সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

“ছোট্ট ট্রেন” যেটা অন্ধকারে জ্বল জ্বল করে

“ছোট্ট ট্রেন” যেটা অন্ধকারে জ্বল জ্বল করে

“ছোট্ট ট্রেন” যেটা অন্ধকারে জ্বল জ্বল করে

এক নির্জন সন্ধ্যায় ব্রাজিলের গ্রাম্য এলাকায় বন-জঙ্গলের জঞ্জালের মধ্যে থেকে হঠাৎ করে এক ক্ষুদ্র “ট্রেন” উদিত হয়। লাল “হেডলাইট” দুটো এর পথকে আলোকিত করে এবং ১১ জোড়া হলদে-সবুজ লণ্ঠন এর দুপাশকে আলোকিত করে। নিশ্চিতভাবেই, এটা কোনো সাধারণ ট্রেন নয়। বরং, এটা হচ্ছে ফেনগোডিডে গোত্রের এক গুবরে-পোকার দুই ইঞ্চি লম্বা শূককীট, যা উত্তর ও দক্ষিণ আমেরিকায় পাওয়া যায়। স্ত্রী পোকাগুলো শূককীট অবস্থাতেই থাকে বলে এগুলোর ভিতরটা জ্বল জ্বল করা রেলের বগির মতো দেখায় আর সেই কারণে এদের প্রায়ই রেলরোড ওয়র্মস বলা হয়। ব্রাজিলের গ্রামবাসীরা এগুলোকে ছোট্ট ট্রেন বলে।

দিনের বেলা হালকা বাদামি রঙের শূককীটকে খুঁজে বের করা মুশকিল। কিন্তু রাতের বেলা এটা অদ্ভুত ধরনের আলোক সারির মাধ্যমে নিজের উপস্থিতি প্রকাশ করে। এটার শরীরে জৈব পদার্থ লুসিফেরিন রয়েছে বলে এই আলো জ্বলে ওঠে, যে-পদার্থ লুসিফেরাস এনজাইম ও অক্সিজেনের বিক্রিয়ায় এমন আলো সৃষ্টি করে, যেটাতে কোনো তাপ নেই। আলোর বর্ণালির মধ্যে লাল, কমলা, হলুদ এবং সবুজ রং দেখা যায়।

লাল হেডলাইটগুলো প্রায় সারাক্ষণই জ্বলতে থাকে—কিন্তু দুপাশের হলদে-সবুজ আলোগুলো নয়। গবেষণা ইঙ্গিত করে যে, হেডলাইটগুলো শূককীটকে কেন্নোদের (ক্যারা) খুঁজে পেতে সাহায্য করে, যেগুলো হচ্ছে এর সবচেয়ে প্রিয় খাদ্য এবং দুপাশের আলো শিকারিদেরকে যেমন পিঁপড়ে, ব্যাঙ ও মাকড়সাগুলোকে আক্রমণ করতে বাধা দেয় বলে মনে হয়। বস্তুতপক্ষে, সেই আলো এই ইঙ্গিত দেয়: “আমি সুস্বাদু নই। আমাকে ছেড়ে দাও!” তাই যখন এটা এর সম্ভাব্য শিকারির উপস্থিতি টের পায়, তখন শূককীটের দুপাশের আলো জ্বলে ওঠে। যখন এরা কেন্নোগুলোকে আক্রমণ করে এবং যখন স্ত্রী পোকা তার ডিমগুলোর চারপাশে গুটিয়ে থাকে, তখনও এই আলো জ্বলে ওঠে। স্বাভাবিক অবস্থায়, এটার দুপাশের আলো বাড়ে ও কমে—সবকিছুই কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে ঘটে—বলতে গেলে প্রায় যখনই প্রয়োজন হয়, তখনই চক্রের পুনরাবৃত্তি ঘটে।

হ্যাঁ, এমনকি বন-জঙ্গলের জঞ্জালের মধ্যেও একজন ব্যক্তি সৌন্দর্যের ছবি পান, যা সৃষ্টিকর্তার প্রতি গীতরচকের প্রশংসা বাক্যের কথা মনে করিয়ে দেয়: “পৃথিবী তোমার সম্পত্তিতে পরিপূর্ণ।”—গীতসংহিতা ১০৪:২৪. (g ১১/০৬)

[২০ পৃষ্ঠার চিত্র সৌজন্যে]

Robert F. Sisson / National Geographic Image Collection