সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

তেজস্বিনী মেকং নদী দেখে আসুন

তেজস্বিনী মেকং নদী দেখে আসুন

তেজস্বিনী মেকং নদী দেখে আসুন

মেকং নদী এশিয়ার ছয়টি দেশের মধ্যে দিয়ে এঁকেবেঁকে বয়ে চলেছে এবং প্রায় ১০০টা স্থানীয় ও উপজাতিগত দলের প্রায় ১০ কোটি লোককে উপকৃত করছে। প্রতি বছর, এই নদী থেকে প্রায় ১৩ লক্ষ টন মাছ ধরা হয়—উত্তর সাগর থেকে ধরা মাছের চারগুণ! ৪,৩৫০ কিলোমিটার বিস্তৃত হওয়ায় এটা দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার দীর্ঘতম নদী। আর যেহেতু এটা বেশ কয়েকটা দেশের মধ্যে দিয়ে বয়ে চলেছে, তাই এই নদীর অনেক নাম রয়েছে তবে সুপরিচিত নামটা হচ্ছে—মেকং—যা থাই নাম মে নাম কং নামের সংক্ষিপ্ত রূপ।

হিমালয়ের চূড়া থেকে উৎপত্তি হয়ে মেকং নদী পাহাড়ের ঢাল বেয়ে গড়িয়ে পড়ার এবং গভীর গিরিখাতের মধ্যে দিয়ে প্রবল গতিতে বয়ে চলার সময় মনে হয় যেন যৌবনের উচ্ছাসে ফেটে পড়ছে। এই নদীর জল যখন চিন দেশ অতিক্রম করে, যেখানে এটা লান্টসাং নামে পরিচিত, তখন ইতিমধ্যেই নদী তার মোট দৈর্ঘ্যের প্রায় অর্ধেকটা যাত্রা করে ফেলেছে এবং উল্লেখযোগ্যভাবে প্রায় ৪,৫০০ মিটার নীচে নেমে এসেছে। কিন্তু মেকং নদীর বাকি অংশ মাত্র ৫০০ মিটার নীচে এসে পড়ে। ফলে নদীর এই অংশটা এখন অনেক শান্ত গতিতে বয়ে চলেছে। চিন ছাড়ার পর, এই নদী মায়ানমার ও লাওসের সীমান্তের মধ্যে দিয়ে এবং লাওস ও থাইল্যান্ডের সীমান্তের অনেকটা অংশ জুড়ে প্রবাহিত হয়। এটা কাম্বোডিয়ায় এসে ভাগ হয়ে যায় এবং ভিয়েতনামে দুটো শাখায় প্রবাহিত হয়, যেগুলো আরও উপশাখা হয়ে দক্ষিণ চিন সাগরে মিশে যায়।

১৮৬০ এর দশকের শেষের দিকে, ফরাসিরা মেকং নদী দিয়ে চিন যাওয়ার পথ খোঁজার চেষ্টা করেছিল। কিন্তু তাদের আশা ভঙ্গ হয়েছিল, যখন তারা কাম্বোডিয়ার ক্রাটিয়া শহরের কাছে নদী প্রপাতের এবং দক্ষিণ লাওসে বেশ কয়েকটা বিরাট আকারের জলপ্রপাত, যেগুলো কন জলপ্রপাত নামে পরিচিত, সেগুলোর সম্মুখীন হয়েছিল। বিশ্বের অন্য যেকোনো জলপ্রপাতের চেয়ে কন জলপ্রপাতে খুব ঘনভাবে জল পড়ে, যা এমনকি নায়াগ্রা জলপ্রপাত যেটা কানাডা ও যুক্তরাষ্ট্রের সীমান্তের দুপাশেই অবস্থিত সেটারও দ্বিগুণ।

এক জীবনদায়ী নদী

মেকং দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার অর্থনীতিতে অতীব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। লাওসের রাজধানী ভিয়েনতিয়েন এবং কাম্বোডিয়ার রাজধানী নম পেন হচ্ছে এই নদীর বন্দর শহর। নদীর অভিমুখে, মেকং ভিয়েতনামের লোকেদের মঙ্গলের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সেখানে এটা সাতটা শাখায় বিভক্ত হয়, ৪০,০০০ বর্গ কিলোমিটার বিস্তৃত একটা ব-দ্বীপ গঠন করে, যেটার অনুমানকৃত প্রায় ৩,২০০ কিলোমিটার হচ্ছে জলপথ। এই জলপথের অফুরন্ত জল খেত ও ধানের জমিতে জল সেচন করে এবং সেগুলোকে উর্বর পলিমাটি দ্বারা সমৃদ্ধ করে আর এর ফলে কৃষকরা বছরে তিনবার ধান চাষ করতে সক্ষম হয়। বস্তুত, একমাত্র থাইল্যান্ডের পর ভিয়েতনাম হচ্ছে পৃথিবীর দ্বিতীয়তম দেশ, যে সবচেয়ে বেশি ধান রপ্তানি করে থাকে।

মেকং নদীতে আনুমানিক প্রায় ১,২০০ প্রজাতির মাছ রয়েছে এবং এগুলোর কয়েকটা ও সেইসঙ্গে কুচো চিংড়ি বাণিজ্যিকভাবে চাষ করা হয়। ট্রে রিয়েল নামে একটা জনপ্রিয় স্থানীয় মাছ, এক অদ্বিতীয় কারণে সুপরিচিত হয়ে উঠেছে—এই মাছের নামানুসারে কাম্বোডিয়ার মুদ্রার নাম রিয়েল রাখা হয়েছে। এ ছাড়া, মেকং নদীতে বিপন্ন প্রজাতির মাগুর জাতীয় মাছও রয়েছে, যেগুলো প্রায় ২.৭৫ মিটার পর্যন্ত দীর্ঘ হতে পারে। ২০০৫ সালে, জেলেরা ২৯০ কেজি ওজনের মাগুর জাতীয় একটা মাছ ধরেছিল, যা সম্ভবত বিশ্বের মিঠে জলের নদীতে প্রাপ্ত সবচেয়ে বড় মাছ! আরেকটা বিপন্ন প্রজাতি যেটা অন্তত মেকং নদীতে লুপ্ত হয়ে যাচ্ছে সেটা হল ইরাওয়াডি ডলফিন। গবেষকরা বলে যে, এই নদীতে হয়তো ১০০রও কম ডলফিন রয়েছে।

লক্ষ লক্ষ লোকের জন্য খাদ্য সরবরাহ করা ছাড়াও মেকং সব ধরনের নৌকার—নদী পারাপারের জন্য ছোট নৌকার, মালপত্র বহনের বড় নৌকার এবং সাগর থেকে আসা-যাওয়া করা মালবাহী জাহাজের—প্রধান পথ হিসেবে ব্যবহৃত হয়। পর্যটকদের জন্যও এই নদী বেশ জনপ্রিয়, যাদের মধ্যে অনেকে কন জলপ্রপাত ছাড়িয়ে ভিয়েনতিয়েন পরিদর্শন করার জন্য নদীযাত্রা করতে ইচ্ছুক। খালবিল, প্যাগোডা এবং খুঁটির ওপর তৈরি ঘরবাড়ির জন্য প্রসিদ্ধ হলেও এই শহরটা ১,০০০ বছরেরও বেশি সময় ধরে ব্যাবসা, রাজনীতি এবং ধর্মের এক কেন্দ্রস্থল হয়ে এসেছে। ভিয়েনতিয়েন থেকে একজন ব্যক্তি নদীর উৎসমুখে অবস্থিত লাউংপ্রাবাং শহরে যাওয়ার ঝুঁকি নিতে পারেন। এই বন্দর শহরটা একসময় বিশাল থাই-লাও রাজ্যের রাজধানী ছিল এবং ফরাসি শাসনকালকে অন্তর্ভুক্ত করে কিছু সময়ের জন্য লাওসের রাজকীয় রাজধানী ছিল। এই ঐতিহাসিক শহরে এখনও ফরাসি উপনিবেশের ছোঁয়া রয়েছে।

সাম্প্রতিক সময়ে মেকং নদীতে অনেক ধরনের পরিবর্তন ঘটেছে, যেগুলো দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এগুলোর মধ্যে রয়েছে মাছ ধরার ধ্বংসাত্মক অভ্যাস, বননিধন এবং জলবিদ্যুতের বিশাল বাঁধগুলো নির্মাণ। অনেক পর্যবেক্ষক পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গিয়েছে বলে মনে করে। কিন্তু আশা রয়েছে।

বাইবেল প্রতিজ্ঞা করে যে, আমাদের প্রেমময় সৃষ্টিকর্তা শীঘ্রই তাঁর রাজ্যের মাধ্যমে মানুষের কার্যাবলিতে হস্তক্ষেপ করবেন। (দানিয়েল ২:৪৪; ৭:১৩, ১৪; মথি ৬:১০) সেই নিখুঁত বিশ্ব সরকারের নির্দেশনাধীনে, সমগ্র পৃথিবী এক ভাল পরিবেশের দ্বারা পুনর্স্থাপিত হবে এবং রূপকভাবে নদীগুলো পরম আনন্দে ‘করতালী দিবে।’ (গীতসংহিতা ৯৮:৭-৯) তেজস্বিনী মেকং যেন সেই আনন্দের অংশী হয়। (g ১১/০৬)

[২৪ পৃষ্ঠার মানচিত্র]

(পুরোপুরি ফরম্যাট করা টেক্সটের জন্য এই প্রকাশনা দেখুন)

চিন

মায়ানমার

লাওস

থাইল্যান্ড

কাম্বোডিয়া

ভিয়েতনাম

মেকং নদী

[২৪ পৃষ্ঠার চিত্র]

মেকং ব-দ্বীপে ধানের জমি

[২৪ পৃষ্ঠার চিত্র]

মেকং নদীতে প্রায় ১,২০০ প্রজাতির মাছ রয়েছে

[২৪ পৃষ্ঠার ক্যাপশন]

ধানের জমি: ©Jordi Camí/age fotostock; মাছ ধরা: ©Stuart Pearce/World Pictures/age fotostock; পটভূমি: © Chris Sattlberger/Panos Pictures

[২৫ পৃষ্ঠার চিত্র]

ভিয়েতনামে ভাসমান বাজার

[২৫ পৃষ্ঠার চিত্র সৌজন্যে]

বাজার: ©Lorne Resnick/age fotostock; মহিলা: ©Stuart Pearce/World Pictures/age fotostock