকে বলে এটা বোঝায় না যে, জীবনের অত্যন্ত সুবিন্যস্ত, জটিল আণবিক যন্ত্র আকস্মিকভাবে উদ্ভূত হয়েছে। এই তর্ক কোনোভাবেই যুক্তিসংগত নয়। (g ৯/০৬)

[১২ পৃষ্ঠার ব্লার্ব]

“আমি মনে করি, কোনো উপসংহার বিজ্ঞানীদের নৈতিক মানের উপযুক্ত নয় বলে শুধুমাত্র এই কারণে যদি কেউ সেই উপসংহার, যেটা কিনা প্রমাণের দ্বারা ইঙ্গিত পাওয়া যায়, সেটাকে গ্রহণ করতে পিছপা হয়, তা হলে তার সাহসের অভাব রয়েছে”