সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

রোমান্টিক প্রেম কি বিয়ের আগে যৌনসম্পর্কে রত হওয়ার যুক্তিযুক্ত কারণ জোগায়?

রোমান্টিক প্রেম কি বিয়ের আগে যৌনসম্পর্কে রত হওয়ার যুক্তিযুক্ত কারণ জোগায়?

বাইবেলের দৃষ্টিভঙ্গি

রোমান্টিক প্রেম কি বিয়ের আগে যৌনসম্পর্কে রত হওয়ার যুক্তিযুক্ত কারণ জোগায়?

একটা সমীক্ষায় যে-কিশোর-কিশোরীদের জনমত নেওয়া হয়েছিল তাদের প্রায় ৯০ শতাংশ মনে করে যে, যদি দুপক্ষই পরস্পরকে ভালবাসে, তা হলে বিয়ের আগে যৌনসম্পর্ক করা ভুল নয়। গণমাধ্যমগুলোতে এই ধরনের চিন্তাভাবনা প্রতিফলিত হয় এবং প্রায়ই এটাকে উপেক্ষা করা হয়। টেলিভিশন ও চলচ্চিত্রগুলোতে নিয়মিতভাবে যৌনক্রিয়াকে রোমান্টিক অনুরাগের এক স্বাভাবিক ফল হিসেবে তুলে ধরা হয়।

অবশ্য, যারা ঈশ্বরকে খুশি করতে চায়, তারা নির্দেশনার জন্য জগতের ওপর নির্ভর করে না কারণ তারা উপলব্ধি করে যে, এই জগৎ এর শাসক দিয়াবলের চিন্তাভাবনাকে প্রতিফলিত করে। (১ যোহন ৫:১৯) এ ছাড়া, তারা কেবল তাদের অনুভূতির দ্বারা পরিচালিত হওয়ার বিষয়ে সতর্ক থাকে, কারণ তারা জানে যে, “অন্তঃকরণ সর্ব্বাপেক্ষা বঞ্চক, তাহার রোগ অপ্রতিকার্য্য।” (যিরমিয় ১৭:৯) এর পরিবর্তে যারা সত্যিই বিজ্ঞ, তারা নির্দেশনার জন্য সৃষ্টিকর্তা ও তাঁর অনুপ্রাণিত বাক্যের ওপর নির্ভর করে।—হিতোপদেশ ৩:৫, ৬; ২ তীমথিয় ৩:১৬.

যৌনক্ষমতা হল এক ঐশিক দান

“সমস্ত উত্তম দান এবং সমস্ত সিদ্ধ বর উপর হইতে আইসে, জ্যোতির্গণের সেই পিতা হইতে নামিয়া আইসে,” যাকোব ১:১৭ পদ বলে। বৈবাহিক ব্যবস্থার মধ্যে যৌনসম্পর্ক হল সেই মূল্যবান দানগুলোর মধ্যে একটা। (রূতের বিবরণ ১:৯; ১ করিন্থীয় ৭:২, ৭) এটা মানুষকে সন্তান জন্ম দিতে সমর্থ করে এবং একজন স্বামী ও স্ত্রীকে অনেক কোমল ও আনন্দজনক উপায়ে দৈহিক ও আবেগগতভাবে নিকট সম্পর্ক বজায় রাখতে সাহায্য করে। “তুমি আপন যৌবনের ভার্য্যায় আমোদ কর,” প্রাচীন রাজা শলোমন লিখেছিলেন। “তাহারই কুচযুগ দ্বারা তুমি সর্ব্বদা আপ্যায়িত হও।”—হিতোপদেশ ৫:১৮, ১৯.

স্বাভাবিকভাবেই, যিহোবা চান যেন আমরা তাঁর দানগুলো থেকে উপকার লাভ করি ও সেগুলোতে আনন্দ করি। এইজন্য, তিনি আমাদের সর্বোত্তম আইন ও নীতিগুলোও দিয়েছেন, যাতে আমরা সেই অনুযায়ী জীবনযাপন করি। (গীতসংহিতা ১৯:৭, ৮) যিহোবা ‘তোমার উপকারজনক শিক্ষা দান করেন, ও তোমার গন্তব্য পথে তোমাকে গমন করান।’ (যিশাইয় ৪৮:১৭) আমাদের স্বর্গীয় পিতা—প্রেমের মূর্ত প্রতীক—কি আমাদেরকে এমন কিছু থেকে বঞ্চিত করবেন, যা সত্যিই উত্তম?—গীতসংহিতা ৩৪:১০; ৩৭:৪; ৮৪:১১; ১ যোহন ৪:৮.

বিয়ের আগে যৌনসম্পর্ক করা প্রেমের কাজ নয়

একজন পুরুষ ও নারী যখন বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়, তখন তারা “একাঙ্গ” হয়। যখন দুজন অবিবাহিত ব্যক্তি যৌনসম্পর্কে রত হয়, যেটাকে ব্যভিচারও বলা হয়, তখন তারাও “একদেহ” হয়—কিন্তু সেটা ঈশ্বরের চোখে অপবিত্র। * অধিকন্তু, এই ধরনের মিলন প্রেমের কাজ নয়। কেন তা বলা যেতে পারে?—মার্ক ১০:৭-৯; ১ করিন্থীয় ৬:৯, ১০, ১৬.

একটা কারণ হচ্ছে যে, ব্যভিচার হল এমন যৌনসম্পর্ক যা প্রকৃত প্রতিশ্রুতি ছাড়া করা হয়ে থাকে। আর এটা আত্মসম্মানকে নষ্ট করার সঙ্গে সঙ্গে রোগব্যাধি, অবাঞ্ছিত গর্ভ এবং আবেগগত কষ্ট নিয়ে আসতে পারে। সর্বোপরি, এটা ঈশ্বরের ধার্মিক মানগুলোকে লঙ্ঘন করে। তাই, ব্যভিচার করা অন্য ব্যক্তির বর্তমান ও ভবিষ্যৎ মঙ্গল ও সুখের জন্য সামান্য বা কোনো চিন্তাই প্রকাশ করে না।

এ ছাড়া, একজন খ্রিস্টানের জন্য ব্যভিচার করা হল তার আধ্যাত্মিক ভাই অথবা বোনের অধিকারগুলোর সীমা অতিক্রম করা। (১ থিষলনীকীয় ৪:৩-৬) উদাহরণস্বরূপ, ঈশ্বরের দাস হিসেবে দাবি করে এমন যে-ব্যক্তিরা বিয়ের বাইরে যৌনসম্পর্ক করে, তারা খ্রিস্টীয় মণ্ডলীতে অশুচিতা নিয়ে আসে। (ইব্রীয় ১২:১৫, ১৬) এ ছাড়া, যে-ব্যক্তির সঙ্গে তারা ব্যভিচার করে, তাকে এক শুদ্ধ নৈতিক অবস্থান থেকে বঞ্চিত করে এবং সেই ব্যক্তি যদি অবিবাহিত হয়ে থাকেন, তা হলে তাকে নিজেকে নৈতিকভাবে শুদ্ধ রেখে ভবিষ্যতে বিয়ে করার সম্ভাবনা থেকে বঞ্চিত করে। এ ছাড়া, তারা নিজের পরিবারের সুনামকে কলঙ্কিত করে ও সেইসঙ্গে যার সঙ্গে যৌনসম্পর্ক করা হয়েছে, তার পরিবারেরও সুনাম নষ্ট করে। অবশেষে, তারা ঈশ্বরের প্রতি অসম্মান দেখায়, যাঁকে তারা তাঁর ধার্মিক আইন ও নীতিগুলো লঙ্ঘন করার মাধ্যমে কষ্ট দিয়েছে। (গীতসংহিতা ৭৮:৪০, ৪১) এর ফলে যিহোবা অনুতপ্তহীন ব্যক্তি বিশেষের দ্বারা কৃত সমস্ত মন্দ কাজের জন্য ‘প্রতিফল’ দিবেন। (১ থিষলনীকীয় ৪:৬) তাই, এতে অবাক হওয়ার মতো কি কিছু আছে, যখন বাইবেল আমাদের ‘ব্যভিচার হইতে পলায়ন করিতে’ বলে?—১ করিন্থীয় ৬:১৮.

আপনি কি প্রেমে পড়েছেন এবং বিয়ে করার পরিকল্পনা করছেন? তা হলে, বিবাহপূর্ব মেলামেশাকে পরস্পরের মধ্যে বিশ্বাস ও সম্মানের দৃঢ় ভিত্তি গড়ে তোলার সময় হিসেবে ব্যবহার করুন না কেন? ভেবে দেখুন: কীভাবে একজন নারী এমন একজন পুরুষের ওপর পুরোপুরি নির্ভর করতে পারেন, যিনি আত্মসংযমের অভাব দেখিয়েছেন? আর একজন পুরুষের পক্ষে এমন একজন নারীকে মূল্যবান বলে গণ্য করা ও তাকে সম্মান করা কীভাবে সহজ, যিনি তার রোমান্টিক অনুভূতি পরিতৃপ্ত করার অথবা পুরুষকে খুশি করার জন্য ঈশ্বরের আইনকে অসম্মান করেন?

এও মনে রাখবেন যে, যারা ঈশ্বরের প্রেমময় মানগুলোকে প্রত্যাখ্যান করে, তারা যা বোনে, তা-ই কাটে। (গালাতীয় ৬:৭) “যে ব্যভিচার করে, সে নিজ দেহের বিরুদ্ধে পাপ করে,” বাইবেল বলে। (১ করিন্থীয় ৬:১৮; হিতোপদেশ ৭:৫-২৭) এটা ঠিক যে, বিয়ের আগে যৌনসম্পর্কে রত হয়েছে, এমন যুগলরা যদি সত্যিকারভাবে অনুতপ্ত হয়, ঈশ্বরের সঙ্গে তাদের সম্পর্ককে পুনর্স্থাপন করার জন্য কঠোর প্রচেষ্টা করে এবং পরস্পরের প্রতি তাদের নির্ভরতাকে শক্তিশালী করে, তা হলে নেতিবাচক অনুভূতিগুলো অবশেষে দূর হয়ে যেতে পারে। তা হলেও, তাদের অতীতের আচরণ সাধারণত এক ক্ষত রেখেই যায়। একজন অল্পবয়স্ক দম্পতি, যারা এখন বিবাহিত, তারা ব্যভিচার করেছিল বলে তিক্ততার সঙ্গে অনুশোচনা বোধ করে। ‘আমাদের বৈবাহিক মতভেদগুলো কি কিছুটা হলেও এই অশুচি ভিত্তির ফল?’ স্বামী মাঝে মাঝে নিজেকে জিজ্ঞেস করেন।

প্রকৃত প্রেম নিঃস্বার্থপর

যদিও এতে রোমান্টিক অনুভূতি জড়িত থাকে, তবুও প্রকৃত প্রেম কখনো “অশিষ্টাচরণ করে না” অথবা “স্বার্থ চেষ্টা করে না।” (১ করিন্থীয় ১৩:৪, ৫) এর পরিবর্তে, এটা অন্য ব্যক্তির মঙ্গল ও চির সুখকে উন্নীত করে। এই ধরনের প্রেম একজন পুরুষ ও নারীকে পরস্পরকে সম্মান করতে এবং সঠিক অর্থাৎ ঈশ্বরদত্ত স্থানে—বিবাহ শয্যায়—যৌনসম্পর্কে রত হতে অনুপ্রাণিত করে।—ইব্রীয় ১৩:৪.

নির্ভরতা ও নিরাপত্তার অনুভূতি, যা বিয়েকে প্রকৃতই সুখী করে, তা বিশেষভাবে সেই সময়ে গুরুত্বপূর্ণ যখন শিশুর জন্ম হয়, কারণ ঈশ্বরের উদ্দেশ্য হল যে, সন্তানরা এক প্রেমময়, স্থায়ী ও নিরাপদ পরিবেশে বেড়ে উঠবে। (ইফিষীয় ৬:১-৪) একমাত্র বিয়েতে দুজন ব্যক্তি সত্যিকারভাবে পরস্পরের কাছে অঙ্গীকার করে। হৃদয়ে ও সেইসঙ্গে প্রায়ই মৌখিকভাবে তারা তাদের বাকি জীবনে ভাল ও মন্দ সময়ে পরস্পরের যত্ন নেওয়ার এবং সমর্থন করার প্রতিজ্ঞা করে।—রোমীয় ৭:২, ৩.

স্বামী ও স্ত্রীর মধ্যে যৌনসম্পর্ক তাদের বন্ধনকে শক্তিশালী করে। এক সুখী বিবাহে সঙ্গীরাও যৌনসম্পর্ককে আরও আনন্দদায়ক ও অর্থপূর্ণভাবে উপভোগ করে—আর তা সেই মিলনকে হীন করে না, বিবেককে দংশন করে না অথবা সৃষ্টিকর্তাকে অমান্য করে না। (g ১১/০৬)

আপনি কি ভেবে দেখেছেন?

◼ বিয়ের আগে যৌনসম্পর্কে রত হওয়া সম্বন্ধে ঈশ্বরের দৃষ্টিভঙ্গি কী?—১ করিন্থীয় ৬:৯, ১০.

◼ কেন ব্যভিচার ক্ষতিকর?—১ করিন্থীয় ৬:১৮.

◼ কীভাবে দুজন ব্যক্তি, যাদের পরস্পরের মধ্যে রোমান্টিক প্রেম রয়েছে, তারা প্রকৃত প্রেম দেখাতে পারে?—১ করিন্থীয় ১৩:৪, ৫.

[পাদটীকা]

^ যে-গ্রিক শব্দকে “ব্যভিচার” হিসেবে অনুবাদ করা হয়েছে, তা বিয়ের বাইরে আরেকজন ব্যক্তির সঙ্গে সমস্ত ধরনের যৌনক্রিয়াকে বোঝায়, যেগুলোর অন্তর্ভুক্ত মৌখিক যৌনতাসহ যৌনাঙ্গগুলোর ব্যবহার।—যিহোবার সাক্ষিদের দ্বারা প্রকাশিত ২০০৪ সালের অক্টোবর - ডিসেম্বর সচেতন থাক! পত্রিকার ১৬ পৃষ্ঠা এবং ২০০৪ সালের ১৫ই ফেব্রুয়ারি প্রহরীদুর্গ পত্রিকার ১৩ পৃষ্ঠা দেখুন।