যেকারণে আমরা একজন সৃষ্টিকর্তায় বিশ্বাস করি
যেকারণে আমরা একজন সৃষ্টিকর্তায় বিশ্বাস করি
বিভিন্ন বৈজ্ঞানিক ক্ষেত্রের অনেক বিশেষজ্ঞ প্রকৃতিতে বিদ্যমান বুদ্ধিসম্পন্ন নকশা পর্যবেক্ষণ করেছে। তারা এইরকম চিন্তা করা অযৌক্তিক বলে মনে করেছে যে, সূক্ষ্ম জটিলতাসম্পন্ন জীবন পৃথিবীতে দৈবক্রমে এসেছে। তাই, বেশ কিছু সংখ্যক বিজ্ঞানী ও গবেষক সৃষ্টিকর্তায় বিশ্বাস করে।
তাদের মধ্যে কেউ কেউ যিহোবার সাক্ষি হয়েছে। তারা এই বিষয়ে দৃঢ়প্রত্যয়ী যে, বাইবেলের ঈশ্বর হলেন এই আক্ষরিক নিখিলবিশ্বের নকশাবিদ ও নির্মাতা। কেন তারা এমন একটা উপসংহারে পোঁছেছে? সচেতন থাক! তাদের মধ্যে কয়েকজনকে এই সম্পর্কে জিজ্ঞেস করেছিল। তাদের মন্তব্য হয়তো আপনার আগ্রহ জাগাবে। *
“জীবনের দুর্বোধ্য জটিলতা”
◼ ভল্ফ-ইকিহার্ড লনিগ
সংক্ষিপ্ত পরিচয়: বিগত ২৮ বছর ধরে আমি উদ্ভিদকোষের পরিব্যক্তি সংক্রান্ত বৈজ্ঞানিক কাজের সঙ্গে যুক্ত। এই সময়ের মধ্যে ২১ বছর ধরে আমি জার্মানির কোলোনের ম্যাক্স প্লাংক ইনস্টিটিউট ফর প্ল্যান্ট ব্রিডিং রিসার্চ-এ নিযুক্ত আছি। এ ছাড়া, প্রায় তিন দশক ধরে আমি যিহোবার সাক্ষিদের একটা মণ্ডলীতে একজন প্রাচীন হিসেবেও সেবা করছি।
বংশগতিবিদ্যা নিয়ে আমার পরীক্ষামূলক গবেষণা ও জীববিজ্ঞান সংক্রান্ত পড়াশুনা, যেমন উদ্ভিদ ও প্রাণীর শারীরবিদ্যা এবং অঙ্গসংস্থানবিদ্যা আমাকে জীবনের বিস্তৃত ও প্রায়ই দুর্বোধ্য জটিলতার মুখোমুখি করেছে। এই বিষয়গুলো নিয়ে পড়াশুনা আমার এই প্রত্যয়কে আরও পুনরুজ্জীবিত করেছে যে, এমনকি জীবনের একেবারে প্রাথমিক গঠনের শুরুরও নিশ্চয়ই এক বুদ্ধিমান উৎস রয়েছে। বৈজ্ঞানিকমহল, জীবনের জটিলতা সম্পর্কে অবগত রয়েছে। তবে, এই বিস্ময়কর বিষয়গুলোকে সাধারণত বিবর্তনের আলোকে উপস্থাপন করা হয়ে থাকে। কিন্তু, আমার মতে বাইবেলের সৃষ্টির বিবরণকে ভুল প্রমাণ করার জন্য তর্কবিতর্কগুলো মিথ্যা বলে প্রমাণিত হয়, যখন তা বৈজ্ঞানিক পরীক্ষানিরীক্ষার দ্বারা করা হয়। আমি এই রকম তর্কবিতর্ককে এক দশকেরও বেশি সময় ধরে পরীক্ষা করেছি। সজীব বস্তু সম্পর্কে মনোযোগ সহকারে অধ্যয়ন এবং পৃথিবীতে যাতে জীবনের অস্তিত্ব থাকতে পারে সেইজন্য নিখিলবিশ্বকে নিয়ন্ত্রণকারী আইনগুলো যে নিখুঁতভাবে খাপ খাইয়ে নিয়েছে বলে মনে হয়, তা বিবেচনা করার পর আমি সৃষ্টিকর্তায় বিশ্বাস করতে বাধ্য হয়েছি।
“আমার পর্যবেক্ষণ করা সবকিছুরই একটা কারণ রয়েছে”
◼ বায়রন লিওন মিডোস
সংক্ষিপ্ত পরিচয়: আমি যুক্তরাষ্ট্রে থাকি এবং ন্যাশনাল আ্যরোনটিকস্ আ্যন্ড স্পেস আ্যডমিনিসট্রেশন (নাসা) এর লেসার পদার্থবিদ্যা বিভাগে কাজ করি। বর্তমানে আমি আবহাওয়া, জলবায়ু ও গ্রহের অন্যান্য বিষয়কে নিয়ন্ত্রণ করার প্রযুক্তিবিদ্যার উন্নতিসাধনের কাজের সঙ্গে জড়িত আছি। আমি ভার্জিনিয়ার কিলমারনকে যিহোবার সাক্ষিদের একটা মণ্ডলীতে একজন প্রাচীন হিসেবে সেবা করছি।
আমার গবেষণায় আমি প্রায়ই পদার্থবিদ্যার মূলনীতিগুলো নিয়ে কাজ করে থাকি। আমি বোঝার চেষ্টা করি যে, নির্দিষ্ট বিষয়গুলো কীভাবে ও কেন ঘটে থাকে। আমার গবেষণায় আমি স্পষ্ট প্রমাণ পেয়েছি যে, আমার পর্যবেক্ষণ করা সবকিছুরই একটা কারণ রয়েছে। আমি বিশ্বাস করি, প্রকৃতিতে বিদ্যমান সমস্ত বিষয়ের মূল কারণ যে ঈশ্বর, তা মেনে নেওয়া বৈজ্ঞানিকভাবে যুক্তিযুক্ত। প্রকৃতির নিয়মগুলো এতটাই স্থির যে, আমি বিশ্বাস করতে বাধ্য হই সেগুলো একজন সংগঠক অর্থাৎ একজন সৃষ্টিকর্তা স্থাপন করেছেন।
এই উপসংহার যদি এতটা স্পষ্ট হয়, তা হলে কেন অনেক বিজ্ঞানী বিবর্তনে বিশ্বাস করে? এমনটা কি হতে পারে যে, বিবর্তনবাদীরা তাদের প্রমাণকে আগে থেকে ঠিক বলে ধরে নেওয়া উপসংহারের ওপর ভিত্তি করে দেখে থাকে? বিজ্ঞানীদের মধ্যে এমনটা ঘটা আশ্চর্যের কিছু নয়। কিন্তু পর্যবেক্ষণ, তা সেটা যতটাই দৃঢ়প্রত্যয় উৎপাদনকারীই হোক না কেন, কোনো সঠিক উপসংহারের নিশ্চয়তা দেয় না। উদাহরণস্বরূপ, লেসার পদার্থবিদ্যা নিয়ে গবেষণা করছেন এমন একজন ব্যক্তি জোর দিয়ে বলতে পারেন যে, শব্দের মতো আলোকও হচ্ছে এক তরঙ্গ কারণ আলো প্রায়ই শব্দের মতো বৈশিষ্ট্য প্রদর্শন করে থাকে। কিন্তু, তার উপসংহার অসম্পূর্ণ থাকবে কারণ প্রমাণ এও দেখায় যে আলো কণাগুচ্ছের ন্যায় বৈশিষ্ট্য প্রদর্শন করে, যা ফোটন নামে পরিচিত। একইভাবে, যারা বিবর্তনকে বাস্তব বলে দাবি করে তারা আংশিক প্রমাণের ওপর ভিত্তি করে এই উপসংহারে আসে এবং তারা প্রমাণকে যেভাবে দেখে থাকে সেটাকে আগে থেকে ঠিক বলে ধরে নেওয়া তাদের উপসংহারের দ্বারা প্রভাবিত হতে দেয়।
কেউ যখন বিবর্তনবাদকে বাস্তব বলে মেনে নেয়, তখন আমার খুবই অবাক লাগে কারণ তথাকথিত বিবর্তনবাদী “বিশেষজ্ঞরাই” এটা কী করে সম্ভব সে বিষয়ে নিজেদের মধ্যে তর্কবিতর্ক করে থাকে। উদাহরণস্বরূপ, যদি কিছু বিশেষজ্ঞ বলে যে ২ আর ২ সমান সমান ৪ আর অন্য বিশেষজ্ঞরা বলে যে তারা এটার যোগফল ৩ অথবা ৬ বলে মনে করে, তা হলে আপনি কি অঙ্কশাস্ত্রকে একটা প্রমাণিত বিষয় বলে স্বীকার করবেন? বিজ্ঞান যদি শুধু সেই বিষয়গুলোকেই মেনে নেয়, যেগুলোকে প্রমাণ করা যায়, পরীক্ষা করা যায় এবং পুনরায় উৎপাদন করা যায়, তবে সমস্ত সজীব বস্তু শুধুমাত্র একজন পূর্বপুরুষ থেকে বিবর্তিত হয়েছে এই মতবাদ বিজ্ঞানসম্মতভাবে সঠিক নয়। (g ৯/০৬)
“অস্তিত্বহীন কিছু থেকে কোনোকিছুর উৎপত্তি হওয়া সম্ভব নয়”
◼ কেনেথ লয়িড টানাকা
সংক্ষিপ্ত পরিচয়: আমি একজন ভূতত্ত্ববিদ্, বর্তমানে আ্যরিজোনার ফ্লাগস্ট্যাফ শহরের ইউ. এস. জিওলজিক্যাল সার্ভে-তে কাজ করছি। প্রায় তিন দশক ধরে আমি ভূতত্ত্ববিদ্যার বিভিন্ন ক্ষেত্রে বৈজ্ঞানিক গবেষণায় অংশ নিয়েছি, যার অন্তর্ভুক্ত গ্রহ সম্বন্ধীয় ভূতত্ত্ববিদ্যা। আমার গবেষণার ওপর প্রচুর প্রবন্ধ ও মঙ্গল গ্রহের মানচিত্র বহুল পরিচিত বৈজ্ঞানিক পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। একজন যিহোবার সাক্ষি হওয়ায় প্রতি মাসে আমি প্রায় ৭০ ঘন্টা বাইবেল পড়া বাড়ানোর জন্য ব্যয় করি।
আমাকে বিবর্তনে বিশ্বাস করতে শেখানো হয়েছিল কিন্তু আমি এই বিষয়টাকে মেনে নিতে পারিনি যে, নিখিলবিশ্ব গঠনের জন্য প্রয়োজনীয় অসীম শক্তি একজন শক্তিমান সৃষ্টিকর্তা ছাড়া এমনি এমনি আসতে পারে। অস্তিত্বহীন কিছু থেকে কোনোকিছুর উৎপত্তি হওয়া সম্ভব নয়। এ ছাড়া, একজন সৃষ্টিকর্তা যে আছেন, সেই বিষয়ে আমি স্বয়ং বাইবেলেই এক জোরালো যুক্তি খুঁজে পেয়েছি। এই বইটি আমার গবেষণা ক্ষেত্রের সঙ্গে যুক্ত অসংখ্য বৈজ্ঞানিক বিষয়ের উদাহরণ দেয়, যেমন, পৃথিবী গোলাকার এবং এটা “অবস্তুর উপরে” ঝুলছে। (ইয়োব ২৬:৭; যিশাইয় ৪০:২২) এই তথ্যগুলো মানুষের পরীক্ষানিরীক্ষা দ্বারা প্রমাণিত হওয়ারও বহু আগে বাইবেলে লেখা হয়েছিল।
আমরা যেভাবে নির্মিত হয়েছি, তা একবার বিবেচনা করুন। আমাদের সংবেদনশীলতা, আত্মসচেতনতা, বুদ্ধিমত্তা, ভাববিনিময়ের ক্ষমতা এবং অনুভূতি রয়েছে। বিশেষ করে আমরা অভিজ্ঞতা লাভ করতে, উপলব্ধিবোধ দেখাতে ও প্রেম প্রদর্শন করতে পারি। এই চমৎকার মানব গুণগুলো কীভাবে এসেছে, তা বিবর্তন ব্যাখ্যা করতে পারে না।
নিজেকে জিজ্ঞেস করুন যে, ‘বিবর্তনের সপক্ষে দেওয়া তথ্যের উৎসগুলো কতটা নির্ভরযোগ্য ও বিশ্বাসযোগ্য?’ ভূতত্ত্ববিদ্যার নথি অসম্পূর্ণ, জটিল ও বিভ্রান্তিকর। গবেষণাগারে বৈজ্ঞানিক সূত্রগুলো ব্যবহার করে বিবর্তনবাদীরা বিবর্তনের প্রক্রিয়াকে প্রমাণ করতে ব্যর্থ হয়েছে। আর যদিও বিজ্ঞানীরা সাধারণত যখন উপাত্ত সংগ্রহের জন্য উন্নত গবেষণা পদ্ধতি ব্যবহার করে কিন্তু তাদের আবিষ্কারগুলো সম্বন্ধে ব্যাখ্যা করার সময় প্রায়ই তারা স্বার্থপর উদ্দেশ্যের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে থাকে। উপাত্ত যখন অপ্রামাণিক বা পরস্পরবিরোধী হয়ে থাকে, তখন বিজ্ঞানীরা সাধারণত তাদের নিজেদের ধারণা প্রচার করার জন্য পরিচিত। তাদের পেশা এবং নিজের যোগ্যতা সম্পর্কে অনুভূতি এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
একজন বিজ্ঞানী ও বাইবেল ছাত্র হিসেবে, আমি সম্পূর্ণ সত্যের অনুসন্ধান করি, যা সবচেয়ে সঠিক বোধগম্যতা লাভ করতে সমস্ত জানা তথ্য ও মন্তব্যের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ। আমার কাছে সৃষ্টিকর্তার ওপর বিশ্বাস করা সবচেয়ে বেশি অর্থপূর্ণ।
“কোষের মধ্যে স্পষ্ট নকশা প্রতীয়মান”
◼ পলা কিন্চেলো
সংক্ষিপ্ত পরিচয়: কোষ, আণবিক জীববিজ্ঞান এবং অণুজীবতত্ত্ব বিষয়ে গবেষণায় আমার বেশ কয়েক বছরের অভিজ্ঞতা আছে। বর্তমানে আমি যুক্তরাষ্ট্রের জর্জিয়ার আটলান্টায় এমরি বিশ্ববিদ্যালয়ে কাজ করছি। এ ছাড়া আমি রুশ-ভাষী সমাজে স্বেচ্ছাসেবী বাইবেল শিক্ষক হিসেবেও কাজ করি।
আণবিক জীববিজ্ঞান আমার পড়াশোনার অংশ হওয়ায় আমি চার বছর শুধু কোষ ও এর উপাদানসমূহের ওপর গবেষণায় মনোযোগ দিয়েছি। আমি ডিএনএ, আরএনএ, প্রোটিন এবং বিপাকীয় পথসমূহ সম্বন্ধে যত বেশি শিখেছি, এর জটিলতা, গঠন, এবং এর সঙ্গে জড়িত সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম নির্ভুলতা দেখে ততই আশ্চর্য হয়েছি। কোষ সম্পর্কে মানুষ কত কিছু শিখে ফেলেছে, তা জেনে যদিও আমি খুবই অভিভূত হয়ে গিয়েছি কিন্তু যে-বিষয়টা আমাকে আরও বেশি বিস্মিত করেছে, তা হল এখনও মানুষের আরও কত কিছু জানার বাকি আছে। কোষের মধ্যে এই স্পষ্ট প্রতীয়মান নকশা হল আমার জন্য ঈশ্বরে বিশ্বাস করার পিছনে একটা কারণ।
আমার বাইবেল অধ্যয়ন প্রকাশ করেছে যে, সৃষ্টিকর্তা কে—মূলত, যিহোবা ঈশ্বর। আমি দৃঢ়বিশ্বাসী যে তিনি শুধু বুদ্ধিমান নকশাবিদই নন কিন্তু সেইসঙ্গে একজন সদয় ও প্রেমময় পিতা, যিনি আমার জন্য চিন্তা করেন। বাইবেল জীবনের উদ্দেশ্য সম্বন্ধে ব্যাখ্যা করে এবং এক সুখী ভবিষ্যতের আশা প্রদান করে।
যে-অল্পবয়সি ছেলেমেয়েদের স্কুলে বিবর্তনের বিষয়ে শেখানো হচ্ছে, তারা হয়তো কোনটা বিশ্বাস করবে, সেই বিষয়ে অনিশ্চিত হতে পারে। এটা তাদের জন্য বিভ্রান্তির সময় হতে পারে। যদি তারা ঈশ্বরে বিশ্বাস করে, তা হলে এটা তাদের বিশ্বাসের পরীক্ষা হয়। কিন্তু, তারা আমাদের চারপাশের প্রকৃতিতে বিদ্যমান প্রচুর বিস্ময়কর বস্তুগুলো পরীক্ষা করার এবং সৃষ্টিকর্তা ও তাঁর গুণাবলি সম্বন্ধে ক্রমাগত জানার দ্বারা সফলভাবে এই পরীক্ষার মোকাবিলা করতে পারে। আমি ব্যক্তিগতভাবে এটা করেছি এবং এই উপসংহারে এসেছি যে, বাইবেলে বলা সৃষ্টির বিবরণ হচ্ছে নিখুঁত এবং তা বিজ্ঞানের সঙ্গে কোনোভাবে সংঘাত ঘটায় না।
“আইনগুলোর চমৎকার সরলতা”
◼ এনরিক আরনান্ডিস লেমুস
সংক্ষিপ্ত পরিচয়: আমি যিহোবার সাক্ষিদের একজন পূর্ণসময়ের পরিচারক। এ ছাড়া, আমি মেক্সিকোর ন্যাশনাল ইউনিভারসিটি-তে কর্মরত একজন তত্ত্বীয় পদার্থবিদ। আমার বর্তমান কাজের অন্তর্ভুক্ত মহাকর্ষীয় তাপগতিবিজ্ঞান বিপর্যয় নামে পরিচিত বিষয়, যা হচ্ছে তারকার বৃদ্ধির এক গঠন, সেই বিষয়ে তাপগতিভিত্তিক কার্যকর একটা ব্যাখ্যা খুঁজে বের করা। এ ছাড়া, আমি ডিএনএ অনুক্রমের জটিলতা নিয়েও কাজ করেছি।
খোলাখুলিভাবে বললে জীবন এত জটিল যে, তা দৈবক্রমে উদ্ভব হতে পারে না। উদাহরণস্বরূপ, ডিএনএ অণুর মধ্যে যে বিশাল পরিমাণ তথ্য মজুত রয়েছে, তা বিবেচনা করুন। শুধুমাত্র একটা ক্রোমোজম দৈবক্রমে উদ্ভব হয়েছে, সেটার গাণিতিক সম্ভাবনা ৯ লক্ষ কোটির ১ ভাগেরও কম, অর্থাৎ তা এতটাই অনিশ্চিত যে, এটা ঘটা প্রায় অসম্ভব বলেই বিবেচিত হয়। বুদ্ধিহীন শক্তিগুলো শুধুমাত্র একটা ক্রোমোজোম নয় কিন্তু জীবিত বস্তুর সত্তার মধ্যে থাকা সমস্ত বিস্ময়কর জটিলতা সৃষ্টি করতে সক্ষম, এটা বিশ্বাস করা আমার কাছে মূর্খতা বলেই মনে হয়।
এ ছাড়া, যখন আমি কোনো পদার্থের আণুবীক্ষণিক স্তর থেকে শুরু করে মহাশূন্যের গতিশীল বিশাল নীহারিকাসহ পদার্থের জটিল বৈশিষ্ট্য নিয়ে গবেষণা করি, তখন আমি গতি নিয়ন্ত্রণকারী আইনগুলোর চমৎকার সরলতা দেখে অভিভূত হয়ে যাই। আমার কাছে এই বিষয়টা একজন শ্রেষ্ঠ গণিতবিদের চেয়েও বেশি অর্থ রাখে—এগুলো হল একজন শ্রেষ্ঠ শিল্পীর স্বাক্ষরের মতো।
লোকেরা প্রায়ই অবাক হয়ে যায় যখন আমি তাদের বলি যে আমি একজন যিহোবার সাক্ষি। কখনো কখনো তারা আমাকে জিজ্ঞেস করে যে আমার পক্ষে ঈশ্বরে বিশ্বাস করা কী করে সম্ভব। তাদের এমন প্রতিক্রিয়া স্বাভাবিক কারণ বেশির ভাগ ধর্মই এর বিশ্বাসীদের যা শিক্ষা দেওয়া হয় সেই বিষয়ে কোনো প্রমাণ চাইতে বা তাদের বিশ্বাস সম্বন্ধে গবেষণা করতে উৎসাহ দেয় না। কিন্তু, বাইবেল আমাদেরকে “পরিণামদর্শিতা” বা চিন্তা করার ক্ষমতা ব্যবহার করতে উৎসাহ দেয়। (হিতোপদেশ ৩:২১) প্রকৃতিতে বিদ্যমান সমস্ত বুদ্ধিসম্পন্ন নকশার প্রমাণ এবং সেইসঙ্গে বাইবেল থেকে প্রাপ্ত প্রমাণ আমাকে এই বিষয়ে দৃঢ়প্রত্যয়ী করে যে, ঈশ্বরের শুধুমাত্র অস্তিত্বই নেই কিন্তু একই সময়ে তিনি আমাদের প্রার্থনা শোনার প্রতিও আগ্রহী।
[পাদটীকা]
^ এই প্রবন্ধে উপস্থাপিত বিশেষজ্ঞদের দৃষ্টিভঙ্গি তাদের নিয়োগকারীদের দৃষ্টিভঙ্গিকে প্রতিফলিত না-ও করতে পারে।
[২২ পৃষ্ঠার চিত্র সৌজন্যে]
পশ্চাৎপটে মঙ্গলগ্রহ: Courtesy USGS Astrogeology Research Program, http://astrogeology.usgs.gov