সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

যখন অসুস্থতা আর থাকবে না!

যখন অসুস্থতা আর থাকবে না!

যখন অসুস্থতা আর থাকবে না!

অনেক লোক আশা করে যে, তারা মৃত্যুর পর স্বর্গে গিয়ে ব্যথা ও অসুস্থতা থেকে স্বস্তি লাভ করবে। কিন্তু এই জনপ্রিয় বিশ্বাসের বিপরীতে, বাইবেল প্রকৃতপক্ষে সমগ্র মানবজাতির জন্য পার্থিব পরমদেশে জীবন লাভ করার এক আশা প্রদান করে। (গীতসংহিতা ৩৭:১১; ১১৫:১৬) এই প্রতিজ্ঞাত ভবিষ্যতের অন্তর্ভুক্ত হচ্ছে নিখুঁত স্বাস্থ্য, সুখ এবং অনন্তজীবন।

কেন আমরা অসুস্থ হই ও মারা যাই? আর অসুস্থতাবিহীন এক জগৎ কীভাবে আসবে? বাইবেল সেই প্রশ্নগুলোর উত্তর দেয়।

অসুস্থতার প্রকৃত কারণ আমাদের প্রথম পিতামাতা আদম ও হবাকে নিখুঁতভাবে সুস্থ দেহ দিয়ে সৃষ্টি করা হয়েছিল। (আদিপুস্তক ১:৩১; দ্বিতীয় বিবরণ ৩২:৪) তাদেরকে পৃথিবীতে চিরকাল বেঁচে থাকার জন্য তৈরি করা হয়েছিল। তারা স্বেচ্ছায় ঈশ্বরের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করার আগে পর্যন্ত রোগব্যাধি তাদের দেহকে আক্রমণ করতে পারেনি। (আদিপুস্তক ৩:১৭-১৯) ঈশ্বরের কর্তৃত্বকে অস্বীকার করে তারা তাদের সিদ্ধ জীবনের উৎস, সৃষ্টিকর্তার সঙ্গে তাদের বন্ধনকে ছিন্ন করে ফেলেছিল। তারা ত্রুটিপূর্ণ হয়ে উঠেছিল। ফলে তারা অসুস্থ হয়ে পড়েছিল ও মারা গিয়েছিল, ঠিক যেমনটা হবে বলে ঈশ্বর তাদেরকে সতর্ক করে দিয়েছিলেন।—আদিপুস্তক ২:১৬, ১৭; ৫:৫.

বিদ্রোহ করার পর, আদম ও হবা তাদের সন্তানদের কেবল অসিদ্ধতাই প্রদান করতে পারত। (রোমীয় ৫:১২) আগের প্রবন্ধগুলোতে যেমন উল্লেখ করা হয়েছে, বিজ্ঞানীরা আজকে স্বীকার করে যে, জন্মগতভাবে পাওয়া কিছু অস্বাভাবিকতা অসুস্থতা ও মৃত্যুর জন্য দায়ী। ব্যাপক গবেষণার পর একদল বিজ্ঞানী সম্প্রতি এই উপসংহারে পৌঁছেছে: “এটা জীববিজ্ঞান সংক্রান্ত অবশ্যম্ভাবী এক বাস্তবতা যে, জীবনের উৎপত্তি হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে শরীর অপরিহার্যভাবেই এর নিজস্ব ধ্বংসের বীজ বপন করতে শুরু করে।”

মানব প্রচেষ্টার দ্বারা নয় বিজ্ঞান অসুস্থতার বিরুদ্ধে লড়াই করতে গিয়ে মহৎ মহৎ সাফল্য অর্জন করছে। কিন্তু অসুস্থতার কারণ এত জটিল প্রমাণিত হয়েছে যে, বিজ্ঞান তা পুরোপুরিভাবে সমাধান করতে পারবে না। তবে বাইবেল ছাত্রদের কাছে এটা অবাক হওয়ার মতো কোনো বিষয় নয়, যারা ঈশ্বরের অনুপ্রাণিত বাক্যের এই কথাগুলোর সঙ্গে পরিচিত: “তোমরা নির্ভর করিও না রাজন্যগণে, বা মনুষ্য-সন্তানে, যাহার নিকটে ত্রাণ নাই।”—গীতসংহিতা ১৪৬:৩.

কিন্তু বাইবেল যেমন ঘোষণা করে, “যাহা মনুষ্যের অসাধ্য, তাহা ঈশ্বরের সাধ্য।” (লূক ১৮:২৭) যিহোবা ঈশ্বর অসুস্থতার কারণকে নির্মূল করতে পারেন। তিনি আমাদের সমস্ত রোগের প্রতিকার করবেন। (গীতসংহিতা ১০৩:৩) তাঁর অনুপ্রাণিত বাক্য প্রতিজ্ঞা করে: “দেখ, মনুষ্যদের সহিত ঈশ্বরের আবাস; তিনি তাহাদের সহিত বাস করিবেন, এবং তাহারা তাঁহার প্রজা হইবে; এবং ঈশ্বর আপনি তাহাদের সঙ্গে থাকিবেন, ও তাহাদের ঈশ্বর হইবেন। আর তিনি তাহাদের সমস্ত নেত্রজল মুছাইয়া দিবেন; এবং মৃত্যু আর হইবে না; শোক বা আর্ত্তনাদ বা ব্যথাও আর হইবে না; কারণ প্রথম বিষয় সকল লুপ্ত হইল।”—প্রকাশিত বাক্য ২১:৩, ৪.

আপনাকে যা করতে হবে যিশু খ্রিস্ট সুস্পষ্টভাবে ব্যাখ্যা করেছিলেন যে, ভবিষ্যতে অসুস্থতাবিহীন এক জগতে বাস করতে চাইলে আমাদের কী করতে হবে। তিনি বলেছিলেন: “আর ইহাই অনন্ত জীবন যে, তাহারা তোমাকে, একমাত্র সত্যময় ঈশ্বরকে, এবং তুমি যাঁহাকে পাঠাইয়াছ, তাঁহাকে, যীশু খ্রীষ্টকে, জানিতে পায়।”—যোহন ১৭:৩.

ঈশ্বর সম্বন্ধে জানা বা তাঁর সম্বন্ধে জ্ঞান ও তাঁর পুত্র যিশু সম্বন্ধীয় শিক্ষা বাইবেলে পাওয়া যায়। এই ধরনের জ্ঞানের অন্তর্ভুক্ত ব্যবহারিক উপদেশ, যা এখনই আমাদের জীবনকে উন্নত করতে পারে। কিন্তু আরও উল্লেখযোগ্য বিষয় হল, ঈশ্বর তাঁর বাধ্য উপাসকদের জন্য ব্যথাহীন এক জগতের প্রতিজ্ঞা করেন। হ্যাঁ, ঈশ্বর আপনাকে এমন এক ভবিষ্যতের প্রস্তাব দেন, যখন “নগরবাসী কেহ বলিবে না, আমি পীড়িত”!—যিশাইয় ৩৩:২৪. (g ১/০৭)

[১১ পৃষ্ঠার বাক্স/চিত্রগুলো]

স্বাস্থ্যের প্রতি এক ভারসাম্যপূর্ণ দৃষ্টিভঙ্গি

বাইবেল জীবনের প্রতি সম্মান দেখাতে উৎসাহ দেয়। যিহোবার সাক্ষিরা তাদের স্বাস্থ্যের প্রতি যত্ন নিতে আপ্রাণ চেষ্টা করার দ্বারা এইরকম সম্মান প্রদর্শন করে। তারা নেশাকর ওষুধ ও তামাক সেবনের মতো ক্ষতিকর অভ্যাসগুলো পরিহার করে। ঈশ্বর চান যেন তাঁর উপাসকরা ভোজন ও পান করার অভ্যাসে সংযমী হয়। (হিতোপদেশ ২৩:২০; তীত ২:২, ৩) এই ধরনের ব্যবহারিক পদক্ষেপ আর সেইসঙ্গে পর্যাপ্ত বিশ্রাম ও ব্যায়াম অনেক শারীরিক রোগব্যাধিকে বিলম্বিত বা দমন করাতে পারে। যারা অসুস্থতা ভোগ করছে, তাদের হয়তো নির্ভরযোগ্য স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের সাহায্য প্রয়োজন।

বাইবেল যুক্তিবাদী ও “সংযত” হতে উৎসাহিত করে। (তীত ২:১২; ফিলিপীয় ৪:৫, NW) বর্তমানে অনেকের ভারসাম্যের অভাব রয়েছে আর তারা সুস্থ হওয়ার উপায় খোঁজা নিয়ে মেতে থাকে, এমনকি তাদের আধ্যাত্মিকতার ক্ষতি করেও তা করে থাকে। কেউ কেউ আপত্তিকর চিকিৎসাপদ্ধতি অবলম্বন করে, যা ক্ষতি নিয়ে আসতে পারে। অন্যেরা হয়তো এমন চিকিৎসাপদ্ধতি ও প্রতিষেধকের পিছনে টাকাপয়সা ও সময় নষ্ট করতে পারে, যেগুলো অকার্যকর ও এমনকি ক্ষতিকর।

বাস্তব বিষয়টা হচ্ছে, নিখুঁত স্বাস্থ্য এখনও অর্জন করা যায়নি। অসুস্থতা আর থাকবে না এমন ভবিষ্যতের জন্য অপেক্ষা করার সময় বাইবেলে প্রাপ্ত প্রজ্ঞা ও যুক্তিবাদিতা আপনাকে সুস্বাস্থ্য লাভ করার চেষ্টা করতে গিয়ে ভারসাম্যপূর্ণ থাকতে সাহায্য করতে পারে।